Sunday, May 28, 2006

ভারতে সংরক্ষনের কুফল

এরপর তো বেসরকারী চাকরিতেও সংরক্ষনের চেষ্টা করা হচ্ছে । তার মানে ভারতে বেশ কিছু লোক জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব জায়গাতেই সংরক্ষন পাবে । গত পঞ্চাশ বছরে সংরক্ষনের ফলে কোনো লাভই হয় নি । সেই ভুল ঢাকার জন্য আবার সংরক্ষন করা হচ্ছে । আর জাত পাতের ভিত্তিতে সংরক্ষন আরো মারাত্মক ব্যাপার । সংরক্ষন হওয়া উচিত আর্থিক অবস্থার উপরে ।
তবে যারা আন্দোলন করছে তারা সবাই যে ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার জন্য করছে এ আমার মনে হয় না । আমি তাদের বক্তব্য শুনেছি । তাদের কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে । জাতপাতের রাজনীতি পুরোদমে চালু করে মহাত্মা গান্ধীর কংগ্রেস মহাত্মাকেই উড়িয়ে দিয়ে দেশকে রসাতলে নিয়ে যেতে চাইছে । সাধে কি আর মহাত্মা গান্ধী দেশ স্বাধীন হবার পর কংগ্রসেকে উঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন ।

সংরক্ষন বিষয়ে আমার প্রশ্নগুলো হল ।

(১) যে পরিবারের এক জেনারেশন আগে সংরক্ষনের ফলে চাকরি পেয়েছে সেই পরিবারের সন্তান কেন আবার সেই একই সুবিধা পাবে । কারন সেই পরিবার তো আর আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে নেই ।
(২) সংরক্ষন কেন জাত পাতের ভিত্তিতে হবে কেন শুধু অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে হবে না ।
(৩) উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষন কেন করা হবে ? কেন এই পিছিয়ে পড়া ছাত্রদের প্রাইমারি স্কুল থেকেই যথাযথ শিক্ষার মাধ্যমে তৈরি করা হবে না যাতে তারা উচ্চশিক্ষায় বিশেষ সুবিধা ছাড়াই সবার সমান হতে পারে ।
(৪) গরীব উচ্চবর্ণের মানুষরা কেন বঞ্চিত হবেন। তাঁদের কি একটাই অপরাধ যে তাঁদের জন্ম উচ্চবর্ণে ।
(৫) গত পঞ্চাশ বছরে যখন সংরক্ষন নীতির ফলে কোনো উপকার হয়নি তখন কেন এই ভ্রান্ত নীতিকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ।
(৬) পিছিয়ে পড়া অন্য ধর্মের মানুষদের জন্য কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে ?

ডঃ বি আর আম্বেদকর, মহাত্মা গান্ধী, বিবেকানন্দের ভারতে বর্তমানে যে শুধু ভোট টানার জন্যই এই সংরক্ষনের আয়োজন তা বুঝতে কারো বাকি নেই । এমনকি মানুষের মধ্যে সাম্যের কথা যারা প্রচার করে সেই কমিউনিস্টরাও একে সমর্থন করছে । ভারতীয় কমিউনিস্টদের দুমুখো নীতির এও আরেক প্রমান । আজও ভারতের হিন্দুদের মধ্যে পুরুষ ব্রাহ্মন ছাড়া আর কারো উপাসনার অধিকার নেই । শিক্ষিত মানুষেরাও বিয়ে করেন জাতপাত দেখে, এই সংরক্ষন ষে সেই জাতপাতকেই আরো উসকে তুলেবে তাতে কোন সন্দেহ নেই । আধুনিক প্রযুক্তির ভারত, সোনালী চর্তুভুজের ভারতের পিছনে তার অন্ধকার দিক এখনও কতটা শক্তিশালী তা আরো একবার প্রমান হল ।

সংরক্ষনের বিরুদ্ধে সরব হোন । প্রমান করুন আপনি দেশকে ভালোবাসেন ।

Friday, May 26, 2006

আমির খানের ফনা

দা ভিঞ্চি কোড নিয়ে বিতর্ক শেষ না হতেই আবার আমির খানের ফনা নিয়ে সারা দেশে বিতর্ক তুঙ্গে ।
কেউ আমির খানের সাথে একমত না হতেই পারেন তবে তার সাথে তার ফনার সম্পর্ক কি এটাই আমার মাথায় ঢোকে না ।আর কারোর যদি এই সিনেমা দেখতে ইচ্ছে না হয় দেখবেন না কিন্তু অন্য কেউ দেখবে কি দেখবে না সেটা তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার । অন্যের স্বাধীনতায় আঘাত করাই হচ্ছে অপরাধ আর ভারতে রাজনৈতিক দলগুলো এই অপরাধ বারে বারেই করে চলেছে । এর থেকে বিজেপি, কংগ্রেস বা সিপিএম কেউই মুক্ত নয় । মনে হচ্ছে বাকস্বাধীনতা ব্যাপারটা ভারতে অধরাই থেকে যাবে । এখন গুজরাটে ফনার মুক্তি আটকানো গেলেও যখন বছর খানেক পরেই বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে এই সিনেমা প্রদর্শিত হবে তখন তাকে এরা কিভাবে আটকাবে

Tuesday, May 23, 2006

আমার পছন্দের দশটি ইংরাজী সিনেমা

এই পোস্টে আমি আমার এপর্যন্ত দেখা সবচেয়ে পছন্দের দশটি হলিউডের সিনেমার তালিকা দিলাম । এখানে আমি সিনেমার সিরিজ গুলোকে একটি সিনেমা হিসাবেই ধরছি । আপনারা যাঁরা কমেন্ট দেবেন তাঁরাও তাঁদের দেখা পছন্দের দশটি সিনেমার তালিকা দিন । যাতে সবাই সেই সিনেমা গুলো দেখতেও আগ্রহী বোধ করে ।

(১) রোমান হলিডে
(২) দ্য লাস্ট এমপেরর
(৩) স্টার ওয়ারস সিরিজ
(৪) ম্যাট্রিক্স ট্রিলোজি
(৫) সেভিং প্রাইভেট রায়ান
(৬) লর্ড অফ দ্য রিংস ট্রিলোজি
(৭) দ্য লায়ন কিং
(৮) রাম্বো ৩
(৯) ট্রু লাইজ
(১০) টয় স্টোরি (১ ও ২)

