Friday, December 28, 2007

বাজে গল্প

আজ থেকে বেশ কিছু বছর আগে এক ভদ্রলোক ব্যবসার কারনে চিনে গিয়েছিলেন । সেখানে বেশ কিছুদিন থাকার ফলে তিনি চিনা ভাষা ভালোই বলতে ও বুঝতে পারতেন কিন্তু পড়তে বা লিখতে পারতেন না ।

চিনে সেই ভদ্রলোক এক মাঝারি শহরে একটা বাড়ির একতলা ভাড়া নিয়ে কিছুদিন ছিলেন । সেই বাড়ির পাশের বাড়িতে এক চিনা তরুণী তার বাবা মার সঙ্গে ভাড়া থাকত ।

পাশাপাশি থাকতে থাকতে সেই সুন্দরী তরুণীর সঙ্গে ভদ্রলোকের বেশ ভালোই ভাব জমে উঠল । ভদ্রলোক ভাবতে লাগলেন এখানেই এই মেয়েটিকে বিয়ে করে থেকে গেলে ভালোই হয় ।

ক্রমে দিন কাটতে লাগল । এরপর ভদ্রলোক একবার অল্প কিছুদিনের জন্য দেশে ফিরলেন । তারপর যখন আবার চিনে ফিরে গেলেন তখন দেখলেন যে সেই তরুণী তার বাবা মার সঙ্গে ঘর ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও চলে গেছে । ভদ্রলোক ব্যস্ত হয়ে মেয়েটির অনেক খোঁজ খবর করলেন । কিন্তু কেউই তাদের কোন খবর বলতে পারল না ।

কিছুদিন বাদে ভদ্রলোকের কাছে একটা চিঠি এসে পৌছাল । আগেই বলেছি যে ভদ্রলোক চিনা ভাষা কিছুই পড়তে পারতেন না । কিন্তু তিনি বুঝতে পারলেন যে এই চিঠিটা সেই মেয়েটাই তাকে লিখেছে । কারণ তিনি এই রকমের খাম আর কাগজ মেয়েটির ঘরে দেখেছিলেন আর মেয়েটি যে সেন্ট ব্যবহার করত তার গন্ধও চিঠিটা থেকে পাওয়া যাচ্ছিল । ভদ্রলোক বেশ আশান্বিত হয়ে উঠলেন । যাক এবার খবর পাওয়া যাবে খালি চিঠিটা কাউকে দিয়ে পড়াতে হবে ।

ভদ্রলোক এবার তাঁর বাড়িওলার কাছে গেলেন । বাড়িওয়ালা হলেন এক মধ্যবয়স্ক মোটা আর রাগী ভদ্রমহিলা । ভদ্রলোক চিঠিটা তাঁর হাতে দিয়ে খুব বিনীত ভাবে তাঁকে অনুরোধ করলেন চিঠিটা পড়ে দেবার জন্য ।

ভদ্রমহিলা চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়তে আরম্ভ করলেন । কিন্তু একি পড়বার আগেই তাঁর মুখ কুঁচকে উঠল । তিনি হঠাৎ বিরাট চিৎকার আরম্ভ করলেন । যার বাংলা করলে হয় বজ্জাত ছোকরা তুই আমার কাছে এই চিঠি পড়াতে এনেছিস । বেরো শিগ্গির আমার বাড়ি থেকে ।

ভদ্রলোক কোনভাবেই বুঝিয়ে তাঁকে শান্ত করতে পারলেন না । ভদ্রমহিলা কোনভাবেই শান্ত হলেন না । কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তিনি তাঁকে বাড়ি থেকে বার করে দিলেন ।

ভদ্রলোককে মালপত্র নিয়ে অগত্যা একটা হোস্টেলে আশ্রয় নিতে হল ।

হোস্টেলে থিতু হয়ে তিনি একজন বোর্ডারকে চিঠিটা দেখাতেই সেও ভদ্রলোকের উপর ক্ষেপে উঠল । বলা যায় কেবল মারতে বাকি রাখল । ভদ্রলোক কিছুই বুঝতে পারলেন না কি হচ্ছে ।

দিন কয়েক বাদে ভদ্রলোক তাঁর একজন খদ্দের কে চিঠিটা দেখালেন । এবারেও একই কান্ড । সেই খদ্দের তো চটে উঠলই তক্ষুনি ভদ্রলোকের সাথে সমস্ত ব্যবসায়িক লেনদেন বন্ধ করে দিল । আর তার অফিস থেকে ভদ্রলোককে চরম অপমান করে বের করে দিল । আরো হুমকি দিল যে এবার থেকে যদি তাকে ত্রিসীমানায় দেখা যায় তবে পুলিশে দেবে ।

বার বার তিনবার নাস্তানাবুদ হয়ে ভদ্রলোক ঠিক করলেন না এই চিঠি আর কাউকে দেখানো যাবে না । চিন দেশের আইন খুব কড়া কে জানে এবার হয়ত জেলে পুরে ফাঁসিই দিয়ে দেবে ।

তাই ভদ্রলোক ঠিক করলেন যে তিনি দেশে ফিরে আসবেন মেয়েটির সঙ্গে দেখা করার আশা ছেড়ে দিয়ে । আর মেয়েটি নিশ্চই ভালো কথা কিছু লেখেনি চিঠিতে যা দেখে সবাই চটে উঠছে ।

ভদ্রলোক চিন থেকে জাহাজ পথে দেশে ফিরতে লাগলেন । জাহাজে তিনি খুবই বিমর্ষ মুখে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন । তাই দেখে এক ফুর্তিবাজ আমেরিকান ছোকরা তাকে জিজ্ঞাসা করল কিহে তোমার ব্যাপারটা কি যখনই দেখি তখনই মুখ হাঁড়ি ।

ভদ্রলোক তখন তাকে ব্যাপারটা খুলে বললেন । ছোকরাটি বলল দেখি তো তোমার চিঠিটা । আমি চিনেতেই বড় হয়েছি । তাই আমি ভালো মতই চিনা ভাষা পড়তে পারি । ভদ্রলোক বললেন দেখ যেই এই চিঠি পড়েছে সেই আমার উপর ক্ষেপে উঠে মারতে বাকি রেখেছে । তুমি হয়তো এই চিঠি পড়ার পর আমাকে হয়তো জাহাজ থেকে লাথি মেরে ফেলে দেবে ।

ছোকরাটি হেসে বলল – না না তোমার ভয় পাবার কিছু নেই । চিঠিতে যতই খারাপ কথা লেখা থাক না কেন আমি তোমার উপর রাগ করবো না । তুমি তো আর এই চিঠিটা লেখোনি ।

ভদ্রলোক তখন আশ্বস্ত হয়ে চিঠিটা পকেট থেকে বের করে ছেলেটির হাতে দিলেন ।

ছেলেটি চিঠিটা নিয়ে ডেকের রেলিঙের উপর ঝুঁকে পড়তে যাবে এমন সময় একটা দমকা হাওয়া এসে চিঠিটাকে ছেলেটির হাত থেকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে মাঝসমুদ্রে ফেলল ।

ফলে ভদ্রলোকের আর কোনদিনই জানা হয়নি যে চিঠিটাতে কি লেখা ছিল ।


(গল্পটা একজনের মুখে শোনা । আমি একটু রঙ চড়িয়ে বললাম মাত্র)

Sunday, November 11, 2007

নন্দীগ্রামে সুপরিকল্পিত গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ



নৃশংসতা এবং বর্বরতার দিক থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং সিপিএম সমস্ত সীমার উর্দ্ধে চলে গেছে । সমস্ত সরকারি প্রশাসনকে ঠুঁটো জগন্নাথ করে বসিয়ে রেখে নন্দীগ্রামকে তারা পরিণত করেছে এক রণক্ষেত্র এবং বধ্যভূমিতে ।

অসভ্য ইতর বর্বর এবং গণহত্যা ও ধর্ষনকারী এই সরকার এবং পার্টির নিন্দার জন্য আজ কোন কথাই যথেষ্ট নয় । ধিক্কার জানাই সেই সব বুদ্ধিজীবিদের যাঁরা এখনও সরকারী আমন্ত্রনে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উৎসবে মেতে আছেন ।

Saturday, November 10, 2007

গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে কিছু কথা

গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং গ্রীন হাউস এফেক্ট নিয়ে ছোটবেলা থেকেই অনেক কিছু পড়ে আসছি । যার মোদ্দা কথা হল পরিবেশ দূষন এবং গাছপালা কেটে ফেলার ফলে গ্রীনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে ফলে সূর্য থেকে তাপ বিকিরিত হয়ে পৃথিবীতে ঢোকার পর যতটা আবার পৃথিবীর বাইরে বিকিরিত হওয়া উচিত তা হচ্ছে না ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে । এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাবার ফলে মেরুপ্রদেশের বরফ গলে যাবে এবং সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে পৃথিবীর বহু জায়গা ডুবিয়ে দেবে ।

পুরো ব্যাপারটার মধ্যেই কেমন একটা যেন মানুষের পাপের ফলই হল গ্লোবাল ওয়ার্মিং এরকম একটা বার্তা লুকিয়ে রয়েছে । এবং এই সবই আমরা মুখস্ত করে এসেছি । কিছুদিন আগে The Great Global Warming Swindle নামে একটি তথ্যচিত্র দেখেছিলাম এই তথ্যচিত্রটিতে দাবি করা হয়েছিল অবশ্যই কিছু বাঘা বাঘা বৈজ্ঞানিক এবং পরিবেশবিদদের সাক্ষাৎকার সহযোগে যে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্য মানুষ দায়ী নয় । পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়া কমা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার । এবং পৃথিবীর পরিবেশ সব সময়েই পরিবর্তিত হয়ে আসছে ।

পরে অবশ্য নেটে খোঁজ খবর নিয়ে জানলাম যে এই তথ্যচিত্রটি নিয়েও প্রচুর বিতর্ক এবং সন্দেহ আছে ।

তবে গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর পিছনে বিরাট রাজনীতির খেলা আছে সেটা বুঝতে কোন অসুবিধা হয় না । গত কিছু বছরে গ্লোবাল ওয়ার্মিং সংক্রান্ত রিসার্চ এর পিছনে বহু টাকা ব্যয় করা হয়েছে । অনেকেরই বক্তব্য যে বিজ্ঞানের এই শাখায় এত বেশি টাকা আসায় বিজ্ঞানের অন্য শাখাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । বেশ কিছু সাংবাদিক, চ্যানেল, কাগজ, পত্রিকা এবং বিজ্ঞানী গ্লোবাল ওয়ার্মিং বেচে বেশ ভালোই উপার্জন করছেন । আবার এই বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের সঙ্গেও জড়িয়ে গেছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং । বলা যেতে পারে যে গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিজেই এখন একটা সিস্টেম এবং ইন্ডাস্ট্রি । এবং এক রকমের পপ কালচারও বটে ।
ইদানীং গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে একটু আধটু পড়াশোনা করতে গিয়ে বেশ কিছু বেসিক তথ্য নজরে এল । যেমন :

গ্লোবাল ওয়ার্মিং হয় গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে । আর সবথেকে বড় গ্রিনহাউস গ্যাস হল জলীয় বাষ্প । জলীয় বাষ্প ৩৬-৭০ শতাংশ পর্যন্ত গ্রিন হাউস এফেক্টের জন্য দায়ী । আর এই জলীয় বাষ্পের মধ্যে কিন্তু মেঘ পড়ছে না ।

কার্বন ডাই অক্সাইডের গ্রিনহাউস এফেক্টের জন্য দায়িত্ব ৯-২৬ শতাংশ । মিথেন ৪-৯ শতাংশ । ওজোন ৩-৭ শতাংশ ।

এখানে মানব সভ্যতার দায়িত্ব মূলত কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মিথেনের পরিমান বায়ুমন্ডলে বাড়াবার জন্য । তবে মনে রাখতে হবে যে কলকারখানা ও পরিবহন ছাড়াও আরও বহু প্রাকৃতিক ভাবে কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হয় । যেমন আগ্নেয়গিরিগুলি থেকে এবং জঙ্গলের প্রানীদের মৃতদেহ এবং গাছের তলায় পড়ে থাকা পাতা পচেও কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হয় । এবং মানুষ সহ সমস্ত প্রানীর শ্বাসকার্যের ফলেও কার্বন ডাইঅক্সাইড তৈরি হয় ।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর আর একটা বড় কারন সোলার ভ্যারিয়েশন । বা সূর্য থেকে বিকিরিত শক্তির বাড়া কমা যাতে মানুষের কোন হাত নেই ।

১৯৪০ এর পর থেকে পৃথিবীতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান ক্রমশ বেড়েছে । কিন্তু ১৯৭৫ সাল অবধি পৃথিবীর তাপমাত্রা কমেছে ।

