Sunday, December 10, 2006

জ্যোতি বসুকে ডি লিট উপাধি দিচ্ছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ।

সংবাদ প্রতিদিনের ওয়েবসাইটে খবরটা পড়ে খুব একটা আশ্চর্য হলাম না । তারা যদি লালু প্রসাদ যাদব বা রাবড়ি দেবীকেও যদি কোন দিন ডি লিট দেয় তাহলেও খুব একটা আশ্চর্য হব না ।

জ্যোতি বাবু কি এমন হাতি ঘোড়া মেরেছেন যে তাঁকে এই সম্মান দিতে হবে ? এই সম্মান তাঁর থেকে অনেক যোগ্য বহু মানুষকেই দেওয়া যেতে পারত । জ্ঞান হওয়া ইস্তক দেখে আসছি গরমকালে তিনি হয় ইংল্যান্ডে বেড়াতে যাচ্ছেন শিল্পপতি ধরার নামে অথবা উত্তর বঙ্গের কোন বাংলোয় টুরিস্টদের রিজার্ভেশন বাতিল করে নিজে গিয়ে জাঁকিয়ে বসছেন সেখানে ।

তাঁর বহু বছরের রাজত্বকালে তিনি দুটি মাত্র কীর্তি করেছেন । সে দুটি হল নন্দন আর চন্দন । এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের জন্য তিনি আর ভাল কিছু করেছেন বলে আমার মনে পড়ছে না । শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং শিল্পায়নে, পরিবহনে তিনি চূড়ান্ত ব্যর্থ । তাঁর সরকার বাচ্চাদের ইংরাজী পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছিল । তাঁর সরকার কম্পিউটারের বিরোধিতা করেছিল । তিনি এবং তাঁর দল একসময় নেতাজী সুভাষচন্দ্রের বিরোধিতা করেছিলেন । বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একসময় তাঁর মন্ত্রীসভা ত্যাগ করে বলেছিলেন চোরেদের সরকার তিনি একসময় বিজেপিকে বলেছিলেন অসভ্য বর্বর । আবার তিনি নিজেই একসময় রাজীব গান্ধীকে আটকানোর জন্য অটল বিহারী বাজপেয়ীর হাত ধরে ব্রিগেডে সভা করেছিলেন । নির্মম সব ঘটনা সম্পর্কে তিনি বরাবরই নির্বিকার থেকেছেন । মহিলাদের শ্লীলতাহানির পরে তাঁর মন্তব্য ছিল এরকম তো কতই হয় । একজন কমিউনিস্ট এবং সর্বহারাদের নেতা হয়েও তিনি বরাবরই বিলাসী জীবনযাপন করেছেন । এখনও তিনি সল্টলেকে রাজার হালে জীবন কাটাচ্ছেন সরকারের টাকা বরবাদ করে । তাঁর ঘুমের ব্যাঘাত হওয়ায় কিছু শিয়ালের প্রাণ গিয়েছিল যাদের বন্যপ্রানী আইনের ফলে মারা নিষিদ্ধ । তাঁর কীর্তির কথা আর কত বলব ।

তাঁর ব্যর্থতার কথা প্রসঙ্গে তিনি সব সময়েই বলতেন কেন্দ্রীয় সরকারের ভুল নীতি আর অসহযোগিতার কারনের তিনি সব কাজ করতে পারছেন না । অথচ কলকাতার দুটি প্রধান উন্নয়ন মূলক কাজ পাতাল রেল আর দ্বিতীয় হুগলি সেতু কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্যের ফলেই শেষ হয়েছিল । মনে রাখতে হবে ভারতের মধ্যে কলকাতাতেই প্রথম পাতাল রেল হয়েছিল । কেন্দ্রীয় সরকার যদি সবসময়েই পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরন করত তাহলে বোধহয় কলকাতাতে পাতাল রেল তৈরি হত না ।

এ হেন মানুষকে ডি লিটের জন্য নির্বাচিত করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বুঝিয়ে দিল যে তারা দায়বদ্ধ শুধু রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তো নিজেদের কাজগুলোই ঠিকভাবে করতে পারে না । আমি পার্ট ওয়ান পরীক্ষায় যে পেপার সবথেকে ভাল পরীক্ষা দিলাম তাতে পেলাম সবথেকে কম নম্বর । আর যে পেপার সবথেকে খারাপ দিলাম তাতে পেলাম সবথেকে বেশী নম্বর । আমার মামাতো ভাই পশ্চিবঙ্গের বাইরের একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব ভালো সুযোগ পেয়েও যেতে পারল না শুধু এই কারনে যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রেজাল্ট আউট করতে দেরী করল । আমার শহরের একটি কলেজের মেয়েরা সবাই একসাথে ইতিহাসে ব্যাক পেল । একশোর উপর মেয়ে কিভাবে যে ইতিহাসে ব্যাক পেতে পারে তার ব্যাখ্যা কেবল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ই দিতে পারে । যে বিশ্ববিদ্যালয় একসময় ভারতের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ছিল আজ তার স্থান নামতে নামতে কোথায় এসে পৌছেছে কেউ বলতে পারে না ।

সুতরাং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে এর থেকে বেশি কিছু বিচক্ষনতা আশা করা যায় না । আপনি যদি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু সম্মান আশা করেন তবে অবশ্যই সিপিএমে নাম লেখান ।

Friday, December 08, 2006

আমি যে নীতিতে বিশ্বাস করি ।

আমি পুরোপুরি অহিংসা নীতিতে বিশ্বাস করি । গান্ধীজিকে আমার এইজন্য ভাল মনে হয় । এবং এটা লাগে রহো মুন্নাভাই দেখার পরে নয় । ছোটবেলা থেকেই আমার গান্ধীজির প্রতি একটা শ্রদ্ধা ছিল । যে শ্রদ্ধা গান্ধীজির প্রতি বেশিরভাগ বাঙালিরই নেই ।

মূলত বাঙালিদের সহিংস সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রভাব এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বনাম গান্ধীজি দ্বন্দ্ব বেশিরভাগ বাঙালিকে গান্ধী বিরোধী করেছে । প্রকাশ্যে কেউ গান্ধীজির বিরুদ্ধে বেশি কিছু কথা না বললেও আমি বহু লোককেই গান্ধীজির বিপক্ষে অসম্মান সূচক মন্তব্য করতে শুনেছি । বহু লোকই দেশভাগের জন্য গান্ধীজিকেই দায়ী করে থাকেন ।

এটা আমিও স্বীকার করি যে গান্ধীজির বহু দোষ ছিল । কিন্তু এটা বার বার প্রমান হচ্ছে যে বর্তমান পৃথিবীতে গান্ধীজির নীতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ।

আমি মনে করি গান্ধীজির চরম অসম্মান সেদিন করা হয়েছিল যেদিন গান্ধী হত্যার দায়ে নাথুরাম গডসেকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল । কারন হিংসার বদলে হিংসা গান্ধীজির নীতিবিরোধী । গান্ধীজি নিজে কি চাইতেন যে তাঁর মৃত্যুতে অভিযুক্তকে ফাঁসি দেওয়া হোক । আমার মনে হয় না ।

ঠিক একই ভাবে সব ধর্মই নিজেদের অহিংসার পূজারী বলে ব্যাখ্যা করলেও আমার মনে হয় সব থেকে অহিংস ধর্ম হচ্ছে জৈন ধর্ম । তার পরেই আসবে বৌদ্ধ ধর্ম । জৈন ধর্ম এতটাই অহিংস যে তারা কোনভাবেই জীব হত্যা সহ্য করতে পারে না । যাতে কোনভাবে মুখে কোন পোকা ঢুকে পড়ে নিহত না হয় সেজন্য তাঁরা মুখে কাপড় দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখেন । এর থেকে অহিংস কি কোন ধর্মের হওয়া সম্ভব ?

আর কোনটা ন্যায় কোনটা অন্যায় সে বিষয়ে অনেক তর্ক হয়েছে । আমার কাছে অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করাই হল অন্যায় । যখনই আপনি অন্যের স্বাধীনতাহীনতার কারন হচ্ছেন তখনই আপনি অন্যায় করছেন । যেমন আপনি আপনার শিশুর খেলা করার অধিকার হরন করে তাকে সারাদিন পড়াশোনায় বাধ্য করছেন আপনি অন্যায় করছেন । আবার যখন জর্জ বুশ ইরাক দখল করে সেখানকার নাগরিকদের বেঁচে থাকার অধিকার হরন করছেন তখন তিনিও অন্যায় করছেন ।

আমাদের রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালাম একটা খুব সুন্দর কথা বলেছিলেন যে দুর্নীতি দূর করতে পারেন কেবলমাত্র প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক এবং শিশুর পিতামাতা । এছাড়া কারও দুর্নীতি দূর করার ক্ষমতা নেই । ঠিক এই একই কথা প্রযোজ্য হিংসা সম্পর্কে । যে একটা খুব সুন্দর ছোটবেলা কাটিয়েছে এবং বাবা মা এবং শিক্ষকদের কাছে ঠিক শিক্ষা পেয়েছে তার পক্ষে দুর্নীতিগ্রস্ত বা হিংসাত্মক হওয়া অসম্ভব ব্যাপার ।

দুর্নীতিমুক্ত হোন । মনে রাখুন এটা আপনার বাবা মা অথবা আপনার সন্তান কেউই পছন্দ করবে না । দস্যু রত্নাকর তার বাবা মা এবং স্ত্রী সন্তানের জন্যই ডাকাতি ও খুন খারাপি করত । কিন্তু কেউই তার পাপের ভার নিতে রাজি হয় নি ।

তাই বাচ্চাদের ভালবাসুন । গান শুনুন । ছবি আঁকুন । নদীর ধারে বেড়ান । আকাশ দেখুন । ক্ষমা করতে শিখুন (সবার আগে নিজেকে) । বন্ধুত্ব করুন । আর অনেক ভাল থাকুন ।

Monday, December 04, 2006

সিঙ্গুরের খবর আর মিডিয়া

সিঙ্গুর নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু ক্যাঁচাল হচ্ছে । অফিসে থেকে ফেরার সময় প্রায় প্রতিদিনই মারাত্মক ভিড়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে । কারন ট্রেনের গণ্ডগোল । আজ সন্ধে ছটার সময়ে যখন বিধাননগর স্টেশনে এলাম তখন দেখলাম স্টেশনে প্রচণ্ড ভিড় । এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানোর জায়গা নেই ট্রেনে ওঠা তো অনেক পরের ব্যাপার । কেউই ঠিক বলতে পারছে না যে আসলে কি হয়েছে । সাধারন ট্রেনের গণ্ডগোল না কোথাও অবরোধ হয়েছে । সিঙ্গুর ইসুকে নিয়ে প্রায় প্রত্যেক দিনই কোথাও না কোথাও অবরোধ হচ্ছে । যাই হোক দুটো ট্রেন ছেড়ে দেবার পর অবশেষে তৃতীয় ট্রেনে উঠতে সক্ষম হলাম । সেই ট্রেনটা আবার দমদম স্টেশনে প্রচণ্ড ভিড় নিয়ে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে রইল ।