যে সিনেমাগুলো অল্পের জন্য তালিকায় এলো না :- গডফাদার সিরিজ, ইন্ডিয়ানা জোনস সিরিজ, শ্রেক ১ ও ২, ফাইন্ডিং নেমো, দ্য টেন কমান্ডমেন্টস, বেনহার, দ্য গুড দ্য ব্যাড এন্ড দ্য আগলি, ফরেস্ট গাম্প,
ই.টি., ও বেশ কিছু জেমস বন্ড সিনেমা ।

Monday, May 22, 2006

ল্যাজ-কাহিনী

আমার বঙকমেট ব্লগ থেকে এই পদ্যটা তুলে দেওয়া গেল
ল্যাজ-কাহিনী

আমার একটা ল্যাজ ছিল
কেমন সুন্দর দুলতাম ।
রাতের বেলায় গুটিয়ে রেখে
সকাল বেলায় খুলতাম ।
বাসে ট্রামে প্রচুর ভিড়ে
ল্যাজটা দিত কাজে ।
হাত ফসকিয়ে গেলেও তো ভাই
ল্যাজ ফসকাতো না যে ।
অফিসেতেও ল্যাজটা আমার
থাকতো নাকো বসে ।
মাউস খানা ঠিক করে সে
ধরত এঁটে কষে ।
ল্যাজের জন্য আমার ভাই
নাম হয়েছিল বেশ ।
তখন যদি জানতেম
এটাই হবে শেষ ।
হঠাৎ একদিন অফিসে
পেলাম একটা ফ্যাক্স ।
ল্যাজের জন্য আমায় নাকি
দিতেই হবে ট্যাক্স ।
ট্যাক্স দিয়েও ঝামেলার
হল নাকো অন্ত ।
পুলিশ এল বাড়িতে
বিকশিত দন্ত ।
মানুষের ল্যাজ নাকি
বেআইনী কাজ ।
শুনে আমার মাথায়
পড়ল যেন বাজ ।
কিছুই হল নাকো
অনেক করেও হাঁটা ।
কয়েকদিন বাদেই আমার
ল্যাজটা গেল কাটা ।

Friday, May 19, 2006

আমার প্রিয় অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস্

বেশিরভাগ মানুষের মত আমিও প্রথমে হলিউডের স্পেশাল এফেক্টে ভরপুর সিনেমা দেখতেই বেশী আগ্রহী ছিলাম । জুরাসিক পার্ক, হলো ম্যান, মমি, গডজিলা এইসব সিনেমাই স্কুল ও কলেজ জীবনে বেশী দেখতাম । শুধু অভিনয় সমৃদ্ধ সিনেমা বেশি দেখার সুযোগ হয় নি ।

টম হ্যাঙ্কসের প্রথম যে সিনেমাটা আমি দেখি তা হল ফরেস্ট গাম্প । এক বিকলাঙ্গ শিশুর সেরে ওঠা আর তার পরবর্তী কালের জীবন নিয়ে তৈরী এক মাস্টারপিস । টম হ্যাঙ্কস যে কত বড় অভিনেতা তার প্রমান এই সিনেমার প্রতিটি দৃশ্যে ছড়িয়ে আছে । এই সিনেমার জন্য তিনি অস্কার জিতে নিয়েছিলেন ।

পরবর্তী যে দুটো ছবির নাম আমি করব তা হল কাস্ট এওয়ে আর সেভিং প্রাইভেট রায়ান ।

কাস্ট এওয়েতে টম হ্যাঙ্কস এক কুরিয়ার সার্ভিস অফিসার । তাঁর প্লেন ভেঙে পড়ে মাঝ সমুদ্রে । কোন রকমে প্রানে বেঁচে গেলও তাঁকে বেশ কয়েকবছর কাটাতে হয় এক নির্জন দ্বীপে । এক শহুরে আধুনিক মানুষকে কিভাবে প্রাচীন যুগের মানুষের জীবনযাত্রায় মানিয়ে নিতে হয় তা দুর্দান্ত ভাবে অভিনয়ে ফুটিয়েছেন টম হ্যাঙ্কস । একটা বাস্কেটবলের গায়ে মুখ চোখ এঁকে নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য তার সাথেই বকবক করে যান তিনি । এই গল্পের সাথে অনেকটাই মিল রয়েছে রবিনসন ক্রুশোর গল্পের । কিন্তু সভ্য জগতে ফিরে আসার পরেও টম হ্যাঙ্কসের গল্প শেষ হয় না । ফিরে এসে দেখে সব কিছুই অনেক পালটে গেছে । প্রেমিকা বিয়ে করেছে অন্য পুরুষকে । সিনেমা শেষ হয় এক নির্জন গ্রাম্য চৌরাস্তায় টমের একা দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে । বোঝা যায় নিঃসঙ্গতার বোঝা কাঁধে টম এখনও বাস করছে এক নির্জন দ্বীপে ।

সেভিং প্রাইভেট রায়ান আমি যে কতবার দেখেছি তা গুনে শেষ করতে পারব না । যুদ্ধ নিয়ে আমার দেখা সেরা সিনেমা এটা । সিনেমার শুরুতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্সের নর্মান্ডি উপকূলে যে ভয়াবহ যুদ্ধের দৃশ্য আছে তা একবার দেখলে বহুদিন ভোলা কঠিন । তারপরের দৃশ্যেই দেখা যায় আমেরিকার যুদ্ধ অফিসে প্রচুর চিঠি টাইপ করা হচ্ছে । যারা মারা গিয়েছে তাদের বাড়িতে চিঠি পাঠানো হয়েছে । এই সময় হঠাৎ এক ক্লার্ক ছুটে আসে হাতে তিনটি কাগজ নিয়ে । ঘটনা হল এক রায়ান পরিবারের চার ছেলের মধ্যে তিন ছেলেই পৃথিবীর তিন জায়গায় যুদ্ধে মারা গিয়েছে । এবং তাদের মায়ের কাছে একই দিনে তিনটি চিঠি পাঠানো হচ্ছে ।

