Sunday, May 13, 2007

ফসিল্‌স



বাংলা ব্যান্ড ফসিল্‌সের গান প্রথম কবে শুনেছিলাম জানি না । বোধহয় কোন এমপি৩ সিডিতে বা টিভিতে । ফসিল্‌সের গান প্রথম যখন শুনেছিলাম তখন আমার সবথেকে প্রিয় ব্যান্ড ছিল পরশপাথর এবং চন্দ্রবিন্দু।

টিভিতে একটি স্টেজ পারফরম্যান্সের অনুষ্ঠানে আমি প্রথম ফসিল্‌সকে পারফর্ম করতে দেখি । বাংলা ব্যান্ডের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগগুলি তোলা হয় তার প্রতিটিই প্রায় ফসিল্‌সের গানের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছিল । অদ্ভুত সাজপোশাক আর চুল স্টেজের উপর চুল ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে গান যা প্রায়ই বেসুরো আর যার কোনো মাথামুণ্ডু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না । অর্ধেক কথা তো পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছিল না । সেই সময়ের সেরা দুই বাংলা ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দু ও ভূমির গায়কদের আচার আচরন খুবই ছিল খুবই সাধারন আর তাদের গানও ছিল অনেকটাই মূলধারার গানের কাছাকাছি ।

কিন্তু পরে যখন আমি ফসিল্‌সের গান সিডিতে আর রেডিওতে শুনেছিলাম তখন বেশ ভালোই লেগেছিল । ফসিল্‌সের গানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা সমাজের শুধুমাত্র অন্ধকার দিকগুলোকে নিয়েই গান করে । একারনে তাদের ব্যান্ডমেম্বাররাও কেবল কালো পোষাকই পরে ।

প্রথমদিকে তাদের এই রকম নেগেটিভ গানের শ্রোতা খুবই কম ছিল কিন্তু আস্তে আস্তে তারাও পায়ের নিচে জমি খুঁজে পায় । ফসিল্‌সের প্রথম অ্যালবাম ফসিল্‌স এর বেশিরভাগ গানই আমার ভালো লেগেছিল । প্রথম অ্যালবামের একলা ঘর, হাসনুহানা, নেমেসিস, মিলেনিয়াম প্রভৃতি গান খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল । তার পরে ফসিল্‌সের গানের পিকচারাইজেশনও হয়েছে বাইসাইকেল চোর তার মধ্যে অন্যতম ।

পুরোপুরি রক ব্যান্ড বলতে যা বোঝায় ফসিল্‌স ঠিক তাই । বাংলাতেও যে হাই ভোল্টেজ রক করা যায় তা তারাই দেখিয়েছে । কিছু কিছু কথা আছে যেগুলো নরম ভাবে বললে কোন কাজ হয় না । কিছু কিছু কথা আছে যা মানুষের মগজে ঢোকাতে গেলে ধাক্কা দিতে হয় । ফসিল্‌স ঠিক তাই করবার চেষ্টা করেছে । আর ফসিল্‌সের লিরিকও বেশ আধুনিক এবং রক গানের জন্য যেরকম হওয়া উচিত সেরকম । তাদের একটি বিখ্যাত গান অ্যাসিড । তার প্রথম কয়েকটি লাইন হল :-

বুকে বুকে জ্বালা ধরা তীব্র অসুখে

নেপথ্যে প্রেম আর ঘৃণা সম্মুখে

আত্মমৈথুনের ঘৃণ্য শহরে

ফিরতে চাইনা, তবু ফিরি বারে বারে

যাতে প্রেমহীন রূপগুলো যায় চুকে বুকে

পথ্য অ্যাক্‌টাই, অ্যাসিড ছোঁড়ো মুখে

অন্যের মুখে নয়, আয়নার মুখে

পথ্য অ্যাক্‌টাই, অ্যাসিড ছোঁড়ো মুখে

পথ্য অ্যাক্‌টাই অ্যাসিড

ফসিল্‌স মূলত দাঁড়িয়ে আছে তাদের ব্যান্ডলিডার রূপম ইসলামের উপর । রূপম তাদের লিড গায়ক এবং গানের কথাগুলিও তার লেখা । রূপমের জনপ্রিয়তা এখন প্রায় আকাশছোঁয়া । অরকুটে রূপম এবং ফসিল্‌সের কমিউনিটির সদস্য সংখ্যাও প্রচুর । টিভির বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রূপম এখন পরিচিত মুখ ।