আগামী কাল আবার এসইউসিআই আর সিপিআই এম এল বনধ ডেকেছে । আজ মাওবাদীরা কলকাতার বেকবাগানের কাছে টাটা মোটরসের শোরুমে হামলা চালিয়েছে এবং বুদ্ধবাবুর বিরুদ্ধে পোস্টার সেঁটে গেছে । এসইউসিআই দল হিসাবে ছোট হলেও কোথাও কোথাও তাদের যথেষ্ট শক্তি রয়েছে । এবং আমার মনে হয় পশ্চিমবঙ্গে যতগুলি রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের ভিতরে এসইউসিআই সবচেয়ে সিরিয়াস নিজেদের আন্দোলনের বিষয়ে । এবং তাদের যথেষ্ট ডেডিকেটেড কর্মী রয়েছে যারা দলকেই নিজের ধ্যানজ্ঞান বলে মনে করে । এরাই আমার মনে হয় পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্ট আন্দোলনের বর্তমান ধারক ও বাহক । কারন মাওবাদীরা অনেকাংশেই সাধারন মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন । এবং সিপিআইএমকে এখন আর বামপন্থী বলে মেনে নেওয়া যায় না । তারা তাদের যেটুকু আদর্শ বাকি ছিল তা জলাঞ্জলি দিয়েছে । এখন অনেকেই জর্জ বুশের ইরাক দখলের সঙ্গে বুদ্ধবাবুর সিঙ্গুর দখলের তুলনা টানছেন । আমার মনে হয় কালকে হয়তো এসইউসিআই ট্রেন অবরোধ করে দিতে পারে । কালকে অবশ্যই আমি অফিসে যাবার জন্য বেরোবো । দেখি গিয়ে উঠতে পারি কি না ।

পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া এখন অনেকাংশেই সিপিএমের ধামাধরা হয়ে গিয়েছে । এর মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য হল আনন্দবাজার পত্রিকা । আনন্দবাজার এখন বামফ্রন্টকে সাপোর্টের ক্ষেত্রে যেন গণশক্তিকে হার মানাতে চলেছে । তাদের এই রহস্যজনক নীতি পরিবর্তনের পিছনে যে কোন উদ্দেশ্য আছে তা স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে । এর সাথে যুক্ত হয়েছ তাদের চ্যানেল স্টার আনন্দ । বলা চলে গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া যেন বুদ্ধপন্থী হয়ে উঠেছে । কলকাতা টিভিও সিপিএমকেই সাপোর্ট করবে এতো জানা কথা । কারণ তাদের মালিক জেনেটিস এর সঙ্গে বুদ্ধবাবুর অনেক দহরম মহরম আছে । ফলে সিঙ্গুর ইসুতে ঠিক কি ঘটছে তা বোঝা অনেকটাই শক্ত হয়ে উঠছে । পশ্চিমবঙ্গের বাংলা টিভি চ্যানেল আর পশ্চিমবঙ্গের বাইরের সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলির সঙ্গে খবরের তফাত অনেকরই নজরে এসেছে । এখন নিরপেক্ষ খবর পাওয়া সবথেকে কঠিন বিষয় হয়ে উঠেছে । কারণ পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়ার মেরুকরণ প্রায় সম্পূর্ণ । নিরপেক্ষ খবরের কাগজ বা টিভি চ্যানেলের কোন অস্তিত্ব আর নেই । সিঙ্গুর ইসুতে যা বুঝলাম তাতে আনন্দবাজার, গণশক্তি আর আজকাল বুদ্ধবাবুর পক্ষে রায় দিচ্ছে এবং সংবাদ প্রতিদিন এবং বর্তমান যাচ্ছে বুদ্ধবাবুর বিপক্ষে । টিভিচ্যানেলগুলোর সেই একই দশা । তাই মনে হয় আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে সর্বভারতীয় খবরের কাগজ আর টিভিচ্যানেল গুলোর দিকে । যদি তারা অন্তত কিছুটা নিরপেক্ষ খবর দেয় ।

Sunday, December 03, 2006

সিঙ্গুর ইসুতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভুমিকা

পশ্চিমবঙ্গে কিছুদিন ধরেই সিঙ্গুর নিয়ে ঝামেলা পাকিয়ে উঠেছে । মমতা, বুদ্ধবাবু এবং তার সাথে যুক্ত হয়েছেন মেধা পাটেকর । সিপিআই এম এল (নকশাল) এবং এসইউসিআই এর মতো ছোট দলেরাও এর মধ্যে নাক গলিয়ে ফেলেছে । ফলে অবস্থা এখন বেশ সরগরম ।

কিন্তু এই ঝামেলা পাকিয়ে ওঠার জন্য দায়ী কে ? অবশ্যই আমাদের রাজ্য সরকারের দূরদৃষ্টিহীনতাই এর জন্য দায়ী । সবাই জানে যে কৃষকদের কাছে তাদের জমি হচ্ছে মহামূল্যবান । বংশ পরম্পরায় জমিই তাদের খাবার জুগিয়েছে । ভালো হোক খারাপ হোক জমিকে নির্ভর করেই তারা বেঁচে আছে । এরপর সিঙ্গুর হচ্ছে হুগলী জেলায় । সবাই জানে যে এই জেলা খুবই উর্বর । হুগলী জেলা বিখ্যাত হচ্ছে আলু চাষের জন্য । আর এখানকার চাষীদের অবস্থা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া বা মেদিনীপুরের চাষীদের থেকে অনেক ভালো ।

রাজ্য সরকারের বক্তব্য হচ্ছে যে টাটাদের কারখানা হলে গ্রামের মানুষেরা সেখানে চাকরি পাবেন । কিন্তু এর পরেও প্রচুর প্রশ্ন থেকে যায় । যেমন গ্রামের মানুষদের কত টাকা মাইনের চাকরি দেওয়া হবে ? তাদের চাকরিতে নিলেও কিছুদিন বাদে যে তাড়িয়ে দেওয়া হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায় ? আর যে সমস্ত চাষীরা এতদিন স্বাধীন ভাবে নিজেদের জমি চাষ করে এসেছেন তাঁরা কি অন্যের অধীনে চাকরি আদৌ করতে পারবেন ? আর বেশিরভাগ মধ্যবয়েসী কৃষকরা এতদিন চাষ করে এসেছেন এবং চাষের কাজে পটু তাঁরা কি কারখানার কাজে পটুত্ব অর্জন করতে পারবেন ?

এরপর সেখানে যদি সরকারী উদ্যোগে কিছু করা হত তাহলেও জমি ছেড়ে দেবার পক্ষে একটা যুক্তি থাকত । কিন্তু মনে রাখতে হবে সেখানে একটি বেসরকারী কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে । আর সেখানে টাটারা যে কেবল নিজেদের লাভই দেখবে তাতো জানা কথা ।

আরও প্রশ্ন হল টাটারা যদি পশ্চিমবঙ্গে কারখানা খুলতে চায় তাহলে তো তারা জমির মালিকদের কাছ থেকে সরাসরি জমি কিনলেও পারত । এখানে রাজ্য সরকারের ভূমিকাটা কোথায় সেটা স্পষ্ট নয় । এখানে এটা স্পষ্ট যে রাজ্য সরকার জমির দালালি করছে । জমি পিছু চাষীদের যে টাকা দেওয়া হচ্ছে আর রাজ্য সরকার টাটাদের কাছ থেকে যে টাকা নিচ্ছে তার মধ্যে বিরাট ফারাক আছে । এই ফারাক থাকা উচিত নয় । পুরো টাকাটাই চাষীদের প্রাপ্য ।

অতএব অনেক কিছুতেই বিরাট প্রশ্ন চিহ্ন আছে । সিঙ্গুর ইসুর গুরুত্ব খুবই বেশী । কারণ এর উপরেই নির্ভর করবে ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পায়নের রূপরেখা কি হবে । এবং অন্যান্য জায়গায় জমি অধিগ্রহন ও শিল্পায়ন কিভাবে হবে । টাটারা যখন একশো বছরেরও বেশী আগে জামশেদপুরে কারখানা খুলেছিল তখন সেই জায়গাটা ছিল একেবারই অনুন্নত । সিঙ্গুরের কারখানা খোলার আগেও টাটারা সেই নীতি গ্রহন করতে পারত । হুগলী জেলার মত উর্বর জায়গায় তারা কারখানা না খুলে পশ্চিমবঙ্গের অনুন্নত জায়গায় যথা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর বা উত্তরবঙ্গে কারখানা খুললে সেখান কার মানুষেরা দু হাত বাড়িয়ে তাঁদের স্বাগত জানাত ।

সিঙ্গুর নিয়ে সিপিএম যদি ঠিক নীতিতে না আসে তাহলে পশ্চিমবঙ্গে তাদের সবথেকে বড় শক্তি কৃষিজীবি গ্রামের মানুষেরাই তাঁদের বিপক্ষে চলে যাবেন সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । তারপর পুলিশ লেলিয়ে সাধারন মানুষের উপর দমন নিপীড়ন যা তারা বহু বছর ধরে চালিয়ে আসছে তা সাধারন মানুষ কিছুতেই সহ্য করে নেবে না ।

Saturday, December 02, 2006

যারা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ভাঙচুর করল তাদের কি শাস্তি হওয়া উচিত ?

গত ৩০ নভেম্বর তারিখে আমরা দেখলাম পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় এক বিরাট ভাঙচুরের দৃশ্য । তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়করা প্রবল তাণ্ডব চালালেন বিধানসভার ভিতরে । তা যাই হোক এই বিধায়কদের কি শাস্তি দেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করছিলাম । এমন সময় মনে পড়ে গেল আমাদের স্কুল জীবনের কথা ।

এই বিধায়কদের উপযুক্ত শাস্তি হতে পারে এরকম । প্রথমে তাদের বিধানসভা চত্বরে কান ধরে নিলডাউন করে রাখতে হবে বেশ কয়েক ঘন্টা । সে সময়ে তাদের কোন কিছু খাওয়া বা বাথরুম যাওয়া একেবারে নিষিদ্ধ । তারপর তাদের কান ধরে ওঠবোস করতে হবে একশো এক বার । এই সময় স্কুলের বাচ্চাদের বিধানসভা চত্বরে আনতে হবে যাতে তারা এই বিচিত্র দৃশ্য দেখার আনন্দ উপভোগ করতে পারে । এরপর বিধায়কদের কষ্ট লাঘব করার জন্য বাচ্চারা তাদের নরম কচি হাত দিয়ে তাদের কান মুলে দিতে পারে । যাতে তাদের কিছুটা আরাম হয় । আশা করি বাচ্চাদের হাতের কানমলা খেতে তাদের ভালোই লাগবে ।

এরপর বিধায়কদের দিয়েই বিধানসভা ভবন পরিষ্কার করাতে হবে । কোন সাফাইকর্মী আনা চলবে না । এরপর যে বিধায়করা বেশি বদমায়েশি করেছিলেন তাদের পশ্চাৎদেশে কয়েক ঘা বেত্রাঘাত করা যেতে পারে ।

আমাদের সরকার পক্ষের বিধায়করাও অনেক সময়ে নানা রকমের ভাঙচুরের জন্য দায়ী । একই সাথে যদি তাদের পাওনাটাও মিটিয়ে দেওয়া যায় তাহলে ব্যাপারটা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় ।

একটি বনধের দিন...