অফিসার জানতে চান এই মায়ের চতুর্থ ছেলের খবর কি । জানা যায় তাকে ইউরোপের কোথাও প্যারাশুটে করে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে । তারপর তার আর কোন খবর নেই । অফিসার ঘোষনা করেন এখন রাষ্ট্রের কর্তব্য হচ্ছে এই ছেলেকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া ।

এই কাজের দায়িত্ব পড়ে ফ্রান্সের নর্মান্ডি উপকূলে পোস্টিং থাকা টম হ্যাঙ্কসের উপর । তারপর কিভাবে টমের নেতৃত্বে একটা দল সেই ছেলেকে খুঁজে বার করে এবং শেষ অবধি টমকে প্রান দিতে হয় এই হল ছবির বিষয় । অসাধারন যুদ্ধের দৃশ্য তার সাথে টমের দুরন্ত অভিনয় এই ছবির সম্পদ ।

এপেলো থার্টিনে টম এক এমন নভশ্চরের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন যাকে চাঁদের কাছাকাছি গিয়েও যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য ফিরে আসতে হয় । সত্যি ঘটনা অবলম্বনে তৈরী এই ছবিও টমের প্রতিভার উজ্জ্বল সাক্ষর বহন করে ।

ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান সিনেমায় টম এক পুলিশ অফিসার যে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ায় এক ধুরন্ধর চেক জালকারী জালিয়াত লিওনার্দো দি কাপ্রিও কে । কিন্তু লিওনার্দো প্রতিবারই চোখে ধুলো দিয়ে পালায় । শেষে অবশ্য ধরা পড়ে এবং শেষ অবধি টমেরই সাহায্যে সে মূলস্রোতে ফিরে আসে আর এফবিআই এর হয়ে কাজ করতে থাকে । এবং একদিন চেক জাল আটকাতে এবং নতুন উন্নত চেক ডিজাইনের ক্ষেত্রে এক বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত হয় । এই সিনেমার মূলেও রয়েছে এক সত্যি ঘটনা ।

দ্য টার্মিনাল সিনেমায় টম এক পূর্ব ইউরোপের দেশ থেকে নিউ ইয়র্কে আসে এক বিখ্যাত স্যাক্সোফোনিস্টের সই সংগ্রহ করতে । কিন্তু তার প্লেনে যাত্রার সময়ে তার দেশের সরকারের পতন হয় । তার ফলে টমের পাসপোর্টটি অকেজো হয়ে যায় । এরপর টম না পারে আমেরিকাতে ঢুকতে না পারে দেশে ফেরত যেতে । তাকে প্রায় নয় মাস আটকে থাকতে হয় এয়ারপোর্টের টার্মিনালের ভিতরে । এই সময় তার সাথে এয়ারপোর্টের কর্মীদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে । এই সময় এক মহিলা যার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ক্যাথারিন জিটা জোনস, তার সাথেও টমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে । তারপর কিভাবে টম সেই সই সংগ্রহ করে এবং দেশের দিকে রওনা দেয় তা নিয়েই এই গল্প ।

এই সপ্তাহেই রিলিজ হচ্ছে টমের নতুন বিতর্কিত সিনেমা দা ভিঞ্চি কোড ।

যার রিলিজ নিয়ে ভারতে আবার দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে । এই বোকা বোকা ব্যাপারগুলো দেখলে সত্যিই আমার হাসি পায় । কবে যে ভারতের মানুষ একটু প্রাপ্তবয়স্কের মত আচরন করবে তা কে জানে । কে কি দেখবে না দেখবে তার স্বাধীনতা প্রত্যেক মানুষেরই থাকা উচিত । আর যেখানে দেশ ভরে উঠেছে বেআইনী পাইরেটেড সিডি আর ডিভিডিতে । যে কোন রকম পর্ণো সিনেমা খুব সহজেই পাওয়া যায় । সেখানে এই সেন্সর বোর্ডের কাজকম্ম একেবারেই বেমানান । প্রতিটি সিনেমাকে শুধুমাত্র বয়সের সার্টিফিকেট দিয়েই ছেড়ে দেওয়া উচিত কোন কাটছাঁট না করেই এই সহজ সত্যটা বহু লোকই মেনে নিতে পারে না ।

টম হ্যাঙ্কসের বেশকিছু ভালো সিনেমা এখনও আমার দেখা হয় নি । যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফিলাডেলফিয়া । এই সিনেমাতে টম এক এইডস রোগীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন । যার জন্য তিনি অস্কার পান । ফরেস্ট গাম্প আর ফিলাডেলফিয়ার জন্য টম পর পর দুবছর সেরা অভিনেতার অস্কার পান যা তাঁর কেরিয়ারকে তুঙ্গে পৌছে দেয় ।

Wednesday, May 17, 2006

আমার দ্বিতীয় অফিস

লোকের সাধারনত প্রথম অফিসের কথা বেশি করে মনে থাকে । আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম । নানা কারনে আমার দ্বিতীয় অফিস আমার মনে দাগ কেটেছে ।

