Saturday, May 30, 2009

পাল্টা হাওয়া

ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি দেওয়ালে কাস্তে হাতুড়ি তারা দেওয়া চিহ্ণ এবং লেখা সিপিআইএম প্রার্থীদের বিপুল ভোটে জয়ী করুন । আর তারপর সিপিআইএমই ভোটে জেতে । শুধু জেতে নয় বিপুল ভোটে জেতে । কি করে এভাবে বছরের পর বছর সিপিএম ভোটে জিতে আসে সেটা একটা রহস্য বলে মনে হত । কি লোকসভা কি বিধানসভা সবেতেই সিপিএমের জয়জয়কার । আমার শহরে ছোটবেলায় মনে আছে পৌরসভা কংগ্রেসের দখলে ছিল কিন্তু কিছু বছরের মধ্যেই সিপিএম সেটা দখল করল এবং শুধু দখল করা নয় তাকে তারা পরিণত করল বিরোধী শূন্য পৌরসভাতে । অধিকাংশ স্কুল, কলেজ, লাইব্রেরী, পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ সবই সিপিএম বা বামফ্রন্টের দখলে । দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা বামফ্রন্টের বিকল্প শুধু উন্নততর বামফ্রন্ট ।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের এই সাফল্যের কারন কি ? তারা কি পশ্চিমবঙ্গকে কোনো স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল যে তাতে মানুষ এত খুশি হয়ে দীর্ঘসময় ধরে তাদের বিপুল ভোটে জিতিয়ে ক্ষমতায় রেখে দিয়েছিল । বরং বলা যায় সিপিএমের রাজত্বে পশ্চিমবঙ্গের অবনতি বেশি হয়েছে । বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে পার্টির ক্যাডার বসিয়ে সেগুলির সর্বনাশ করা হয়েছে । যেখানে সেখানে হকার বসিয়ে স্টেশন রাস্তাঘাটকে বাজারে পরিণত করা হয়েছে । প্রোমোটারদের বেআইনী নির্মানে সহযোগিতা করা হয়েছে । পরিবহনকে চূড়ান্ত অব্যবস্হার মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । যেখানে সেখানে গজিয়ে উঠেছে দেশি মদ আর চুল্লুর ঠেক । কথায় কথায় রাস্তা অবরোধ আর বনধ । পশ্চিমবঙ্গ এমন একটি জায়গা যেখানে সরকারী মদতে বনধ পালিত হয় । প্রশাসন সব দেখেও কানা মামা হয়ে বসে থাকে। যেসমস্ত সৎ পুলিশ আর সরকারী অফিসার কিছু কাজ করতে চেয়েছেন তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ।

১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসার পরে বামফ্রন্ট গ্রামাঞ্চলে কিছু কাজ করেছিল । কংগ্রেস ছিল বড়লোকদের দল । সেই সময়ে জমিদারদের কাছ থেকে জমি নিয়ে তারা সাধারন কৃষকদের ভিতরে কিছু বিলিবন্দোবস্ত করেছিল। এছাড়াও গ্রামের উন্নতিও তারা কিছুকিছু করেছিল বলে মনে করা হয় । এই অবস্থা ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত চলে । ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ায় প্রবল ইন্দিরা হাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ১৬টি লোকসভা আসনে বিজয়ী হয় । সেই সময়েই সিপিএমের টনক নড়ে । তারা বুঝতে পারে যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের পক্ষে ক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব নাও হতে পারে । তাই তারা নির্বাচন প্রক্রিয়াতে জল মেশাতে শুরু করে । তাদের জল মেশানো শুরুর হয় ভোটার তালিকা তৈরি থেকে । ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটার ঢোকানো হয় । এছাড়া যারা সিপিএম বিরোধী তাদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া শুরু হয় । এরপর মানুষকে ভয় দেখিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসতে না দেওয়া, ভোটের সময়ে বুথজ্যামকরা এবং পুলিশ প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা । তার উপরে সর্বোপরি ছিল ফলস ভোট এবং ছাপ্পা ভোট দেওয়া । যে সমস্ত মানুষেরা বাইরে থাকার জন্য ভোট দিতে আসতে পারবেন না তাঁদের তালিকা তৈরি করে তাদের ভোট দিয়ে দেওয়া হত । বিভিন্ন বয়েসী ক্যাডাররা যাদের মধ্যে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই ছিল তারা এই কাজগুলি পেশাদারী দক্ষতায় সম্পন্ন করত । অনেকেই ভোট দিতে গিয়ে ফিরে আসতেন । তাঁদের বলা হত ‘ভোট পড়ে গেছে’ । এবং এখানেই শেষ নয় ভোট গণনার সময়েও তারা নানা রকম কারচুপি করতে থাকে ।

