Friday, June 22, 2007

শিবাজি : দ্য বস

ভুলে যান শাহরুখ খান বা অমিতাভ বচ্চনের কথা । ভারতের হায়েস্ট পেড নায়ক এখন ওয়ান অ্যান্ড ওনলি রজনীকান্ত

শোনা যাচ্ছে রজনীকান্ত শিবাজি দ্য বস সিনেমাটির জন্য নিয়েছেন মোট ষোলো কোটি টাকা । আর শিবাজি দ্য বসের মোট বাজেট বেশি না ... মাত্র ছিয়ানব্বই কোটি টাকা । এর আগে সবথেকে বেশি বাজেটের সিনেমা ছিল শাহরুখ খানের দেবদাস । পঞ্চাশ বাহান্ন কোটি টাকা লেগেছিল দেবদাস বানাতে । কিন্তু শিবাজি দ্য বস তাকে অনেকটাই ছাপিয়ে গেল ।

তবুও মনে রাখতে হবে দেবদাস সর্বভারতীয় সিনেমা ছিল । কিন্তু শিবাজি তামিল ছবি । বর্তমানে কেবল তামিল আর ডাবিং করে তেলেগুতে এই সিনেমা রিলিজ হয়েছে । কিন্তু তাতেই বলা হচ্ছে যে সহজেই এই ছবির সব টাকা উঠে আসবে ।

এই ছবি রিলিজের আগে এত বেশি পাবলিসিটি হয়েছিল যে সর্বভারতীয় মিডিয়াতে এই ছবির কথা উঠে এসেছে । এমন কি কলকাতার বাংলা খবরের কাগজগুলিতেও এই ছবির খবর বেরিয়েছে ।

রজনীকান্তের স্টারভ্যালু আর ফ্যানবেস দুর্দান্ত । একজন মারাঠি হয়েও তিনি তামিল সিনেমার জগতে ভগবানের মর্যাদা পেয়েছেন । কোনো ডাইরেক্টরই তাঁকে সিনেমাতে মেরে ফেলতে পারেন না । কারন তা হলে ফ্যানেরা রেগে গিয়ে সিনেমাহলে ভাঙচুর চালাবে । ইদানিং তিনি সিনেমা করা অপেক্ষাকৃত কমিয়ে দিয়েছিলেন । প্রায় দুই বছর পরে মুক্তি পেল তাঁর কোন নতুন সিনেমা । রজনীকান্তের বয়স এখন আটান্ন । মাস ছয়েক আগে তিনি দাদু্ও হয়েছেন । তবুও ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে সব থেকে দামী সিনেমার নায়ক হতে এবং সেই সিনেমাকে সুপারহিট করতে তাঁকে কোন অসুবিধায় পড়তে হয়নি ।

সিনেমার নায়ক শিবাজি একজন সফটওয়্যার প্রফেশনাল যে আমেরিকা থেকে প্রায় দুশো কোটি টাকা নিয়ে দেশে আসে একটি মেডিকেল কলেজ আর হাসপাতাল করবে বলে । কিন্তু তাঁর সেই দুশো কোটি টাকা খোয়া যায় ভিলেনের কারসাজিতে । এরপর কিভাবে শিবাজি সেই টাকা উদ্ধার করে এবং সেই সাথে কালো টাকাকে কিভাবে দেশের উন্নয়নের কাজে লাগায় সেই নিয়েই এই গল্প ।

এখনও পর্যন্ত যে সমস্ত রিভিউ পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে কমেডি অ্যাকশন ইমোশন সবকিছুতেই রজনীকান্ত একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছেন । সিনেমার একটি দৃশ্যে দেখা যায় যে তিনি মাটির রাস্তা দিয়ে চলেছেন আর তাঁর যাবার সাথে সাথে সেই মাটির রাস্তা কংক্রিটের রাস্তায় পরিণত হচ্ছে ।

সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন হামসে হ্যায় মুকাবলা এবং নায়ক খ্যাত পরিচালক এস. শংকর । আর সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন এ আর রহমান ।

আমার এখনও এই সিনেমাটি দেখবার সুযোগ হয়নি । কিন্তু আশা করি ভবিষ্যতে হিন্দিতে ডাবিং বা তামিল সাবটাইটেল সহ সিনেমাটি দেখার সুযোগ হবে ।

Sunday, June 10, 2007

ঈশ্বরের থাকা বা না থাকা নিয়ে কিছু আলোচনা ।

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের একটি লেখায় পড়েছিলাম তর্ক বিতর্ক তো অনেক হল কিন্তু এখনও এটাই প্রমাণ করা গেল না যে ঈশ্বর আছেন না নেই ।