পৃথিবীর ইতিহাসে বর্তমান কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান এবং তাপমাত্রার চেয়ে বেশি এর আগেও ছিল । যেমন ডাইনোসররা যখন পৃথিবীতে পুরোদমে রাজত্ব করছে তখন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান এখন থেকে বারো গুন পর্যন্ত বেশি ছিল । সেই সময় পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা এখন থেকে বেশি ছিল এবং মেরু প্রদেশে কোন বরফ ছিল না । সেই সময়ে সমুদ্রের উচ্চতাও এখন থেকে ১০০ থেকে ২৫০ মিটার অবধি বেশি ছিল ।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং কে আটকাতে যে সমস্ত গাইডলাইন তৈরি হয়েছে সেগুলিকে গরীব এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে । জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে যদি সৌরশক্তি বায়ুশক্তির মত অপ্রচলিত শক্তি ব্যবহার করা হয় তাহলে হয়ত কয়েকটা বাড়িতে আলো পাখা চালানো যেতে পারে কিন্তু বড় বড় শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব নয় । ভাবুন তো একটা লৌহ ইস্পাত শিল্প কি কখনো সৌরশক্তি বা বায়ুশক্তির সাহায্যে গড়ে তোলা যেতে পারে না সৌর শক্তি দিয়ে নিয়মিতভাবে ট্রেন চালানো যেতে পারে । তাহলে কি উন্নয়নশীল দেশগুলি কি গাইডলাইন মানতে গিয়ে শিল্পোন্নয়ন করবে না ।
জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে পৃথিবীতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমান বাড়তে বাড়তে পৃথিবীকে একেবারে অবসবাসযোগ্য করে দেবে একথা ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয় না । কারণ যতই হোক জীবাশ্ম জ্বালানীর পরিমান সীমিত । পৃথিবীর ধ্বংসের অনেক আগেই মনে হয় তা ফুরিয়ে যাবে ।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং থিয়োরির পক্ষে ও বিপক্ষে বহু মানুষ আছেন । এই থিয়োরির বিপক্ষে যাঁরা তাঁরা এটাকে স্রেফ প্রোপাগান্ডা ছাড়া কিছুই মনে করেন না । আর এই থিয়োরির পক্ষে যাঁরা তাঁরা বিপক্ষকে উড়িয়ে দেন এই বলে যে তাদের পিছনে আছে বড় বড় তেল কম্পানিগুলি । দুপক্ষের মতামত পড়ে বুঝে ওঠা খুব মুশকিল যে কারা ঠিক ।

তবে সাধারন ভাবে শক্তি সাশ্রয়ের নিয়মগুলি মেনে চললে তা গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে কতটা আটকাবে তা জানা নেই তবে আমাদের পকেটের পক্ষে অবশ্যই কিছু সাশ্রয় আনবে ।

http://en.wikipedia.org/wiki/Global_Warming
http://en.wikipedia.org/wiki/Solar_variation
http://en.wikipedia.org/wiki/Greenhouse_effect
http://en.wikipedia.org/wiki/Climate_change_denial
http://en.wikipedia.org/wiki/Scientific_opinion_on_climate_change
http://en.wikipedia.org/wiki/Global_warming_controversy
http://en.wikipedia.org/wiki/Politics_of_global_warming
http://en.wikipedia.org/wiki/The_Great_Global_Warming_Swindle
http://en.wikipedia.org/wiki/Dinosaur

Wednesday, October 31, 2007

কলকাতার দুর্গাপুজো


বহু বছর ধরেই কলকাতার দুর্গাপুজো দেখে আসছি । এবারও দেখলাম । আমি কলকাতার বাইরের বাসিন্দা হলেও কলকাতা আমার কাছে নিজের ঘরের মতই কারণ আমার আমার মামার বাড়ি ও দিদির বাড়ি সহ আরও বহু আত্মীয়ের বাস কলকাতাতেই তাই পুজোর দিনগুলোতে এখানে ঘাঁটি গাড়তে কোন অসুবিধা হয় না ।

পুজোর দিনগুলোতে কলকাতা যেন এক অন্য চেহারা নেয় । এমনিতে কলকাতা রাতজাগা শহর নয় । রাত দশটা বাজলেই শহরের বহু এলাকা একেবারে ফাঁকা হয়ে যায় । কিন্তু পুজোর দিনগুলোতে সারা রাত্রি শহর জেগে থাকে । বাস ও মেট্রোরেল চলে ।

কলকাতার পুজো গুলোকে এখন মোটামুটি চারভাগে ভাগ করা যায় । প্রথম হল পুরনো জমিদার ও বনেদী বংশের পুজোগুলি । যারা শত অসুবিধার মধ্যেও নিজেদের পুজো বজায় রাখতে পেরেছে । যেমন শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো বা লাটুবাবু ছাতুবাবুর বাড়ির পুজো ।

দ্বিতীয় হল সার্বজনীন পুজো । অর্থাৎ ক্লাব বা পাড়ার পুজো । সার্বজনীন পুজোগুলি আবার দুভাগে বিভক্ত । একদল চিরাচরিত ধরনের মন্ডপ এবং প্রতিমা তৈরি করেন যেমন বাগবাজার সার্বজনীন বা ম্যাডক্স স্কোয়ারের পুজো । এছাড়াও আরো বহু সার্বজনীন পুজোই এই গোত্রের মধ্যে পড়বে ।

দ্বিতীয় প্রকারের সার্বজনীন পুজোগুলিকে বলা যেতে পারে থিম পুজো ।যে ধরনের পুজোর এখন কলকাতায় রমরমা । থিম পুজোর বৈশিষ্ট্য হল প্রত্যেক বার মণ্ডপ এবং প্রতিমার চেহারা আলাদা আলাদা রকমের হয় । কোন একটি বিশেষ থিম বেছে নেওয়া হয় প্রতিমা এবং মণ্ডপসজ্জার জন্য । এই থিম যেকোন রকমেরই হতে পারে । যেমন এবারেই যে থিমগুলি দেখা গেছে সেগুলি হল বাংলার গ্রাম এবং নবান্ন, আফ্রিকার আদিবাসী গ্রাম, রাজস্থানের দুর্গ, দক্ষিন ভারতীয় মন্দির, পুরনো ভাঙা মন্দির, নোয়ার জলযান প্রভৃতি । অন্যান্য বছরে আরো রোমাঞ্চকর কিছু থিমের মধ্যে ছিল মঙ্গলগ্রহ, ট্রেন অ্যাক্সিডেন্ট প্রভৃতি ।

সার্বজনীন পুজোগুলি ছাড়া এখন কলকাতায় যে পুজোগুলি সংখ্যায় বাড়ছে সেগুলি হল ফ্ল্যাটবাড়ির পুজো ।

দিনে দিনে কলকাতার পুজোর বাজেট আরোও বাড়ছে এবং ছোটখাটো অল্প বাজেটের পুজোগুলিও আস্তে আস্তে বড় বাজেটের হয়ে উঠছে । কলকাতার বেশিরভাগ বড় বড় পুজোই আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তুলে হয় না । তার বদলে এখন বড় কম্পানিগুলি বেশির ভাগ টাকা স্পনসর করে । কলকাতায় বিজ্ঞাপন করার সের সময় হল পুজোর সময় আর কম্পানিগুলি সেটা ভালোই বোঝে । যেমন এবার খুব বড়ভাবে হাজির ছিল ভোডাফোন কম্পানি। এই কম্পানিটি কলকাতায় এসেছে মোবাইল কম্পানি হাচকে কিনে নেবার মাধ্যমে । তাই পুজোর সময়কে তারা বেছে নিয়েছিল কলকাতায় নিজেদের ব্রান্ড আর লোগো কে সাধারন মানুষের কাছে পরিচয় করানোর জন্য । এইজন্য বেশির ভাগ পুজোমন্ডপে তাদের বিজ্ঞাপন দেখা গেছে ।

বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং প্রভাবশালী নেতাও তাদের শক্তি পরীক্ষা করে নেয় বড় বাজেটের পুজো করানোর মাধ্যমে । অনেক সময় তাদের নাম পুজো কমিটির কোথাও থাকে না কিন্তু সবাই জানে যে এটা অমুকদার পুজো ।

কলকাতা এই কয়েকটা দিন বলা যেতে পারে যে একটি বিশাল শিল্প প্রদর্শনীতে পরিণত হয় । সাধারনলোকে খুব কমই কলকাতায় শিল্পপ্রদর্শনী দেখতে যায় বিভিন্ন গ্যালারিতে কিন্তু পুজোর সময়ে খুব সহজেই শিল্পীরা সাধারন মানুষের কাছে পৌঁছতে পারেন । এছাড়া বিভিন্ন থিমের পুজোর মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করা যায় । যাদের পক্ষে রাজস্থানে বা দক্ষিন ভারতে গিয়ে বিখ্যাত স্থাপত্যগুলি দেখে আসা সম্ভব নয় তারাও অন্তত কিছুটা ধারনা পেতে পারে সেই আদলে তৈরি মন্ডপগুলি দেখে ।এছাড়া বহু অজানা শিল্প ও সংস্কৃতির সাথেও পরিচয় করা যায় এই সময়ে ।

কলকাতার পুজোর আরো একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আলোকসজ্জা । মূলত চন্দননগরের আলোকশিল্পীরাই মূলত আলোকসজ্জাগুলি তৈরি করে থাকেন । সমসাময়িক বিভিন্ন ঘটনা উঠে আসে আলোকসজ্জার মাধ্যমে ।

পুজো তো চলে গেল আর অনেকের পক্ষেই কলকাতায় এসে পুজো দেখা সম্ভব নয় । তবে এবছর ডিজিট্যাল ক্যামেরার দাম কমায় আর ইন্টারনেটের প্রসার আরো বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রচুর ছবি ইন্টারনেটে আপলোড করা হয়েছে । তাই পিকাসা বা ফ্লিকারে গিয়ে Durga Puja 2007 লিখে সার্চ করলেই আপনি কলকাতার পুজোর অনেক ভালো ভালো ছবি দেখতে পাবেন ।

Saturday, October 06, 2007

শারদীয়া আনন্দমেলা, কাকাবাবুর চোখে জল এবং অন্যান্য

মনে আছে ছোটবেলায় শারদীয়া আনন্দমেলায় পড়তাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু সমরেশ মজুমদারের অর্জুন আর শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের রোমাঞ্চকর সব উপন্যাস এছাড়া শৈলেন ঘোষের রূপকথার উপন্যাসও আমার বেশ ভাল লাগত ।

তাই সেই পুরোনো স্বাদ আবার ফিরে পেতে এবারে কিনলাম শারদীয়া আনন্দমেলা । কিন্তু হতাশ হলাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবুর উপন্যাস ‘কাকাবাবুর চোখে জল’ পড়ে । এটি একটি নাতিদীর্ঘ উপন্যাস । সেই বস্তাপচা কিডন্যাপিং এর গল্প । কাকাবাবুর বেশির ভাগ উপন্যাসই কিডন্যাপিং সংক্রান্ত । কোন গল্পে কাকাবাবু কিডন্যাপ হয় । কোন গল্পে কিডন্যাপ হয় সন্তু বা জোজো আবার কোন গল্পে অন্য কেউ । ‘কাকাবাবুর চোখে জল’ উপন্যাসে কিডন্যাপ হল কাকাবাবুর পাড়ার একটি বাচ্চা ছেলে । তারপর কাকাবাবু কিভাবে সেই ছেলেটিকে উদ্ধার করে আনলেন সেই নিয়েই হল গল্প ।

উপন্যাসটিতে কোন প্লটের বালাই নেই । কাকাবাবু গেলেন আর কয়েকজনকে ঠেঙিয়ে ছেলেটিকে নিয়ে এলেন এই হচ্ছে গল্প । আর সবথেকে আশ্চর্যের ব্যাপার হল এই উপন্যাসে সন্তু বা জোজোর সেরকম কোনো ভূমিকা নেই । কেবল মুখ দেখানোর জন্যই তার উপন্যাসে হাজির এরকম ব্যাপার আমি প্রথমবার দেখলাম ।

উপন্যাসটি পড়তে গেলে মনে হয় কেবল মাত্র লেখার জন্যই যেন লেখা হয়েছে । স্রেফ কিছু পাতা ভর্তি করে দেওয়া । লেখক হিসাবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের যে কিরকম অবনতি হয়েছে এই উপন্যাসটিই তার প্রমাণ । কিছুদিন আগেই কিনেছিলাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় উপন্যাস সমগ্র প্রথম খন্ড । এই খন্ডেই ছিল সুনীলের কিছু বিখ্যাত উপন্যাস । যেমন আত্মপ্রকাশ, অরণ্যের দিনরাত্রি, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রভৃতি । কি সহজ সরল দৃপ্ত ভাষায় লেখা উপন্যাসগুলি । মানুষের বিভিন্ন অভিব্যক্তি হাসি দুঃখ রাগ কামনা কিভাবে তিনি অক্লেশে লিখেছিলেন । চকচকে ছোরার ফলার মত ছিল এক একটি উপন্যাস তাঁর । আর আজ সেই লেখকের এরকম বাজে লেখা পড়তে আমার একটুও ভাল লাগল না । অবশ্য কাকাবাবুর উপন্যাসগুলির সাথে এগুলির তুলনা চলে না । তবুও কাকাবাবুর কিছু পুরোনো উপন্যাস নতুনগুলির থেকে অনেকাংশে ভাল ছিল । যেমন বিজয়নগরের হীরে, সবুজ দ্বীপের রাজা, মিশর রহস্য, কাকাবাবু ও বজ্রলামা, নীলমূর্তি রহস্য প্রভৃতি । আর এই বিষয়ের উপর কাকাবাবুর আরেকটি উপন্যাস আছে । সেটি হল কাকাবাবু ও শিশুচোরের দল ।