Saturday, May 12, 2007

সুরকার প্রীতমের ‘কেরামতি’

হিন্দি সিনেমার সুরকাররা বরাবরই অন্যের সুর কপি করে নিজের বলে চালিয়েছেন । এই ঐতিহ্য বহুকালের । শঙ্কর জয়কিষেন থেকে শুরু করে রাহুলদেব বর্মন, বাপী লাহিড়ি, অনু মালিক এবং আরো অনেক সুরকাররা এই কাজ করেছেন । কিন্তু কোন সুরকারের যদি প্রায় সব গানই চুরি করা হয় তাহলে তাকে কি সুরকার বলা যেতে পারে ? শঙ্কর জয়কিষেন রাহুলদেব বর্মন বা বাপী লাহিড়ির নিজস্ব ভালো সুরের সংখ্যা কিন্তু কম নয় ।

চমকে উঠতে হয় বর্তমানের হট মিউজিক ডাইরেক্টর বাঙালির ছেলে প্রীতমের উপর লেখা উইকিপিডিয়ার প্রবন্ধটি দেখে । সেখানে একটি বিশাল লিস্ট আছে যে প্রীতম কোন কোন গান কোথা থেকে চুরি করেছেন । সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে প্রীতমের প্রায় সব হিট গানই কোথাও না কোথাও থেকে ঝাড়া ।

যেমন ধরা যাক প্রীতমের একটি অত্যন্ত সফল এবং হিট সিনেমা গ্যাংস্টার । এই সিনেমার চারটি গানই কোথাও না কোথাও থেকে কপি করা । গ্যাংস্টারের ইয়া আলি গানটা কপি করা হয়েছে আরবিক ব্যান্ড গিটারার ইয়া ঘালি থেকে । লমহা লমহা নেওয়া হয়েছে পাকিস্তানি গায়ক ওয়ারিস বেগের কাল সব দেখা থেকে । তু হি মেরি সব হ্যায় নেওয়া হয়েছে অলিভার শান্তি অ্যান্ড ফ্রেন্ডসের স্যাক্রাল নির্ভানা থেকে । আর গ্যাংস্টারের সবচেয়ে হিট গান ভিগি ভিগি রাতেঁ কপি করা হয়েছে গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের সুরারোপিত পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে থেকে ।

এছাড়াও ওহ্ লমহে সিনেমার অন্যতম হিট গান কেয়া মুঝে পেয়ার হ্যায়, ধুম সিনেমার ধুম মাচালে এবং সিকদুম সবই কপি করা গান ।

এছাড়াও লিস্ট থেকে দেখা যাচ্ছে গরম মশালার তিনটে এক খিলাড়ি এক হাসিনার তিনটে চকলেটের তিনটে এবং কেয়া লাভ স্টোরি হ্যায় এর তিনটে গান প্রীতম কপি করেছেন । অর্থাৎ প্রীতমের জনপ্রিয়তা যত বাড়ছে তত তাঁর সুর চুরির প্রবণতা বাড়ছে । তিনি সুর করছেন মাত্র কয়েক বছর । এখনই তাঁর নতুন সুর তৈরির ক্ষমতা তলানিতে এসে ঠেকেছে ।

যেখানে আজকে হিন্দি সিনেমাকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সেখানে সুর চুরিকে আন্তর্জাতিক দর্শকরা কিভাবে নেবেন সেটাই দেখার । অথচ হিন্দি সিনেমার গানের জনপ্রিয়তা কিন্তু কম নয় ।