গত পরশু যখন ণমূল বনধ্ ডেকেছিল তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম যে যেভাবেই হোক অফিসে আসবই । কারণ গত বনধে অফিসে না যাওয়ার জন্য আমার মাইনে কাটা গিয়েছিল । তাই গতকাল সকাল বেলা অফিসে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়লাম । স্টেশনে গিয়ে দেখলাম একটা ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে । বেশ ফাঁকা । তাতেই উঠে পড়লাম । অন্যদিনের মতো ঝোলাঝুলি ভিড় নেই । যারা ট্রেনে উঠেছে তাদের বেশ খুশির মেজাজ । কয়েকটা স্টেশনে খানিকক্ষন করে দাঁড়ালেও মোটামুটি টাইমেই বিধাননগর স্টেশনে নেমে পড়লাম ।


রাস্তায় বেড়িয়ে দেখলাম বাস খুব কম চলছে । কিছু অটো চলছে । রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা । অফিসে পৌঁছে দেখলাম মাত্র তিনজন এসেছি । আর প্রোডাকশনের আমি ছাড়া আর কেউই আসে নি । খানিকক্ষন বসে থাকার পরে প্রোডাকশনে ঢুকে আমার কম্পিউটার টা চালালাম । খানিকক্ষন সামান্য কাজ করলাম । আর গান শুনলাম । এইভাবেই টিফিনের সময় হয়ে গেল । টিফিন করার পরই অফিস ছুটি হয়ে গেল । আমি বাড়ির দিকে রওনা দিলাম । আবার বিধাননগর স্টেশনে আসার সাথে সাথেই ট্রেন পেয়ে গেলাম । একেবারে ফাঁকা । ট্রেনটা খুব ভালো ভাবেই এসে পৌছাল । যখন বাড়িতে পৌছলাম তখন সময় বেলা দুটো কুড়ি । তারপর একটা দারুণ দিবানিদ্রা দেওয়া গেল ।

Saturday, November 25, 2006

সামহ্যোয়ারইনে ধর্ম নিয়ে জটিলতা ও বিতর্ক

সামহোয়্যারইন ব্লগে বেশ কিছুদিন ধরেই ধর্ম নিয়ে নানা প্রকারের বাদানুবাদ চলছে । ব্লগের ভিতরে তৈরি হয়েছে দুই পক্ষ যাদের পারস্পরিক বাদানুবাদ প্রায় রাজনৈতিক সংঘর্ষের চেহারা নিতে চলেছে । ধর্ম নিয়ে তার প্রয়োজনীয়তা এবং অপ্রয়োজনীয়তা নিয়ে নানা রকমের পোস্ট সবারই নজরে আসছে ।

কিন্তু ধর্ম নিয়ে এত বেশী কূটকচালির কোনো প্রয়োজন আছে কি ? কারণ ধর্ম তো প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ব্যাপার । এক বিখ্যাত ব্যক্তির কথা শুনেছিলাম -- আমি যখন মন্দিরে ভগবানকে খুঁজতে গেলাম তখন তাকে পেলাম না, যখন মসজিদে গেলাম তখনও তাকে পেলাম না, যখন গীর্জায় গেলাম তখনও তাকে পেলাম না, কিন্তু যখন নিজের অন্তরে তাকে খুঁজলাম তখনই তাকে খুঁজে পেলাম ।

ধর্ম নিয়ে সমস্যার মূল কারণ হল মানুষ তাকে তার অন্তর থেকে বার করে নিয়েছে এবং প্রকাশ্যে অধিষ্ঠিত করেছে । এরকম কথিত আছে যে সত্যযুগে মানুষ কোন উপাসনা করত না কারন তারা জানত যে তারাই আসলে ভগবানের অংশ । এবং সমস্ত জায়গাতেই ভগবান আছেন । সুতরাং আলাদা করে ভগবানের উপাসনা করার কোনো দরকার নেই । যখন থেকে মানুষ স্বার্থান্ধ হল তখনই সে ভগবানের উপাসনা করতে আরম্ভ করল । মানুষ মনে করল যে ভগবানের পূজা করলে তবেই সে তার চাহিদা পূরণ করতে পারবে ।

একজন মানুষের যদি কোন চাহিদা না থাকে তবে মনে হয় তার কোন উপাসনা করারও দরকার নেই । স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন যে গীতা পাঠের চেয়ে ফুটবল খেলা ভালো। তিনি তাতে গীতার অপমান করেননি । তাঁর বক্তব্য ছিল শুধুমাত্র ধর্মের জন্যই ধর্মচর্চা করার থেকে অন্যকাজ করা অনেক ভালো ।

একই কথা বলা চলে অন্যকোন ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কেই । কেউ যদি ধর্মের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে তবে তাতে তার বাহাদুরি দেখাবার বা জাহির করে দেখাবার যেমন কিছু নেই আবার কেউ যদি নাস্তিক হয় তবে তাতেও বাহাদুরির কিছু নেই । আর ধর্মের ব্যাপারে যুক্তিও বোধ হয় খাটে না । যুক্তি দিয়ে ধর্ম কে বোঝার মত বোকামি আর কিছুতে নেই । ধর্ম কে বুঝতে হবে উপলব্ধির মাধ্যমে । যুক্তি দিয়ে তো এক্ষুনি প্রমাণ করে দেওয়া যায় যে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান নন । কিন্তু কোন ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ কি তা মেনে নিতে চাইবেন ।

কিভাবে প্রমান করা যায় যে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান নন ।

ধরা যাক ঈশ্বর সর্বশক্তিমান । এখন প্রশ্ন হল যে তিনি কি একটা বিরাট পাথর তৈরি করতে পারেন ? উত্তর হল হ্যাঁ নিশ্চই পারেন । দ্বিতীয় প্রশ্ন হল যে তিনি সেই বিরাট ভারি পাথরটা ঠেলে সরাতে পারেন । এক্ষেত্রেও উত্তর হল যে হ্যাঁ নিশ্চই পারেন ষেহেতু তিনি সর্বশক্তিমান । তৃতীয় প্রশ্ন হল যে তিনি কি এত বড় আর ভারি একটা পাথর তৈরি করতে পারেন যেটা তিনি নিজেই ঠেলে সরাতে পারবেন না । এক্ষেত্রে যদি হ্যাঁ উত্তর হয় তাহলেও প্রমান হয় যে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান নন কারণ তিনি পাথরটিকে ঠেলে সরাতে পারবেন না । আবার যদি না উত্তর হয় তাহলেও তিনি সর্বশক্তিমান নন । কারণ তিনি পাথরটি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন ।

সুতরাং যুক্তি দিয়ে অনেক কিছুই প্রমাণ করা যায় । ঈশ্বর আছেন তাও প্রমান করা যায় আবার নেই তাও প্রমাণ করা যায় । কিন্তু আসল কথা হল তাতে ঈশ্বরের কিছুই যায় আসে না ।

একটা উপনিষদের ছোট্ট গল্প দিয়ে এই পোস্ট শেষ করব ।

এক শিষ্যকে তার গুরু বলেছিলেন যে সব কিছুর মধ্যেই ভগবান আছেন । শিষ্যটি তখন ভাবল তাহলে তার কোনো কিছুতেই ভয় পাবার কিছু নেই । একদিন এক পাগলা হাতি তার দিকে তেড়ে এল । শিষ্য ভাবল যে এই হাতির ভিতরে ভগবান আছেন । তাই আমি একে ভয় পাব না । এদিক হাতির উপরের মাহুত চেঁচিয়ে তাকে সাবধান করে দিল । কিন্তু শিষ্য নড়ল না । হাতিটা তখন এগিয়ে এসে শিষ্যটিকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে এক আছাড় দিল ।

যখন আহত শিষ্যকে দেখতে গুরু এলেন তখন শিষ্যটি রাগ করে বলল গুরুমশাই আপনি বললেন যে সব কিছুর মধ্যেই ভগবান আছেন । আর দেখুন হাতি ভগবান আমার কি অবস্থা করেছে । গুরু হেসে বললেন বৎস তুমি শুধু হাতি ভগবানকেই দেখলে আর তার পিঠে বসে যে মাহুত ভগবান তোমাকে সাবধান করে দিল তুমি তো তার কথা শুনলে না ।

Tuesday, November 21, 2006

আমার অফিস যাওয়ার রাস্তা

দিন চলে যায় দিনের মত । আমি রোজ লোকাল ট্রেনে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করি । রোজ সকালে ফাঁকা ট্রেন ছেড়ে দিয়ে ভিড় ট্রেন ধরি । ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি একা, আজও ট্রেনে আমার কোন বন্ধু হল না ।

দমদম স্টেশনে ভিড় একটু ফাঁকা হলে গেটের কাছে এসে দাঁড়াই । বিধাননগর আসতেই নেমে পড়ি, বলা ভালো পিছনের ভিড় আমাকে ঠেলে নামিয়ে দেয় ।

রোজই চোখ তুলে বিধাননগর স্টেশনের গায়ে তৈরি হওয়া বিরাট ফ্ল্যাটবাড়িটার দিকে একবার চেয়ে দেখি । কি বিরাট ! স্টেশনের একদিক পুরো ঢেকে গেছে । কিছু লোক লাইনের উপর দিয়েই চলতে আরম্ভ করে আর রেল লাইনের পাশে গিয়ে হিসি করতে শুরু করে । এটাই কলকাতা । এখানে এসবে কেউ বিরক্ত বা উত্তেজিত হয় না । লাইনের উপর দিয়ে চলতে গিয়ে বিধাননগর স্টেশনে কত লোক মরেছে । কিন্তু তবুও লাইনের উপর দিয়ে পারাপারের বিরাম নেই ।

স্টেশন থেকে বেরিয়ে হেঁটেই অফিস যাই । চারিদিকে ধোঁয়া ধুলো আর ময়লা । বিবর্ণ সমস্ত বাস, ট্যাক্সি আর অটো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে চলেছে । লোকজন দৌড়াচ্ছে তাতে চড়বে বলে । ফুটপাত ভাঙাচোরা, তার আবার বেশির ভাগ অংশ দখল করে আছে দোকানদাররা । নোঙরার মধ্যেই চলছে রান্না বান্না খাওয়াদাওয়া । চারিদিকে মাছি উড়ছে । গাছের পাতাগুলোও ধুলো পড়া । চায়ের দোকানে ভিড়, হাতে খবরের কাগজ। এরা কি কোনদিন অফিসে যায় না ? গামছা পরা লোক খালি গায়ে, হাতে মোবাইল, ছোট ট্রাকে করে এসেছে মুরগী ভর্তি কন্টেনার, রাস্তার উপর পড়ে আছে একটা মরা মুরগী।