শারদীয়া আনন্দমেলার আরেকটি উপন্যাস পড়লাম শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘অঘোরগঞ্জের ঘোরালো ব্যাপার’ । কাকাবাবুর চোখে জলের মত এত বাজে না লাগলেও শীর্ষেন্দুর উপন্যাসটি পড়েও ঠিক মন ভরল না । এরকম উপন্যাস শীর্ষেন্দু অনেক লিখেছেন । মনে আছে স্কুলে পড়ার সময় যখন শীর্ষেন্দুর ঝিলের ধারে বাড়ি, গৌড়ের কবচ বা পটাশগড়ের জঙ্গলের মত উপন্যাস পড়েছিলাম তখন কি ভালোই না লেগেছিল । সেরকম ভালো লাগা অঘোরগঞ্জের ঘোরালো ব্যাপারে পাওয়া গেল না ।

মনে হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত লেখকেরা তাঁদের প্রতিভার শেষপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন । লেখার মধ্যে সেই উদ্যম বা নতুনত্ব আর নেই । দেখা যাক নতুন লেখকেরা কেউ হাল ধরেন কিনা ।

Saturday, September 15, 2007

তসলিমার উপর হামলা, গ্লোবাল ভয়েস অনলাইন ও আরো কিছু কথা ।

আমি প্রায় একমাস আগে তসলিমা নাসরিনের উপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম আমার এই ব্লগে । আমি কয়েকদিন আগে অবাক হয়েই দেখলাম গ্লোবাল ভয়েস অনলাইনে বাংলা হিন্দি এবং ইংরাজিতে আমার সেই বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে ।

গ্লোবাল ভয়েসে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার ব্লগারদের বক্তব্য অনুবাদের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় । বলা যেতে পারে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার ব্লগারদের মিলনের স্থান এই সাইট । তাঁরা যে আমার মত একজন ব্লগারের বক্তব্য তাঁদের সাইটে তুলে ধরেছেন সে কারণে আন্তরিকভাবে আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ ।

এর আগেও একবার গ্লোবাল ভয়েসে আমার কথা তুলে ধরা হয়েছিল যখন আমি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকাররের ভুল সংরক্ষন নীতির বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম ।

আমার ব্লগের পাঠক সংখ্যা খুব একটা বেশি নয় । পরিসংখ্যান থেকে দেখতে পাই যে প্রতিদিন আমার ব্লগে গড়ে মাত্র ছয় থেকে দশজন আসেন । এমনিতেই বাংলা ব্লগের পাঠক সংখ্যা কম । তারপর সেই পাঠকদের বেশিরভাগই সামহোয়্যারইন ব্লগ বা সচলায়তন ছাড়া আর কিছু পড়েন না । তবুও যে আমার ব্লগের লেখা কারো কারো চোখে পড়ে এবং তা অন্য জায়গায় প্রকাশিত হয় এটা দেখে ভাল লাগে এবং আরো লেখার আগ্রহ জাগে ।

বাংলাতে লেখা আরো অন্য ব্লগ যখন পড়ি তখন অনেক সময়েই মনে হয় যে আমার লেখা কিছুই হচ্ছে না । অন্য লেখকেরা তাঁদের ব্লগে কত সুন্দর সুন্দর লেখা লেখেন । সে সমস্ত লেখার গভীরতা অনেক বেশি । আমার সেরকম লেখার ক্ষমতাও নেই আর তার চেষ্টাও করি না । কিন্তু যখনই দেখি যে কারো ব্যক্তিস্বাধীনতা আক্রান্ত হচ্ছে তখনই তার প্রতিবাদ জানাতে ইচ্ছা করে । সে স্বাধীনতা কোন ব্যক্তিরও হতে পারে আবার কোন রাষ্ট্রেরও হতে পারে । যে সমস্ত মানুষ ইরাক আক্রমনের জন্য আমেরিকাকে দায়ী করে গাল দেন আর নিজের বাড়িতে বাচ্চা চাকরদের উপর নির্যাতন করেন আমার মনে হয় সেইসব মানুষদের স্বাধীনতা নিয়ে কোন কিছু বলার অধিকার নেই ।

কোনোরকমে পড়াশোনা শেষ করেছি । পড়াশোনা করতে কোনদিনই আমার খুব একটা ভাল লাগত না । যখন থেকে আমার পরীক্ষার টেনশন দূর হল আমার মনে হয় সেদিন থেকেই আমার আসল পড়াশোনা শুরু হল । এখন আমার নানা বিষয়ে পড়াশোনা করতে ভালই লাগে । আমার প্রিয় বিষয় ইতিহাস । সভ্যতার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত খালি দেখি ক্ষমতা দখলের লড়াই ইতিহাসের মূল বিষয় হয়ে বসে আছে । আর তার উপর আছে ধর্মান্ধতা । কিছুদিন আগেই বোধহয় উৎসর ব্লগে পড়ছিলাম যে ভগবান আসলে খুব ভীতু । একধর্মের ভগবান কিছুতেই অন্যধর্মের ভগবানকে সহ্য করতে পারেন না । কেউ যদি ঈশ্বরের একটু নিন্দামন্দ করে তাহলেই তাঁর আসন টলে ওঠে ।

তসলিমা নাসরিন যদি ইসলাম হজরত মহম্মদ বা আল্লা সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করেই থাকেন তাহলে ইসলামেরই বা কি আর আল্লারই বা কি । যেকোন ধর্মের ঈশ্বর সম্পর্কেই বলা হয়ে থাকে যে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান । আরে ঈশ্বর যদি সর্বশক্তিমান হয়েই থাকেন তাহলে নিশ্চই তাঁর ইচ্ছাতেই সব কিছু হয় । তাহলে ধরে নিতে হবে যে তসলিমা নাসরিন যে মন্তব্যগুলি করেছেন তাও সম্ভব হয়েছে কেবল সর্বশক্তিমান আল্লার ইচ্ছাতেই । আর আল্লার ইচ্ছাতেই যদি সবকিছু হয়ে থাকে তো কিছু লোকের খেপে ওঠার কারণ কি বোঝা যায় না । হয়ত কিছু লোকের খেপে ওঠাও হয়ত সম্ভব হয়েছে আল্লার ইচ্ছাতেই ।

আসলে মৌলবাদ মানুষকে এমনভাবে নিজের জালে জড়িয়ে ফেলছে তারা নিজেরা কি করছে বা কি বলছে তারা নিজেরাই তা জানে না । এরমধ্যে আবার কলকাতার এক মসজিদের ইমাম তসলিমা নাসরিনকে হত্যার ডাক দিলেন । আর আমাদের বামপন্থী প্রগতিশীল মার্কসবাদী সরকারের পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে রইল । সত্যি লোকহাসানো আর কাকে বলে । এর আগে এরা একবার লোক হাসিয়েছিল তসলিমার দ্বিখণ্ডিত নিষিদ্ধ করে । পরে আবার আদালতের রায়ে দ্বিখণ্ডিত বাজারে ফিরে আসে । আর না এলেও কোন ক্ষতি ছিল না । কারণ বইতে ইন্টারনেটে সহজলভ্য আর নকল বইও সহজেই পাওয়া যায় । আর এসব আটকানোর কোন ক্ষমতা এদের নেই ।

এরা আবার বিজেপিকে অসভ্য বর্বর বলে ! আসলে মুসলমানদের ভোট টানার জন্য বিজেপি কংগ্রেস আর সিপিএমের মধ্যে কোন তফাত নেই । তারা সবাই সমান সাম্প্রদায়িক । কিন্তু গত পঞ্চাশ বছরে তারা ভারতে মুসলমানদের কোন উন্নতিই করতে পারে নি ।

Saturday, August 11, 2007

কুট্টি জুট্টি পর্ব ৩


ঘিসিং এবং বেনজির ভু্ট্টো


এরশাদ এবং গর্বাচভ


জর্জ বুশ সিনিয়র এবং মার্গারেট থ্যাচার


সত্যজিৎ রায় এবং মৃণাল সেন


অমিতাভ বচ্চন এবং মিঠুন চক্রবর্তী

Friday, August 10, 2007

তসলিমা নাসরিনের উপর হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই ।


অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দ্রাবাদে একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে কিছু বদমাইশ তসলিমা এবং অনুষ্ঠানের আয়োজকদের উপরে হামলা চালিয়েছে । হয়ত তসলিমার লেখালেখি তাদের পছন্দ নয় কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে । এই সব বদমাইশ ভাবছে যে এই ভাঙচুর করে তারা তাদের ধর্মের মান বাঁচাচ্ছে । কিন্তু এতে আরো হিতে বিপরীত হল । তসলিমা লেখালেখির মাধ্যমে নিজের মত প্রকাশ করেছেন তাই কেউ যদি তার প্রতিবাদ করতে চায় তবে তাও লেখালেখির মাধ্যমেই করা উচিত । এভাবে অসামাজিক কাজকর্ম করে নয় ।

Sunday, August 05, 2007

কুট্টি জুট্টি পর্ব ২


অজিত পাঁজা এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়


সোমেন মিত্র এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়


বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং অসীম দাশগুপ্ত


যতীন চক্রবর্তী এবং সন্তোষমোহন দেব


রাম রাও এবং জয়ললিতা

Saturday, August 04, 2007

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত

১৯৬৭ সালে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টিরে (Monterey) তে আয়োজন করা হয়েছিল একটি সঙ্গীত উৎসবের । এই উৎসবকেই দেখা হয় হিপি মু্ভমেন্টের সূত্রপাত হিসাবে । আর এই উৎসব মুখ্যত ছিল রক মিউজিকের । তিন দিনের এই সঙ্গীত উৎসবে বিখ্যাত শিল্পী ও ব্যান্ডের পাশাপাশি বাজিয়েছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর । ইউটিউব থেকে দুটি ভিডিও তুলে দিলাম । আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে বাজানো পণ্ডিত রবিশঙ্কর এবং আল্লারাখার এই পারফরম্যান্সকে আমার মনে হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত ।





ভিডিও দুটি যদি ডাউনলোড করে নিজের সংগ্রহে রাখতে চান তাহলে চলে যান youtubex.com এ ।
আর একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে এই অনুষ্ঠানে গানবাজনা পরিবেশন সবাই বিনা পারিশ্রমিকেই করেছিলেন । খালি ব্যাতিক্রম রবিশঙ্কর । তিনি পারফরম্যান্সের জন্য ৩০০০ ডলার নিয়েছিলেন ।

Friday, August 03, 2007

কুট্টি জুট্টি পর্ব ১


রাজীব গান্ধী


প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি এবং অশোক সেন



বুটা সিং এবং সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়


বরকত গণিখান চৌধুরি এবং প্রণব মুখার্জী


জ্যোতি বসু এবং ভি পি সিং

Saturday, July 28, 2007

নারায়ণ দেবনাথের ছবি


আজ থেকে প্রায় চল্লিশ পঞ্চাশ বছর আগে কলকাতার একটি সেরা প্রকাশনা সংস্থা ছিল দেব সাহিত্য কুটির । এখনও অবশ্য এঁরা আছেন । কিন্তু সে সময়ে ছোটদের বিভিন্ন বই এবং ম্যাগাজিন প্রকাশে দেব সাহিত্য কুটির ছিল শ্রেষ্ঠ । দেব সাহিত্য কুটিরের ছোটদের বইগুলিতে গল্প ও অন্যান্য রচনার সাথে যে সমস্ত ইলাস্ট্রেশন গুলি দেওয়া হত সেগুলির মান খুবই উন্নত ছিল । এখন কোন ছোটদের বইতে সেরকম মানের ইলাস্ট্রেশন আর দেখা যায় না ।

দেব সাহিত্য কুটিরের শিল্পীদের ভিতরে অন্যতম হলেন নারায়ণ দেবনাথ । যিনি মূলত বাঁটুল দি গ্রেট, হাঁদাভোঁদা, আর নন্টে ফন্টে কমিকস সিরিজের জন্য বিখ্যাত । কিন্তু তিনি দেব সাহিত্য কুটিরের বহু বইতে ইলাস্ট্রেশানও করেছেন । সেরকমই পাঁচটি ইলাস্ট্রেশান এখানে পোস্ট করলাম । পরে আরো পোস্ট করব ।