আমার প্রথম চাকরি একাশি দিনের মাথায় ছেড়ে দেবার পর বাড়িতে প্রায় নিষ্কর্মাই বসে ছিলাম । তারপর একদিন সন্ধ্যাবেলায় আমার বন্ধুর ফোন এল । কোন একটা অফিসে কনট্রাক্টে কাজ হতে পারে । পরদিন আকাডেমীর সামনে দাঁড়াতে বলল । তার কথা মত পরদিন আকাডেমী অফ ফাইন আর্টসের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম । তাকিয়ে দেখলাম চারিদিকে পোস্টারের ছড়াছড়ি । আকাডেমীর ডিরেক্টরকে বানর সম্বোধনে ভূষিত করে অনেক পোস্টার পড়েছে । একটু পরেই আমার সেই বন্ধু এল । তার সাথে বাসে চেপে সেই অফিসে এসে হাজির হলাম । একটি পুরনো দিনের ফ্ল্যাট বাড়ির পাঁচতলায় সেই অফিস । বিরাট দরজা জানলা, উঁচু ছাদ, পুরনো আমলের পাখা আর সুইচ । তার মধ্যেই কমপিউটার সাজিয়ে অফিস করা হয়েছে । কলকাতায় আধুনিক অফিসের সাথে কোনভাবেই খাপ খায় না । আমরা গ্রাফিক ডিজাইনার । আমি একটি সিডি বার করে ম্যানেজার মশাই এর হাতে দিলাম । দেখে বুঝলাম ম্যানেজার মশাই অফিসের সর্বেসর্বা । গোঁফদাড়ি কামানো বেশ পরিচ্ছন্ন মুখ । প্রায় চল্লিশ বছর বয়েস হবে । সিডিটা কমপিউটারে চালিয়ে আমার কাজ দেখলেন । অফিসে আরেকজন রয়েছে যাকে দেখে ম্যানেজার মশাইয়ের চ্যালা বলে মনে হল । যাকে আমরা সু-দা বলে ডাকব । তার সূত্রেই আমার বন্ধু আমাকে নিয়ে এসেছে । এরপর আমাদের জানানো হল এটা একটা কর্পোরেট কাজ । খুব তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে । এখন রিসার্চ ওয়ার্ক চলছে । কয়েকদিনের ভিতরেই জানানো হবে কবে থেকে কাজ আরম্ভ হবে । অফিসে আরো একজনকে দেখলাম ।বেশ নাটা চেহারা । গোল মুখ । গোল চোখ । ছোট ছোট করে ছাঁটা চুল । ইনি নাকি ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর । দেখে মনে হল বেশ কনফিউজড মানুষ । একটা সাধারন কথা বলতে গিয়ে তিনবার হোঁচট খাচ্ছেন । ইনি হলেন র-দা ।

যাই হোক প্রাথমিক কথাবার্তা সেরে বাড়ি ফিরে এলাম । কয়েকদিন বাদেই আমাদের ডাকা হল । এবং কাজও আরম্ভ হল ।

কাজে এসে পরিচয় হল আরো একজনের সাথে । ইনি হলেন তু-দা । দেখেশুনে বুঝলাম তু-দার অফিসে সেরকম কোনো কাজ নেই । কেবলি এদিক ওদিক ঘুরঘুর করছেন । ম্যানজার মশাই বললেন তু- হল আমাদের অফিসের ট্রাবলশুটার ।

দুপুর বেলা মাঝে মাঝে দেখতাম তু-দা সোফায় বসে ঘুমোচ্ছেন । আমাদের ধারনা ছিল একমাত্র সরকারি অফিসেই দুপুরবেলা নাক ডাকিয়ে ঘুমোনো যায় । এখানে এসে দেখলাম সেরকম ভাগ্য হলে প্রাইভেট চাকরিতেও এ সুখ পাওয়া যেতে পারে ।

ওই ফ্ল্যাটের ভিতরে দুটি অফিস ছিল । দুই ভায়ের দুই অফিস । আমরা বড় ভাইয়ের অফিসে কাজ করতাম । আর ছোট ভাইয়ের অফিসে ছিল প্রচুর সুন্দরী মেয়ের আনাগোনা । প্রায়ই দেখতাম নিত্যনতুন মেয়ে আসছে । তারা কতক্ষন কাজ করত আর কতক্ষন মোবাইলে আড্ডা দিত তা তারাই জানে । সবসময়েই দেখতাম আমদের ঘরের সামনে দিয়ে তারা মোবাইলে কথা বলতে বলতে পায়চারি করছে ।

অফিসের ভেতরের পরিবেশটা কেমন ছিল একটু বলি । অফিসের ভেতরে দেখলাম সবাই বাংলা ইংরাজি এবং হিন্দিতে কাঁচা কাঁচা খিস্তি ব্যবহার করছে । কেউ কাউকে যে সরাসরি দিচ্ছে এমন নয় । বেশিরভাগই আড়ালে অথবা উড়ো দেওয়া হচ্ছে ।

দুটো নতুন বাচ্চা ছেলের সামনে এরকম গালাগালির জোয়ার ম্যানেজার মশাইয়ের বোধহয় একটু কিন্তু কিন্তু লাগছিল । তিনি আমাদের বললেন - আমাদের এখানে কিন্তু একটু গালাগালি চলে তোমাদের কোনো অসুবিধে নেই তো । আমরা বললাম না নেই ।

তারপর কাজ এগোতে লাগল । র-দা নিয়মিত ভাবে আমদের কনফিউজড করতে লাগলেন । একই ডিজাইন আমরা হাজার বার করে বানাতে লাগলাম । প্রায়ই ডিজাইন দেখে র-দা বলতেন ভালই হয়েছে বাট আই থিঙ্ক সামথিং ইজ রং । এই সামথিং ইজ রং টা যে কি তা কোনোদিনই তিনি বলতে পারতেন না ।

অফিসে একটা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একশো বছরের সিডির সেট ছিল । একপেটি সিডি যা কখনও খোলা হয় নি । সেটা দেখে আমাদের ভীষন লোভ লাগল । যেভাবেই হোক সিডিগুলোকে রাইট করে নিতেই হবে । আমরা বললাম ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের সিডিগুলো আমাদের লাগবে । কারন ওগুলো থেকে অনেক ভালো ভালো ছবি পাওয়া যেতে পারে । এইবলে পেটিটা খোলা হল এবং ওগুলো আমরা আস্তে আস্তে রাইট করে নিলাম । তারপর আবার বললাম না এগুলো থেকে বিশেষ কিছু পাওয়া গেল না । ওগুলো তুলে রাখুন ।

অফিস থেকে আরও কিছু পিকচার সিডির সেট বেশ কিছু গান ইত্যাদিও সংগ্রহ করা গেল ।

এরপর একদিন মালিক এলেন অফিসে । বেশ লম্বা চওড়া মুসকো চেহারা । বিরাট শিল্পপতির ছেলে । এনার আসল ব্যবসা নাকি কম্পানি কেনাবেচা করা । প্রচুর টাকার মালিক অথচ অফিসে এসেছেন একটা ছেঁড়া জামা আর চটি পরে অথচ একটা দামী গাড়ি চেপে । আমাদের নামটাও একবার জিগেস করলেন না দেখে বেশ খারাপ লাগল । পরে অবশ্য বুঝেছিলাম । ভদ্রলোক ভালই ।