আমাদের জেনারেশনকে আমার বরাবরই কনফিউজড লাগে । বিভিন্ন ব্যাপারে আমাদের যেন কোন সুষ্পষ্ট মতামত নেই । এত রকমের ভিন্ন ভিন্ন রকমের চিন্তাভাবনা চারিদিক থেকে আমাদের ঘিরে ধরে যে তাদের মধ্যে কোনটি গ্রহনযোগ্য সেটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারা যায় না । কখনও মনে হয় একপক্ষ ঠিক কখনও বা মনে হয় অপরপক্ষ । আবার বেশিরভাগ সময়েই মনে হয় উভয়পক্ষের কথাতেই যেন কিছু যুক্তি আছে । কাউকেই যেন উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না । ঈশ্বরের অস্তিত্বের ব্যাপারে ঠিক একই কথা মনে হয় । যাঁরা বলেন যে ঈশ্বর আছেন আর যাঁরা বলেন যে ঈশ্বর নেই তাঁদের উভয়ের কথার মধ্যেই অনেক যুক্তি রয়েছে । কারোর যুক্তিই পুরোপুরি নস্যাৎ করে দেওয়া যায় না ।

তবে ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমানে যে কথাগুলি প্রচলিত সেগুলি হল । আমরাই হচ্ছি ঈশ্বরের অস্তিত্বের সবচেয়ে বড় প্রমান । ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করেছিলেন বলেই আমরা আছি । না হলে আমাদের কোন অস্তিত্ব থাকত না । ঈশ্বর সর্বদা আমাদের অন্তরে অধিষ্ঠান করেন । তাই ঈশ্বরকে পেতে গেলে মন্দির মসজিদ বা গীর্জায় গিয়ে কিছু হবে না । নিজের অন্তরের মধ্যেই ঈশ্বরকে খুঁজতে হবে ।
কিন্তু এই ধরনের কথায় ঠিক যেন মন ভরে না । আমরা শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত মানুষ আমাদের চাই যুক্তি । কোন ধর্মগুরু কি কথা বলল বা কি ধর্মগ্রন্থে কি কথা লেখা আছে সেটা কখনও প্রমাণ হতে পারে না । পৃথিবীর বেশিরভাগ ধর্মগ্রন্থেই যা লেখা আছে সেগুলি যে ঠিক তারই বা প্রমান কি ? বা সেগুলি যখন লেখা হয়েছিল তার পরে সেগুলিকে কোন বদল করা হয় নি তারই বা নিশ্চয়তা কোথায় ? সেগুলি যখন লেখা হয়েছিলাম তখন তো আমরা এই পৃথিবীতে ছিলাম না । আর ধর্মগ্রন্থগুলিকে বিনা বিচারে মেনে নেওয়াটাও কি একধরনের গোঁড়ামি নয় ।

ধর্মগ্রন্থগুলি হল অনেকটা জ্যামিতির স্বতঃস্বিদ্ধের মত । প্রথমেই মেনে নিতে হবে কোন প্রমান ছাড়াই যে এইগুলি ঠিক । না হলে কোন অঙ্কই কষা যাবে না । বেশিরভাগ ধর্মেই আছে যে কোন অবস্থাতেই ধর্মগ্রন্থগুলির বিরুদ্ধে কোন প্রশ্ন তোলা যাবে না । বিনা বিচারে মেনে নিতে হবে এর সব কিছু । এই ব্যাপারটাই আমার আশ্চর্য লাগে । যাঁরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন তাঁরা তো এটাও তো বিশ্বাস করবেন যে মানুষের এই সভ্যতা মানুষের বিচার বিবেচনা বুদ্ধি সবই ঈশ্বরের দান । তাহলে মানুষ যদি তার বুদ্ধি বিবেচনা খাটিয়ে ধর্মের মূল বক্তব্যগুলি সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন তোলে তবে তা কেন গ্রহনযোগ্য হবে না ।

মানুষ সব সময়েই তার বুদ্ধি বিবেচনা খাটায় আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগেও খাটাত আর এখনও খাটায় । মনে রাখতে হবে যে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে অর্জুন কৃষ্ণের কাছে পুরো গীতা শোনার পরও তাঁর সংশয় কিন্তু কাটেনি তখন কৃষ্ণকে বাধ্য হয়ে বিশ্বরূপ দর্শন করাতে হয়েছিল । কে জানে হয়ত কৃষ্ণ অর্জুনকে হিপনোটাইজ করেছিলেন । অর্থাৎ পুরোপুরি বিশ্বাস আনতে গেলে চাই প্রত্যক্ষ প্রমাণ ।