হিটলারের হুঙ্কার

তারপর কি হল .... আমরা সবাই জানি

(লেখাটি স্ক্যান করা হয়েছে আজ থেকে প্রায় সত্তর বছর আগের সচিত্র মাসিক বসুমতী পত্রিকা থেকে)

Sunday, July 22, 2007

ক্যানিবাল হলোকস্ট


দিন কয়েক আগে ক্যানিবাল হলোকস্ট (cannibal Holocaust) সিনেমাটি দেখবার সুযোগ হল । সিনেমার ইতিহাসে ভয়াবহতম এবং প্রচুর বিতর্কিত একটি সিনেমা হল ক্যানিবাল হলোকস্ট ।

আমার এক বন্ধুকে অনুরোধ করেছিলাম সিনেমাটি ডাউনলোড করবার জন্য । দিন কয়েক পরে সে ফোন করে জানাল যে সে সিনেমাটি ডাউনলোড করেছে আর সিনেমাটি দেখে সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে । সে আরো বলল যে এরকম জঘন্যতম সিনেমা সে এর আগে কখনও দেখেনি ।
যাই হোক রটন টোম্যাটোস এ দেখলাম সিনেমাটির রেটিং ৬০ শতাংশ । তার মানে এটি একটি একেবারে রদ্দি সিনেমা নয় ।

সিনেমার শুরুটা দেখে এর ভিতরে কি আছে সেটা বোঝা সম্ভব নয় । সিনেমা শুরু হয় খুব সুন্দর একটি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের সাথে আমাজন অববাহিকার প্লেন থেকে তোলা দৃশ্যের মাধ্যমে । শুরুটা দেখে বেশ ভালই লাগল ।
গল্পটি হচ্ছে পাঁচজনের একটি দল আমাজনের জঙ্গলে যায় নরখাদক উপজাতির উপর একটি ডকুমেন্টারি তুলবে বলে । কিন্তু তারা আর ফিরে আসে না । তখন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অ্যানথ্রোপলজিস্ট তাদের খুঁজতে যায় এবং দেখে যে সেই দলের সবাই নরখাদক উপজাতির হাতে মারা গেছে । এবং নানা ঘটনার পর গভীর জঙ্গলে সেই নরখাদক উপজাতিদের কাছ থেকে আগের মৃত দলের তোলা ফিল্মের রোলগুলি উদ্ধার করে নিয়ে সে ফিরে আসে ।

এর পরে দেখানো হয় সেই ফিল্ম রোলগুলিতে কি আছে । আগের দলটি জঙ্গলের ভিতর দিয়ে এগোবার সময় একটি কচ্ছপ মেরে খায় । সিনেমাটিতে কচ্ছপটিকে কিভাবে মারা হল তা বিস্তৃতভাবে দেখান হয়েছে । শুটিং এর জন্য সত্যিই একটি বিরাট কচ্ছপকে হত্যা করা হয়েছিল । এরপরে সেই দলের একজন সাপের কামড়ে মারা যায় ।
তারপরেও দলটি এগোতে থাকে । একটি গ্রামে ঢুকে তারা আগুন লাগিয়ে দেয় ।তারপর দলের সদস্যরা একটি উপজাতি মেয়েকে ধর্ষন করে । তাদের দলে একটি মেয়েও ছিল । সে তার সঙ্গীদের বাধা দেবার চেষ্টা করে কিন্তু সফল হয় না । পরে দেখা যায় যে সেই ধর্ষিত মেয়েটিকে তার উপজাতির মানুষেরা হত্যা করে একটি কাঠের উপর গেঁথে টাঙিয়ে রেখেছে ।
এরপরে যখন তারা নরখাদক উপজাতির কাছাকাছি হয় তখন তাদের আক্রমনে তারা সবাই একে একে নিহত হয় ।

সিনেমাটি এই সমস্ত বিষয়ই খুব খোলাখুলিভাবে দেখানো হয়েছে । যা দেখলে নরম মনের কোন মানুষের গা গুলিয়ে উঠতে বাধ্য ।
এছাড়া বহু দৃশ্য আছে যাতে ধর্ষন আর খুন দেখান হয়েছে । মানুষ খুনের দৃশ্যগুলি এত ভয়াবহ যে দেখে মনে হয় যেন সত্যিই কোন মানুষকে খুন করা হচ্ছে । এছাড়া খুনের পর তাদের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে উপজাতিদের উল্লাস ও খাওয়ার দৃশ্য ভয়াবহতম ।

মানুষ মরার দৃশ্যগুলি এতই স্বাভাবিক হয়েছিল যে ইটালিতে সিনেমাটি রিলিজের পরে সিনেমার পরিচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল । কারন এটা সন্দেহ করা হয়েছিল সে শুটিং-এর প্রয়োজনে সিনেমার কলাকুশলীদের সত্যিই মেরে ফেলা হয়েছে । পরে অবশ্য পরিচালক কলাকুশলীদের একটি অনুষ্ঠানে হাজির করার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় ।
তবে শুটিং-এর জন্য সত্যিকারের কোন মানুষ মারা না হলেও সাতটি প্রাণীকে হত্যা করা হয়েছিল । যার মধ্যে একটি কচ্ছপ এবং একটি একটি বাঁদরও ছিল ।

সিনেমাটিতে বহু নগ্ন এবং যৌন দৃশ্য আছে । তবে যাই হোক এই সিনেমাটি কখনই পর্নোগ্রাফি গোত্রের মধ্যে পড়ে না । বিষয়বস্তুর কারনে পৃথিবীর বহুদেশই এই সিনেমাটি নিষিদ্ধ বা বহুভাবে সেন্সর করা ।

এতকিছুর পরেও দেখার পর আমার মনে হয়েছে এটি একটি ভাল সিনেমা । সিনেমাটি শুটিং করা হয়েছে কিছুটা ডকুমেন্টারির কায়দায় । যেটা আমার কাছে কিছুটা নতুনত্ব লেগেছে । আর জঙ্গলের বাইরের মানুষ কিভাবে জঙ্গলের আদিবাসীদের শোষন করে সেটাও তুলে ধরা হয়েছে । তথ্যচিত্রকারী দলটি যদি সেই উপজাতি মেয়েটিকে ধর্ষণ না করত তাহলে হয়ত তাদের মরতে হত না ।

আমার এই সিনেমার জন্য রেটিং দশ এ ছয় ।

(উপরের ছবিটি নেওয়া হয়েছে উইকিপিডিয়া থেকে ।)


আমার নাম লেডি চ্যাটার্জি -- আমি সারারাত চ্যাট করি

লেডি চ্যাটার্জি

Saturday, July 21, 2007

প্লেবয় না সানন্দা




সানন্দা কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার গ্রুপের একটি মহিলা পত্রিকা । তবে তারা এতে যে সমস্ত ছবি ছাপছে তাতে এটিকে প্লেবয় পত্রিকার ভারতীয় সংস্করন বলে ভুল হতে পারে ...


ছবিগুলি যদি কোন মেনস ম্যাগাজিনে ছাপা হত তাহলে আপত্তির কোন কারন থাকত না । তবে মেয়েদের ম্যাগাজিনে এরকম ছবি ছাপার অর্থ কি ? মনে হয় ছবির লোভ দেখিয়ে কিছু পুরুষদের কাছেও পত্রিকাটিকে বেচাই মুখ্য উদ্দেশ্য ।


কিছু বলার আছে কি ?






Monday, July 09, 2007

প্রাণকুমারের স্মৃতিচারণ

কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম কলকাতার কলেজ স্ট্রীটে বই কিনব বলে । সেখানে রাস্তার ধারে যারা পুরনো বই বেচে তাদেরই একজনেরই কাছে পেয়ে গেলাম পোকায় কাটা পুরোনো বই খানা ।
বইটির নাম প্রাণকুমারের স্মৃতিচারণ । লেখক প্রমোদকুমার চট্টোপাধ্যায় । পাঁচশো পাতার বই । দাম জিজ্ঞাসা করতে দাম হাঁকলো আশি টাকা । আমি বললাম চল্লিশ টাকা । তাতে সে দিতে রাজি হচ্ছিল না । কিন্তু আমাকে চলে যেতে দেখে অবশেষে রাজি হল চল্লিশ টাকায় দিতে । অতএব কিনে ফেললাম বই খানা ।
প্রমোদকুমার চট্টোপাধ্যায় আমার প্রিয় লেখকদের মধ্যে অন্যতম । জানি না এখন অন্য কেউ তাঁর লেখা বই পড়েন কিনা । খুব বেশি বই তিনি লেখেননি । আমার ধারনা মেরেকেটে দশ এগারোটির মত বই তিনি লিখেছেন । বেশিরভাগই স্মৃতিচারণ, ভ্রমনকাহিনী আর ধর্ম সম্পর্কীয় লেখা ।
প্রাণকুমারের স্মৃতিচারণ আমার পড়া প্রমোদকুমারের তৃতীয় বই । প্রথম যে বইটি পড়েছিলাম সেটি হল হিমালয়পাড়ে কৈলাস এবং মানসসরোবর । ১৯১৮ সাল নাগাদ তিনি কৈলাস ও মানসসরোবর ভ্রমণে গিয়েছিলেন তারই বর্ণনা । প্রথম বইটি পড়েই আমার তাঁর লেখা ভাল লেগে যায় । বেশ সরল সাধাসিধে ভাষায় লেখা ভ্রমণকাহিনী ।
তাঁর লেখা দ্বিতীয় বইটি যেটা আমি পড়ি সেটা হল তন্ত্রাভিলাষীর সাধুসঙ্গ । এই বইটি আমার পড়া শ্রেষ্ঠ বইগুলির মধ্যে অন্যতম । লেখক একসময় ভবঘুরের মত ঘুরে বেড়াতেন নানা জায়গায় এবং সাধু এবং তান্ত্রিকদের সাথে মেলামেশা করতেন । তাঁর সেই সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়েই লিখেছিলেন তন্ত্রাভিলাষীর সাধুসঙ্গ ।
এই দুটি বই পড়বার পর আমার প্রমোদকুমারের লেখা আরও বই পড়বার ইচ্ছা হয় । কিন্তু তাঁর আর কোন বই হাতে পাই নি । তারপর হঠাৎই হাতে পেলাম প্রাণকুমারের স্মৃতিচারণ ।
প্রাণকুমারের স্মৃতিচারণ হল প্রমোদকুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা আত্মজীবনী । তবে এতে তাঁর পুরো জীবনের কথা নেই । তাঁর জন্ম ১৮৮৫ থেকে আরম্ভ করে ১৯১০-১১ মোটামুটি ছাব্বিশ বছরের জীবনকাহিনী এতে আছে ।
সেই সময়ে কলকাতার একান্নবর্তী ব্রাহ্মণ পরিবারের সামাজিক রীতিনীতি এবং তাঁদের দৈনন্দিন জীবন কেমন ছিল তার একটা ধারনা এই বইটি থেকে পাওয়া যায় ।
বইটি পড়তে পড়তে মনে হয় আমাদের সময় থেকে মাত্র একশো বছর আগে আমাদের সমাজজীবন কতটা অন্যরকম ছিল ।
প্রমোদকুমারের ছোটবেলা খুব একটা ভাল কাটেনি । বদরাগী বাবার হাতে মার খেতে খেতে আর তাঁর ফাইফরমাশ খাটতে খাটতে তাঁর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠত । তাঁর নিজের কোন স্বাধীনতা ছিল না ।
কৈশোরে পদার্পন করার পরে পরেই তাঁর বিয়ে দেওয়া হয় । আর তাঁর সতেরো আঠারো বছর বয়সেই তিনি হয়ে যান দুই মেয়ের বাপ । যখন তাঁর বিয়ে কি সেটা ঠিকমতো বুঝে ওঠার বয়সও হয়নি । আবার যখন তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর স্ত্রী দ্বিতীয় সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মারা যান তখন তাঁর পরিবারের কেউ তাঁকে একথাটা জানাবার প্রয়োজনটুকু বোধ করেননি ।
মার অসুখ শুনে বাড়ি ফিরে আসার পর এবং অসুস্থ মাকে দেখবার পর রাতের খাওয়া শেষ করে যখন তিনি ভাইয়ের কাছে নিজের স্ত্রীর খবর চান তখন সে খুব স্বাভাবিকভাবে বলে যে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার রাতে বৌদি মারা গেছেন ।
বইটিতে সেসময়ের সভাসমিতি আর শিল্পীমহলের কথাও বড়ভাবে আছে । প্রমোদকুমার নিজেও আর্টকলেজে ভর্তি হয়েছিলেন আঁকা শিখবেন বলে । ফলে তখনকার শিল্পজগতের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্টতা পুরোভাবে ছিল । সেই সময়ের শিল্পীমহলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, এবং অন্তসারশূন্যতা তাঁর লেখায় বারে বারে উঠে এসেছে ।
বঙ্গভঙ্গের আগে বিভিন্ন সভাসমিতিতে লেখক উপস্থিত থাকতেন এবং বহু জ্ঞানীগুনী মানুষের বক্তৃতা শোনার সৌভাগ্য তাঁর হয়েছিল । যাঁদের মধ্যে আছেন রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু প্রভৃতি ।
প্রমোদকুমারের বাবা বদরাগী রাজেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ওরফে রাজেন বিখ্যাত নাট্যকার গিরিশ ঘোষ এবং বিখ্যাত অভিনেত্রী তিনকড়ি দাসী ওরফে নটী বিনোদিনীকে কিভাবে একটি বাগানবাড়িতে সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন তার রোমহর্ষক বর্ণনা এই বইতে রয়েছে ।
পুরনো দিনের কথা পড়তে আমার সবসময়েই ভাল লাগে । তাই এইবইটিও আমি কয়েকদিনের মধ্যেই পড়ে ফেলেছি । বইটা পড়তে পড়তে আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন একটা টাইমমেশিনে চেপে চলে গেছি একশো বছর আগে ।
বইটি পড়ে তখনকার রীতিনীতি সম্পর্কে যে সাধারন ধারনাগুলি পেলাম সেগুলো হল –
১. অল্পবয়েসে বিবাহ দেওয়া একটা প্রচলিত নীতি । মেয়েদের মোটামুটি তেরো চোদ্দ বছর আর ছেলেদের সতেরো থেকে একুশ বছরের মধ্যেই বিবাহ দেওয়া হত ।
২. সংসারে কোনো কন্যা সন্তান হওয়াকে মোটেও সাদরে গ্রহন করা হত না । আবার যদি সেই সন্তান প্রথম হয় । তবে কন্যা সন্তানের যে কোন আদর যত্ন হত না এমন নয় । অনেক বাড়িতেই আদুরে কন্যার দেখা মিলত । আবার এই লেখক মোটামুটি বিত্তশালী পরিবারের নাতি এবং বাবা মার প্রথম সন্তান হয়েও আদর যত্ন বিশেষ পাননি ।
৩. খুব শিক্ষিত উদার পরিবার ছাড়া মেয়েরা সাধারনত লেখাপড়া শিখত না । যদি বা শিখত তাও প্রাথমিক পাঠ অবধি ।
৪. বিবাহে পণ নেওয়া একেবারে সাধারন রীতিনীতির মধ্যে পড়ত । এ সম্পর্কে কোন অপরাধ বোধ ছিল না । অনেক সময় টাকাপয়সার জরুরি প্রয়োজন হলে ছেলের বিয়ে দেওয়া হত ।
৫. বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীরা পরস্পরকে প্রেমপত্র লিখত । এবং তাতে বঙ্কিমী ভাষায় প্রাণনাথ প্রাণবল্লভ প্রভৃতি সম্ভাষনের ছড়াছড়ি থাকত ।
একশো বছরে কলকাতা কতটা পালটে গেছে তা ভাবলেও আশ্চর্য হতে হয় । কলকাতা শহরের যে রাস্তাগুলোর উপর দিয়ে আমরা এখন হেঁটে বেড়াই সেই একই রাস্তার উপর দিয়ে লেখক চলে ফিরে বেড়িয়েছেন তাঁর জীবদ্দশায় ।
কিন্তু কিছুই আর আগের মত নেই । ভারত এখন স্বাধীন । কলকাতা শহরের রাস্তায় এখন ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলে না । মটোরগাড়িতে ভর্তি এখন শহর । মাটির তলা দিয়ে ছুটেছে মেট্রো রেল । পরাধীন দেশের সেই আদর্শবাদীতা আর নেই, সবাই সবাইকে কিনতে এখন অভ্যস্ত । এসেছে ঝকঝকে মল, স্টার, মিনার্ভার জায়গায় এখন এসেছে মাল্টিপ্লেক্স । ইন্টারনেট আর মোবাইলে অভ্যস্ত ঝকঝকে যুবক যুবতীরা এখন ঘুরে বেড়ায় শহরে । একান্নবর্তী পরিবার এখন অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজতে হয় ।
জানি যুগের সাথে সাথে সব কিছুই পাল্টায় । কিন্তু তবুও মাত্র একশো বছর আগেও আমরা এতটাই অন্যরকম ছিলাম । প্রাণকুমারের স্মৃতিচারণ পড়ে তাই খুবই আশ্চর্য হই । কিছুতেই ঝেড়ে ফেলতে পারি না সেই মুখগুলোকে যারা একসময় বাস করত এই কলকাতা শহরেই ।

