Monday, February 11, 2008

বাংলা উইকিপিডিয়া -- পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের বলছি

আমরা কথায় কথায় বলি যে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বসবাস করছি । আর পশ্চিমবঙ্গ যে এই তথ্যপ্রযুক্তিতে ক্রমাগত এগিয়ে চলছে তাও আমরা বুঝতে এবং দেখতে পারছি বিভিন্ন মিডিয়াতে । এবং আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতাতেও ।

কিন্তু এই তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধাকে সমস্ত স্তরের মানুষদের কাছে পৌছে দিতে হবে । আর সেটা করা সম্ভব কম্পিউটারে মাতৃভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে । গ্রামে গ্রামে শুধু কম্পিউটার আর ইন্টারনেট পৌছে দিলেই হবে না । ইন্টারনেটে যদি বাংলা ভাষায় পড়ার মত উপযুক্ত বিষয় না থাকে তাহলে কখনই আমাদের তথ্যপ্রযুক্তিকে সর্বস্তরে পৌছে দেওয়ার স্বপ্ন সফল হবে না । তাই বাংলার সাধারন মানুষের হাতে পৌছে দিতে হবে জগতের সব তথ্য । আমাদেরই মাতৃভাষায় - বাংলা ভাষায় ।

ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, দর্শনশাস্ত্র, ভাষাবিজ্ঞান, গণিত, প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্কলন হল বিশ্বকোষ । অর্থাৎ বিশ্বকোষ এমন একটি জিনিস যাতে সমস্ত কিছুর উপরেই তথ্য পাওয়া যেতে পারে । কিন্তু বাংলায় লেখা আধুনিক এবং সম্পূর্ণ বিশ্বকোষের অভাব রয়েছে । আর তার দামও বিশাল । অধিকাংশ মানুষের পক্ষেই তা কেনা সম্ভব নয় । আর এই বাংলা বিশ্বকোষের বদলে পড়া যেতে পারে ইংরাজি বিশ্বকোষ যেমন এনকার্টা, বা ব্রিটানিকা । এখন যাঁদের ইংরাজি জ্ঞান কম তাঁদের পক্ষে এগুলি পড়া সম্ভব নয় । আর ইংল্যান্ড বা আমেরিকা থেকে প্রকাশিত হওয়ার জন্য এগুলিতে ভারতীয় বা বাংলার বিষয় কম থাকে । বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস সম্পর্কে যদি আপনার আগ্রহ থাকে তাহলে ব্রিটানিকা বা এনকার্টা থেকে আপনি বেশি তথ্য পাবেন না ।
আর ভারত বা বাংলার বিষয়গুলি এই বিদেশি বিশ্বকোষগুলিতে লেখা হয় বিদেশী দৃষ্টিকোন থেকে সেগুলি পড়ে আমাদের যদি নিজেদের সংস্কৃতি, সাহিত্য, সঙ্গীত, ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হয় তার থেকে দুঃখজনক আর কিছু নেই ।

অনেকেই হয়ত অবগত আছেন ইংরাজি উইকিপিডিয়া সম্পর্কে । এটি পৃথিবীর সবথেকে বড় উইকিপিডিয়া । কিন্তু অনেকে হয়ত জানেন না যে উইকিপিডিয়ার একটি বাংলা সংস্করণও আছে । ইন্টারনেটে বাংলা বিশ্বকোষ বাংলা উইকিপিডিয়া (bn.wikipedia.org) লেখার কাজ চলেছে প্রায় বছর দুই ধরে । এর মধ্যেই সতেরো হাজারেরও বেশি নিবন্ধ তৈরি করা হয়েছে । কিন্তু এই নিবন্ধের অনেকগুলিই রয়েছে প্রাথমিক অবস্থায় । তাই এই নিবন্ধগুলিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য দরকার স্বেচ্ছাসেবকের । এরমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ এগিয়ে এসেছেন । কিন্তু খুবই দুঃখের বিষয় এই যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা নামমাত্র । আমারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের আমাদের রাজ্যে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতি নিয়ে খুবই গর্ব করি বটে কিন্তু বাংলা উইকিপিডিয়ার ব্যাপারে আমরা খুবই পিছিয়ে আছি ।

বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত বিষয় নিয়ে লেখা সম্ভব নয় । বলুন তো কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের উপর নিবন্ধ লিখতে গেলে তো এরকম মানুষকেই প্রয়োজন যাঁর এখানে নিয়মিত যাতায়াত আছে । অথবা কলকাতা বইমেলা নিয়ে লিখতে গেল এরকম মানুষ প্রয়োজন যিনি এখানে ঘুরে বেড়িয়েছেন । আর বাংলা উইকিপিডিয়াতে লিখতে গেলে কোন বিশেষজ্ঞ হবার প্রয়োজন নেই । আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা বা বয়েস কোনটাই বিচারযোগ্য নয় । শুধু ইচ্ছেটাই এখানে বড় কথা । সমস্ত কাজের মধ্যেও আপনি যদি রোজ মাত্র একলাইন করেও বাংলা উইকিপিডিয়ায় লেখেন তাহলেও বছরে ৩৬৫ লাইন লেখা হয় । আর অনেকে যদি অল্প অল্প লেখেন তাহলে এই বিন্দু বিন্দু করেই আমরা সবাই মালিক হতে পারি এক বিরাট বাংলা বিশ্বকোষের । আর যদি আপনার মনে হয় যে কোন বিষয়েই জ্ঞান নেই (যেটা আসলে ভুল) তা হলেও আপনি বাংলা উইকিপিডিয়ায় আপনার অবদান রাখতে পারেন ইংরাজি উইকিপিডিয়া থেকে নিবন্ধ অনুবাদ করে বা বানান এবং ব্যকরনগত সমস্যা দূর করে ।

বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবকেরা যদি বাংলা উইকিপিডিয়ার উন্নতিতে এগিয়ে আসতে পারেন তাহলে আমরাই বা কেন পিছিয়ে থাকব? তাই আসুন আমরা গঠনমূলক এই প্রজেক্টে অংশগ্রহন করে আমাদের ভবিষ্যৎ সমাজের হাতে তুলে দিই বাংলা ভাষায় এক চমৎকার বিশ্বকোষ ।

Saturday, February 09, 2008

ফেডেরিকো ফেলিনির লা স্ট্রাডা

সমাজের কিছু প্রান্তিক মানুষ থাকে যারা কেনই বা জন্মায় আর কেনই বা মরে যায় তা নিয়ে কারোর কোনো মাথাব্যথা থাকে না । তাদের সুখ দুঃখ চিন্তা ভাবনা চাপা পড়ে যায় সময়ের সাথে সাথে । এরকম দুজন প্রান্তিক মানুষের প্রেমকাহিনী নিয়ে ফেলিনির লা স্ট্রাডা ।

ফেলিনির আগের যে সমস্ত ছবি দেখেছিলাম যেমন আই ভিতেলোনি (I vitelloni ), এইট অ্যান্ড হাফ, অ্যমারকর্ড সেগুলি বেশিরভাগই ছিল আত্মজীবনী মূলক । সেদিক থেকে লা স্ট্রাডা বেশ আলাদা ।

ইটালির উপকূলের এক গরীব পরিবারের মেয়ে জেলসোমিনা । তাকে তার মা অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে বেচে দেয় সার্কাসে খেলা দেখানো জ্যামপানোর কাছে । জ্যামপানো খুবই কড়া ধাঁচের বদরাগী লোক । সে একটা মোটরবাইক কাম ভ্যান নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খেলা দেখিয়ে বেড়ায় । জ্যামপানো জেলসোমিনাকে অল্প ট্রেনিং দিয়ে তার খেলা দেখানোর সহকারী হিসাবে লাগায় । জেলসোমিনার আচার আচরন ছিল ঠিক একটা ক্লাউনের মত । ছোট ছোট করে ছাঁটা চুলে তাকে মেয়ে বলেই মনে হত না । আর সিনেমার নায়িকাসুলভ কোন গুনই জেলসোমিনার ছিল না । জ্যামপানোর হাজার দোষ সত্ত্বেও জেলসোমিনার তাকে ভাল লাগতে থাকে ।

জ্যামপানোর আচার আচরন এবং নারীসঙ্গে বিরক্ত হয়ে সে একবার পালিয়ে যায় । কিন্তু জ্যামপানো আবার তাকে ধরে আনে । এর মধ্যেই তাদের সাথে দেখা হয় সার্কাসে ব্যালান্সের খেলা দেখানো 'দ্য ফুল' এর সাথে । দ্য ফুলের সাথে জ্যামপানোর আগে থেকেই শত্রুতা ছিল । একবার ছুরি নিয়ে দ্য ফুলকে মারতে গিয়ে জ্যামপানো পুলিশের হাতে ধরা পড়ে । সেই সময় জেলসোমিনা খুব সহজেই চলে যেতে পারত । কিন্তু সে যায় না । জ্যামপানো ছাড়া পেতেই সে আবার ফিরে যায় ।

এরপর একসময় রাস্তায় আবার জ্যামপানো আর দ্য ফুল মুখোমুখি হয় । দুজনের মারামারিতে দ্য ফুল আহত হয় আর মারা যায় । এই ঘটনায় জেলসোমিনা খুবই আঘাত পায় আর মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে । তাকে এই অবস্থায় দেখে জ্যামপানো নিজের ভুল বুঝতে পারে আর জেলসোমিনাকে একজায়গায় রেখে চলে যায় ।
বেশ কিছু বছর পরে জ্যামপানো জানতে পারে যে এর কিছুদিন পরেই জেলসোমিনা মারা গিয়েছিল । সিনেমার শেষ দৃশ্যে দেখা যায় জ্যামপানোকে রাতের অন্ধকার সমুদ্রের ধারে কাঁদতে ।

অসাধারন এই সিনেমার মূল আকর্ষন হচ্ছে জ্যামপানোর ভূমিকায় অ্যান্টনি কুইন আর জেলসোমিনার ভূমিকায় জিউলিয়েতা ম্যাসিনার অভিনয় । সম্ভবত অ্যান্টনি কুইন তাঁর জীবনের সেরা অভিনয় করেছেন এই ছবিতে । আর জিউলিয়েতা ম্যাসিনার অভিনয় সম্পর্কে বেশি কিছু না বলাই ভালো । মুখের এক্সপ্রেসন বদলাতে তাঁর জুড়ি নেই । চরিত্রের একেবার ভিতরে ঢুকে কিভাবে তাকে জীবন্ত করে তুলতে হয় তার তুলনা বোধহয় আর পাওয়া যাবে না । চরিত্রটির সরলতা, দুঃখ, আনন্দ, কষ্ট সবই তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন অনবদ্য ভাবে ।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে জিউলিয়েতা ম্যাসিনা হলেন ফেলিনির স্ত্রী । তাঁরা এর আগে ও পরে বহু ছবিতে একসাথে কাজ করেছেন । ছবিটির নেপথ্যসঙ্গীতও মনে রাখার মত ।
১৯৫৬ সালে সেরা বিদেশী ছবির জন্য এটি অস্কার পুরষ্কার পেয়েছিল ।