কাজ যতই এগোতে লাগল অফিসে গন্ডোগোল তত বাড়তে লাগল । এই সময় দুজন ভদ্রলোক র-দা২ আর পা-দা অফিসে এলেন কিছু ভিডিও এডিট করার কাজে । তাঁদের সাথেও আমাদের আড্ডা বেশ জমে উঠল । এদিকে কাজের ডেডলাইন পেরিয়ে প্রায় একমাস হয়ে গেছে । তাই আমদের প্রত্যেক রোববারেও অফিসে যেতে হত । অবশ্য রোববারে অফিসে খাওয়াটা পাওয়া যেত ।

অফিসে কাজ করতে করতে বোঝা গেল এই অফিসটি আসলে উঠে যেতে চলেছে । উঠে যাবার আগে এটাই শেষ প্রজেক্ট ।

মানে প্রদীপ নিভে যাবার আগে যেমন হঠাৎ দপ করে জ্বলে ওঠে সেরকম আর কি । আমাদের সামনেই অফিসের কমপিউটার টেবিল চেয়ার বিক্রির আলোচনা হতে লাগল । আমাদের কেরিয়ারের শুরুতেই আমরা দেখলাম কিভাবে একটা অফিস আস্তে আস্তে উঠে যায় ।

অফিসে সবার সাথে সবার গন্ডোগোল বাড়তে লাগল । অবশ্য আমাদের সাথে সবার সম্পর্ক ভালোই ছিল । খালি একদিন আমার বন্ধুর সাথে ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর র-দার ঝগড়া বেধে গেল । আমরা তো এখানে চাকরি করি না কয়েকদিনের কনট্রাক্টে এসেছি । সুতরাং আমাদের উপর টেম্পার নিলে আমারাই বা ছাড়বো কেন । তবে র-দা লোকটা এমনিতে মন্দ নয় । তখন কিছু ব্যক্তিগত কারনে মেজাজটা ওনার খিঁচড়ে ছিল ।

ম্যানেজার মশাই অফিসে না থাকলে সবার সাহস একটু বেড়ে যেত । একদিন দেখলাম সবাই মিলে ভরদুপুরে অফিসে বিয়ার খাচ্ছে । অফিসে একএক জনের জন্য এক এক রকম নিয়ম ছিল । কেউ কেউ যেমন র-দা এবং নতুন দুই এডিটর অফিসের পয়সাতেই ভালমন্দ সাঁটাতো । কিন্তু আমরা বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে যেতাম অথবা পিয়নকে টাকা দিয়ে আনিয়ে নিতাম ।

এই নিয়েও কিছু অশান্তি হয় । পরে নাকি মালিক আর ম্যানেজার মশাইয়ের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক হয় যে র-দার টাকা থেকে নাকি তাঁর রোজকার চোব্যচোষ্যের টাকা বাদ দেওয়া হবে । তবে সেটা হয়েছিল কিনা সেটা ঠিক জানা নেই ।

আশা করি এতক্ষনে সবাই বুঝতে পেরেছেন কেন এই অফিসটা আমার মনে দাগ কেটেছে । কলকাতা শহরে এরকম অফিস আর আছে কিনা তা জানা নেই । যাই হোক বহু ঝামেলার পর নানা জোড়াতালি দিয়ে প্রজেক্টটা মোটামুটি শেষ করে আনা হয় । সু-দার সাহায্যে আমি আর একটা অফিসে ইনটারভিউ দিয়ে চাকরি পেয়ে যাই তাই প্রজেক্ট শেষ হবার প্রায় দিন পনেরো আগে আমি এই অফিস ছেড়ে দিই ।

আমার বন্ধু শেষ দিন অবধি ছিল । তার কাছে যা শুনেছি শেষ দিন অফিসে গিয়ে সে দেখে অতবড় অফিস পুরো খাঁ খাঁ করছে । সব কমপিউটার, আসবাব বিক্রি করে আছে । অফিসে বসবার মত কোন চেয়ারও অবশিষ্ট নেই । সবাই দাঁড়িয়ে আছে । আমার বন্ধুর আশা ছিল পড়ে থাকা কিছু ঝড়তি পড়তি মাল যেমন কিছু ভাল ছবি আর বই সে বাড়ি নিয়ে আসবে । কিন্তু সে কিছুই পেল না । সবই ম্যানেজার মশাই নিয়ে গেলেন ।

তারপর ফ্ল্যাটের মালিক এলেন । ফ্ল্যাটের চাবি তাঁর হাতে দিয়ে দেওয়া হল । এবং এই অফিসে বরাবরের মত তালা পড়ল। এইভাবে এই প্রজেক্ট শেষ হল ।

Thursday, May 11, 2006

পাকিস্তান blogspot.com কে ব্লক করেছে

আজ উইকিপিডিয়া ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাৎ একটা খবর চোখে পড়ল । পাকিস্তান নাকি blogspot.com কে ব্লক করেছে । অর্থাৎ পাকিস্তান থেকে কোনো blogger.com এ হোস্ট করা ব্লগ দেখা যাবে না । কোনো কোনো ব্লগে নাকি ইসলাম বিরোধী কার্টুন ও লেখা প্রকাশিত হওয়াতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । যেহেতু অধিকাংশ ব্লগস্পট ব্লগ গুলি একই সার্ভার থেকে চলে তাই এদের আইপি ঠিকানা এক । তাই মাত্র কয়েকটি ব্লগকে ব্লক করতে গিয়ে পাকিস্তান সরকার সমস্ত ব্লগস্পট ব্লগকেই আটকে দিয়েছে । এর ফলে বহু পাকিস্তানি ব্লগার আর ব্লগে পোস্ট করতে পারছেন না এবং তাঁরা কোনো ব্লগস্পট ব্লগও দেখতে পাচ্ছেন না ।
পৃথিবীর বহু দেশেরই সরকার দেশের মানুষের কাছে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে চায় না । তারা সমস্ত মিডিয়াকেই সেন্সর করে দেশের মানুষের কাছে সত্যকে গোপন করতে চায় । কিন্তু ইন্টারনেটের যুগে তাদের এই সব চালাকি আর খাটে না । বাস্তবে যে কোনো ওয়েবসাইটকে কোনো ভাবেই যে আটকানো যায় না তা এরা বুঝতে পারে না । যেমন পাকিস্তান সরকারের এই গাধার মতো সিদ্ধান্তের মোকাবিলা করতে একটি প্রক্সি ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে pkblogs.com । এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যেকোন ব্লগস্পট ব্লগকে দেখা সম্ভব । আর যদিও বা কোনোভাবে এই পাতা গুলোকে আটকানো যায় বিদেশে বসবাসরত কেউ যদি এগুলোকে ডাউনলোড করে তা মেল করে দেন দেশের বন্ধুর কাছে তা কি কোনো সরকারের পক্ষে আটকানো সম্ভব ।
আমাদের ভারত সরকারও অবশ্য এসবে কিছু কম যান না । তারা একসময় ফ্যাশন টিভির ওয়েবসাইটের থেকে সাম্বা নাচ ব্লক করেছিল । ভারত সরকার দ্বারা নিষিদ্ধ বহু বই খুব সহজেই ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে পড়া যায় ।
এছাড়া অন্যান্য দেশের ভিতর চীনও খুব চেষ্টা করছে ইন্টারনেটকে সেন্সর করার তারা কতটা পারে তা দেখার বিষয় । তবে আমাদের কাছে ইন্টারনেট সবসময়েই একটা উত্তেজক বিষয় কারন এখানেই পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবার মানুষ একটু স্বাধীনতা পেয়েছে । তা সে নিজের স্বাধীন মতামত দেওয়ার জন্যই হোক আর পর্ণোগ্রাফি দেখার জন্যই হোক ।