Friday, June 22, 2007

শিবাজি : দ্য বস

ভুলে যান শাহরুখ খান বা অমিতাভ বচ্চনের কথা । ভারতের হায়েস্ট পেড নায়ক এখন ওয়ান অ্যান্ড ওনলি রজনীকান্ত

শোনা যাচ্ছে রজনীকান্ত শিবাজি দ্য বস সিনেমাটির জন্য নিয়েছেন মোট ষোলো কোটি টাকা । আর শিবাজি দ্য বসের মোট বাজেট বেশি না ... মাত্র ছিয়ানব্বই কোটি টাকা । এর আগে সবথেকে বেশি বাজেটের সিনেমা ছিল শাহরুখ খানের দেবদাস । পঞ্চাশ বাহান্ন কোটি টাকা লেগেছিল দেবদাস বানাতে । কিন্তু শিবাজি দ্য বস তাকে অনেকটাই ছাপিয়ে গেল ।

তবুও মনে রাখতে হবে দেবদাস সর্বভারতীয় সিনেমা ছিল । কিন্তু শিবাজি তামিল ছবি । বর্তমানে কেবল তামিল আর ডাবিং করে তেলেগুতে এই সিনেমা রিলিজ হয়েছে । কিন্তু তাতেই বলা হচ্ছে যে সহজেই এই ছবির সব টাকা উঠে আসবে ।

এই ছবি রিলিজের আগে এত বেশি পাবলিসিটি হয়েছিল যে সর্বভারতীয় মিডিয়াতে এই ছবির কথা উঠে এসেছে । এমন কি কলকাতার বাংলা খবরের কাগজগুলিতেও এই ছবির খবর বেরিয়েছে ।

রজনীকান্তের স্টারভ্যালু আর ফ্যানবেস দুর্দান্ত । একজন মারাঠি হয়েও তিনি তামিল সিনেমার জগতে ভগবানের মর্যাদা পেয়েছেন । কোনো ডাইরেক্টরই তাঁকে সিনেমাতে মেরে ফেলতে পারেন না । কারন তা হলে ফ্যানেরা রেগে গিয়ে সিনেমাহলে ভাঙচুর চালাবে । ইদানিং তিনি সিনেমা করা অপেক্ষাকৃত কমিয়ে দিয়েছিলেন । প্রায় দুই বছর পরে মুক্তি পেল তাঁর কোন নতুন সিনেমা । রজনীকান্তের বয়স এখন আটান্ন । মাস ছয়েক আগে তিনি দাদু্ও হয়েছেন । তবুও ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে সব থেকে দামী সিনেমার নায়ক হতে এবং সেই সিনেমাকে সুপারহিট করতে তাঁকে কোন অসুবিধায় পড়তে হয়নি ।

সিনেমার নায়ক শিবাজি একজন সফটওয়্যার প্রফেশনাল যে আমেরিকা থেকে প্রায় দুশো কোটি টাকা নিয়ে দেশে আসে একটি মেডিকেল কলেজ আর হাসপাতাল করবে বলে । কিন্তু তাঁর সেই দুশো কোটি টাকা খোয়া যায় ভিলেনের কারসাজিতে । এরপর কিভাবে শিবাজি সেই টাকা উদ্ধার করে এবং সেই সাথে কালো টাকাকে কিভাবে দেশের উন্নয়নের কাজে লাগায় সেই নিয়েই এই গল্প ।

এখনও পর্যন্ত যে সমস্ত রিভিউ পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে কমেডি অ্যাকশন ইমোশন সবকিছুতেই রজনীকান্ত একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছেন । সিনেমার একটি দৃশ্যে দেখা যায় যে তিনি মাটির রাস্তা দিয়ে চলেছেন আর তাঁর যাবার সাথে সাথে সেই মাটির রাস্তা কংক্রিটের রাস্তায় পরিণত হচ্ছে ।

সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন হামসে হ্যায় মুকাবলা এবং নায়ক খ্যাত পরিচালক এস. শংকর । আর সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন এ আর রহমান ।

আমার এখনও এই সিনেমাটি দেখবার সুযোগ হয়নি । কিন্তু আশা করি ভবিষ্যতে হিন্দিতে ডাবিং বা তামিল সাবটাইটেল সহ সিনেমাটি দেখার সুযোগ হবে ।

Sunday, June 10, 2007

ঈশ্বরের থাকা বা না থাকা নিয়ে কিছু আলোচনা ।

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের একটি লেখায় পড়েছিলাম তর্ক বিতর্ক তো অনেক হল কিন্তু এখনও এটাই প্রমাণ করা গেল না যে ঈশ্বর আছেন না নেই ।

আমাদের জেনারেশনকে আমার বরাবরই কনফিউজড লাগে । বিভিন্ন ব্যাপারে আমাদের যেন কোন সুষ্পষ্ট মতামত নেই । এত রকমের ভিন্ন ভিন্ন রকমের চিন্তাভাবনা চারিদিক থেকে আমাদের ঘিরে ধরে যে তাদের মধ্যে কোনটি গ্রহনযোগ্য সেটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারা যায় না । কখনও মনে হয় একপক্ষ ঠিক কখনও বা মনে হয় অপরপক্ষ । আবার বেশিরভাগ সময়েই মনে হয় উভয়পক্ষের কথাতেই যেন কিছু যুক্তি আছে । কাউকেই যেন উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না । ঈশ্বরের অস্তিত্বের ব্যাপারে ঠিক একই কথা মনে হয় । যাঁরা বলেন যে ঈশ্বর আছেন আর যাঁরা বলেন যে ঈশ্বর নেই তাঁদের উভয়ের কথার মধ্যেই অনেক যুক্তি রয়েছে । কারোর যুক্তিই পুরোপুরি নস্যাৎ করে দেওয়া যায় না ।

তবে ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমানে যে কথাগুলি প্রচলিত সেগুলি হল । আমরাই হচ্ছি ঈশ্বরের অস্তিত্বের সবচেয়ে বড় প্রমান । ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করেছিলেন বলেই আমরা আছি । না হলে আমাদের কোন অস্তিত্ব থাকত না । ঈশ্বর সর্বদা আমাদের অন্তরে অধিষ্ঠান করেন । তাই ঈশ্বরকে পেতে গেলে মন্দির মসজিদ বা গীর্জায় গিয়ে কিছু হবে না । নিজের অন্তরের মধ্যেই ঈশ্বরকে খুঁজতে হবে ।
কিন্তু এই ধরনের কথায় ঠিক যেন মন ভরে না । আমরা শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত মানুষ আমাদের চাই যুক্তি । কোন ধর্মগুরু কি কথা বলল বা কি ধর্মগ্রন্থে কি কথা লেখা আছে সেটা কখনও প্রমাণ হতে পারে না । পৃথিবীর বেশিরভাগ ধর্মগ্রন্থেই যা লেখা আছে সেগুলি যে ঠিক তারই বা প্রমান কি ? বা সেগুলি যখন লেখা হয়েছিল তার পরে সেগুলিকে কোন বদল করা হয় নি তারই বা নিশ্চয়তা কোথায় ? সেগুলি যখন লেখা হয়েছিলাম তখন তো আমরা এই পৃথিবীতে ছিলাম না । আর ধর্মগ্রন্থগুলিকে বিনা বিচারে মেনে নেওয়াটাও কি একধরনের গোঁড়ামি নয় ।

ধর্মগ্রন্থগুলি হল অনেকটা জ্যামিতির স্বতঃস্বিদ্ধের মত । প্রথমেই মেনে নিতে হবে কোন প্রমান ছাড়াই যে এইগুলি ঠিক । না হলে কোন অঙ্কই কষা যাবে না । বেশিরভাগ ধর্মেই আছে যে কোন অবস্থাতেই ধর্মগ্রন্থগুলির বিরুদ্ধে কোন প্রশ্ন তোলা যাবে না । বিনা বিচারে মেনে নিতে হবে এর সব কিছু । এই ব্যাপারটাই আমার আশ্চর্য লাগে । যাঁরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন তাঁরা তো এটাও তো বিশ্বাস করবেন যে মানুষের এই সভ্যতা মানুষের বিচার বিবেচনা বুদ্ধি সবই ঈশ্বরের দান । তাহলে মানুষ যদি তার বুদ্ধি বিবেচনা খাটিয়ে ধর্মের মূল বক্তব্যগুলি সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন তোলে তবে তা কেন গ্রহনযোগ্য হবে না ।