বাচ্চারা মা অথবা কাজের মেয়ের হাত ধরে স্কুল থেকে বাড়ির দিকে চলেছে আর আমি চলেছি অফিসে । মাল আনার ভ্যানরিকশাগুলো রাস্তার উপরেই রাখা । ফুটপাতের উপর কেরোসিন বিক্রি হচ্ছে । কোথাও আবার বেদী করে মন্দির । ধর্মবিশ্বাসী লোকের অভাব নেই এখানে । কোথাও আবার দলবদ্ধভাবে তাস খেলা চলেছে । কেউ বা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাস্তার পাশের বোর্ডে টাঙানো গণশক্তি পড়ছে । রাস্তার পাশের দোকানের পিসিও বুথে মিকি মাউসের ছবি । কোথাও বা বসে আছে একটি সুন্দরী কিন্তু হতাশ এক তরুণী । সুন্দর সকাল সন্ধ্যা গুলো বোধহয় তার দোকানে বসেই কাটে । রাস্তার ধারের সাইনবোর্ডে মাইকেল মধূসুদনের ছবি । ফুটপাতে ঘুমন্ত কুকুর । এই নিয়েই আমার অফিসে যাবার রাস্তা

অবশেষে বড় রাস্তা থেকে আমি বাঁক নিই ডানদিকে এক সরু গলির ভিতরে । বড় রাস্তার বিরাট আওয়াজ কোলাহল অনেক কমে আসে । ডান দিকে বাঁদিকে গেরস্ত বাড়ি । বাঁদিকে একটা ঘরে তালাবন্দী কোন দেবতা । অনেকেই দেখি দরজা ছুঁয়ে প্রণাম করে যায় । আরো খানিকটা যাবার পর অবশেষে আমি অফিসের দরজায় এসে হাজির হই । এটা কোন অফিস পাড়া নয় । তবু এখানেই আমার অফিস । এখানেই নয় ঘন্টা কাটানোর পরে আমাকে আবার ফিরতে হবে সেই একই রাস্তা দিয়ে । তবে সেটা আলাদা এক গল্প ।

Tuesday, November 07, 2006

জ্যোতিষ -- এক সামাজিক সমস্যা

 
জ্যোতিষীরা যে মানুষের উপকার করার থেকে অপকার অনেক বেশী করে সে বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই । মূলত মানুষকে বোকা বানিয়ে এবং তাদের মানসিকভাবে দূর্বল করে দিয়ে তাদের কাছ থেকে কিছু টাকা কামিয়ে নেওয়াই এদের একমাত্র লক্ষ্য ।
জ্যোতিষশাস্ত্রের ভিতরে আদৌ কিছু সারমর্ম আছে কিনা সেটা আমার জানা নেই, কিন্তু এটা সহজেই বুঝতে পারি যে এর উপর ভিত্তি করে জীবনের কোন সিদ্ধান্ত নেবার মতো বোকামো আর হয় না ।
অনেকক্ষেত্রে জ্যোতিষীরা কিছু সম্ভাবনার কথা বলে যা হয়ত কিছুটা মিলে যায় । কিন্তু সেই মিলে যাওয়াটা হয়ত সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে এমনিই হত । তারপর জ্যোতিষীরা যেভাবে বিচার করে তা যেকোনও সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া কষ্টকর । যেমন তাদের গ্রহের লিস্টে রাহু আর কেতু আছে যার দেখা এখনও পাওয়া যায় নি । এছাড়া তারা সূর্য এবং চাঁদকেও গ্রহ হিসাবে ধরে । তারপর জ্যোতিষীদের মহাবিশ্ব পৃথিবীকেন্দ্রীক যা একেবারে ভুল ।
জ্যোতিষীদের লোকঠকানো ব্যবসা বন্ধ করার জন্য ভারতে আইন অবধি আছে । কিন্তু তাকে কলা দেখিয়ে জ্যোতিষীরা দিব্যি করে খাচ্ছে ।
মানুষ যত সফল হয় তত তার নিজের প্রতি আস্থা কমে । প্রতি মূহুর্তেই সে বিফল হবার ভয় পায় । এইজন্য দেখা যায় ফিল্মস্টার, খেলোয়াড়, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক সবাই জ্যোতিষীর দ্বারস্থ হচ্ছেন ।

পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ পত্র পত্রিকাতেই রাশিফল ছাপা হয় । অতি আধুনিক ইংরাজী পত্রিকাগুলিও বাদ যায় না । এছাড়া টিভি চ্যানেল গুলিতে রোজ সকালে রাশিফলের অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় । এছাড়া বিভিন্ন চ্যানেলের স্লট ভাড়া করে নিয়ে জ্যোতিষীদের লোকঠকানো অনুষ্ঠান তো আছেই ।
এমনকী ইন্টারনেটের বিভিন্ন ভারতীয় পোর্টালে রাশিফলের জন্য আলাদা পাতা পর্যন্ত থাকে । মোবাইলে এসএমএস আসে পণ্ডিতজীর কাছ থেকে মিনিটে ছয় টাকা খরচ করে পরামর্শ নেবার জন্য ।
পুরো ব্যাপারটাই যে করা হয় স্রেফ ব্যবসা বাড়ানোর জন্য সেটা বোঝা শক্ত নয় ।


এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন দেশে আবার বিদেশ থেকে কুসংস্কার আমদানি করা হয় যেমন চৈনিক বুজরুকি ফেং শুই । এই বুজরুকি দেখিয়ে আর বেচে কলকাতায় কিছু লোক প্রচুর টাকা করে ফেলেছে ।

মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জ্যোতিষীদের রমরমা বাজার তাদের মতামত না নিয়ে কোনো কাজই করা হয় না । সেখানে লাগে রহো মুন্নাভাই সিনেমাতে জ্যোতিষীদের বিরুদ্ধে কিছু কথা বলা হয়েছে । তাই দেখে মনে ভরসা জাগে যে সুস্থভাবে চিন্তা করার লোক এখনও মনে হয় আছে ।

Monday, November 06, 2006

অরকুট (orkut.com) -- যোগাযোগের আরেক মাধ্যম

ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগের জন্য বেশ কিছু সাইট আছে । যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অরকুট (orkut.com). বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশে অরকুট খুবই জনপ্রিয় । এবং এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে । অরকুট যেহেতু গুগুলের সেজন্য এর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলেই মনে হয় ।

সরাসরি কেউ অরকুটে রেজিস্ট্রী করতে পারবেন না । জিমেলের মত অরকুটে অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে অন্য কোন আহ্বানকারীর মাধ্যমে খুলতে হবে । আর অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে আপনার জিমেল অ্যাকাউন্ট দরকার । অ্যাকাউন্ট খোলার পর নিজের প্রোফাইল সেট করতে হবে । এরপর পরিচিত ব্যক্তিদের বন্ধু হিসাবে যোগ করতে হবে যাতে সহজে আপনারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন । অরকুটে অ্যাকাউন্ট আছে এরকম অন্য কাউকে আপনি বন্ধু হিসাবে যোগ করার আবেদন জানতে পারেন অথবে সেও জানাতে পারে । অরকুটে অ্যাকাউন্ট নেই এরকম কাউকে অরকুট থেকেই মেসেজ পাঠিয়ে অরকুটে যোগ দেবার জন্য অনুরোধ করতে পারেন ।

অরকুটের দুটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে স্ক্র্যাপিং এবং কমিউনিটি ।

প্রত্যেকের একটি করে খোলা মেসেজ পাতা থাকে সেখানে যেকেউ যাখুশি লিখতে পারে তাকে উদ্দেশ্য করে । একেই স্ক্র্যাপ বলে । এই স্ক্র্যাপের পাতা যেকেউ দেখতে পারে ।

একই মনোভাবাপন্ন লোকেরা অথবা একই সাথে জড়িত লোকেরা নিজেদের যে গ্রুপ গঠন করে তাকে বলে কমিউনিটি । অরকুটে প্রচুর স্কুল কলেজ অফিস ইউনিভার্সিটির নিজেদের এক বা একাধিক কমিউনিটি আছে ।

প্রায় সমস্ত বিষয়ের উপরেই কমিউনিটি আছে । পর্নোগ্রাফি থেকে ধর্মীয় বিষয়ের উপরেও । এছাড়া আছে ভারত বিদ্বেযী কমিউনিটি, পাকিস্তান বিদ্বেষী কমিউনিটি, হিন্দু ও মুসলিম বিরোধী অসংখ্য কমিউনিটি ।

আবার ফ্যান কমিউনিটির সংখ্যাও কম নয় । প্রায় প্রত্যেক বিখ্যাত ব্যক্তির ফ্যানেদের কমিউনিটি আছে ।

অরকুটে রেজিস্ট্রী করার পরে আমি আবার অনেক পুরনো বন্ধু দের খুঁজে পেয়েছি । তারা এখন কে কোথায় আছে কি করছে সে সমস্ত খবরও প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে ।

এছাড়া বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে খবরাখবরও অরকুট থেকে পাওয়া যায় সেই সম্পর্কিত কমিউনিটিতে গেলে ।

তবে অরকুট থেকে কিছু সমস্যারও সূত্রপাত হচ্ছে । অরকুটে কেউ কেউ অন্যের ছবি ও ফোন নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে দিচ্ছেন এবং পর্নো কমিউনিটিতে তার লিংক দিয়ে দিচ্ছেন । ফলে সেই নম্বরে অবাঞ্ছিত ফোন আসছে ।

ভারতীয় উপমহাদেশে অরকুট খুবই জনপ্রিয় হলেও অরকুটে সবথেকে বেশী মেম্বার আছে ব্রাজিলের । তুলনামূলক ভাবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কম । কারন আমেরিকায় সব থেকে বেশী চলে মাই স্পেস ।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার হল অরকুটে কিন্তু নিজের মাতৃভাষা ব্যবহার করার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে । অনেকেই নিজের নাম বাংলা বা হিন্দি ইউনিকোড ফন্টে লিখছেন । অনেকে স্ক্র্যাপিং ও করছেন বাংলায় ।

তাই আপনার পুরনো বন্ধুদের খুঁজে পেতে হলে আর নতুন বন্ধু করতে হলে অবশ্যই একবার অরকুটে আসতেই হবে ।

Thursday, October 26, 2006

রেডিও ও আমি


আমাদের ছোটবেলায় রেডিও ছিল বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম । বেশিরভাগ বাঙালি বাড়িতেই রোজ সন্ধেবেলা রেডিওতে খবর ও নাটক শোনা ছিল জরুরী বিষয় । কিন্তু তখন রেডিও ছিল আমার নাগালের বাইরে ।

যখন আমি রেডিও নিয়ে নাড়াচাড়া করি তখন আমাদের বাড়িতে টিভি ভালই জাঁকিয়ে বসেছে । কিন্তু তবুও আমি রেডিও শুনতাম । আমার বাবা-মার বিয়ের পুরনো রেডিওতে আমি বিবিধ ভারতী, যুববাণী আর বিভিন্ন শর্টওয়েভ চ্যানেল শুনতাম ।

