সিঙ্গুরের পর নন্দীগ্রাম...পশ্চিমবাংলা কোন পথে
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে যখন বামফ্রন্ট গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিল তখন তার মধ্যে একটা অশনি সংকেত লুকিয়ে ছিল । নির্বাচনে বিপুল জয় সিপিএমের নেতাদের মধ্যে একটা ধারনা এনে দিয়েছে যে তাঁরা পশ্চিমবাংলায় এখন যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন । তারই ফলস্বরূপ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে গ্রামবাসীদের যেকোন উপায়ে উৎখাত করে শিল্পস্থাপন করবার জন্য তাঁরা উঠে পড়ে লেগেছেন । এরজন্য কখনও পুলিশ আবার কখনও বা সিপিএমের ক্যাডার বাহিনীকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে গ্রামবাসীদের উপরে । আর বার বার বলা হচ্ছে যে এই সব গণ্ডোগোল নাকি বহিরাগতদের কাজ ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে বহিরাগত কারা ? একজন পশ্চিমবঙ্গ বাসী কি পশ্চিমবঙ্গের ভিতরেই বহিরাগত হতে পারেন । অথবা একজন ভারতবাসী ভারতবর্ষের ভিতরে । সুতরাং একজন পশ্চিমবঙ্গবাসী অথবা ভারতের যেকোন জায়গার লোক যদি এই সব কৃষকদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান তবে তাঁদের বহিরাগত বলা হবে কেন ? আর মাত্র কয়েকজন বহিরাগতদের পক্ষে কি সম্ভব গ্রামবাসীদের প্রভাবিত করা । আর যদি তাঁরা বহিরাগতই হবেন তবে গ্রামবাসীরা এই বহিরাগতদের কথা শুনবেন কেন ?
কাল রাতে নন্দীগ্রামে বিশাল সংঘর্ষ হয়েছে এবং তাতে ছয় সাত জনের এখনও অবধি মৃত্যু হয়েছে । এবং এই সংঘর্ষের সময়ে কোন পুলিশের দেখা মেলেনি । অথচ বেশ কয়েকদিন ধরেই নন্দীগ্রাম উত্তাল এবং খবরের শিরোনামে সুতরাং সেখানে প্রশাসনের আগে থেকেই সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিল । তার মানে সিপিএমের গুন্ডাবাহিনী গ্রাম আক্রমন যাতে সুষ্ঠুভাবে করতে পারে সেজন্যই পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভাবে বসে ছিল । এখন সাংসদ লক্ষণ শেঠের প্ল্যান হল গ্রাম আক্রমন করে গ্রামের পুরুষদের গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিয়ে গ্রামগুলোকে দখল করে নেওয়া । যা সিপিএম কেশপুরে করে এসেছে বহুদিন ধরে ।
কিন্তু গ্রামের মানুষ এত সহজে ছেড়ে দেবে না । কমিউনিস্টদের অনেক বুড়ো নেতা এখনও বিশ্বাস করেন যে দেশে বিপ্লব হবে । এবার মনে হচ্ছে যে পশ্চিমবঙ্গে সত্যিই বিপ্লব আসতে চলেছে খালি একটাই পার্থক্য যে বিপ্লবটা আসছে তাঁদের বিরুদ্ধেই । সিপিএমের পতাকায় আর কাস্তে হাতুড়ি রাখার কোন মানে হয় না । তাঁদের জঙ্গী ট্রেড ইউনিয়ন গুলো অনেক আগেই হাতুড়ির ঘা দিয়ে বহু শিল্প ধ্বংস করেছে । এবং এখন মেকি শিল্পায়নের নামে কৃষির উপরেরও আঘাত হানছে ।
শিল্পায়নের প্রশ্নে যদি পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রথম থেকে স্বচ্ছ নীতি গ্রহন করত তবে হয়ত এই সমস্যা তৈরি হত না । গ্রামবাসীদের বলা হচ্ছে চাকরি দেওয়া হবে টাকা পয়সা দেওয়া হবে । কিন্তু আমাদের দেশে যেখানে সমস্ত কাজেই আঠারো মাসে বছর, সেখানে এই সুযোগ সুবিধা না পাওয়ার সম্ভাবনা সব সময়েই থেকে যায় । জমি নিয়ে নেওয়ার পর হয়ত দেখা গেল চাষীরা টাকা পয়সা সুযোগ সুবিধা সব পেলেন না । তাই গ্রামের মানুষদের আগে অন্য জায়গায় ঠিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে তারপরেই তাঁদের জমি অধিগ্রহন করতে হবে । এব্যাপারে তাড়াহুড়ো করলে চাষীরা কখনই ছেড়ে কথা কইবে না ।
No comments:
Post a Comment