অনেক সাধুসন্ত আর ধর্মগুরু কিন্তু এই প্রত্যক্ষ প্রমান দিয়েই মানুষের মনে বিশ্বাস আনেন । অর্থাৎ তাঁরা নানা রকমের ম্যাজিক দেখিয়ে সাধারন মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন ।

এখন দেখা যাক অন্যান্য অলৌকিক মতবাদের দিকে । যেমন মৃত্যুর পরে জীবন, আত্মা আর জন্মান্তর । অর্থাৎ এটা যদি মেনেও নেওয়া যায় যে মৃত্যুর পরে মানুষের আত্মা বেঁচে থাকে । আত্মা কখনও মরে না ইত্যাদি ইত্যাদি । কিন্তু তাতেও কিন্তু ঈশ্বরের থাকার পক্ষে কোন যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না । অর্থাৎ এরকম একটা জগতের কল্পনা সহজেই করা যায় যেখানে আত্মা আছে, পূর্ণজন্ম আছে । এমনকি ভূতও আছে কিন্তু কোন ঈশ্বর নেই । আমাদের এই জগতের পক্ষে একজন ঈশ্বরের থাকা বা না থাকা কি খুব জরুরি কিনা সেটা বোঝা যায় না ।

কমিউনিস্টদের ঈশ্বর সম্পর্কে মূল বক্তব্যটাও কিন্তু বেশ আকর্ষনীয় । তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে । ভগবান হল গরীব মানুষদের ভুলিয়ে রাখার জন্য বড়লোকদের একটা কায়দা । কথাটা কিন্তু একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয় । পৃথিবীর ইতিহাস ঘাঁটলে কিন্তু দেখা যায় ভগবানের নাম করেই বিভিন্ন দেশের শাসকেরা তাঁদের শাসন চালিয়ে গেছেন । ঈশ্বরের নামে শাসন করে তাঁরা দুর্বলদের উপর আধিপত্য চালিয়েছেন । দেশ শাসন করেছেন । রাজ্যজয় করেছেন । তাঁরা প্রচার করেছেন যে রাজা বা সম্রাট হচ্ছেন স্বয়ং ভগবানের অবতার বা তাঁর প্রতিনিধি । চার হাজার বছর আগেকার মিশরীয় ফারাওদের থেকে আরম্ভ করে মাত্র কয়েকদিন আগে পতন হওয়া নেপালের রাজা সবাই একই পথের পথিক। মাত্র কয়েক মাস আগেও নেপালে আইন ছিল যে রাজা হচ্ছেন ভগবান বিষ্ণুর অবতার তাই তিনি সকল আইন কানুনের উর্দ্ধে । কোন আইনই তাঁকে বন্দী করতে পারবে না । বিভিন্ন দেশে গরীব মানুষদের বলা হত তোমার রাজার সেবা কর কেননা তিনি ভগবানের অবতার ।

আবার মেয়েদের দমিয়ে রাখার জন্যও ঈশ্বরকে টেনে আনা হয় । তাঁদের বলা হয় তাঁদের স্বামীই হচ্ছেন তাঁর কাছে ভগবান । অর্থাৎ পতি পরম গুরু । অথবা ভগবানের ইচ্ছা এই যে স্ত্রীরা সবসময় তাদের স্বামীর সেবা করুক । কিন্তু পুরুষদের কাছে তাঁদের স্ত্রীদের অস্তিত্ব কেবল সেবাদাসীর থেকে আর কিছু বেশি নয় । আবার হিন্দু বা মুসলিম সব ধর্মেই আছে কোন পুরুষ যদি ভাল কাজ করে তাহলে সে মৃত্যুর পরে সে স্বর্গে বা বেহেস্তে যাবে । এবং স্বর্গে গিয়ে সে সেখানকার হুরি পরি আর অপ্সরাদের শরীর সম্ভোগের সুযোগ পাবে । কিন্তু কোন মহিলা সম্পর্কে এটা বলা নেই যে তারা যদি ভাল কাজ করে তাহলে মৃত্যুর পর স্বর্গে গিয়ে সে কয়টি পুরুষকে উপভোগ করতে পারবে ।