শর্টওয়েভে বিবিসি, ভয়েস অফ আমেরিকা প্রভৃতি স্টেশন শুনে বেশ একটা আর্ন্তজাতিক অনুভূতি হত । এছাড়াও নানা অচেনা জায়গার এবং অচেনা ভাষার স্টেশন শুনে বুঝতে চেষ্টা করতাম যে সেটা কোথাকার স্টেশন । পৃথিবীর বহুদেশই বাংলায় অনুষ্ঠান প্রচার করত নিয়মিত ভাবে । সম্ভবত এখনও করে ।

আমি মাধ্যমিক পাস করার পর নিজের মিউজিক সিস্টেম কিনি । তাতে ক্যাসেট চালিয়ে গান শোনা যেত এবং রেডিও শোনা যেত । এই সিস্টেমটা কেনার পর প্রথম আমি কলকাতার এফএম স্টেশন শুনতে পাই । কারণ এর আগের বাড়ির পুরনো রেডিওগুলোতে এফএম ছিল না ।

মিডিয়াম ওয়েভ এবং শর্টওয়েভের থেকে এফএম এর সাউন্ড কোয়ালিটি অনেক ভাল । তখন অবশ্য কলকাতায় একটিই এফএম স্টেশন ছিল । তা ছিল আকাশবাণীর । এই এফএম স্টেশনের জনপ্রিয়তা খুবই বেশী ছিল । বহু বাড়ী, দোকানে সবসময় এফএম চলত । অনেকে রেডিও না কিনে শুধুমাত্র একটা বক্স কিনে নিত আর তার সাথে একটা এফএম রিসিভার লাগিয়ে নিত । এগুলোতে এফএম ছাড়া অন্য কিছু শোনা যেত না ।

আকাশবাণীর এফএমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে গানের থেকে বকবকানি বেশি হয় । বাস্তবিকই অনেক সময়ে দেখা যেত সঞ্চালক সঞ্চালিকাদের বকর বকর এবং জ্ঞান বিতরন গানের থেকে অনেক বেশী সময় ধরে হচ্ছে । এছাড়া এই স্টেশনে বেশিরভাগ সময়েই শুধু পুরনো গান শোনান হত । নতুন গান খুব কম শোনানো হত । ফলে অল্পবয়সীদের মধ্যে এই এফএমএর জনপ্রিয়তা খুব একটা বেশী হয় নি । আকাশবাণীর এই স্টেশনে ফোন করে অনেকে নানা বিষয়ে নিজের মতামত জানাতেন । প্রায়ই দেখা যেত যে একই লোক রোজই ফোনের লাইন পাচ্ছেন আর বহু লোক অভিযোগ করতেন যে তাঁরা বহুবার চেষ্টা করেও একবারও লাইন পাচ্ছেন না । এটা একটা রহস্যজনক ব্যাপার ছিল যে একই লোক কিভাবে বার বার ফোনের লাইন পায় । এই ব্যাপার কুখ্যাত ছিল মধ্যমগ্রাম এলাকা । দেখা যেত যে মধ্যমগ্রামের লোকেরা খুব সহজেই এফএমের ফোনের লাইন পায় । এর মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন ভুলু সাহা এবং নান্টু সাহা । এফএমে ফোন করে করে ভুলু সাহা প্রায় বিখ্যাত লোক হয়ে পড়েছিলেন । যেকোন লোক একডাকে ভুলু সাহাকে চিনত ।

এরমধ্যে অবশ্য শর্টওয়েভ রেডিও মাঝে মাঝে শুনতাম । কারগিল যুদ্ধের সময় শর্টওয়েভ রেডিওতে পাকিস্তানের প্রোগ্রাম শুনে হাসি পেত । যেকোন উপায়ে ভারতের নিন্দে করাই যেন পাকিস্তান রেডিওর একমাত্র উদ্দেশ্য । যেমন গানের প্রোগ্রামে একটি করে গান শোনানো হত এবং সঞ্চালিকা খানিকক্ষন ভারতের পিণ্ডি চটকাতেন । তারপর আবার একটা গান । নানা ভাবে নানা উপায়ে ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করার জন্যই যেন স্টেশনটি খোলা হয়েছে । খুব রাগ হত যখন সঞ্চালিকা উগ্রপন্থীদের শহীদ আর ভারতের বীর জওয়ানদের দুশমন বলতেন ।

২০০১ সালে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পরে যখন আমেরিকা আফগানিস্তান আক্রমন করে তখন যুদ্ধ লাগার প্রথম খবর আমি শর্টওয়েভ রেডিও থেকেই পেয়েছিলাম ।

এরমধ্যেই একবার খবরের কাগজে পড়লাম যে সরকার প্রাইভেট এফএম স্টেশনের লাইসেন্স মঞ্জুর করেছে । তখন থেকে আরম্ভ হল আমার প্রতীক্ষা । লাইসেন্স দেবার বহু দিন পরে প্রায় বছর দুয়েক হবে কলকাতায় একই সঙ্গে একই দিনে চারটি নতুন চব্বিশ ঘন্টার প্রাইভেট এফএম স্টেশন চালু হল । বলা যায় কলকাতায় রেডিওর পুর্নজন্ম হল ।

এই চারটি স্টেশন হল আমার এফএম, রেডিও মির্চি, রেড এফএম এবং পাওয়ার এফএম । চারটি চ্যানেলে একদম নতুন গান চব্বিশ ঘন্টা ধরে শোনান হতে লাগল । কলকাতার রাস্তায় পঞ্চাশ টাকা করে ঝুড়ি করে এফএম রেডিও বিক্রি হতে লাগল ।

এই নতুন স্টেশনগুলিও সমালোচনা থেকে মুক্ত ছিল না । বিশেষ করে আমার এফএম এবং পাওয়ার এফএম এ একই গান বহুবার শোনানো হত । গানের বৈচিত্র বড়ই কম ।

আমি প্রথম কাজ পাই কলকাতার একটা অফিসে দুই মাসের কন্ট্রাক্টে ডেটা কনভারসন করার । সেখানে কাজের একঘেয়েমি দূর করার জন্য একটা এফ এম রেডিও লাগানো ছিল । কোনো এক রহস্যজনক কারণে রেডিওটিতে পাওয়ার এফএম ছাড়া আর কোন স্টেশন ধরত না । আর আমাদের বার বার একই গান শুনে মাথা খারাপ হবার যোগাড় ।

মাত্র কয়েকদিন আগে কলকাতায় শুরু হয়েছে পঞ্চম প্রাইভেট এফএম চ্যানেল বিগ এফএম । শোনা যাচ্ছে আরও কয়েকটি এফএম চ্যানেল কলকাতায় চালু হতে চলেছে । যাতে শুধুমাত্র গান ছাড়া অন্যান্য খবর ভিত্তিক অনুষ্ঠানও শোনা যাবে ।

কলকাতায় স্যাটেলাইট রেডিওর বিক্রিও বেশ কিছুদিন ধরে শুরু হয়েছে । কিন্তু স্যাটেলাইট রেডিও সফল হওয়া খুবই মুশকিল । কারণ এই রেডিওর মাসিক চার্জ আছে । আর এফএম চ্যানেলগুলোতেই যখন ফ্রীতে এত গান শোনা যাচ্ছে আর সস্তার এমপিথ্রীতে যখন বাজার ভরে গেছে তখন আবার মাসিক চাঁদা দিয়ে গান শোনার কোন মানে হয় না ।

Saturday, October 21, 2006

ইন্টেল স্কাইপ কে টাকা খাওয়াল সস্তা ব্যবসা বাড়ানোর জন্য


স্কাইপ (Skype) একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ইন্টারনেটে কথা বলার সফটওয়্যার । স্কাইপ ২ ভার্সনে দশটি পথে সংযোগকারী কনফারেন্স কলের বৈশিষ্ট্য যোগ করা হয়েছে যা কেবল ইন্টেলের ডুয়াল কোর প্রসেসর থাকলে তবেই চালানো যাবে । কিন্তু এএমডির ডুয়াল কোর প্রসেসরে চালানো যাবে না । অথচ না চালানোর কোন প্রযুক্তিগত সমস্যা নেই ।

ইন্টেল স্বীকার করেছে যে তারা এজন্য স্কাইপকে টাকা দিয়েছে । এবং স্কাইপ যে এএমডি প্রসেসরেও চালানো যাবে তা প্রমাণ হয়েছে যখন একজন হ্যাকার একটি ক্র্যাক বের করে যা দিয়ে এএমডি মেশিনেও স্কাইপের এই বৈশিষ্ট্য যোগ করা সম্ভব হয়েছে ।

এখন প্রশ্ন হল এটা কি সঠিক ব্যবসা করবার নীতি না স্রেফ দুনম্বরী কাজ । ইন্টেলের মত বড় কোম্পানি যখন এএমডির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে পারছে না তখন তারা এই রকম নীতিবিরোধী কাজ করছে । আর স্কাইপ ফ্রী বলেই যে তারা যার তার থেকে টাকা খেয়ে যা তা কাজ করবে এই বা কেমন কথা । তা হলে তাদের আর বিশ্বাস যোগ্যতা আর কি অবশিষ্ট রইল ।

অধিক জানতে পড়ুন

http://blogs.zdnet.com/ip-telephony/?p=947

Friday, October 13, 2006

কেন সফটওয়ারের মালিক থাকা উচিৎ নয়

হঠাৎই নেটে পেয়ে গেলাম এই প্রবন্ধটি পড়ে বেশ ভালো লাগল । তাই পুরোটাই তুলে দিলাম ।


কেন সফটওয়ারের মালিক থাকা উচিত্‍ নয়

রিচার্ড স্টলম্যান

ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তি আজ আমাদের সহজে তথ্য কপি ও পরিবর্তন করার সুযোগ দিচ্ছে কম্পিউটার একে আরো সহজতর করেছে

তবে সবাই এই প্রক্রিয়াটিকে সহজতর করতে চায় না কপিরাইট প্রথাটি সফটওয়ার প্রোগ্রামকে একটি মালিকানাধীন বস্তুতে পরিণত করেছে আমাদের ব্যবহৃত সফটওয়ারগুলো কপি ও পরিবর্তন করার ক্ষমতা অধিকাংশ সফটওয়ার নির্মাতা শুধুমাত্র নিজেদের জন্য সংরক্ষিত রেখে সফটওয়ারগুলোর অসংখ্য সুবিধা থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করতে চায়

কপিরাইট ব্যবস্থাটি গড়ে উঠেছিল মুদ্রণ ব্যবস্থার সাথে মুদ্রণ প্রযুক্তিতে যন্ত্রের সাহায্যে বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাপানো সম্ভব হচ্ছে কপিরাইট ব্যবস্থাটি এখানে যুক্তিসঙ্গত কারণ এটি শুধু [প্রকাশক ব্যতীত] অপর কোন প্রকাশনা সংস্থাকে নির্দিষ্ট কোন তথ্য ছাপানো থেকে বিরত রাখে কিন্তু কোনভাবেই এটি পাঠকের স্বাধীনতা হরণ করে নাএ জন্য সাধারণ পাঠক যার মুদ্রণযন্ত্র নেই, সে শুধু কাগজ-কলম দিয়েই প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে; আর এ ধরনের কাজের জন্য কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয় নি বললেই চলে

