Saturday, November 25, 2006

সামহ্যোয়ারইনে ধর্ম নিয়ে জটিলতা ও বিতর্ক

সামহোয়্যারইন ব্লগে বেশ কিছুদিন ধরেই ধর্ম নিয়ে নানা প্রকারের বাদানুবাদ চলছে । ব্লগের ভিতরে তৈরি হয়েছে দুই পক্ষ যাদের পারস্পরিক বাদানুবাদ প্রায় রাজনৈতিক সংঘর্ষের চেহারা নিতে চলেছে । ধর্ম নিয়ে তার প্রয়োজনীয়তা এবং অপ্রয়োজনীয়তা নিয়ে নানা রকমের পোস্ট সবারই নজরে আসছে ।

কিন্তু ধর্ম নিয়ে এত বেশী কূটকচালির কোনো প্রয়োজন আছে কি ? কারণ ধর্ম তো প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ব্যাপার । এক বিখ্যাত ব্যক্তির কথা শুনেছিলাম -- আমি যখন মন্দিরে ভগবানকে খুঁজতে গেলাম তখন তাকে পেলাম না, যখন মসজিদে গেলাম তখনও তাকে পেলাম না, যখন গীর্জায় গেলাম তখনও তাকে পেলাম না, কিন্তু যখন নিজের অন্তরে তাকে খুঁজলাম তখনই তাকে খুঁজে পেলাম ।

ধর্ম নিয়ে সমস্যার মূল কারণ হল মানুষ তাকে তার অন্তর থেকে বার করে নিয়েছে এবং প্রকাশ্যে অধিষ্ঠিত করেছে । এরকম কথিত আছে যে সত্যযুগে মানুষ কোন উপাসনা করত না কারন তারা জানত যে তারাই আসলে ভগবানের অংশ । এবং সমস্ত জায়গাতেই ভগবান আছেন । সুতরাং আলাদা করে ভগবানের উপাসনা করার কোনো দরকার নেই । যখন থেকে মানুষ স্বার্থান্ধ হল তখনই সে ভগবানের উপাসনা করতে আরম্ভ করল । মানুষ মনে করল যে ভগবানের পূজা করলে তবেই সে তার চাহিদা পূরণ করতে পারবে ।

একজন মানুষের যদি কোন চাহিদা না থাকে তবে মনে হয় তার কোন উপাসনা করারও দরকার নেই । স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন যে গীতা পাঠের চেয়ে ফুটবল খেলা ভালো। তিনি তাতে গীতার অপমান করেননি । তাঁর বক্তব্য ছিল শুধুমাত্র ধর্মের জন্যই ধর্মচর্চা করার থেকে অন্যকাজ করা অনেক ভালো ।

একই কথা বলা চলে অন্যকোন ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কেই । কেউ যদি ধর্মের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে তবে তাতে তার বাহাদুরি দেখাবার বা জাহির করে দেখাবার যেমন কিছু নেই আবার কেউ যদি নাস্তিক হয় তবে তাতেও বাহাদুরির কিছু নেই । আর ধর্মের ব্যাপারে যুক্তিও বোধ হয় খাটে না । যুক্তি দিয়ে ধর্ম কে বোঝার মত বোকামি আর কিছুতে নেই । ধর্ম কে বুঝতে হবে উপলব্ধির মাধ্যমে । যুক্তি দিয়ে তো এক্ষুনি প্রমাণ করে দেওয়া যায় যে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান নন । কিন্তু কোন ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ কি তা মেনে নিতে চাইবেন ।

কিভাবে প্রমান করা যায় যে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান নন ।

ধরা যাক ঈশ্বর সর্বশক্তিমান । এখন প্রশ্ন হল যে তিনি কি একটা বিরাট পাথর তৈরি করতে পারেন ? উত্তর হল হ্যাঁ নিশ্চই পারেন । দ্বিতীয় প্রশ্ন হল যে তিনি সেই বিরাট ভারি পাথরটা ঠেলে সরাতে পারেন । এক্ষেত্রেও উত্তর হল যে হ্যাঁ নিশ্চই পারেন ষেহেতু তিনি সর্বশক্তিমান । তৃতীয় প্রশ্ন হল যে তিনি কি এত বড় আর ভারি একটা পাথর তৈরি করতে পারেন যেটা তিনি নিজেই ঠেলে সরাতে পারবেন না । এক্ষেত্রে যদি হ্যাঁ উত্তর হয় তাহলেও প্রমান হয় যে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান নন কারণ তিনি পাথরটিকে ঠেলে সরাতে পারবেন না । আবার যদি না উত্তর হয় তাহলেও তিনি সর্বশক্তিমান নন । কারণ তিনি পাথরটি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন ।

সুতরাং যুক্তি দিয়ে অনেক কিছুই প্রমাণ করা যায় । ঈশ্বর আছেন তাও প্রমান করা যায় আবার নেই তাও প্রমাণ করা যায় । কিন্তু আসল কথা হল তাতে ঈশ্বরের কিছুই যায় আসে না ।

একটা উপনিষদের ছোট্ট গল্প দিয়ে এই পোস্ট শেষ করব ।

এক শিষ্যকে তার গুরু বলেছিলেন যে সব কিছুর মধ্যেই ভগবান আছেন । শিষ্যটি তখন ভাবল তাহলে তার কোনো কিছুতেই ভয় পাবার কিছু নেই । একদিন এক পাগলা হাতি তার দিকে তেড়ে এল । শিষ্য ভাবল যে এই হাতির ভিতরে ভগবান আছেন । তাই আমি একে ভয় পাব না । এদিক হাতির উপরের মাহুত চেঁচিয়ে তাকে সাবধান করে দিল । কিন্তু শিষ্য নড়ল না । হাতিটা তখন এগিয়ে এসে শিষ্যটিকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে এক আছাড় দিল ।

যখন আহত শিষ্যকে দেখতে গুরু এলেন তখন শিষ্যটি রাগ করে বলল গুরুমশাই আপনি বললেন যে সব কিছুর মধ্যেই ভগবান আছেন । আর দেখুন হাতি ভগবান আমার কি অবস্থা করেছে । গুরু হেসে বললেন বৎস তুমি শুধু হাতি ভগবানকেই দেখলে আর তার পিঠে বসে যে মাহুত ভগবান তোমাকে সাবধান করে দিল তুমি তো তার কথা শুনলে না ।

2 comments:

Anonymous said...

বাঃ ! অসাধারণ, আপনার যুক্তির সঙ্গে আমার যুক্তির মিল পেলাম ৷

litonhasan said...

ধন্যবাদ,লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো | আমি আপনাকে কোন প্রকার অফার করছি না। আমার মানে হয় এই ছোট তথ্যটি আপনার উপকারে আসতে পারে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া।