তা যাই হোক যার বিশ্বাস আছে সে ভগবানে বিশ্বাস করবে আর যার নেই সে করবে না । সেটাই আসল কথা । কিন্তু কোন কোন সময় সত্যিই মানুষের ভগবানের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যায় যখন তারা চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় । সম্প্রতি ইজরায়েলে পোল্যান্ডের একটি ইহুদি মেয়ের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ডায়েরি প্রকাশিত হয়েছে । সেখানে সে লিখেছে – যখন দেখি মানুষদের জীবন্ত অবস্থায় ফার্ণেসে ফেলে দেওয়া হচ্ছে । বাচ্চাদের জার্মান সৈন্যরা কেবল খালি হাতে মেরে ফেলেছে তখন ঈশ্বরের উপরে আর কোন বিশ্বাস থাকে না । যদি সত্যিই ঈশ্বর থাকতেন তাহলে কিছুতেই তিনি তাঁর সন্তানদের এভাবে মরতে দিতেন না ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মান নাজিরা প্রায় নব্বই লক্ষ মানুষকে কনসেনট্রেসন ক্যাম্পে মেরে ফেলেছিল । যাদের মধ্যে বহু শিশুও ছিল । যারা ঈশ্বর বিশ্বাসী তাঁদের মনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যদি ঈশ্বর থেকে থাকেন তাহলে তিনি কিভাবে এই অনাচার মেনে নিলেন । নাকি হয়ত ঈশ্বর আছেন কিন্তু মানুষের ভালমন্দে তাঁর কিছু এসে যায় না । ঈশ্বরবিশ্বাসীরা প্রায়ই একটা কথা বলেন যে ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্য । আমার জানতে ইচ্ছা হয় যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে ছয় কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল তাতে কার মঙ্গল হয়েছিল । টিভিতে মাঝেমধ্যেই দেখায় সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষের ছবি । হাজার হাজার মানুষ খেতে না পেয়ে যাদের হাত পা কাঠি হয়ে গেছে । বাচ্চাদের প্রত্যেকটি পাঁজরা গোনা যাচ্ছে । অথচ তাদের পেটটা বড় । যেকোন মূহুর্তে তারা মারা যেতে পারে স্রেফ না খেয়ে । তাদের এই অবস্থা তাও কি ঈশ্বরের করুণার দান । অথবা কয়েকবছর আগে সুনামিতে ইন্দোনেশিয়াম, ভারত, শ্রীলঙ্কা সহ আরো বহু দেশে যে হাজার হাজার মানুষ মারা গেল তাও কি ঈশ্বরের ইচ্ছায় হয়েছে ।

তাহলে আমাদের এই জগতে ঈশ্বরের কাজটা কি । তিনি কি একটা বাচ্চার মত যে নিজের খেলনা গুলো নিয়ে খেলে ছড়ায় ভাঙে আবার গুছিয়ে রাখে । যখন যা ইচ্ছা তখন তা করে । আর এই সমস্ত কাজের মধ্যে কোন যুক্তিবোধ কাজ করে না । নাকি আমাদের এই দুঃখ দুর্দশা আনন্দ সবই আসলে একটা ভ্রম । আমরা মনে করছি যে আমরা ভাল আছি বা খারাপ আছি । কিন্তু আমরা আসলে যা দেখছি বা শুনছি তা সবই মায়া । এই অনুভূতিগুলির বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই । আমরা স্বপ্ন দেখি যে আমরা খুব বিপদে পড়েছি আর ভগবানকে ডাকছি । কিন্তু ভগবান এলেন না । কিন্তু যখন আমাদের ঘুম ভাঙে তখন কি আমরা ভগবানের উপর অভিমান করি যে কেন তিনি আমাকে স্বপ্নের বিপদ থেকে বাঁচাতে এলেন না । কারণ আমরা জানি যে স্বপ্নের ভিতরে যে বিপদ আমাদের হয়েছিল সেটা ছিল একটা ভ্রম । তখন হয়তো আমাদের হাসি পায় । এই ব্যাপারটাও ঠিক তেমন নয়তো । নাহলে যে কোন যুক্তি দিয়েই পৃথিবীতে অনাচারগুলির কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না । কেনই বা মানুষে মানুষে এত বৈষম্য আর কেনই বা খুব অল্পসংখ্যক কিছু মানুষ পৃথিবীর সব সম্পদ ভোগ করে তার কোন ব্যাখ্যা মেলে না । কেন কিছু মানুষ সারাজীবন ধরে সুখভোগ করে আর কিছু মানুষের সারাজীবন কাটে দুঃখে যেখানে সব মানুষেরই ভগবানের কৃপা সমানভাবে পাওয়া উচিত ছিল ।