ডিজিটাল প্রযুক্তি মুদ্রণ ব্যবস্থার তুলনায় অনেক বেশি সুবিধাজনক যখন কোন তথ্য ডিজিটাল আকারে থাকে তখন আপনি সহজেই তা কপি করে অন্যের সাথে শেয়ার করতে পারেন ডিজিটাল তথ্যের এই বৈশিষ্ট্যটি কিন্তু কোনভাবেই প্রচলিত কপিরাইট ব্যবস্থার সাথে খাপ খায় না সেজন্যই অযৌক্তিক সফটওয়ার কপিরাইট কার্যকর করতে গিয়ে ক্রমবর্ধমান হারে বিভিন্ন নোংরা ও নির্মম পদ্ধতির আশ্রয় নিতে হচ্ছে

সফটওয়ার পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন (SPA) কর্তৃক গৃহীত চারটি পদক্ষেপ লক্ষ্য করুন -

আপনার বন্ধুকে সাহায্য করতে সফটওয়ার নির্মাতা কর্তৃক নির্ধারিত শর্তাদি অমান্য করা একটি খারাপ কাজ - এই বলে ব্যাপক প্রচারণা চালানো

আপনার সহকর্মীদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করতে বলা

পুলিশী সাহায্য নিয়ে অফিস ও স্কুলগুলোতে তল্লাশি চালানো সেখানে মানুষকে প্রমাণ করতে হচ্ছে যে, তারা নির্দোষ ও অবৈধভাবে সফটওয়ার কপি করার কাজে লিপ্ত নয়

SPA-এর অনুরোধে মার্কিন সরকারের নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা [যেমন - এমআইটি'ডেভিড লাম্যাকছিয়া (LaMacchia)] সফটওয়ার কপি করার জন্য নয় বরং কপি করার যন্ত্রপাতি অরক্ষিত অবস্থায় রাখা ও তার ব্যবহার সংযত না করার ফলেই এই মামলা করা হয় [তাঁর বিরুদ্ধে কোন সফটওয়ার কপি করার অভিযোগ নেই]

পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নে উপরোক্ত এই চারটি পন্থাই প্রয়োগ করা হত নিষিদ্ধ তথ্যের প্রতিলিপি তৈরি প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে সেখানে প্রতিটি কপি করার যন্ত্রের সামনে একজন পাহারাদার থাকতোএ কারণে তথ্য কপি করার কাজটি প্রত্যেককে করতে হত গোপনে এবং তারপর তা হাতে হাতে ছড়িয়ে দেওয়া হত একটি গোপন মুদ্রণ ও বিতরণ ব্যবস্থার (Samizdat) সাহায্যে তবে এ দুটি ঘটনার মধ্যে অবশ্যই একটি পরিষ্কার পার্থক্য আছে: সোভিয়েত ইউনিয়নে তথ্যের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটি করার উদ্দেশ্য হল আর্থিক লাভতবে উদ্দেশ্যের ভিন্নতা নয় বরং উদ্দেশ্য সাধনে গৃহীত পদক্ষেপগুলোই কিন্তু আমাদের জীবনকে আক্রান্ত করে

আমরা কিভাবে তথ্য ব্যবহার করবো তা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সফটওয়ার নির্মাতাদের হাতে প্রদানের পক্ষে তারা নিম্নলিখিত যুক্তিগুলো দিয়ে থাকেন:

বিভিন্ন নামে ডাকা

নির্মাতারা কিছু নোংরা শব্দ ব্যবহার করে, যেমন - বেআইনি প্রকাশনা (Piracy) বা চৌর্যবৃত্তি’; সাথে সাথে বিশেষজ্ঞদের ব্যবহৃত কিছু টার্মও তারা ব্যবহার করে, যেমন- বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তিআর্থিক ক্ষতি মানুষের চিন্তাভাবনাকে এভাবে একটিমাত্র পথে চালানোর চেষ্টা করা হয় এবং জাগতিক বস্তু ও প্রোগ্রামের মধ্যে একটি সরল সাদৃশ্য খোঁজা হয়

জাগতিক বস্তু সম্পর্কে আমাদের ধারণা হল যে, কারও কাছ থেকে অনুমতি ব্যতীত তার কোন জিনিষ নেওয়া বেআইনি কোন কিছু কপি করা আর না বলে নেওয়া এক জিনিস নয় কিন্তু নির্মাতারা এভাবেই ব্যাপারটিকে সংজ্ঞায়িত করে

অতিরঞ্জন

নির্মাতারা বলে যে, ব্যবহারকারীরা তাদের সফটওয়ার না কিনে নিজেরাই কপি করলে তারা ক্ষতি বা আর্থিক লোকসান এর সম্মুখীন হয় কিন্তু কপি করা কোনভাবেই নির্মাতাকে প্রভাবিত করতে পারে না বা এটি কারো ক্ষতিও করে না যদি এমন হয় যে, যারা কপি করছে তাদের প্রত্যেকেই সফটওয়ারটির একেকজন সম্ভাব্য ক্রেতা, শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই নির্মাতা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে

একটু চিন্তা করলেই কিন্তু দেখা যাবে যে, প্রতিটি লোকই আসলে একটি সফটওয়ার কিনবে না কিন্তু নির্মাতারা এমনভাবে তাদের 'লোকসান' হিসাব করে যেন, প্রতিটি ব্যক্তিই তাদের সফটওয়ারের একটি করে কপি কিনত এটি শুধুই বাড়িয়ে বলা হয়

আইনের দোহাই

নির্মাতারা প্রায়ই বর্তমান আইনের কথা বলেন এবং আমাদের কঠোর জরিমানার কথা বলে ভয় দেখান বর্তমানের আইন নৈতিকতার ব্যাপারে প্রশ্নাতীত এরকম ধারণাও তারা দিয়ে থাকেন -- একই সাথে আমাদের একথাও বিশ্বাস করতে বলা হয় যে, এ ধরনের জরিমানা প্রাকৃতিক ঘটনামাত্র এবং এরকম একটি প্রথা আরোপ করার জন্য কাউকে দোষারোপ করা যাবে না

এই জাতীয় যুক্তিগুলোকে কোন সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা বা যুক্তিধারার সম্মুখে দাঁড়ানোর মত করে তৈরি করা হয় নি বরং এগুলো তৈরি করা হয়েছে একটি নির্দিষ্ট মানসিক চিন্তাধারাকে বলপূর্বক আমাদের চিন্তাচেতনার অংশে পরিণত করার জন্য

এটি খুবই সাধারণ ব্যাপার যে, আইন কখনো ঠিক ও বেঠিকের মধ্যে সীমারেখা নিরূপণ করে না প্রতিটি আমেরিকাবাসীরই জানা আছে যে, চল্লিশ বছর আগে একজন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের জন্য বাসের সামনের সিটে বসা আইনবিরুদ্ধ ছিল শুধুমাত্র বর্ণবাদীরাই এই আইনটিকে সমর্থন করতো

প্রাকৃতিক অধিকার

সফটওয়ার লেখকেরা প্রায়ই তাদের প্রোগ্রামের সাথে নিজেদের একটি বিশেষ সম্পর্কের দাবি করেন এবং এও দাবি করেন যে, নিজেদের লেখা সফটওয়ারের প্রতি তাদের আগ্রহ ও ভালবাসা অন্য যে কারো থেকে বেশি (সত্যিকার অর্থে, লেখকেরা নয় বরং কোম্পানিগুলো সফটওয়ারের কপিরাইট করে - এবং আশা করে যে, যুক্তির এই সামান্য অমিলটুকু আমরা উপেক্ষা করব।)

যারা এরকম নৈতিক স্বতঃসিদ্ধ প্রচার করেন যে, প্রোগ্রাম লেখকেরা আপনার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, নিজে একজন সফটওয়ার লেখক হিসেবে তাদের এসব কথার জবাবে বলবো , এটি পুরোপুরি একটি বাজে কথা

শুধু দুটি ক্ষেত্রে মানুষ সাধারণত প্রাকৃতিক অধিকার সংক্রান্ত যুক্তিটি মেনে নিতে পারে

প্রথম কারণটি হল, জড়বস্তুর সাথে সফটওয়ারের অতিরঞ্জিত তুলনা আমি স্প্যাগেটি (নুডল্‌স) রান্না করার পর আমার অনুমতি ব্যতীত যদি অন্য কেউ তা খেয়ে নেয় তবে আমি অবশ্যই তার প্রতিবাদ জানাবো; কারণ এরপর আমি আর তা খেতে পারছি নাতার কাজটি আমাকে ততটুকুই কষ্ট দেয় যতটুকু তার উপকার করে; এক্ষেত্রে কেবলমাত্র একজনই খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে এবং প্রশ্ন হচ্ছে সে কে? আমাদের দুজনের সামান্যতম পার্থক্যটুকুই কিন্তু নৈতিকতার মানদন্ডে এ সমস্যার সমাধান করে দেয়

আমার লেখা প্রোগ্রামটি আপনি চালান বা পরিবর্তন করুন তা আপনাকেই প্রভাবিত করে প্রতক্ষ্যভাবে এবং আমাকে পরোক্ষে আপনি আপনার বন্ধুকে কোন সফটওয়ারের একটি কপি দিয়ে থাকেন বা না থাকেন তা আমাকে প্রভাবিত করার চেয়ে আপনাকে এবং আপনার বন্ধুকে প্রভাবিত করে বেশি আপনার বন্ধুকে সফটওয়ারটির একটি কপি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলার কোন অধিকার আমি রাখি নাএই অধিকার কোন ব্যক্তিরই থাকার কথা নয়

দ্বিতীয় কারণটি হল, আমাদেরকে বলা হচ্ছে যে, লেখকদের প্রাকৃতিক অধিকারের ব্যাপারটি আমাদের সমাজের একটি অনুমোদিত ও প্রশ্নাতীত ঐতিহ্য

ঐতিহাসিকভাবে কিন্তু এর বিপরীতটিই সত্য যখন মার্কিন সংবিধান তৈরি করা হচ্ছিল তখন কপিরাইটকে লেখকদের প্রাকৃতিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দানের প্রস্তাব সুস্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল সেজন্য মার্কিন সংবিধানে কপিরাইট প্রক্রিয়াকে অনুমোদন করা হলেও কখনোই একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়রূপে গণ্য করা হয় না; এজন্য সংবিধান অনুসারে কপিরাইটের কার্যকারীতা সাময়িক সংবিধানে আরো বলা হয় যে, কপিরাইটের উদ্দেশ্য হবে প্রগতিকে সহায়তা করা, লেখকদের পুরস্কৃত করা নয় কপিরাইট অবশ্যই লেখককে এবং আরো বেশি করে প্রকাশককে পুরস্কৃত করে তবে এটি শুধু তাদের আচরণ পরিবর্তনের উপায় হিসাবেই রাখা হয়েছে

প্রকৃতপক্ষে, ঐতিহ্যগতভাবে আমাদের সমাজে কপিরাইট প্রথাকে জনগণের প্রাকৃতিক অধিকারের পরিপন্থী বলে মনে করা হয় - এ কারণে শুধুমাত্র বিশেষ জনস্বার্থেই এর প্রয়োগকে ন্যায্য প্রতিপাদন করা যায়