যত দূরের গ্রাম হবে এই জালিয়াতির পরিমানও তত বেশি হবে । প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে দেখা যেত ভোট পড়ার হার সবচেয়ে বেশী । কারন এখানে ছাপ্পা ভোটের পরিমান সবচেয়ে বেশি হত । তাই কলকাতার কিছু কিছু জায়গায় সিপিএম ভোটে হারলেও জেলাগুলিতে তাদের জয়জয়কার সবসময়েই অক্ষুন্ন থাকত । তবে উত্তরবঙ্গের কিছু কিছু জায়গা যেমন মালদায় কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি থাকায় সেখানে কংগ্রেস বিজয়ী হত ।

অবস্থা দেখে মনে হত সিপিএমকে হারানো মনে হয় সম্ভব নয় । তার উপরে বিরোধীরা নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠীদন্দ্ব নিয়েই ব্যস্ত । ফলে সিপিএমের পোয়াবারো । এত কিছুর পরেও কিছু সাধারন মানুষের সমর্থন তাদের সাথে ছিল সে কথা স্বীকার করতেই হবে । না হলে এতবড় সংগঠন চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব হত না । কিন্তু বহু বছর ক্ষমতায় দখলকরে রাখার পর তারা নৈতিক অধ:পতনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছেছিল ।

জ্যোতি বসু পশ্চিমবঙ্গের সর্বনাশ করলেও তিনি দক্ষ রাজনীতিবিদ হওয়ার ফলে নানা ভাবে বহু সমস্যা পাশ কাটিয়ে গিয়েছিলেন । অন্তত তাঁর রাজনৈতিক বুদ্ধির অভাব ছিল না । আর প্রশাসনকে দক্ষভাবে তিনি চালাতেও জানতেন । কিন্তু তাঁর অবসর নেওয়ার পর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে সিপিএম নানা বিষয়ে নাস্তানাবুদ হতে থাকে । রিজওয়ানুর হত্যা মামলা, সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রাম বিষয়ে সরকার জোর ধাক্কা খায় । তাদের ধারনা ছিল মেকি শিল্পায়নের টোপ দেখিয়ে রাজ্যবাসীকে তারা বোকা বানাবে । কিন্তু যে রাজ্যে পঞ্চাশ হাজারের উপর ছোটবড় কারখানা বন্ধ সেখানে একটি দুটি নতুন কারখানার কলা দেখিয়ে যে নির্বাচনী বৈতরনী পার করা যাবে না তা তারা বুঝতে পারেনি ।
২০০৯ এর লোকসভা নির্বাচনে অনেকের ধারনা ছিল জমি অধিগ্রহন বির্তকের ফলে গ্রামাঞ্চলে বামফ্রন্টের জনপ্রিয়তা কমেছে তাই হয়ত গ্রামের তাদের ফল খারাপ হবে কিন্তু শহরাঞ্চলের মানুষ যাঁদের কৃষিজমির উপর নির্ভরশীলতা কম তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসের মা মাটি মানুষের আন্দোলনকে প্রত্যাখ্যান করবেন । কিন্তু লোকসভার ভোটের ফল বেরোতে দেখা গেল সম্পূর্ণ অন্য গল্প । গ্রামাঞ্চলে তৃণমূলের ফল তো ভালোই আর শহরাঞ্চলে শুধু তাদেরই জয়জয়কার । কলকাতা এবং তার আশেপাশের প্রায় সমস্ত জায়গায় সিপিএম ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেছে । সিপিএম পার্টি তার জন্মলগ্ন থেকে এত বড় ধাক্কা আর খায়নি । বহু আসনেই তারা বিপুল ভোটে পরাজিত । আর যে আসনগুলিতে তারা জিতেছে সেখানেও তাদের মার্জিন ব্যপকভাবে কমেছে । আর তারা যদি ভোটে জালিয়াতি না করত তাহলে তাদের ফল যে আরো খারাপ হত তাতে কোন সন্দেহ নেই ।