কেউ কেউ বলেন যে ভগবান মানুষকে দুঃখ কষ্টে ফেলে পরীক্ষা করেন যে তারা কতটা সহনশীল হয়েছে । কিন্তু ভগবানের এরকম খামখেয়ালিপনায় কি লাভ হয় সেটা কেউ স্পষ্ট করে বুঝিয়ে বলতে পারেন না । কোন মানুষ সে হয়ত জীবনে চরম কষ্ট পেয়েছে যা নরকযন্ত্রনারই সামিল সে তো বলতেই পারে যে হয়ত ঈশ্বর আছেন কিন্তু তাতে আমার কি । ঈশ্বর থেকেও তো আমার কোন উপকার হয়নি । তাহলে ঈশ্বর থাকুন তাঁর মতো । আর আমি থাকব আমার মত ।

তবে শেষ অবধি আমার যেটা মনে হয় সেটা হল ঈশ্বর হয়ত আছেন কিন্তু তিনি সর্বশক্তিমান নন । অর্থাৎ তিনি চাইলেই কোন মানুষের ভাল বা মন্দ করতে পারেন না । হয়ত লড়াই করার জন্য কিছুটা শক্তি যোগাতে পারেন । যেমন কেউ যদি একটুও পড়াশোনা না করে তাহলে কি কেবল ঈশ্বরকে ডেকে পরীক্ষায় পাস করতে পারে । না তা কোনমতেই সম্ভব নয় । ঈশ্বর কেবল তাকে ভাল পরীক্ষা দেবার জন্য কিছুটা মানসিক শক্তি যোগাতে পারেন । কিন্তু তাকে পাস করিয়ে দেবার ক্ষমতা তাঁরও নেই । ঈশ্বর যে সর্বশক্তিমান নন তার প্রমান হল আমাদের পুরান আর মহাকাব্যগুলি । সেগুলি পড়লে দেখা যায় যে ঈশ্বরের অবতার হিসাবে যাঁরা জন্মগ্রহন করেছিলেন তাঁদেরও ব্যক্তিগত জীবনে কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে । যেমন রাম অথবা কৃষ্ণ । স্বয়ং ভগবানের অবতার হয়েও রামকে চোদ্দ বছর বনবাস করতে হয়েছে । রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করার পরও তাঁর বিবাহিত জীবন সুখের হয়নি । আবার কৃষ্ণ এত রাজনৈতিক ভাবে শক্তিশালী হয়েও তাঁর নিজের বংশকেই ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে পারেননি । আবার যীশুখ্রীষ্টকেও কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে । ভগবানের প্রতিনিধি হয়েও তাঁকে ভয়ানক মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে । তাহলে কোনো খ্রীষ্টান তো ভাবতেই পারে যে ঈশ্বর যখন যীশুকেই রক্ষা করতে পারেননি তখন কিভাবে তিনি তাঁদের রক্ষা করবেন ।

তাই মনে হয় ভগবানের প্রতি আস্থার থেকেও যেটা দরকার বেশি সেটা হল নিজের প্রতি আস্থা । আর নিজের প্রতি আস্থার অভাব থাকলেই মানুষ যখন পরাস্ত হয় তখন সে ভগবানকে দোষারোপ করে । অথচ প্রত্যেক মানুষের ভিতরেই যদি ভগবানের প্রকাশ থাকে তাহলে নিজের প্রতি আস্থাই ভগবানের প্রতি আস্থায় রূপান্তরিত হয় আর সেই সময়েই একজন চরম নাস্তিক কিন্তু নিজের প্রতি আস্থাশীল একজন ব্যক্তি আসলে হয়ে ওঠেন একজন আস্তিক ।

Saturday, June 09, 2007

মহীনের ঘোড়াগুলি -- কলকাতা কলকাতা

মহীনের ঘোড়াগুলির আরো একটি দারুণ গান ।


Wednesday, June 06, 2007

মহীনের ঘোড়াগুলি -- মেরুন সন্ধ্যালোক

মহীনের ঘোড়াগুলির এই গানটি আগে কখনও শুনিনি ।


Sunday, June 03, 2007

পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে মিডিয়ার আলোড়ন প্রমাণ করে মিডিয়া কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন ।

একমাত্র মনে হয় আমাদের দেশেই পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোলে তা হয়ে যায় একটা খবর আর যারা ফার্স্ট সেকেন্ড হয় তারা হয়ে যায় সেলিব্রিটি ।