Wednesday, May 10, 2006

পশ্চিমবাংলায় লোডশেডিং

ছোটবেলা থেকেই লোডশেডিং নামক এক দানবের আক্রমনে বার বার পর্যুদস্ত হয়েছি । ছোটবেলায় আমার ধারনা ছিল লোডশেডিং একটা ইংরেজী শব্দ, কিন্তু পরে জেনেছি এটা আসলে একটা লোকমুখে প্রচলিত শব্দ । এর ইংরাজী প্রতিশব্দ হচ্ছে পাওয়ার কাট । যদিও পরে ইংরাজী খবরের কাগজেও লোডশেডিং কথাটা ব্যবহার হতে দেখেছি । আমার ছোটবেলা, মেজোবেলা এবং বড়বেলার সঙ্গে লোডশেডিং অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত । পড়তে বসলেই লোডশেডিং হয় । টিভিতে ভাল কিছু দেখতে গেলেই লোডশেডিং হয় । গরমের রাত্রিতে লোডশেডিং হয় । আমার জীবনের প্রায় প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাই আমি হ্যারিকেনের আলোতে পড়ে দিয়েছি । আমার কিরকম যেন মনে হয় লোডশেডিং হল একটা টাইম মেশিনের মত যা আমদের প্রায় একশো বছর আগে ঝট করে নিয়ে ফেলে ।
আমি হায়ার সেকেন্ডারি যে স্কুলে পড়তাম সেই স্কুলের এক মাস্টারমশাইকে নিয়ে একটা মজার গল্প প্রচলিত আছে । গল্পটা হচ্ছে এইরকম মাস্টারমশাইয়ের বাড়িতে একটা ঘরে তিনি প্রাইভেট টিউশন পড়াচ্ছেন । পাশের ঘরে তাঁর মেয়ে গান গাইছে এবং তার সঙ্গে একজন তবলচি তবলা বাজাচ্ছে । এমন সময় হঠাৎ লোডশেডিং হয়ে গেল । স্বভাবতই অন্ধকারে মেয়ে গান থামিয়ে দিল আর তবলচিও তবলা বাজানো বন্ধ করল । হঠাৎ মাস্টারমশাই হেঁকে তবলচিকে বললেন - ওহে তবলা বাজানো বন্ধ কোরো না, ওটা বাজিয়ে যাও ।
আরেকবার আরেক মাস্টারমশাইয়ের বাড়িতে পড়ানোর সময়ে লোডশেডিং হয়েছে । আর জেনারেটরের আলো আসতে দেরী হচ্ছে । এমন সময়ে ছেলেরা আলোচনা করছে মাস্টারমশায়ের সামনেই - কি রে আলো আসছে না কেন রে ? তোর জেনারেটরের হ্যান্ডেল মার, নাকি তোর জেনারেটরের তেল নেই । এইসব কথার গ্যূঢ অর্থ বোধহয় কাউকেই বুঝিয়ে বলার দরকার নেই ।
লোডশেডিং এর দানব এখনও আমাকে তাড়া করে ফেরে । এখন এটা আরও অসহনীয় হয়েছে । টিভি নেই, কমপিউটার নেই, ইন্টারনেট নেই, তবুও যে ফোন আর মোবাইল কাজ করে তাই অনেক । এখন সিডি বা ডিভিডি রাইট করার সময় কেবলই টেনশন হয় এই বুঝি লোডশেডিং হল আর আমার সিডি বা ডিভিডিটা মায়ের ভোগে গেল । এখন লোডশেডিং হলে অন্ধকারে বিছানায় শুয়ে থাকি আর ভাবতে থাকি এটা ২০০৬ সাল না ১৯০৬ সাল ।
আমাদের বাড়িতে এখন রঙিন টিভি, কমপিউটার, ইন্টারনেটের পাশাপাশি হ্যারিকেন আর হাতপাখার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আছে । এটাই বোধহয় আধুনিক ভারতের ছবি ........