এবারের ভোটে জেতার জন্য সিপিএমের নেতারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন । পাবলিসিটির প্লাবনে ভেসে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ । বড় বড় ফ্লেক্স হোর্ডিং-এ ঢেকে দেওয়া হয়েছিল রাস্তাঘাট । উত্তর কলকাতা কেন্দ্রের প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের জয় হো হোর্ডিংগুলি সিপিএম পার্টি থেকেই সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল । কারন এখানে দল থেকে প্রার্থীকে বড় করে দেখানো হয়েছিল । কিন্তু পার্টির আপত্তি সত্ত্বেও হোর্ডিংগুলি খোলা হয়নি । এছাড়াও মহম্মদ সেলিমকে হনুমান মন্দিরে গিয়ে চরণমৃত সেবন করতেও দেখা যায় । তখনই বোঝা গিয়েছিল যে কমিউনিস্ট নাস্তিকদের তাদের আদর্শের প্রতি আর কোন বিশ্বাস নেই । যেকোন উপায়ে তাদের ক্ষমতা দখল করতেই হবে ।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যদি কোন পার্টি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকে (আমার মতে দশ বছর বা তার বেশি) তাহলে তাদের মধ্যে দুর্নীতি ঢুকতে বাধ্য । তাই সিপিএমের এই পরিণতি স্বাভাবিক । দুবছর পরে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার ভোট । সেখানে হবে চূড়ান্ত পরীক্ষা । সিপিএম এবং বামফ্রন্টের অবস্থা যতই খারাপ হোক তারা অত সহজে যে হার মানবে না তা পরিষ্কার । আর বিরোধীদের পালে এখন হাওয়া । বত্রিশ বছরের মধ্যে এই প্রথম তারা বিধানসভায় জেতার স্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করেছেন। আর অনেকেই স্বীকার করছেন যে সেটা সম্ভব । এটা অনেকটাই নির্ভর করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর । রাজনৈতিক অদূরদর্শীতার জন্য তিনি খ্যাত । কিন্তু এখন তিনিও অনেক পরিণত । কেন্দ্রীয় সরকারের খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তিনি রয়েছেন । এই মূহূর্তে তাঁর এবং তাঁর দলের ভালো কাজ তাঁকে আরো অনেকটাই এগিয়ে দিতে পারে ।

20 comments:

Mon.Esprit said...

bah! chomotkar likhechhen to :)

coffeehouseraddablog said...

চমৎকার লেখা। আপনি কফি হাউসের আড্ডা ব্লগে লিখতে পারেন তো ...ঘুরে যান একবার সাইট থেকে - coffeehouseradda.com

Unknown said...

Find best deals on Flight Tickets, Hotel Bookings, Honeymoon Holiday Packages, Bus and Train / Railway reservations for your India in Bengali language
http://bairedure.blogspot.com/
Please visit & send your very important comments.

Islam andDajjal said...

DAJJAL HAS BEEN IDENTIFIED!!
DO YOU KNOW THE DAJJAL (THE ANTI-CHRIST), THE ONE-EYED GIANT
PROPHECISED BY THE MESSENGER OF ALLAH HAS ALREADY BEEN IN
EXISTENCE FOR THE PAST 473 YEARS & HAS BEEN IDENTIFIED? YOU MAY
BE AMAZED TO KNOW THAT IT IS COMPLETELY DIFFERENT FROM WHAT
IT IS THOUGHT TO BE TODAY. TO SEE WHAT IT ACTUALLY IS – VISIT THE
WEBSITE www.hezbuttawheed.com AND READ THE BOOK ‘DAJJAL? THE
JUDEO-CHRISTIAN CIVILIZATION!’ AND WATCH THE DOCUMENTARY FILM
OF “DAJJAL? THE JUDEO-CHRISTIAN CIVILIZATION!”

Santi said...

wow, artinya apa ya???? keren banget!

Hipotecas con ASNEF o RAI said...

Hello, i read your blog occasionally and i own a similar one and i was just wondering if you get a lot of spam remarks? If so how do you reduce it, any plugin or anything you can recommend? I get so much lately it’s driving me crazy so any assistance is very much appreciated.

Habib said...
This comment has been removed by the author.
Unknown said...

Very Nice Post  
nacket.com

7toursbd said...

nice post, carry on with more post, i will book mark the page.

usha.digitalinfo said...
This comment has been removed by the author.
usha.digitalinfo said...
This comment has been removed by the author.
usha.digitalinfo said...
This comment has been removed by the author.
usha.digitalinfo said...
This comment has been removed by the author.
usha.digitalinfo said...
This comment has been removed by the author.
Anonymous said...

It is a very good post. Thanks for sharing a good post.
By
S Mukherjee

Anonymous said...

It is a very good post. Thanks for sharing a good post.
By
S Mukherjee

কালের সময় said...

fine

Unknown said...

ধন্যবাদ, অনেক কিছু জানার ছিল। আমরা অনেকে অনেক কিছুই জানি না। আপনা এই পোস্টটি দ্বারা অনেকে কিছু তথ্য জানতে পারবে।আমি আপনাকে কোন প্রকার অফার করছি না। ছোট একটি তথ্য আপনার উপকারে আসতে পারে rental Plot

limonhasan said...

আমাদের বেঁচে থাকার মাধ্যম হচ্ছে খাবার। বেজাল মুক্ত খাবার খোঁজা খুব কষ্টের। সবার কষ্ট কিছুটা কম করার জন্য freshfishbd নিয়ে আসলো ফ্রমালিন মুক্ত মাছ, তাজা সামুদ্রিক মাছ, গলদা চিংড়ি, চিংড়ি, তাজা জল-মাছ, কাঁকড়া, ইত্যাদি দরণের মাছ খোঁজ পেতে পারেন। তাহলে ভিজিট করুন freshfishbd.

Unknown said...

This blog is just awesome ......
you guys can visit this website www.zettabytebd.com