এর মধ্যেই বেরোল মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট । আর এই রেজাল্ট নিয়ে প্রত্যেক বছরের মত এবছরও দেখা গেল মিডিয়ার বাড়াবাড়ি । আমাদের দেশের মিডিয়া যে কত দায়িত্বজ্ঞানহীন তা প্রমান করে পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে তাদের এই অহেতুক প্রচারে । এখন আর বোর্ডের পক্ষ থেকে কোন মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয় না তবুও সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেলগুলি নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে ফার্স্ট সেকেন্ড থার্ড খুঁজে বের করে । যা আসলে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতিই করে ।

আর যে পরীক্ষায় পাঁচ ছয় লক্ষ করে পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয় এবং এক দুই নম্বরের ব্যবধানে অজস্র ছাত্রছাত্রী সেখানে দশ বা কুড়ি জনকে কেবল নম্বরের বিচারে বেছে নেওয়া নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছু নয় । প্রথম দশ বা কুড়ি জন নয়, প্রথম অন্তত দুশো জনের মধ্যে মেধার কোন ফারাক নেই ।

মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক বা সেন্ট্রাল বোর্ডের পরীক্ষাগুলি প্রত্যেক বছরই যথাসময়ে হবে এবং তাতে বহু ছাত্রছাত্রী পাস অথবা ফেল করবে । এটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা । এটা প্রত্যেক বছরেই ঘটবে । এই ঘটনা নিয়ে এত মাতামাতি করার কি আছে সেটা ভেবে পাওয়া যায় না । আসলে আমাদের দেশে শিক্ষার থেকে প্রতিযোগিতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় । আমরা আসলে ভুলে যাই যে শিক্ষা কোন প্রতিযোগিতার বিষয় নয় । ছাত্র ছাত্রীরা কি শিখেছে সেটাই সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত । তারা একে অপরের থেকে কত বেশি বা কম নম্বর পেয়েছে তাকে কখনই গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয় ।
আর মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক কখনই জয়েন্ট এন্ট্রান্স বা আইআইটির মত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা নয় ।

আর সব থেকে হাসি পায় উচ্চ মাধ্যমিকে যখন মেধা তালিকা তৈরি করার চেষ্টা করা হয় । উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকাতে দেখা যাবে প্রায় সবাই বিজ্ঞানবিভাগের ছাত্র ছাত্রী । সেখানে কলা বা বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের দেখা যায় না । তার মানে কি কলা বা বাণিজ্য বিভাগে কোন প্রতিভাবান ছাত্রছাত্রীরা পড়ে না । আসলে বিজ্ঞান বিষয়গুলিতে যত বেশি নম্বর পাওয়া সম্ভব তা কখনই কলা বা বাণিজ্য বিভাগের বিষয় গুলিতে পাওয়া সম্ভব নয় । ইতিহাস বা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে কি ৯০ শতাংশ নম্বর পাওয়া সম্ভব । মনে হয় না ।
তাহলে বোঝাই যায় যে উচ্চমাধ্যমিকের কখনই কোন মেধা তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব নয় । অথচ রিপোর্টাররা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রথম দ্বিতীয় স্থানাধিকারীদের খুঁজে বার করে এবং তাদের নিয়ে হল্লা আরম্ভ করে ।

কোন কোন সংবাদপত্র বা চ্যানেল আবার মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থানাধিকারীর নাম ঘোষনা করে । এটা প্রমান করে যে আমাদের মিডিয়া যাঁরা চালাচ্ছেন তাঁরা কতটা অশিক্ষিত এবং তাঁদের কমন সেন্স কতটা কম । মেধা কখনও মানুষের লিঙ্গের উপর নির্ভর করে না । আইনস্টাইন যদি পুরুষ না হয়ে মহিলা হতেন তাহলে কি তাঁর বুদ্ধি আর মেধা বেড়ে বা কমে যেত ?

এরপর প্রতিভাবান ছাত্রছাত্রীরা যখন হঠাৎ করে মিডিয়ার সামনে পড়ে তখন তারা যে মানসিক চাপের সম্মুখীন হয় তার ফলেও তাদের নানা রকমের সমস্যা চলে আসতে পারে । বহু মানুষের প্রশংসা আর পিঠ চাপড়ানি খেতে খেতে তাদের যদি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস চলে আসে তার ভবিষ্যৎ ফল খারাপ হতে বাধ্য ।