Friday, May 05, 2006

মহাভারত কথা

ইচ্ছে হচ্ছে আজ একটু মহাভারত নিয়ে লিখি । শুনে অনেকেই হয়তো ভাবছেন সেকি শেষ পর্যন্ত এত রকমের জিনিস থাকতে শেষ পর্যন্ত মহাভারত ! আমার প্রশ্ন হচ্ছে এখনকার দিনে কতজন মহাভারত পড়ে ? বাংলা গল্প উপন্যাস যারা পড়ে তাদের পছন্দ হল সুনীল শীর্ষেন্দু অথবা সঞ্জীবের লেখা এছাড়া সমরেশ মজুমদার অথবা বুদ্ধদেব গুহের লেখাও অনেকের পছন্দ । এছাড়া বাংলাদেশের হুমায়ুন আহমেদও প্রবল জনপ্রিয় । পুরনো লেখার মধ্যে শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র এবং রবীন্দ্রনাথও এখনও লোকে পড়ে । কিন্তু এর বাইরে পুরনো লেখা সাহিত্যের স্টুডেন্ট ছাড়া আর কেউ খুব একটা পড়ে বলে মনে হয় না । ঠিক্ভাবে বলতে গেলে বাংলায় যথাযথ মহাভারত পড়বার একটাই বই আছে তা হল কালীপ্রসন্ন সিংহের মহাভারত । কিন্তু তাও মান্ধাতার আমলের ভীষন খটোমটো ভাষায় লেখা । পরিষ্কার চলিত বাংলায় যেকটা মহাভারত পাওয়া যায় তা একটাও ঠিকঠাক অনুবাদ নয় । একটি ভাল অনুবাদ অবশ্য আছে, সেখানে প্রত্যেকটি সংস্কৃত শ্লোকের সাথে বাংলা অনুবাদ দেওয়া আছে । কিন্তু সেটা সব মিলিয়ে কুড়িটার উপর খন্ড যা গবেষক ছাড়া আর কারো কাজে লাগবে না এবং শখ করে কিনলেও বাড়িতে রাখার জায়গা হবে না । তাই সাধারন বাঙালীর আর শেষ অবধি আর মহাভারত পড়া হয়ে ওঠে না । তাই খোঁজ করলে দেখা যায় যারা বলে যে তারা মহাভারত পড়েছে তারা আসলে কেউই মহাভারত পড়েনি তারা আসলে টিভিতে সিরিয়াল দেখেছে ।
আমাদের বাড়িতে কালীপ্রসন্ন সিংহের মহাভারত ছিল । আমি ছোট থেকে সেটাই পড়েছি । পাঠকেরা যা যা চায় তা প্রায় সবই আছে মহাভারতে । ধর্ম, সমাজনীতি, রাজনীতি, রহস্য রোমাঞ্চ, এমনকি যারা যৌনতা এবং খুন জখম ভালোবাসে তাদের জন্যও রসের কিছু অভাব নেই এতে । এখন চারিপাশে খুব শোনা যায় যে সব কিছুতে নাকি সেক্স এবং ভায়োলেন্স বেড়ে গেছে । কিন্তু মহাভারতে কি কিছু সেক্স আর ভায়োলেন্সের অভাব আছে ? এমনকি যৌনমিলনের সময় মেয়েরা যে ছেলেদের থেকে আটগুন বেশী আনন্দ পায় এমন কথাও মহাভারতে আছে । অনেকেরই হয়তো জানতে ইচ্ছে করছে যে এই কথা মহাভারতে কোথায় আছে । শুনলে আশ্চর্য হতে হয় যে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর মৃত্যুপথযাত্রী পিতামহ ভীষ্ম তাঁর নাতির বয়সী যুধিষ্ঠিরকে যে যে উপদেশ দিয়েছিলেন তার মধ্যে এই কথা আছে । আমার আরো আশ্চর্য লাগে যে ভীষ্ম ছিলেন চিরকুমার, তিনি কখনও বিয়ে করেননি, তবে তিনি এই কথা কি করে জানলেন । তবে কি তিনি বিয়ে না করলেও নারী সঙ্গম করতেন । এ কথার কোনো প্রমান মহাভারতে বোধহয় নেই । কোনো মহাভারত স্পেশালিস্ট হয়তো এ ব্যাপারে বলতে পারবেন ।
অনেক মহাভারত অনুবাদকারকই অনুবাদের সময় এই সব যৌন ব্যাপারগুলোকে সযত্নে এড়িয়ে গিয়ে অনুবাদ করেন । তাঁরা লেখেন যে দেবতাদের বরে কুন্তী তিন ছেলের আর মাদ্রী দুই ছেলের মা হয়েছিলেন । আমাদের বাড়িতে একটা ছোটদের মহাভারতে এইরকম কথা ছিল । আমার অবশ্য এটা পড়ে বুঝতে কোনো অসুবিধে হয়নি যে দেবতাদের বরে নয় তাদের সাথে যথোপযুক্ত যৌনমিলনের ফলেই তাঁরা মা হতে পেরেছিলেন । এখানে আমার মনে আরো একটা প্রশ্নের উদয় হয়েছিল । অশ্বিনীকুমারদ্বয় থেকে মাদ্রী দুই যমজ সন্তান লাভ করেন । তাহলে কি অশ্বিনীকুমারদ্বয় মাদ্রীকে একসাথে সম্ভোগ করেছিলেন । মানে এটা কি একটা গ্রুপ সেক্সের ব্যাপার ছিল ? বলা মুশকিল ।
তবে যৌন ব্যাপারে মহাভারতের সমাজ যে এখনকার থেকে উদার ছিল সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । যেমন সত্যবতী এবং কুন্তী কুমারী অবস্থায় মা হবার পরেও কুরু বংশের বউ হতে পেরেছিলেন । মহাভারতের কোন কোন জায়গায় এমন ভাবে নারী শরীরের বর্ণনা আছে যে তা যদি সাদা বাংলায় অনুবাদ করা হয় তবে তা পর্ণোগ্রাফি বলে মনে হবে । কথায় কথায় মেয়েদের স্তন আর নিতম্বের বর্ণনা ।
সেক্স ছাড়াও মহাভারতে ভায়োলেন্সও কিছু কম নেই । ভীমের দুঃশাসনের বুক চিরে রক্ত খাবার মধ্যে দিয়ে তা পরিষ্কার । এছাড়া রাজসভার ভিতরে কৃষ্ণের শিশুপালকে হত্যা, পরশুরামের পৃথিবীকে একুশবার ক্ষত্রিয়শূন্য করার মধ্যে দিয়ে তা বোঝা যায় । এছাড়া চুরি চামারি রাহাজানি নারী ধর্ষণ, পারিবারিক যুদ্ধ, গুপ্তহত্যার তো ছড়াছড়ি ।
তবে মহাভারতে ভাল কথাও প্রচুর আছে । গীতার মতো পৃথিবীশ্রেষ্ঠ দর্শন মহাভারতেই আছে । কর্ম এবং ফলের মধ্যে কি রিলেশন তা ভাল ভাবে বোঝানো আছে । তাই আমার মনে হয় মহাভারতের আবার স্বচ্ছ চলিত বাংলায় অনুবাদ হওয়া উচিত । যা হবে কোনো রকম সেন্সর বিহীন এবং যথাযথ । এবং এই বিশাল কাজ কোনো একক ব্যক্তি দ্বারা সম্ভব নয় তাই কোনো সংস্থাকেই এগিয়ে আসতে হবে । তবে এই অনুবাদ যেন কোন ধর্মীয় সামাজিক এবং রাজনৈতিক চাপ মুক্ত হয় ।