অর্থনৈতিক কারণ

সফটওয়ারের মালিকানা প্রথার ব্যাপারে চূড়ান্ত যুক্তিটি হল, এটি অপেক্ষাকৃত বেশি সফটওয়ারের উত্‍পাদন নিশ্চিত করে

কিছুটা হলেও, এই কারণটি মালিকানা প্রথাকে অনেকটা যুক্তিসম্মতভাবে উপস্থাপন করেএটি একটি বৈধ উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে রচিত - উদ্দেশ্যটি হল সফটওয়ার ব্যবহারকারীদেরকে সন্তুষ্ট করাআর এটি খুবই স্বাভাবিক যে, ভাল মজুরির ব্যবস্থা থাকলে মানুষ যেকোন কিছুই তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে উত্‍পাদন করে

তবে এই অর্থনৈতিক যুক্তিটিতেও একটি সমস্যা আছে: এটি এই ধারনার উপর প্রতিষ্ঠিত যে, আমাদের প্রদেয় অর্থের পরিমাণের উপর ভিত্তি করেই সফটওয়ার উত্‍পাদনে তারতম্য দেখা যায় এখানে ধরে নেওয়া হয়েছে যে, আমাদের কাছে সফটওয়ারের উত্‍পাদন বিষয়টিই জরুরি - সফটওয়ারের মালিক থাকলো কি থাকলো না সেটা কোন ব্যাপার নয়

এই ধারনাটিকে জনগণ সহজেই গ্রহণ করে কারণ জড়বস্তু সম্পর্কিত আমাদের দৈনন্দিন ধারনার সাথে এটি মিলে যায় উদাহরণস্বরূপ একটি স্যান্ডউইচের কথাই ধরুন আপনি বিনামূল্যে অথবা অর্থের বিনিময়ে একটি স্যান্ডউইচ পেতে পারেন যদি তাই হয় তবে দুটি উপায়ের মধ্যে একমাত্র পার্থক্যটি হল আপনার পরিশোধিত অর্থ আপনি এটি কিনে থাকেন বা না থাকেন - স্যান্ডউইচটির সেই একই স্বাদ ও পুষ্টিমান বজায় থাকে এবং উভয় ক্ষেত্রেই আপনি এটি মাত্র একবারই খেতে পারবেন স্যান্ডউইচটি খাওয়ার পর আপনার নিকট অবশিষ্ট অর্থ ব্যতীত আর কিছুই ইতিপূর্বে স্যান্ডউইচটির একজন মালিক ছিল কি ছিল না, তার ওপর সরাসরি নির্ভর করছে না

যেকোন ধরনের জড়বস্তুর ক্ষেত্রেই এটি সত্য বস্তুটি যা-ই হোক না কেন, পাওয়ার পর সেটা দিয়ে আপনি ইচ্ছামাফিক কাজকর্ম করতে পারেন এবং এজন্য আপনাকে এর পূর্বতন মালিকের মুখাপেক্ষী হতে হবে না

কিন্তু যদি একটি প্রোগ্রামের মালিক থাকে তবে তা হয়ে যায় অন্যান্য বস্তু থেকে পৃথক প্রকৃতির এবং প্রোগ্রামটির একটি কপি কেনার পর তা দিয়ে আপনি যা যা করতে পারবেন তাও পূর্বনির্দিষ্ট ফলে অন্যান্য জড়বস্তুর সাথে এর পার্থক্যটা শুধু আর পরিশোধিত অর্থের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না সফটওয়ারের মালিকানা প্রথাটি মালিকদেরকে কিছু না কিছু উত্‍পাদনে উত্‍সাহিত করে - কিন্তু সেটা যে সমাজের চাহিদা মোতাবেকই হবে, এমন কিন্তু নয় পাশাপাশি এই প্রথাটি নৈতিকতাকে দূষিত করে অকল্পনীয় মাত্রায়, শেষ পর্যন্ত যা আমাদের সকলেরই ক্ষতি করে

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সমাজের কী প্রয়োজন? সমাজ সত্যিকার অর্থে এমন তথ্য চায় যা প্রতিটি নাগরিকই সহজে পেতে পারে -- উদাহরণস্বরূপ, এমন সফটওয়ার যা শুধু ব্যবহার করার মধ্যেই নাগরিকদেরকে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে না বরং তারা সফটওয়ারটিকে বোঝা, ভুল সংশোধন করা, পরিবর্তন করা এবং আরো উন্নত করার কাজগুলোও করতে পারবে কিন্তু সফটওয়ার নির্মাতাদের নিকট থেকে আমরা সাধারণত যা পাই তা যেন একটি তালাবদ্ধ বায়স্কোপের বাক্স - একে বোঝার বা পরিবর্তন করার কোন সুযোগই আমাদের নেই

সমাজের আরো প্রয়োজন স্বাধীনতা যখন কোন প্রোগ্রামের একজন মালিক থাকে তখন ব্যবহারকারীগণ তাদের নিজেদের জীবনের একটি অংশকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারায়

আর সবচেয়ে বড় কথা হল, সমাজ জনগণের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত পারস্পরিক সহযোগিতার মানসিকতাকে উত্‍সাহিত করতে চায় যখন সফটওয়ারের মালিকগণ বলেন যে, স্বাভাবিক উপায়ে আমাদের প্রতিবেশীদের সাহায্য করা বেআইনি (Piracy) তখন তারা সমাজের নাগরিক চেতনাকেই দূষিত করেন

একারণে ফ্রী সফটওয়ারের মূল বিষয়টি হল ব্যবহারের স্বাধীনতা”, সফটওয়ারের মূল্য নয়

সফটওয়ার মালিকগণ যে অর্থনৈতিক যুক্তি দেখান তা ভুল হলেও অর্থনৈতিক ব্যাপারটি সত্য কিছু মানুষ প্রোগ্রাম লেখার আনন্দে বা এ কাজটির প্রতি তাদের ভালবাসার কারণেই ভাল ভাল প্রোগ্রাম লেখেন কিন্তু আমরা যদি আরো সফটওয়ার চাই তবে আমাদেরকে তহবিল বাড়াতে হবে

বিগত প্রায় দশ বছর ধরে ফ্রী সফটওয়ার ডেভেলপারগণ বিভিন্নভাবে তহবিল বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন এবং কিছুটা সাফল্যও পেয়েছেন কাউকে ধনী বানানোর কোন প্রয়োজন নেই; মার্কিন পরিবারসমূহের গড়পড়তা বার্ষিক আয় প্রায় ৩৫০০০ ডলার এবং এই অর্থ প্রোগ্রামিং অপেক্ষা কম তৃপ্তিদায়ক কাজের জন্যও বেশ আকর্ষণীয় পারিশ্রমিক

একটি ফেলোশীপ পাওয়ার পূর্বে অনেক বছর যাবত্‍ নিজের লেখা ফ্রী সফটওয়ারগুলোতে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের চাহিদামাফিক নানা রকম পরিবর্তন-পরিবর্ধন সাধন করে আমি জীবিকা নির্বাহ করতামএ ধরনের প্রতিটি পরিবর্ধন-ই সফটওয়ারের মূল সংস্করণের সাথে যোগ করা হত এবং পরবর্তীতে এভাবে সকলেই তা ব্যবহার করার সুযোগ পায় গ্রাহকবৃন্দ আমাকে এর জন্য অর্থ প্রদান করত যেন আমার লেখা সফটওয়ারসমূহে তাদের ইচ্ছামাফিক বৈশিষ্ট্য যোগ করা হয় প্রতিটি ক্ষেত্রেই যে সংশ্লিষ্ট সফটওয়ারটিতে এ সকল বৈশিষ্ট্য যোগ করা আমার ইচ্ছাতালিকায় সর্বাগ্রে ছিল তাও আমি মনে করতাম না

ফ্রী সফটওয়ার ফাউন্ডেশন (FSF) একটি করমুক্ত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ফ্রী সফটওয়ারের জন্য তহবিল তৈরির লক্ষ্যে এটি বিক্রি করছে গনুহ (GNU ) সিডি-রম, টিশার্ট, ম্যানুয়াল এবং ডিলাক্স ডিস্ট্রিবিউশন (এসব কিছুই ব্যবহারকারীরা কপি বা পরিবর্তনের অধিকার রাখেন) এটি বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনুদান হতেও তহবিল সংগ্রহ করছেএই প্রতিষ্ঠানে এখন পাঁচজন প্রোগ্রামার এবং মেইল অর্ডার সামলানোর জন্য তিনজন কর্মী আছেন

কিছু ফ্রী সফটওয়ার ডেভেলপার বিভিন্ন ধরনের সেবার বিনিময়ে আয় করে থাকেন যেমন - সিগনাস সাপোর্ট এর ৫০ জন কর্মীর মধ্যে ১৫% এর কাজ ফ্রী সফটওয়ার তৈরি করা - যেকোন সফটওয়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এটি একটি উল্লেখযোগ্য অংশ

কিছু প্রতিষ্ঠান, যেমন - ইন্টেল, মটোরোলা, টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্ট্‌স এবং অ্যানালগ ডিভাইসেস একত্রিত হয়ে প্রোগ্রামিং ভাষা সিএর ফ্রী গনুহ কম্পাইলার তৈরির জন্য অর্থ সরবরাহ করেছিল 'অ্যাডা' প্রোগ্রামিং ভাষার ক্ষেত্রে অর্থ যোগান দিয়েছিল মার্কিন বিমান বাহিনী মার্কিন বিমান বাহিনী বিশ্বাস করে যে, একটি উন্নতমানের কম্পাইলার পাওয়ার জন্য এটিই হবে সর্বাপেক্ষা ব্যায়সাশ্রয়ী পন্থা [কিছুদিন পূর্বে এই প্রকল্পে বিমান বাহিনীর অর্থায়ন শেষ হয় এবং গনুহ 'অ্যাডা' কম্পাইলারটি এখন বিমানবাহিনীসহ সকলে ব্যবহার করছে কম্পাইলারটি রক্ষণাবেক্ষণের কাজও করা হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে।]

এগুলো খুবই ক্ষুদ্র কিছু উদাহরণ মাত্র; ফ্রী সফটওয়ার আন্দোলনটিও এখনো ক্ষুদ্র ও বয়সে নবীন কিন্তু এদেশে [মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র] শ্রোতাগোষ্ঠির সহায়তায় পরিচালিত বেতার কেন্দ্রের উপস্থিতি এটাই প্রমাণ করে যে, প্রতিটি ব্যবহারকারীকে অর্থ দিতে বাধ্য না করেও এ ধরনের বিরাট কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব

বর্তমানে একজন কম্পিউটার ব্যবহারকারী হিসেবে আপনি হয়ত একটি মালিকানাধীন (Proprietery) প্রোগ্রাম ব্যবহার করছেন যখন আপনার বন্ধু এটি কপি করতে চাচ্ছে তখন তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা ভুল হবেকারণ পারস্পরিক সহযোগিতা কপিরাইট হতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু এভাবে গোপনে পরস্পরকে সহযোগিতা করা কখনোই একটি ভাল সমাজ তৈরিতে সাহায্য করে না প্রতিটি মানুষই মর্যাদা ওস্ম্মসম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চায়; আর এর অর্থই হল মালিকানাধীন সফটওয়ারের প্রতি না বলা