মানুষ সব সময়েই তার বুদ্ধি বিবেচনা খাটায় আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগেও খাটাত আর এখনও খাটায় । মনে রাখতে হবে যে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে অর্জুন কৃষ্ণের কাছে পুরো গীতা শোনার পরও তাঁর সংশয় কিন্তু কাটেনি তখন কৃষ্ণকে বাধ্য হয়ে বিশ্বরূপ দর্শন করাতে হয়েছিল । কে জানে হয়ত কৃষ্ণ অর্জুনকে হিপনোটাইজ করেছিলেন । অর্থাৎ পুরোপুরি বিশ্বাস আনতে গেলে চাই প্রত্যক্ষ প্রমাণ ।

অনেক সাধুসন্ত আর ধর্মগুরু কিন্তু এই প্রত্যক্ষ প্রমান দিয়েই মানুষের মনে বিশ্বাস আনেন । অর্থাৎ তাঁরা নানা রকমের ম্যাজিক দেখিয়ে সাধারন মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন ।

এখন দেখা যাক অন্যান্য অলৌকিক মতবাদের দিকে । যেমন মৃত্যুর পরে জীবন, আত্মা আর জন্মান্তর । অর্থাৎ এটা যদি মেনেও নেওয়া যায় যে মৃত্যুর পরে মানুষের আত্মা বেঁচে থাকে । আত্মা কখনও মরে না ইত্যাদি ইত্যাদি । কিন্তু তাতেও কিন্তু ঈশ্বরের থাকার পক্ষে কোন যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না । অর্থাৎ এরকম একটা জগতের কল্পনা সহজেই করা যায় যেখানে আত্মা আছে, পূর্ণজন্ম আছে । এমনকি ভূতও আছে কিন্তু কোন ঈশ্বর নেই । আমাদের এই জগতের পক্ষে একজন ঈশ্বরের থাকা বা না থাকা কি খুব জরুরি কিনা সেটা বোঝা যায় না ।

কমিউনিস্টদের ঈশ্বর সম্পর্কে মূল বক্তব্যটাও কিন্তু বেশ আকর্ষনীয় । তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে । ভগবান হল গরীব মানুষদের ভুলিয়ে রাখার জন্য বড়লোকদের একটা কায়দা । কথাটা কিন্তু একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয় । পৃথিবীর ইতিহাস ঘাঁটলে কিন্তু দেখা যায় ভগবানের নাম করেই বিভিন্ন দেশের শাসকেরা তাঁদের শাসন চালিয়ে গেছেন । ঈশ্বরের নামে শাসন করে তাঁরা দুর্বলদের উপর আধিপত্য চালিয়েছেন । দেশ শাসন করেছেন । রাজ্যজয় করেছেন । তাঁরা প্রচার করেছেন যে রাজা বা সম্রাট হচ্ছেন স্বয়ং ভগবানের অবতার বা তাঁর প্রতিনিধি । চার হাজার বছর আগেকার মিশরীয় ফারাওদের থেকে আরম্ভ করে মাত্র কয়েকদিন আগে পতন হওয়া নেপালের রাজা সবাই একই পথের পথিক। মাত্র কয়েক মাস আগেও নেপালে আইন ছিল যে রাজা হচ্ছেন ভগবান বিষ্ণুর অবতার তাই তিনি সকল আইন কানুনের উর্দ্ধে । কোন আইনই তাঁকে বন্দী করতে পারবে না । বিভিন্ন দেশে গরীব মানুষদের বলা হত তোমার রাজার সেবা কর কেননা তিনি ভগবানের অবতার ।

আবার মেয়েদের দমিয়ে রাখার জন্যও ঈশ্বরকে টেনে আনা হয় । তাঁদের বলা হয় তাঁদের স্বামীই হচ্ছেন তাঁর কাছে ভগবান । অর্থাৎ পতি পরম গুরু । অথবা ভগবানের ইচ্ছা এই যে স্ত্রীরা সবসময় তাদের স্বামীর সেবা করুক । কিন্তু পুরুষদের কাছে তাঁদের স্ত্রীদের অস্তিত্ব কেবল সেবাদাসীর থেকে আর কিছু বেশি নয় । আবার হিন্দু বা মুসলিম সব ধর্মেই আছে কোন পুরুষ যদি ভাল কাজ করে তাহলে সে মৃত্যুর পরে সে স্বর্গে বা বেহেস্তে যাবে । এবং স্বর্গে গিয়ে সে সেখানকার হুরি পরি আর অপ্সরাদের শরীর সম্ভোগের সুযোগ পাবে । কিন্তু কোন মহিলা সম্পর্কে এটা বলা নেই যে তারা যদি ভাল কাজ করে তাহলে মৃত্যুর পর স্বর্গে গিয়ে সে কয়টি পুরুষকে উপভোগ করতে পারবে ।

তা যাই হোক যার বিশ্বাস আছে সে ভগবানে বিশ্বাস করবে আর যার নেই সে করবে না । সেটাই আসল কথা । কিন্তু কোন কোন সময় সত্যিই মানুষের ভগবানের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যায় যখন তারা চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় । সম্প্রতি ইজরায়েলে পোল্যান্ডের একটি ইহুদি মেয়ের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ডায়েরি প্রকাশিত হয়েছে । সেখানে সে লিখেছে – যখন দেখি মানুষদের জীবন্ত অবস্থায় ফার্ণেসে ফেলে দেওয়া হচ্ছে । বাচ্চাদের জার্মান সৈন্যরা কেবল খালি হাতে মেরে ফেলেছে তখন ঈশ্বরের উপরে আর কোন বিশ্বাস থাকে না । যদি সত্যিই ঈশ্বর থাকতেন তাহলে কিছুতেই তিনি তাঁর সন্তানদের এভাবে মরতে দিতেন না ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মান নাজিরা প্রায় নব্বই লক্ষ মানুষকে কনসেনট্রেসন ক্যাম্পে মেরে ফেলেছিল । যাদের মধ্যে বহু শিশুও ছিল । যারা ঈশ্বর বিশ্বাসী তাঁদের মনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যদি ঈশ্বর থেকে থাকেন তাহলে তিনি কিভাবে এই অনাচার মেনে নিলেন । নাকি হয়ত ঈশ্বর আছেন কিন্তু মানুষের ভালমন্দে তাঁর কিছু এসে যায় না । ঈশ্বরবিশ্বাসীরা প্রায়ই একটা কথা বলেন যে ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্য । আমার জানতে ইচ্ছা হয় যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে ছয় কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল তাতে কার মঙ্গল হয়েছিল । টিভিতে মাঝেমধ্যেই দেখায় সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষের ছবি । হাজার হাজার মানুষ খেতে না পেয়ে যাদের হাত পা কাঠি হয়ে গেছে । বাচ্চাদের প্রত্যেকটি পাঁজরা গোনা যাচ্ছে । অথচ তাদের পেটটা বড় । যেকোন মূহুর্তে তারা মারা যেতে পারে স্রেফ না খেয়ে । তাদের এই অবস্থা তাও কি ঈশ্বরের করুণার দান । অথবা কয়েকবছর আগে সুনামিতে ইন্দোনেশিয়াম, ভারত, শ্রীলঙ্কা সহ আরো বহু দেশে যে হাজার হাজার মানুষ মারা গেল তাও কি ঈশ্বরের ইচ্ছায় হয়েছে ।

তাহলে আমাদের এই জগতে ঈশ্বরের কাজটা কি । তিনি কি একটা বাচ্চার মত যে নিজের খেলনা গুলো নিয়ে খেলে ছড়ায় ভাঙে আবার গুছিয়ে রাখে । যখন যা ইচ্ছা তখন তা করে । আর এই সমস্ত কাজের মধ্যে কোন যুক্তিবোধ কাজ করে না । নাকি আমাদের এই দুঃখ দুর্দশা আনন্দ সবই আসলে একটা ভ্রম । আমরা মনে করছি যে আমরা ভাল আছি বা খারাপ আছি । কিন্তু আমরা আসলে যা দেখছি বা শুনছি তা সবই মায়া । এই অনুভূতিগুলির বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই । আমরা স্বপ্ন দেখি যে আমরা খুব বিপদে পড়েছি আর ভগবানকে ডাকছি । কিন্তু ভগবান এলেন না । কিন্তু যখন আমাদের ঘুম ভাঙে তখন কি আমরা ভগবানের উপর অভিমান করি যে কেন তিনি আমাকে স্বপ্নের বিপদ থেকে বাঁচাতে এলেন না । কারণ আমরা জানি যে স্বপ্নের ভিতরে যে বিপদ আমাদের হয়েছিল সেটা ছিল একটা ভ্রম । তখন হয়তো আমাদের হাসি পায় । এই ব্যাপারটাও ঠিক তেমন নয়তো । নাহলে যে কোন যুক্তি দিয়েই পৃথিবীতে অনাচারগুলির কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না । কেনই বা মানুষে মানুষে এত বৈষম্য আর কেনই বা খুব অল্পসংখ্যক কিছু মানুষ পৃথিবীর সব সম্পদ ভোগ করে তার কোন ব্যাখ্যা মেলে না । কেন কিছু মানুষ সারাজীবন ধরে সুখভোগ করে আর কিছু মানুষের সারাজীবন কাটে দুঃখে যেখানে সব মানুষেরই ভগবানের কৃপা সমানভাবে পাওয়া উচিত ছিল ।

কেউ কেউ বলেন যে ভগবান মানুষকে দুঃখ কষ্টে ফেলে পরীক্ষা করেন যে তারা কতটা সহনশীল হয়েছে । কিন্তু ভগবানের এরকম খামখেয়ালিপনায় কি লাভ হয় সেটা কেউ স্পষ্ট করে বুঝিয়ে বলতে পারেন না । কোন মানুষ সে হয়ত জীবনে চরম কষ্ট পেয়েছে যা নরকযন্ত্রনারই সামিল সে তো বলতেই পারে যে হয়ত ঈশ্বর আছেন কিন্তু তাতে আমার কি । ঈশ্বর থেকেও তো আমার কোন উপকার হয়নি । তাহলে ঈশ্বর থাকুন তাঁর মতো । আর আমি থাকব আমার মত ।

তবে শেষ অবধি আমার যেটা মনে হয় সেটা হল ঈশ্বর হয়ত আছেন কিন্তু তিনি সর্বশক্তিমান নন । অর্থাৎ তিনি চাইলেই কোন মানুষের ভাল বা মন্দ করতে পারেন না । হয়ত লড়াই করার জন্য কিছুটা শক্তি যোগাতে পারেন । যেমন কেউ যদি একটুও পড়াশোনা না করে তাহলে কি কেবল ঈশ্বরকে ডেকে পরীক্ষায় পাস করতে পারে । না তা কোনমতেই সম্ভব নয় । ঈশ্বর কেবল তাকে ভাল পরীক্ষা দেবার জন্য কিছুটা মানসিক শক্তি যোগাতে পারেন । কিন্তু তাকে পাস করিয়ে দেবার ক্ষমতা তাঁরও নেই । ঈশ্বর যে সর্বশক্তিমান নন তার প্রমান হল আমাদের পুরান আর মহাকাব্যগুলি । সেগুলি পড়লে দেখা যায় যে ঈশ্বরের অবতার হিসাবে যাঁরা জন্মগ্রহন করেছিলেন তাঁদেরও ব্যক্তিগত জীবনে কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে । যেমন রাম অথবা কৃষ্ণ । স্বয়ং ভগবানের অবতার হয়েও রামকে চোদ্দ বছর বনবাস করতে হয়েছে । রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করার পরও তাঁর বিবাহিত জীবন সুখের হয়নি । আবার কৃষ্ণ এত রাজনৈতিক ভাবে শক্তিশালী হয়েও তাঁর নিজের বংশকেই ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে পারেননি । আবার যীশুখ্রীষ্টকেও কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে । ভগবানের প্রতিনিধি হয়েও তাঁকে ভয়ানক মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে । তাহলে কোনো খ্রীষ্টান তো ভাবতেই পারে যে ঈশ্বর যখন যীশুকেই রক্ষা করতে পারেননি তখন কিভাবে তিনি তাঁদের রক্ষা করবেন ।

তাই মনে হয় ভগবানের প্রতি আস্থার থেকেও যেটা দরকার বেশি সেটা হল নিজের প্রতি আস্থা । আর নিজের প্রতি আস্থার অভাব থাকলেই মানুষ যখন পরাস্ত হয় তখন সে ভগবানকে দোষারোপ করে । অথচ প্রত্যেক মানুষের ভিতরেই যদি ভগবানের প্রকাশ থাকে তাহলে নিজের প্রতি আস্থাই ভগবানের প্রতি আস্থায় রূপান্তরিত হয় আর সেই সময়েই একজন চরম নাস্তিক কিন্তু নিজের প্রতি আস্থাশীল একজন ব্যক্তি আসলে হয়ে ওঠেন একজন আস্তিক ।

