বাজে গল্প
আজ থেকে বেশ কিছু বছর আগে এক ভদ্রলোক ব্যবসার কারনে চিনে গিয়েছিলেন । সেখানে বেশ কিছুদিন থাকার ফলে তিনি চিনা ভাষা ভালোই বলতে ও বুঝতে পারতেন কিন্তু পড়তে বা লিখতে পারতেন না ।
চিনে সেই ভদ্রলোক এক মাঝারি শহরে একটা বাড়ির একতলা ভাড়া নিয়ে কিছুদিন ছিলেন । সেই বাড়ির পাশের বাড়িতে এক চিনা তরুণী তার বাবা মার সঙ্গে ভাড়া থাকত ।
পাশাপাশি থাকতে থাকতে সেই সুন্দরী তরুণীর সঙ্গে ভদ্রলোকের বেশ ভালোই ভাব জমে উঠল । ভদ্রলোক ভাবতে লাগলেন এখানেই এই মেয়েটিকে বিয়ে করে থেকে গেলে ভালোই হয় ।
ক্রমে দিন কাটতে লাগল । এরপর ভদ্রলোক একবার অল্প কিছুদিনের জন্য দেশে ফিরলেন । তারপর যখন আবার চিনে ফিরে গেলেন তখন দেখলেন যে সেই তরুণী তার বাবা মার সঙ্গে ঘর ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও চলে গেছে । ভদ্রলোক ব্যস্ত হয়ে মেয়েটির অনেক খোঁজ খবর করলেন । কিন্তু কেউই তাদের কোন খবর বলতে পারল না ।
কিছুদিন বাদে ভদ্রলোকের কাছে একটা চিঠি এসে পৌছাল । আগেই বলেছি যে ভদ্রলোক চিনা ভাষা কিছুই পড়তে পারতেন না । কিন্তু তিনি বুঝতে পারলেন যে এই চিঠিটা সেই মেয়েটাই তাকে লিখেছে । কারণ তিনি এই রকমের খাম আর কাগজ মেয়েটির ঘরে দেখেছিলেন আর মেয়েটি যে সেন্ট ব্যবহার করত তার গন্ধও চিঠিটা থেকে পাওয়া যাচ্ছিল । ভদ্রলোক বেশ আশান্বিত হয়ে উঠলেন । যাক এবার খবর পাওয়া যাবে খালি চিঠিটা কাউকে দিয়ে পড়াতে হবে ।
ভদ্রলোক এবার তাঁর বাড়িওলার কাছে গেলেন । বাড়িওয়ালা হলেন এক মধ্যবয়স্ক মোটা আর রাগী ভদ্রমহিলা । ভদ্রলোক চিঠিটা তাঁর হাতে দিয়ে খুব বিনীত ভাবে তাঁকে অনুরোধ করলেন চিঠিটা পড়ে দেবার জন্য ।
ভদ্রমহিলা চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়তে আরম্ভ করলেন । কিন্তু একি পড়বার আগেই তাঁর মুখ কুঁচকে উঠল । তিনি হঠাৎ বিরাট চিৎকার আরম্ভ করলেন । যার বাংলা করলে হয় বজ্জাত ছোকরা তুই আমার কাছে এই চিঠি পড়াতে এনেছিস । বেরো শিগ্গির আমার বাড়ি থেকে ।
ভদ্রলোক কোনভাবেই বুঝিয়ে তাঁকে শান্ত করতে পারলেন না । ভদ্রমহিলা কোনভাবেই শান্ত হলেন না । কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তিনি তাঁকে বাড়ি থেকে বার করে দিলেন ।
ভদ্রলোককে মালপত্র নিয়ে অগত্যা একটা হোস্টেলে আশ্রয় নিতে হল ।
হোস্টেলে থিতু হয়ে তিনি একজন বোর্ডারকে চিঠিটা দেখাতেই সেও ভদ্রলোকের উপর ক্ষেপে উঠল । বলা যায় কেবল মারতে বাকি রাখল । ভদ্রলোক কিছুই বুঝতে পারলেন না কি হচ্ছে ।
দিন কয়েক বাদে ভদ্রলোক তাঁর একজন খদ্দের কে চিঠিটা দেখালেন । এবারেও একই কান্ড । সেই খদ্দের তো চটে উঠলই তক্ষুনি ভদ্রলোকের সাথে সমস্ত ব্যবসায়িক লেনদেন বন্ধ করে দিল । আর তার অফিস থেকে ভদ্রলোককে চরম অপমান করে বের করে দিল । আরো হুমকি দিল যে এবার থেকে যদি তাকে ত্রিসীমানায় দেখা যায় তবে পুলিশে দেবে ।
বার বার তিনবার নাস্তানাবুদ হয়ে ভদ্রলোক ঠিক করলেন না এই চিঠি আর কাউকে দেখানো যাবে না । চিন দেশের আইন খুব কড়া কে জানে এবার হয়ত জেলে পুরে ফাঁসিই দিয়ে দেবে ।
তাই ভদ্রলোক ঠিক করলেন যে তিনি দেশে ফিরে আসবেন মেয়েটির সঙ্গে দেখা করার আশা ছেড়ে দিয়ে । আর মেয়েটি নিশ্চই ভালো কথা কিছু লেখেনি চিঠিতে যা দেখে সবাই চটে উঠছে ।
ভদ্রলোক চিন থেকে জাহাজ পথে দেশে ফিরতে লাগলেন । জাহাজে তিনি খুবই বিমর্ষ মুখে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন । তাই দেখে এক ফুর্তিবাজ আমেরিকান ছোকরা তাকে জিজ্ঞাসা করল কিহে তোমার ব্যাপারটা কি যখনই দেখি তখনই মুখ হাঁড়ি ।
ভদ্রলোক তখন তাকে ব্যাপারটা খুলে বললেন । ছোকরাটি বলল দেখি তো তোমার চিঠিটা । আমি চিনেতেই বড় হয়েছি । তাই আমি ভালো মতই চিনা ভাষা পড়তে পারি । ভদ্রলোক বললেন দেখ যেই এই চিঠি পড়েছে সেই আমার উপর ক্ষেপে উঠে মারতে বাকি রেখেছে । তুমি হয়তো এই চিঠি পড়ার পর আমাকে হয়তো জাহাজ থেকে লাথি মেরে ফেলে দেবে ।
ছোকরাটি হেসে বলল – না না তোমার ভয় পাবার কিছু নেই । চিঠিতে যতই খারাপ কথা লেখা থাক না কেন আমি তোমার উপর রাগ করবো না । তুমি তো আর এই চিঠিটা লেখোনি ।
ভদ্রলোক তখন আশ্বস্ত হয়ে চিঠিটা পকেট থেকে বের করে ছেলেটির হাতে দিলেন ।
ছেলেটি চিঠিটা নিয়ে ডেকের রেলিঙের উপর ঝুঁকে পড়তে যাবে এমন সময় একটা দমকা হাওয়া এসে চিঠিটাকে ছেলেটির হাত থেকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে মাঝসমুদ্রে ফেলল ।
ফলে ভদ্রলোকের আর কোনদিনই জানা হয়নি যে চিঠিটাতে কি লেখা ছিল ।