আপনার অধিকার আছে সর্বসমক্ষে স্বাধীনভাবে অন্যান্য সফটওয়ার ব্যবহারকারীদেরকে সাহায্য করার আপনার অধিকার আছে সফটওয়ারের কর্মপদ্ধতি জানার এবং শিক্ষার্থীদের তা জানানোর আপনার অধিকার আছে অচল সফটওয়ারটিকে সচল করার জন্য প্রিয় প্রোগ্রামারকে অর্থের বিনিময়ে নিয়োজিত করার

আপনার অধিকার আছে সকল সফটওয়ারকেই ফ্রী সফটওয়াররূপে ব্যবহার করার


এই রচনাটি Free Software, Free Society: The Selected Essays of Richard M. Stallman এ প্রকাশিত হয়েছে

গনু এবং এফএসএফ (FSF) সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে অনুগ্রহপূর্বক <gnu@gnu.org> এই ঠিকানায় ই-মেইল করুন এছাড়া অন্যান্য উপায়েও এফএসএফ-এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন

Copyright 1994, Richard Stallman (কপিরাইট ১৯৯৪, রিচার্ড স্টলম্যান)

Verbatim copying and distribution of this entire article is permitted in any medium, provided this notice is preserved. ( এই বিজ্ঞপ্তিটি সংরক্ষণ করা সাপেক্ষে সম্পূর্ণ রচনাটি অবিকৃত অবস্থায় যেকোন মাধ্যমে কপি ও বিতরণ করার অনুমতি দেওয়া গেল। )

Monday, October 09, 2006

মার্কসবাদের বর্তমান অবস্থা

 গত ১৭ই সেপ্টেম্বরের দেশ পত্রিকায় আগরতলার অরুন্ধতীনগর থেকে প্রদীপবিকাশ রায়ের বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মার্কসবাদী সরকার এবং সাধারনভাবে মার্কসবাদের উপরে একটি চিঠি প্রকাশিত হয়েছে । তাঁর এই চিঠি ব্যক্তিগত ভাবে কমিউনিস্টদের সম্পর্কে আমার মতামতের সঙ্গে মিলে যায় । নিচে তাঁর চিঠি থেকে খানিক অংশ তুলে দিলাম ।

কলকাতার প্রেস ক্লাবে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মার্কসবাদী নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একবার বলেছিলেন সমাজতন্ত্র কায়েম করতে পারব না । সমাজতন্ত্র হবেও না । আমি এখানে পুঁজিবাদ করছি । পুঁজিবাদকে শ্রমিক ও সাধারন মানুষের স্বার্থে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি ।

তাহলে বিগত কয়েক যুগ ধরে মার্কসবাদী বিপ্লবীরা যে বিপ্লব বিপ্লব খেলায় এত আস্ফালন করলেন, লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তপাত ঘটালেন, সমাজতন্ত্র নামক সোনার অশ্বডিম্ব দেওয়ার এত স্বপ্ন দেখালেন -- সবই ছিল প্রহসন ? সবই ছিল ধোঁকাবাজি ?

মার্কসবাদের অর্থনীতিতে মারাত্মক ত্রুটির অনিবার্য পরিণামেই আজ থেকে ১৫ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯১ সালে রাশিয়া সহ পূর্ব ইউরোপের রাষ্ট্রগুলিতে মার্কসবাদী শাসনের পতন হওয়ার পরেও, মার্কসবাদী তাত্ত্বিকরা সেই অলীক সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি । মার্কসবাদের পতনের জন্য দায়ী ত্রুটিগুলি স্বীকার করে নিয়েও শুধু আত্মগ্লানি বিমোচনের জন্য ও ফোস্কা পড়া গায়ে সান্ত্বনার প্রলেপ দেওয়ার জন্য সেই সময়কার কিছু বামপন্থী তাত্ত্বিক লিখেছেন, মার্কসবাদ একটি বিজ্ঞানপ্রসূত সত্য । এ বড় হাস্যকর যুক্তি ! বরং বলা ভাল এ এক অদ্ভুত অন্ধবিশ্বাস মার্কসবাদের প্রতি ।

বুদ্ধদেব বাবুর এই ঐতিহাসিক উক্তির পরেও কি আর মার্কসবাদ একটি বিজ্ঞানপ্রসূত সত্য থাকে ? পুঁজিবাদের অবসানের জন্য যে মার্কসবাদের জন্ম, সেই মার্কসবাদের দ্বারা অনেক রক্তপাত ঘটানোর পর সেই পুঁজিবাদের পদতলেই তার পরিসমাপ্তি ঘটল ! সভ্যতার ইতিহাসে এ যে কত বড় পরাজয়, তা বোঝার মত মুক্তবুদ্ধি কি আর আছে ? তথাকথিত বাম বুদ্ধিজীবিদের মস্তিষ্ক যে অসাড় হয়ে গিয়েছিল, ভ্রান্ত পথে ছুটে তাঁরা যে আত্মঘাতী আস্ফালনে উন্মত্ত হয়ে উঠিছিলেন, তাঁরা যে মার্কসবাদ নামে এক মারাত্মক মায়াহরিণের পিছনে ছুটে আজ এই নৈতিক অপমৃত্যুর মুখে এসে দাঁড়িয়েছেন, তা বোঝার মতো নৈতিক চেতনা কি তাঁদের আছে ?

রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের কমিউনিস্ট দেশগুলির পতনের পর যাঁরা সেইসব দেশে গিয়েছেন সেই প্রত্যক্ষদর্শীদের দৃষ্টিতে যে কারণ ধরা পড়েছে তা হচ্ছে, সেইসব সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির পতনের মূলে রয়েছে দুটি প্রধান কারণ -- প্রথম, খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তীব্র অভাব আর দ্বিতীয়টি ব্যক্তিস্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতার অনধিকার ।

অনেকে প্রশ্ন করেন, পশ্চিমবঙ্গে তো কমিউনিস্ট সরকার তিরিশ বছর ধরে শাসন চালাচ্ছে, কই সেখানে তো রাশিয়ার মতো এমন দেউলিয়া হয়ে যায়নি ? তার উত্তরে বলতে হয় -- পশ্চিমবঙ্গও কবেই দেউলিয়া হয়ে গিয়ে বামফ্রন্ট সরকারের লালবাতি জ্বালিয়ে দিত, যদি তারা কেন্দ্রীয় সরকারের কোলে বসে দোল না খেত । অর্থাৎ ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ যদি কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি অর্থ বরাদ্দ না পেত আর সারা ভারত থেকে প্রয়োজনীয় সর্বপ্রকার দ্রব্যসামগ্রীর জোগান না পেত, তাহলে এই রাজ্যের মানুষকে না খেয়ে মরতে হত ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মার্কসবাদী সমাজতন্ত্রের ব্যর্থতার কারণ কী ? তার উত্তরে বলতে হয়,

১) কমিউনিজম জড়বাদের উপর আধারিত । এই ব্যবস্থায় জড়বাদ প্রাধান্য পাওয়ায় মানুষের মানসিক চিন্তা ও চাহিদা জড়কেন্দ্রিক হয়ে যায় । ফলে জড়বস্তু সম্ভোগের দিকে মানুষ লাগামহীনের মতোই ছুটে যায় ও ভোগ্য জড়সম্পদ আহরণে উন্মত্ত হয়ে ওঠে । যেহেতু মানুষের চাহিদা অনন্ত কিন্তু জড়সম্পদ সীমিত তাই ওই ভোগবাদী মানুষের চাহিদা কোনওদিনই পূরণ হয় না । আর চাহিদা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মানুষের অশান্তি-অসন্তোষের আগুন জ্বলতেই থাকবে ।

২) শ্রমিক কর্মচারীদের কাজে কোনও ইনসেনটিভ না থাকায় উৎপাদনে নিরুৎসাহিতা দেখা দেয়, অর্থাৎ তারা কাজে কর্মে দায়িত্বহীন হয়ে পড়ে ।

৩) মার্কসীয় সমাজব্যবস্থায় আধ্যাত্মিকতার স্থান নেই । মানুষের এই মৌলিক চাহিদা উপেক্ষিত থাকার ফলে মানুষের আত্মিক ক্ষুধা আধ্যাত্মিকতার দিকে পথ না পেয়ে জড়বস্তুতেই আবর্তিত হতে থাকে । অর্থাৎ অর্থ, বিষয় সম্পত্তি ও ভোগলিপ্সার মোহে তারা উন্মত্ত হয়ে ওঠে ।

৪) মার্কসীয় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সমস্ত ক্ষমতা ও সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে বলে গড়ে ওঠে রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ বা স্টেট ক্যাপিটালিজম । আর এই কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও সম্পদ ভোগ করে মুষ্টিমেয় কিছু পার্টিনেতা ও আমলা । তারাই তখন পরিণত হয় বুর্জোয়া শ্রেণিতে । এ-কথা অনেক মার্কসবাদী তাত্ত্বিক স্বীকারও করেছেন এই বলে যে একদিকে শ্রমিক শ্রেণির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ ও অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক নেতৃত্বের মধ্যে বুর্জোয়াসুলভ মনোভাব, দুর্নীতি, বিলাসবহুল জীবনযাপনের প্রবণতা (যেমন জ্যোতি বসু ও তস্য চেলাগণ) ও স্বজনপোষণের মতো বিভিন্ন অবাঞ্ছিত ঘটনা একের পর এক ঘটতে থাকে । তাহলে মার্কসীয় সমাজব্যবস্থায় যে বুর্জোয়া মনোভাব গড়ে ওঠার বড় সুযোগ বিদ্যমান তাও তো প্রমাণিত হল । অথচ কয়েকবছর আগেও কোনও সমাজসচেতন মানুষ মার্কসবাদে ত্রুটি আছে বললে, মার্কসবাদী গুণ্ডারা মারমুখী হয়ে প্রতিক্রিয়াশীল বা সিআইএর দালাল বলে তেড়ে আসত ।

৫) সর্বোপরি স্বাধীন চিন্তা ও বাকস্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার । এই প্রকৃতিদত্ত অধিকারকে দাবিয়ে রাখতে গেলে গণক্ষোভের বিস্ফোরণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে, যা হয়েছে রাশিয়ায় । কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অধীনে থাকায় মার্কসবাদীরা সেই অধিকার হরণ করতে পারে নি । যে পুঁজিবাদ শোষণ থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত করার লক্ষ্যে মার্কসবাদের জন্ম সেই মার্কসবাদী দূরদৃষ্টির অভাবে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত হয়ে আজ সেই পুঁজিবাদের কাছেই আত্মসমর্পণ করল ।

শেষপর্যন্ত বুদ্ধদেববাবু সাংবাদিক সম্মেলনে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে মার্কসীয় সমাজতন্ত্রের অকালমৃত্যু ঘোষণা করলেন । তাঁর পার্টিও এই ঘোষণাটা নীরবে মেনে নিলেন । সুতরাং ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি এখন একটি মৃতসত্ত্বা ।