Saturday, June 09, 2007

মহীনের ঘোড়াগুলি -- কলকাতা কলকাতা

মহীনের ঘোড়াগুলির আরো একটি দারুণ গান ।


Wednesday, June 06, 2007

মহীনের ঘোড়াগুলি -- মেরুন সন্ধ্যালোক

মহীনের ঘোড়াগুলির এই গানটি আগে কখনও শুনিনি ।


Sunday, June 03, 2007

পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে মিডিয়ার আলোড়ন প্রমাণ করে মিডিয়া কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন ।

একমাত্র মনে হয় আমাদের দেশেই পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোলে তা হয়ে যায় একটা খবর আর যারা ফার্স্ট সেকেন্ড হয় তারা হয়ে যায় সেলিব্রিটি ।

এর মধ্যেই বেরোল মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট । আর এই রেজাল্ট নিয়ে প্রত্যেক বছরের মত এবছরও দেখা গেল মিডিয়ার বাড়াবাড়ি । আমাদের দেশের মিডিয়া যে কত দায়িত্বজ্ঞানহীন তা প্রমান করে পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে তাদের এই অহেতুক প্রচারে । এখন আর বোর্ডের পক্ষ থেকে কোন মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয় না তবুও সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেলগুলি নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে ফার্স্ট সেকেন্ড থার্ড খুঁজে বের করে । যা আসলে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতিই করে ।

আর যে পরীক্ষায় পাঁচ ছয় লক্ষ করে পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয় এবং এক দুই নম্বরের ব্যবধানে অজস্র ছাত্রছাত্রী সেখানে দশ বা কুড়ি জনকে কেবল নম্বরের বিচারে বেছে নেওয়া নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছু নয় । প্রথম দশ বা কুড়ি জন নয়, প্রথম অন্তত দুশো জনের মধ্যে মেধার কোন ফারাক নেই ।

মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক বা সেন্ট্রাল বোর্ডের পরীক্ষাগুলি প্রত্যেক বছরই যথাসময়ে হবে এবং তাতে বহু ছাত্রছাত্রী পাস অথবা ফেল করবে । এটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা । এটা প্রত্যেক বছরেই ঘটবে । এই ঘটনা নিয়ে এত মাতামাতি করার কি আছে সেটা ভেবে পাওয়া যায় না । আসলে আমাদের দেশে শিক্ষার থেকে প্রতিযোগিতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় । আমরা আসলে ভুলে যাই যে শিক্ষা কোন প্রতিযোগিতার বিষয় নয় । ছাত্র ছাত্রীরা কি শিখেছে সেটাই সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত । তারা একে অপরের থেকে কত বেশি বা কম নম্বর পেয়েছে তাকে কখনই গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয় ।
আর মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক কখনই জয়েন্ট এন্ট্রান্স বা আইআইটির মত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা নয় ।

আর সব থেকে হাসি পায় উচ্চ মাধ্যমিকে যখন মেধা তালিকা তৈরি করার চেষ্টা করা হয় । উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকাতে দেখা যাবে প্রায় সবাই বিজ্ঞানবিভাগের ছাত্র ছাত্রী । সেখানে কলা বা বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের দেখা যায় না । তার মানে কি কলা বা বাণিজ্য বিভাগে কোন প্রতিভাবান ছাত্রছাত্রীরা পড়ে না । আসলে বিজ্ঞান বিষয়গুলিতে যত বেশি নম্বর পাওয়া সম্ভব তা কখনই কলা বা বাণিজ্য বিভাগের বিষয় গুলিতে পাওয়া সম্ভব নয় । ইতিহাস বা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে কি ৯০ শতাংশ নম্বর পাওয়া সম্ভব । মনে হয় না ।
তাহলে বোঝাই যায় যে উচ্চমাধ্যমিকের কখনই কোন মেধা তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব নয় । অথচ রিপোর্টাররা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রথম দ্বিতীয় স্থানাধিকারীদের খুঁজে বার করে এবং তাদের নিয়ে হল্লা আরম্ভ করে ।

কোন কোন সংবাদপত্র বা চ্যানেল আবার মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থানাধিকারীর নাম ঘোষনা করে । এটা প্রমান করে যে আমাদের মিডিয়া যাঁরা চালাচ্ছেন তাঁরা কতটা অশিক্ষিত এবং তাঁদের কমন সেন্স কতটা কম । মেধা কখনও মানুষের লিঙ্গের উপর নির্ভর করে না । আইনস্টাইন যদি পুরুষ না হয়ে মহিলা হতেন তাহলে কি তাঁর বুদ্ধি আর মেধা বেড়ে বা কমে যেত ?

এরপর প্রতিভাবান ছাত্রছাত্রীরা যখন হঠাৎ করে মিডিয়ার সামনে পড়ে তখন তারা যে মানসিক চাপের সম্মুখীন হয় তার ফলেও তাদের নানা রকমের সমস্যা চলে আসতে পারে । বহু মানুষের প্রশংসা আর পিঠ চাপড়ানি খেতে খেতে তাদের যদি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস চলে আসে তার ভবিষ্যৎ ফল খারাপ হতে বাধ্য ।

Sunday, May 13, 2007

ফসিল্‌স



বাংলা ব্যান্ড ফসিল্‌সের গান প্রথম কবে শুনেছিলাম জানি না । বোধহয় কোন এমপি৩ সিডিতে বা টিভিতে । ফসিল্‌সের গান প্রথম যখন শুনেছিলাম তখন আমার সবথেকে প্রিয় ব্যান্ড ছিল পরশপাথর এবং চন্দ্রবিন্দু।

টিভিতে একটি স্টেজ পারফরম্যান্সের অনুষ্ঠানে আমি প্রথম ফসিল্‌সকে পারফর্ম করতে দেখি । বাংলা ব্যান্ডের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগগুলি তোলা হয় তার প্রতিটিই প্রায় ফসিল্‌সের গানের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছিল । অদ্ভুত সাজপোশাক আর চুল স্টেজের উপর চুল ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে গান যা প্রায়ই বেসুরো আর যার কোনো মাথামুণ্ডু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না । অর্ধেক কথা তো পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছিল না । সেই সময়ের সেরা দুই বাংলা ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দু ও ভূমির গায়কদের আচার আচরন খুবই ছিল খুবই সাধারন আর তাদের গানও ছিল অনেকটাই মূলধারার গানের কাছাকাছি ।

কিন্তু পরে যখন আমি ফসিল্‌সের গান সিডিতে আর রেডিওতে শুনেছিলাম তখন বেশ ভালোই লেগেছিল । ফসিল্‌সের গানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা সমাজের শুধুমাত্র অন্ধকার দিকগুলোকে নিয়েই গান করে । একারনে তাদের ব্যান্ডমেম্বাররাও কেবল কালো পোষাকই পরে ।

প্রথমদিকে তাদের এই রকম নেগেটিভ গানের শ্রোতা খুবই কম ছিল কিন্তু আস্তে আস্তে তারাও পায়ের নিচে জমি খুঁজে পায় । ফসিল্‌সের প্রথম অ্যালবাম ফসিল্‌স এর বেশিরভাগ গানই আমার ভালো লেগেছিল । প্রথম অ্যালবামের একলা ঘর, হাসনুহানা, নেমেসিস, মিলেনিয়াম প্রভৃতি গান খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল । তার পরে ফসিল্‌সের গানের পিকচারাইজেশনও হয়েছে বাইসাইকেল চোর তার মধ্যে অন্যতম ।

পুরোপুরি রক ব্যান্ড বলতে যা বোঝায় ফসিল্‌স ঠিক তাই । বাংলাতেও যে হাই ভোল্টেজ রক করা যায় তা তারাই দেখিয়েছে । কিছু কিছু কথা আছে যেগুলো নরম ভাবে বললে কোন কাজ হয় না । কিছু কিছু কথা আছে যা মানুষের মগজে ঢোকাতে গেলে ধাক্কা দিতে হয় । ফসিল্‌স ঠিক তাই করবার চেষ্টা করেছে । আর ফসিল্‌সের লিরিকও বেশ আধুনিক এবং রক গানের জন্য যেরকম হওয়া উচিত সেরকম । তাদের একটি বিখ্যাত গান অ্যাসিড । তার প্রথম কয়েকটি লাইন হল :-

বুকে বুকে জ্বালা ধরা তীব্র অসুখে

নেপথ্যে প্রেম আর ঘৃণা সম্মুখে

আত্মমৈথুনের ঘৃণ্য শহরে

ফিরতে চাইনা, তবু ফিরি বারে বারে

যাতে প্রেমহীন রূপগুলো যায় চুকে বুকে

পথ্য অ্যাক্‌টাই, অ্যাসিড ছোঁড়ো মুখে

অন্যের মুখে নয়, আয়নার মুখে

পথ্য অ্যাক্‌টাই, অ্যাসিড ছোঁড়ো মুখে

পথ্য অ্যাক্‌টাই অ্যাসিড

ফসিল্‌স মূলত দাঁড়িয়ে আছে তাদের ব্যান্ডলিডার রূপম ইসলামের উপর । রূপম তাদের লিড গায়ক এবং গানের কথাগুলিও তার লেখা । রূপমের জনপ্রিয়তা এখন প্রায় আকাশছোঁয়া । অরকুটে রূপম এবং ফসিল্‌সের কমিউনিটির সদস্য সংখ্যাও প্রচুর । টিভির বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রূপম এখন পরিচিত মুখ ।

Saturday, May 12, 2007

সুরকার প্রীতমের ‘কেরামতি’

হিন্দি সিনেমার সুরকাররা বরাবরই অন্যের সুর কপি করে নিজের বলে চালিয়েছেন । এই ঐতিহ্য বহুকালের । শঙ্কর জয়কিষেন থেকে শুরু করে রাহুলদেব বর্মন, বাপী লাহিড়ি, অনু মালিক এবং আরো অনেক সুরকাররা এই কাজ করেছেন । কিন্তু কোন সুরকারের যদি প্রায় সব গানই চুরি করা হয় তাহলে তাকে কি সুরকার বলা যেতে পারে ? শঙ্কর জয়কিষেন রাহুলদেব বর্মন বা বাপী লাহিড়ির নিজস্ব ভালো সুরের সংখ্যা কিন্তু কম নয় ।

চমকে উঠতে হয় বর্তমানের হট মিউজিক ডাইরেক্টর বাঙালির ছেলে প্রীতমের উপর লেখা উইকিপিডিয়ার প্রবন্ধটি দেখে । সেখানে একটি বিশাল লিস্ট আছে যে প্রীতম কোন কোন গান কোথা থেকে চুরি করেছেন । সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে প্রীতমের প্রায় সব হিট গানই কোথাও না কোথাও থেকে ঝাড়া ।

যেমন ধরা যাক প্রীতমের একটি অত্যন্ত সফল এবং হিট সিনেমা গ্যাংস্টার । এই সিনেমার চারটি গানই কোথাও না কোথাও থেকে কপি করা । গ্যাংস্টারের ইয়া আলি গানটা কপি করা হয়েছে আরবিক ব্যান্ড গিটারার ইয়া ঘালি থেকে । লমহা লমহা নেওয়া হয়েছে পাকিস্তানি গায়ক ওয়ারিস বেগের কাল সব দেখা থেকে । তু হি মেরি সব হ্যায় নেওয়া হয়েছে অলিভার শান্তি অ্যান্ড ফ্রেন্ডসের স্যাক্রাল নির্ভানা থেকে । আর গ্যাংস্টারের সবচেয়ে হিট গান ভিগি ভিগি রাতেঁ কপি করা হয়েছে গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের সুরারোপিত পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে থেকে ।

এছাড়াও ওহ্ লমহে সিনেমার অন্যতম হিট গান কেয়া মুঝে পেয়ার হ্যায়, ধুম সিনেমার ধুম মাচালে এবং সিকদুম সবই কপি করা গান ।

এছাড়াও লিস্ট থেকে দেখা যাচ্ছে গরম মশালার তিনটে এক খিলাড়ি এক হাসিনার তিনটে চকলেটের তিনটে এবং কেয়া লাভ স্টোরি হ্যায় এর তিনটে গান প্রীতম কপি করেছেন । অর্থাৎ প্রীতমের জনপ্রিয়তা যত বাড়ছে তত তাঁর সুর চুরির প্রবণতা বাড়ছে । তিনি সুর করছেন মাত্র কয়েক বছর । এখনই তাঁর নতুন সুর তৈরির ক্ষমতা তলানিতে এসে ঠেকেছে ।

যেখানে আজকে হিন্দি সিনেমাকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সেখানে সুর চুরিকে আন্তর্জাতিক দর্শকরা কিভাবে নেবেন সেটাই দেখার । অথচ হিন্দি সিনেমার গানের জনপ্রিয়তা কিন্তু কম নয় ।

