সিঙ্গুরের খবর আর মিডিয়া
সিঙ্গুর নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু ক্যাঁচাল হচ্ছে । অফিসে থেকে ফেরার সময় প্রায় প্রতিদিনই মারাত্মক ভিড়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে । কারন ট্রেনের গণ্ডগোল । আজ সন্ধে ছটার সময়ে যখন বিধাননগর স্টেশনে এলাম তখন দেখলাম স্টেশনে প্রচণ্ড ভিড় । এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানোর জায়গা নেই ট্রেনে ওঠা তো অনেক পরের ব্যাপার । কেউই ঠিক বলতে পারছে না যে আসলে কি হয়েছে । সাধারন ট্রেনের গণ্ডগোল না কোথাও অবরোধ হয়েছে । সিঙ্গুর ইসুকে নিয়ে প্রায় প্রত্যেক দিনই কোথাও না কোথাও অবরোধ হচ্ছে । যাই হোক দুটো ট্রেন ছেড়ে দেবার পর অবশেষে তৃতীয় ট্রেনে উঠতে সক্ষম হলাম । সেই ট্রেনটা আবার দমদম স্টেশনে প্রচণ্ড ভিড় নিয়ে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে রইল ।
আগামী কাল আবার এসইউসিআই আর সিপিআই এম এল বনধ ডেকেছে । আজ মাওবাদীরা কলকাতার বেকবাগানের কাছে টাটা মোটরসের শোরুমে হামলা চালিয়েছে এবং বুদ্ধবাবুর বিরুদ্ধে পোস্টার সেঁটে গেছে । এসইউসিআই দল হিসাবে ছোট হলেও কোথাও কোথাও তাদের যথেষ্ট শক্তি রয়েছে । এবং আমার মনে হয় পশ্চিমবঙ্গে যতগুলি রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের ভিতরে এসইউসিআই সবচেয়ে সিরিয়াস নিজেদের আন্দোলনের বিষয়ে । এবং তাদের যথেষ্ট ডেডিকেটেড কর্মী রয়েছে যারা দলকেই নিজের ধ্যানজ্ঞান বলে মনে করে । এরাই আমার মনে হয় পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্ট আন্দোলনের বর্তমান ধারক ও বাহক । কারন মাওবাদীরা অনেকাংশেই সাধারন মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন । এবং সিপিআইএমকে এখন আর বামপন্থী বলে মেনে নেওয়া যায় না । তারা তাদের যেটুকু আদর্শ বাকি ছিল তা জলাঞ্জলি দিয়েছে । এখন অনেকেই জর্জ বুশের ইরাক দখলের সঙ্গে বুদ্ধবাবুর সিঙ্গুর দখলের তুলনা টানছেন । আমার মনে হয় কালকে হয়তো এসইউসিআই ট্রেন অবরোধ করে দিতে পারে । কালকে অবশ্যই আমি অফিসে যাবার জন্য বেরোবো । দেখি গিয়ে উঠতে পারি কি না ।
পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া এখন অনেকাংশেই সিপিএমের ধামাধরা হয়ে গিয়েছে । এর মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য হল আনন্দবাজার পত্রিকা । আনন্দবাজার এখন বামফ্রন্টকে সাপোর্টের ক্ষেত্রে যেন গণশক্তিকে হার মানাতে চলেছে । তাদের এই রহস্যজনক নীতি পরিবর্তনের পিছনে যে কোন উদ্দেশ্য আছে তা স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে । এর সাথে যুক্ত হয়েছ তাদের চ্যানেল স্টার আনন্দ । বলা চলে গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া যেন বুদ্ধপন্থী হয়ে উঠেছে । কলকাতা টিভিও সিপিএমকেই সাপোর্ট করবে এতো জানা কথা । কারণ তাদের মালিক জেনেটিস এর সঙ্গে বুদ্ধবাবুর অনেক দহরম মহরম আছে । ফলে সিঙ্গুর ইসুতে ঠিক কি ঘটছে তা বোঝা অনেকটাই শক্ত হয়ে উঠছে । পশ্চিমবঙ্গের বাংলা টিভি চ্যানেল আর পশ্চিমবঙ্গের বাইরের সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলির সঙ্গে খবরের তফাত অনেকরই নজরে এসেছে । এখন নিরপেক্ষ খবর পাওয়া সবথেকে কঠিন বিষয় হয়ে উঠেছে । কারণ পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়ার মেরুকরণ প্রায় সম্পূর্ণ । নিরপেক্ষ খবরের কাগজ বা টিভি চ্যানেলের কোন অস্তিত্ব আর নেই । সিঙ্গুর ইসুতে যা বুঝলাম তাতে আনন্দবাজার, গণশক্তি আর আজকাল বুদ্ধবাবুর পক্ষে রায় দিচ্ছে এবং সংবাদ প্রতিদিন এবং বর্তমান যাচ্ছে বুদ্ধবাবুর বিপক্ষে । টিভিচ্যানেলগুলোর সেই একই দশা । তাই মনে হয় আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে সর্বভারতীয় খবরের কাগজ আর টিভিচ্যানেল গুলোর দিকে । যদি তারা অন্তত কিছুটা নিরপেক্ষ খবর দেয় ।
2 comments:
এই নিচের লাইনটা আমার ব্রাউজারে ঠিক দেখা যায় না। আজ খুজে পেলাম তাই ভাবলাম বক্তব্য রেখে যাই।
মিডিয়ার এই গল্পযুদ্ধে আমার বার বার মনে হচ্ছে যে এটা আরো একটা কারণ যার জন্য আরো সাধারন মানুষের ব্লগ করা উচিত, যেটা এখনো পশ্চিম বঙ্গে আমরা দেখছি না। ভাবুন তো, এখন সিঙ্গুর থেকে যদি কেউ ব্লগ করত তাহলে হয়তো কিছু অন্য ছবি পাওয়া যেত, তাই না? বাংলা ব্লগিং টা কিভাবে আরো মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তা নিয়ে কিছু চিন্তা করা যাক, কি বলেন?
বাংলা ব্লগের সংখ্যা খূব কম হওয়ায় এই বিষয়ে পোস্টিং চোখে না পড়াই স্বাভাবিক । তবে ইংরাজি বিভিন্ন ব্লগে কিন্তু সিঙ্গুর বিষয়ে বহু লেখা হয়েছে ।
শুধু পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা নয় পশ্চিমবঙ্গের বাইরের এবং ভারতের বাইরের বহু মানুষ তাঁদের ব্লগে সিঙ্গুর বিষয়ে লিখেছেন । ব্লগার ডট কমে সিঙ্গুর লিখে সার্চ করলে এরকম অনেক লিঙ্ক পাওয়া যাবে ।
বর্তমান কমিউনিস্টদের নীতি পরিবর্তন বিষয়ে সিঙ্গুর অনেকটাই ঈঙ্গিত দেয় । তাই বহু সমাজবিদদের কাছে এই বিষয় অনেকটাই আকর্ষনীয় ।
Post a Comment