Wednesday, May 03, 2006

কি করে বাংলা লিখি

আমার আগের পোস্টের কমেন্টে একজন অনুরোধ করেছে কি করে বাংলা লেখা যায় তা জানাতে । আমি জানাই যে বর্তমানে কমপিউটারে বাংলা লেখা এবং ওয়েবপেজে বাংলা হরফে লেখা দেওয়ার কোন অসুবিধা নেই । তবে সবসময় ইউনিকোড বাংলা ফন্টে লিখতে হবে । কারন এটাই বাংলা লেখার সবথেকে সুবিধাজনক এবং আর্ন্তজাতিক পদ্ধতি । মাইক্রোসফট, গুগল, উইকিপিডিয়া, বিবিসি র মতো সংস্থারা বাংলা এবং অন্যান্য ভাষা লেখার সময় ইউনিকোড বাংলা লিপিই ব্যবহার করছে । পরবর্তীকালে বাংলা লেখার জন্য ইউনিকোড লিপি ছাড়া অন্যান্য লিপিগুলি লুপ্ত হয়ে যাবে ।

আমি বাংলা লেখার জন্য অভ্র কিবোর্ড ব্যবহার করছি । এটি www.omicronlab.com থেকে ডাউনলোড করা যাবে । এটি কোন টেক্সট এডিটর নয় । তবে এটি ইনস্টল করলে সরাসরি ব্লগার এর টেক্সট ফিল্ডে সরাসরি বাংলায় টাইপ করা যাবে অথবা মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে টাইপ করে নিয়ে তারপর পেস্ট করা যাবে । এটি একটি সম্পূর্ণ ফ্রি সফটওয়্যার । এর সাহায্যে বাংলা হরফে সার্চিং, চ্যাটিং, ই-মেল এবং আমার মত ব্লগিং সবই করা যাবে । সফটওয়্যারটির সঙ্গে বাংলাতে খুব সুন্দর ডকুমেন্টেসন রয়েছে । যা একবার পড়ে নিলে এটা ব্যবহার করতে কোন অসুবিধা হয় না । এতে বেশ কিছু কিবোর্ড লেআউট রয়েছে তবে তার মধ্যে বর্ণনা কিবোর্ড লেআউটটা ব্যবহার করা সবথেকে সোজা । তাছাড়া এই সাইট থেকে বেশ কিছু ইউনিকোড বাংলা ফন্টও ডাউনলোড করতে পারবেন । কমপিউটারে যেকোন একটি ইউনিকোড ৪.১ কমপ্যাটিবল বাংলা ফন্ট থাকলেই এই ওয়েবপেজ ভালভাবে পড়া যাবে । একটি ইউনিকোড বাংলা ফন্ট Vrinda উইনডোজ এক্সপি সার্ভিস প্যাক ২ এর ভিতরেই দেওয়া আছে । তাই আমি সবাইকে জানাতে চাই যে যারা বাংলাভাষায় ওয়েবপেজ বানাতে চাইছেন তারা অবশ্যই বাংলা লিপি ব্যবহার করুন এবং খেয়াল রাখুন যাতে সেটা ইউনিকোড বাংলা লিপি হয় । আমি এখানে কিছু বাংলা ওয়েব পেজের ঠিকানা দিলাম যা দেখলে এ ব্যাপারে ধারনা আরো পরিস্কার হবে ।

http://bd.chinabroadcast.cn/

http://banglarkrishi.nic.in/

http://www.nishorga.com/

http://www.abolombon.org/

http://omicronlab.com/forum/--t359.html

http://mokabela.blogspot.com/2006/03/blog-post_27.html

http://www.bbc.co.uk/bengali

http://www.snewaj.com/writings/cholejaoa.html

বাংলায় ব্লগ লেখার ইচ্ছা বহুদিন ধরেই হচ্ছিল । এতদিনে সেটা সফল হল । যদিও বাংলায় আমার টাইপ স্পীড খুব বেশি নয় তাই একটু অসুবিধা হচ্ছে । কিন্তু মনের ভাব প্রকাশ যদি বাংলাতে ঠিক ভাবে করা না যায় তাহলে ভাল লাগে না । এতদিন আমাদের ধারণা ছিল যে কমপিউটারের সব কাজ ইংরাজিতেই করতে হবে । কিন্তু এখন সেই ধারনা বদলাচ্ছে । বাংলাতেও কমপিউটারের সব কাজ যে করা সম্ভব তা আস্তে আস্তে মানুষের মনে ঢুকছে । আমরা একেবারেই চাই না যে বাংলা লিপির ব্যবহার কমতে থাকুক আর রোমান হরফে বাংলা লেখা বাড়তে থাকুক । রোমান হরফে বাংলা লেখা পড়ার থেকে কষ্টকর জিনিস আর আছে বলে মনে হয় না । তাই এ বিষয়ে আরো বেশী গবেষনা করতে হবে যে কি করে বাংলা টাইপিং আরো সহজ করা যায় ।

যাক সিরিয়াস কথা অনেক হল । যদিও আমি যে একেবারেই সিরিয়াস প্রকৃতির নই তা যারা আমার bongcomet.blogspot.com পড়েছেন তারাই জানেন । ভুলভাল এবং ছিটকানো টাইপের লোকজনই আমার পছন্দের । আমি কোনো মানুষ বা ঘটনাকে একই সাথে কয়েকটি আলাদা দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে ভালবাসি । কোনো রকমের একপেশে জিনিস আমার পছন্দ নয় । যাক আজকে আর বেশী কথা নয় প্রথম দিনেই তালে বদহজম হয়ে যাবে । তারপর রাতও অনেক হয়েছে একটু ঘুম ঘুম ভাবও এসেছে । পরে আবার কিছু লেখা যাবে ।