এই মূহুর্তে আইএমডিবির টপ ফিফটি মিউজিক্যাল মুভির লিস্টে এক নম্বরে নাম আছে লাগে রহো মুন্নাভাই । এছাড়া এই লিস্টে নাম আছে লগান এবং দিল চাহতা হ্যায় এর । সেখানে নতুন কিছু সুরের চেষ্টা না করে কপি-পেস্ট সুরকার প্রীতমের মত সুরকাররা কতদিন টেঁকেন সেটাই দেখার ।

Saturday, May 05, 2007

একজন হিন্দু হিসাবে কেন আমি গর্বিত ।

ভারতবর্ষে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষিত হিন্দুদের অবস্থাটা কিছুটা যেন কনফিউজড । আধুনিক প্রগতিশীল বাঙালি হিন্দুরা প্রায়ই নিজেদের হিন্দু বলে পরিচয় দিতে চান না বা দিতে লজ্জা পান । তাঁদের অনেকরই বক্তব্য যে তাঁরা কোন ধর্মে বিশ্বাস করেন না এবং বিশ্বাস করতে চানও না । তাঁরা অনেকই বলবেন যে তাঁরা ভারতীয় হিসাবে গর্বিত বা বাঙালি হিসাবে গর্বিত কিন্তু তাঁরা কখনই বলবেন না যে তাঁরা হিন্দু হিসাবে গর্বিত ।

অদ্ভুত ব্যাপার হল আমি যদি নিজেকে একজন হিন্দু বলে পরিচয় দিই তাহলে যেন আমি যেন একজন সাম্প্রদায়িক অথবা বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, এস এস এর বা বজরং দলের দালাল । আর আমি যদি বলি যে আমি কোন ধর্মে বিশ্বাস করি না তাহলেই আমি একজন প্রগতিশীল এবং আধুনিক মানুষ ।

অথচ ভারতে যদি কোন মুসলমান নিজেকে মুসলমান হিসাবে পরিচয় দেন অথবা একজন খ্রীস্টান নিজেকে খ্রীস্টান হিসাবে পরিচয় দেন তাহলে ধরে নেওয়া হয় সেটাই স্বাভাবিক ব্যাপার । এবং কেউই তাঁদের কোন রাজনৈতিক বা অন্য কোন পরিচয় খুঁজতে যায় না । কিন্তু একজন হিন্দু যদি নিজেকে হিন্দু হিসাবে পরিচয় দেন তাহলেই যেন তার যত দোষ ।

অথচ এই প্রগতিশীল হিন্দুরাই জাতপাত দেখে ছেলেমেয়ের বিয়ে দেন অথবা তাঁদের যদি শিডিউল কাস্ট বা শিডিউল ট্রাইব সার্টিফিকেট থাকে তবে তার উপযোগিতা নিতে তাঁরা পিছপা হন না । এবং কথায় কথায় আফসোস করেন যে কেন শুধু মুসলমানদেরই চারটি বিয়ে করার অধিকার থাকবে ।

এই প্রগতিশীল মানুষদের অনেকরই বক্তব্য হিন্দু ধর্ম বলে কিছু হয় না, যারা আগে সিন্ধুনদের তীরে বসবাস করত তারাই নিজেদের হিন্দু বলে পরিচয় দিত । হিন্দুধর্মের কোন প্রতিষ্ঠাতা নেই, এতে তেত্রিশ কোটি দেবদেবী ইত্যাদি ।

কিন্তু তাঁরা ভুলে যান যে হিন্দুধর্ম কখনও কোন মানুষের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয় নি। যুদ্ধজয় করে কোন দেশের মানুষকে বাধ্য করা হয় নি একে গ্রহন করার জন্য । অথবা সামান্য কিছু খাবারের লোভ দেখিয়ে গরীব মানুষদের রূপান্তরিত করা হয়নি এই ধর্মে ।

বরং হিন্দুরাই অন্য ধর্মের আচার আচরন এবং দেবদেবীকে নিজেদের বলে গ্রহন করেছে । যেমন প্রাচীন বৈদিক আর্যরা আস্তে আস্তে গ্রহন করেছিল শিব ও শক্তিকে । আবার পরবর্তীকালে বুদ্ধকে স্বীকৃতি দিয়েছিল বিষ্ণুর অবতার বলে ।

হ্যাঁ এটা অবশ্যই মেনে নেওয়া দরকার যে হিন্দুধর্মের ভিতরেও কালক্রমে নানারকমের কুসংস্কার প্রবেশ করেছিল । কিন্তু সেগুলিও ছিল কিছু মানুষের ষড়যন্ত্র । যেমন সতীদাহ প্রথা । শোনা যায় বেদের কিছু শ্লোকের ভুল অর্থকরে সতীদাহ প্রথা চালু করা হয়েছিল । এর আসল উদ্দেশ্য ছিল মহিলাদের সম্পত্তি দখল করা । আবার পরবর্তীকালে বিদ্যাসাগর প্রমান করেছিলেন যে বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসম্মত । আর জাতিভেদ প্রথার মূল লক্ষ্য ছিল সমাজে কে কি কাজ করবে তা ঠিক করে দেওয়া । সমাজের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা এর উদ্দেশ্য ছিল না । আর যদি এটা বৈষম্যই সৃষ্টি করে থাকে তাহলে এখনও কেন ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার নানা রকমের সংরক্ষন চালু রেখে জাতিভেদ প্রথাকে জিইয়ে রেখে দিয়েছেন ?

সমস্ত মানুষই যে এক তা প্রমান করার চেষ্টা হিন্দুদের মধ্যে থেকে বারবারই হয়েছে । চৈতন্যদেব এবং বিবেকানন্দই তার প্রমাণ ।

কমিউনিস্টরা কোন ধর্মে বিশ্বাস করেন না । কিন্তু তাঁরাও স্বীকার করেন চৈতন্যদেব এবং বিবেকানন্দের দর্শনকে ।

বিবেকানন্দের লেখায় পড়েছি যে হিন্দুধর্ম শ্রেষ্ঠ কারন একমাত্র এই ধর্মই শেখায় অন্য ধর্মকে শ্রদ্ধা করতে । রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন যে যত মত তত পথ । অর্থাৎ তিনিও অন্য ধর্মের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন । এমনকি এরকমও শোনা যায় যে তিনি মুসলমান হয়েও সাধনা করেছিলেন ।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের উপরেও হিন্দু দর্শনের প্রচুর প্রভাব ছিল । অনেক বিপ্লবীই ইংরেজদের বিরূদ্ধে মনোবল সংগ্রহ করতেন গীতা পড়ে ।

অতএব জন্মসূত্রে আমি হিন্দু এবং আমি যদি আমার এই পরিচয় সম্পর্কে গর্ববোধ করি তাতে দোষের কিছু নেই ।

বাংলার গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে

বাংলার গা থেকে রক্ত

গড়িয়ে পড়েছে


জ য় গো স্বা মী


বাংলার গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে,

রক্ত

গড়িয়ে পড়েছে...

কেউ ছুটে গেল খালের ওদিকে

বুক ফাটা গলায় কার মা ডাকল : ‘রবি রে...’

উত্তরের পরিবর্তে, অনেকের স্বর মিলে একটা প্রকাণ্ড হাহাকার

ঘুরে উঠল...

কে রবি ? কে পুষ্পেন্দু ? ভরত ?

কাকে খুঁজে পাওয়া গেছে ? কাকে আর পাওয়া যায়নি ?

কাকে শেষ দেখা গেছে

ঠেলাঠেলি জনতাগভীরে ?

রবি তো পাচার হচ্ছে লাশ হয়ে আরও সব লাশেদের ভিড়ে...



...বাংলার গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে

রক্ত

গড়িয়ে পড়েছে

রক্ত

গড়িয়ে পড়েছে...

পিছনে কুকুর ছুটছে

ধর্, ধর্...

পিছনে শেয়াল

তার পিছু পিছু আসছে ভাণ্ড হাতে

রাজ অনুচর

এই রক্ত ধরে রাখতে হবে

এই রক্ত মাখা হবে সিমেন্টে বালিতে

গড়ে উঠবে সারি সারি

কারখানা ঘর

তারপর

চারবেলা ভোঁ লাগিয়ে সাইরেন বাজাবে

এ কাজ না যদি পার, রাজা

তাহলে

বণিক এসে তোমার গা থেকে

শেষ লজ্জাবস্ত্রটুকু খুলে নিয়ে যাবে




আমার গুরুত্ব ছিল মেঘে

প্রাণচিহ্নময় জনপদে

আমার গুরুত্ব ছিল...

গা ভরা নতুন শস্য নিয়ে

রাস্তার দুপাশ থেকে চেয়ে থাকা আদিগন্ত ক্ষেতে আর

মাঠে

আমার গুরুত্ব ছিল...

আজ

আমার গুরুত্ব শুধু রক্তস্নানরত

হাড়িকাঠে !


অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে

সূর্য উঠে আসে

বন্ধ-থাকা ইশ্‌কুলের গায়ে ও মাথায়

রোদ পড়ে

রোদ পড়ে মাটি খুড়ে চলা

কোদালে, বেলচায়

রোদ পড়ে নিখোঁজ বাচ্চার

রক্তমাখা স্কুলের পোশাকে...



... না, না, না, না, না-

‘না’ বলে চিৎকার করছে গাছ

‘না’ বলে চিৎকার করছে এই গ্রীষ্ম দুপুরের হাওয়া

‘না’ বলে চিৎকার করছে পিঠে লাশ বয়ে নিয়ে চলা

ভ্যান গাড়ি

আর আমরা শহরের কয়েকজন গম্ভীর মানুষ

ভেবে দেখছি ‘না’ বলার ভাষারীতি ঠিক ছিল কিনা তাই নিয়ে

আমরা কি বিচারে বসতে পারি ?



তুমি কি খেজুরি ? তুমি ভাঙাবেড়া ?

সোনাচূড়া তুমি ?

বার বার প্রশ্ন করি । শেষে মুখে রক্ত উঠে আসে ।

আমার প্রেমের মতো ছাড়খার হয়ে আছে আজ গোটা দেশ

ঘোর লালবর্ণ অবিশ্বাসে !



আমরা পালিয়ে আছি

আমরা লুকিয়ে আছি দল বেঁধে এই

ইটভাটায়

মাথায় কাপড় ঢেকে সন্ধেয় বেরোই

মন্টুর আড়তে-

মল্লিকের

বাইকের পিছন-সিটে বসে

আমরা এক জেলা থেকে অপর জেলায়

চলে যাই,

যখন যেখানে যাই কাজ তো একটাই !

লোক মারতে হবে ।

আপাতত ইটভাটায়

লুকিয়ে রয়েছি...

অস্ত্র নিয়ে...

কখন অর্ডার আসে, দেখি ।



পিছু ফিরে দেখেছি পতাকা ।

সেখানে রক্তের চিহ্ন, লাল ।

ক’বছর আগে যারা তোমাকে সাহায্য করবে বলে

ক’বছর আগে যারা তোমার সাহায্য পাবে বলে

রক্তিম পতাকাটিকে নিজের পতাকা ভেবে কাঁধে নিয়েছিল

তাঁদের সবাইকে মুচড়ে দলে পিষে ভেঙে

খল করেছ মুক্তাঞ্চল

পতাকাটি সেই রক্ত বক্ষ পেতে ধারণ করলেন ।

তোমার কি মনে পড়ছে, রাজা

শেষ রাত্রে ট্যাঙ্কের আওয়াজ ?

মনে পড়ছে, আঠারো বছর আগে, তিয়েন-আন-মেন ?


ভাসছে উপুড় হয়ে । মুণ্ডু নেই । গেঞ্জি পরা, কালো প্যান্ট ।

কোন বাড়ির ছেলে ?

নব জানে । যারা ওকে কাল বিকেলে বাজারে ধরেছে

তার মধ্যে নবই তো মাথা ।

একদিন নব-র মাথাও

গড়াবে খালের জলে,

ডাঙায় কাদার মধ্যে উলটে পড়ে থাকবে স্কন্ধকাটা

এ এক পুরনো চক্র ।

এই চক্র চালাচ্ছেন যে-সেনাপতিরা

তাঁদের কি হবে ?

উজ্জ্বল আসনে বসে মালা ও মুকুট পরবে

সেসব গর্দান আর মাথা

এও তো পুরনো চক্র । কিন্তু তুমি ফিরে দেখো আজ

সে চক্র ভাঙার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছে গ্রাম-

ঘুরে দাঁড়িয়েছে কলকাতা

১০


অপূর্ব বিকেল নামছে ।

রোদ্দুর নরম হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা মাঠে ।

রোদ্দুর, আমগাছের ফাঁক দিয়ে নেমেছে দাওয়ায় ।

শোকাহত বাড়িটিতে

শুধু এক কাক এসে বসে ।

ডাকতে সাহস হয় না তারও ।

অনেক কান্নার পর পুত্রহারা মা বুঝি এক্ষুনি

ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন ।

যদি ঘুম ভেঙে যায় তাঁর !


কবিতাটি ২মে ২০০৭ এর দেশ পত্রিকাতে প্রকাশিত