Friday, May 19, 2006

আমার প্রিয় অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস্

বেশিরভাগ মানুষের মত আমিও প্রথমে হলিউডের স্পেশাল এফেক্টে ভরপুর সিনেমা দেখতেই বেশী আগ্রহী ছিলাম । জুরাসিক পার্ক, হলো ম্যান, মমি, গডজিলা এইসব সিনেমাই স্কুল ও কলেজ জীবনে বেশী দেখতাম । শুধু অভিনয় সমৃদ্ধ সিনেমা বেশি দেখার সুযোগ হয় নি ।

টম হ্যাঙ্কসের প্রথম যে সিনেমাটা আমি দেখি তা হল ফরেস্ট গাম্প । এক বিকলাঙ্গ শিশুর সেরে ওঠা আর তার পরবর্তী কালের জীবন নিয়ে তৈরী এক মাস্টারপিস । টম হ্যাঙ্কস যে কত বড় অভিনেতা তার প্রমান এই সিনেমার প্রতিটি দৃশ্যে ছড়িয়ে আছে । এই সিনেমার জন্য তিনি অস্কার জিতে নিয়েছিলেন ।

পরবর্তী যে দুটো ছবির নাম আমি করব তা হল কাস্ট এওয়ে আর সেভিং প্রাইভেট রায়ান ।

কাস্ট এওয়েতে টম হ্যাঙ্কস এক কুরিয়ার সার্ভিস অফিসার । তাঁর প্লেন ভেঙে পড়ে মাঝ সমুদ্রে । কোন রকমে প্রানে বেঁচে গেলও তাঁকে বেশ কয়েকবছর কাটাতে হয় এক নির্জন দ্বীপে । এক শহুরে আধুনিক মানুষকে কিভাবে প্রাচীন যুগের মানুষের জীবনযাত্রায় মানিয়ে নিতে হয় তা দুর্দান্ত ভাবে অভিনয়ে ফুটিয়েছেন টম হ্যাঙ্কস । একটা বাস্কেটবলের গায়ে মুখ চোখ এঁকে নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য তার সাথেই বকবক করে যান তিনি । এই গল্পের সাথে অনেকটাই মিল রয়েছে রবিনসন ক্রুশোর গল্পের । কিন্তু সভ্য জগতে ফিরে আসার পরেও টম হ্যাঙ্কসের গল্প শেষ হয় না । ফিরে এসে দেখে সব কিছুই অনেক পালটে গেছে । প্রেমিকা বিয়ে করেছে অন্য পুরুষকে । সিনেমা শেষ হয় এক নির্জন গ্রাম্য চৌরাস্তায় টমের একা দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে । বোঝা যায় নিঃসঙ্গতার বোঝা কাঁধে টম এখনও বাস করছে এক নির্জন দ্বীপে ।

সেভিং প্রাইভেট রায়ান আমি যে কতবার দেখেছি তা গুনে শেষ করতে পারব না । যুদ্ধ নিয়ে আমার দেখা সেরা সিনেমা এটা । সিনেমার শুরুতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্সের নর্মান্ডি উপকূলে যে ভয়াবহ যুদ্ধের দৃশ্য আছে তা একবার দেখলে বহুদিন ভোলা কঠিন । তারপরের দৃশ্যেই দেখা যায় আমেরিকার যুদ্ধ অফিসে প্রচুর চিঠি টাইপ করা হচ্ছে । যারা মারা গিয়েছে তাদের বাড়িতে চিঠি পাঠানো হয়েছে । এই সময় হঠাৎ এক ক্লার্ক ছুটে আসে হাতে তিনটি কাগজ নিয়ে । ঘটনা হল এক রায়ান পরিবারের চার ছেলের মধ্যে তিন ছেলেই পৃথিবীর তিন জায়গায় যুদ্ধে মারা গিয়েছে । এবং তাদের মায়ের কাছে একই দিনে তিনটি চিঠি পাঠানো হচ্ছে ।

অফিসার জানতে চান এই মায়ের চতুর্থ ছেলের খবর কি । জানা যায় তাকে ইউরোপের কোথাও প্যারাশুটে করে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে । তারপর তার আর কোন খবর নেই । অফিসার ঘোষনা করেন এখন রাষ্ট্রের কর্তব্য হচ্ছে এই ছেলেকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া ।

এই কাজের দায়িত্ব পড়ে ফ্রান্সের নর্মান্ডি উপকূলে পোস্টিং থাকা টম হ্যাঙ্কসের উপর । তারপর কিভাবে টমের নেতৃত্বে একটা দল সেই ছেলেকে খুঁজে বার করে এবং শেষ অবধি টমকে প্রান দিতে হয় এই হল ছবির বিষয় । অসাধারন যুদ্ধের দৃশ্য তার সাথে টমের দুরন্ত অভিনয় এই ছবির সম্পদ ।

এপেলো থার্টিনে টম এক এমন নভশ্চরের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন যাকে চাঁদের কাছাকাছি গিয়েও যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য ফিরে আসতে হয় । সত্যি ঘটনা অবলম্বনে তৈরী এই ছবিও টমের প্রতিভার উজ্জ্বল সাক্ষর বহন করে ।

ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান সিনেমায় টম এক পুলিশ অফিসার যে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ায় এক ধুরন্ধর চেক জালকারী জালিয়াত লিওনার্দো দি কাপ্রিও কে । কিন্তু লিওনার্দো প্রতিবারই চোখে ধুলো দিয়ে পালায় । শেষে অবশ্য ধরা পড়ে এবং শেষ অবধি টমেরই সাহায্যে সে মূলস্রোতে ফিরে আসে আর এফবিআই এর হয়ে কাজ করতে থাকে । এবং একদিন চেক জাল আটকাতে এবং নতুন উন্নত চেক ডিজাইনের ক্ষেত্রে এক বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত হয় । এই সিনেমার মূলেও রয়েছে এক সত্যি ঘটনা ।

দ্য টার্মিনাল সিনেমায় টম এক পূর্ব ইউরোপের দেশ থেকে নিউ ইয়র্কে আসে এক বিখ্যাত স্যাক্সোফোনিস্টের সই সংগ্রহ করতে । কিন্তু তার প্লেনে যাত্রার সময়ে তার দেশের সরকারের পতন হয় । তার ফলে টমের পাসপোর্টটি অকেজো হয়ে যায় । এরপর টম না পারে আমেরিকাতে ঢুকতে না পারে দেশে ফেরত যেতে । তাকে প্রায় নয় মাস আটকে থাকতে হয় এয়ারপোর্টের টার্মিনালের ভিতরে । এই সময় তার সাথে এয়ারপোর্টের কর্মীদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে । এই সময় এক মহিলা যার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ক্যাথারিন জিটা জোনস, তার সাথেও টমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে । তারপর কিভাবে টম সেই সই সংগ্রহ করে এবং দেশের দিকে রওনা দেয় তা নিয়েই এই গল্প ।

এই সপ্তাহেই রিলিজ হচ্ছে টমের নতুন বিতর্কিত সিনেমা দা ভিঞ্চি কোড ।

যার রিলিজ নিয়ে ভারতে আবার দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে । এই বোকা বোকা ব্যাপারগুলো দেখলে সত্যিই আমার হাসি পায় । কবে যে ভারতের মানুষ একটু প্রাপ্তবয়স্কের মত আচরন করবে তা কে জানে । কে কি দেখবে না দেখবে তার স্বাধীনতা প্রত্যেক মানুষেরই থাকা উচিত । আর যেখানে দেশ ভরে উঠেছে বেআইনী পাইরেটেড সিডি আর ডিভিডিতে । যে কোন রকম পর্ণো সিনেমা খুব সহজেই পাওয়া যায় । সেখানে এই সেন্সর বোর্ডের কাজকম্ম একেবারেই বেমানান । প্রতিটি সিনেমাকে শুধুমাত্র বয়সের সার্টিফিকেট দিয়েই ছেড়ে দেওয়া উচিত কোন কাটছাঁট না করেই এই সহজ সত্যটা বহু লোকই মেনে নিতে পারে না ।

টম হ্যাঙ্কসের বেশকিছু ভালো সিনেমা এখনও আমার দেখা হয় নি । যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফিলাডেলফিয়া । এই সিনেমাতে টম এক এইডস রোগীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন । যার জন্য তিনি অস্কার পান । ফরেস্ট গাম্প আর ফিলাডেলফিয়ার জন্য টম পর পর দুবছর সেরা অভিনেতার অস্কার পান যা তাঁর কেরিয়ারকে তুঙ্গে পৌছে দেয় ।

7 comments:

Anonymous said...

তাই নাকি? টম হ্যাঙ্কস কেমন একটু বয়স্ক লাগে না?

ডা-ভিঞ্চি কোডে কিন্তু তেমন একটা ভাল আভিনোয় করেনি, কি বলেন?

I said...

টম হ্যাঙ্কসের বয়স হয়েছে তাই তাঁকে বয়স্ক লাগে । আর তিনি তো বয়স উপযোগী রোলই করেন ।
দা ভিঞ্চি কোড এখনও আমি দেখিনি তাই কোন মন্তব্য করতে পারব না ।

Anonymous said...

টম হ্যাঙ্কসকে আমার সবসময় একজন ভাগ্যবান অভিনেতা বলেই মনে হয়েছে। মেল গিবসন, নিকোলাস কেইজ, রাসেল ক্রো এবং আরো অনেকেই টম হ্যাঙ্কসের চেয়ে অনেক ভালো অভিনয় করেন।

Sorcerer said...

anonymous - পরিচয় জানালে খুশি হতাম। আমি এ ক্ষেত্রে hidden god এর সাথে একমত।। একটা ছোটো প্রশ্ন। হ্যাঙ্কস ছাড়া আর যাদের নাম করলেন তাঁরা কেন ভাগ্যবান হইয়ে উঠতে পারেন্নি তার কি কোনো সদ্দুত্তর আছে?

@hidden- ফিলাডেলফিয়া সিনেমাটা না দেখলে একটা ঐতিহাসিক অপ্রাপ্তি থেকে যাবে।। নিজেকে বঞ্চিত করবেন না।

Suvayu Rochoudhury said...

আরো কিছু ভালো মুভি
ট্রেনিং ডে
ইউসুআল সাসপেকটস
পারফিউম-story of a murderer
দা প্রেসটিজ
মেমেনটো

Suvayu Rochoudhury said...

আরো কিছু ভালো মুভি
ট্রেনিং ডে
ইউসুআল সাসপেকটস
পারফিউম-story of a murderer
দা প্রেসটিজ
মেমেনটো

Suvayu Rochoudhury said...

বিনা পয়সায় বাড়ি বসেই ইনটারনেটে যে কোনো মুভি..আবার বলছি যে কোনো মুভি.. ডাউনলোড করে দেখে নিন.
torrent.com থেকে.