এই মূহুর্তে আইএমডিবির টপ ফিফটি মিউজিক্যাল মুভির লিস্টে এক নম্বরে নাম আছে লাগে রহো মুন্নাভাই । এছাড়া এই লিস্টে নাম আছে লগান এবং দিল চাহতা হ্যায় এর । সেখানে নতুন কিছু সুরের চেষ্টা না করে কপি-পেস্ট সুরকার প্রীতমের মত সুরকাররা কতদিন টেঁকেন সেটাই দেখার ।

Saturday, May 05, 2007

একজন হিন্দু হিসাবে কেন আমি গর্বিত ।

ভারতবর্ষে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষিত হিন্দুদের অবস্থাটা কিছুটা যেন কনফিউজড । আধুনিক প্রগতিশীল বাঙালি হিন্দুরা প্রায়ই নিজেদের হিন্দু বলে পরিচয় দিতে চান না বা দিতে লজ্জা পান । তাঁদের অনেকরই বক্তব্য যে তাঁরা কোন ধর্মে বিশ্বাস করেন না এবং বিশ্বাস করতে চানও না । তাঁরা অনেকই বলবেন যে তাঁরা ভারতীয় হিসাবে গর্বিত বা বাঙালি হিসাবে গর্বিত কিন্তু তাঁরা কখনই বলবেন না যে তাঁরা হিন্দু হিসাবে গর্বিত ।

অদ্ভুত ব্যাপার হল আমি যদি নিজেকে একজন হিন্দু বলে পরিচয় দিই তাহলে যেন আমি যেন একজন সাম্প্রদায়িক অথবা বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, এস এস এর বা বজরং দলের দালাল । আর আমি যদি বলি যে আমি কোন ধর্মে বিশ্বাস করি না তাহলেই আমি একজন প্রগতিশীল এবং আধুনিক মানুষ ।

অথচ ভারতে যদি কোন মুসলমান নিজেকে মুসলমান হিসাবে পরিচয় দেন অথবা একজন খ্রীস্টান নিজেকে খ্রীস্টান হিসাবে পরিচয় দেন তাহলে ধরে নেওয়া হয় সেটাই স্বাভাবিক ব্যাপার । এবং কেউই তাঁদের কোন রাজনৈতিক বা অন্য কোন পরিচয় খুঁজতে যায় না । কিন্তু একজন হিন্দু যদি নিজেকে হিন্দু হিসাবে পরিচয় দেন তাহলেই যেন তার যত দোষ ।

অথচ এই প্রগতিশীল হিন্দুরাই জাতপাত দেখে ছেলেমেয়ের বিয়ে দেন অথবা তাঁদের যদি শিডিউল কাস্ট বা শিডিউল ট্রাইব সার্টিফিকেট থাকে তবে তার উপযোগিতা নিতে তাঁরা পিছপা হন না । এবং কথায় কথায় আফসোস করেন যে কেন শুধু মুসলমানদেরই চারটি বিয়ে করার অধিকার থাকবে ।

এই প্রগতিশীল মানুষদের অনেকরই বক্তব্য হিন্দু ধর্ম বলে কিছু হয় না, যারা আগে সিন্ধুনদের তীরে বসবাস করত তারাই নিজেদের হিন্দু বলে পরিচয় দিত । হিন্দুধর্মের কোন প্রতিষ্ঠাতা নেই, এতে তেত্রিশ কোটি দেবদেবী ইত্যাদি ।

কিন্তু তাঁরা ভুলে যান যে হিন্দুধর্ম কখনও কোন মানুষের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয় নি। যুদ্ধজয় করে কোন দেশের মানুষকে বাধ্য করা হয় নি একে গ্রহন করার জন্য । অথবা সামান্য কিছু খাবারের লোভ দেখিয়ে গরীব মানুষদের রূপান্তরিত করা হয়নি এই ধর্মে ।

বরং হিন্দুরাই অন্য ধর্মের আচার আচরন এবং দেবদেবীকে নিজেদের বলে গ্রহন করেছে । যেমন প্রাচীন বৈদিক আর্যরা আস্তে আস্তে গ্রহন করেছিল শিব ও শক্তিকে । আবার পরবর্তীকালে বুদ্ধকে স্বীকৃতি দিয়েছিল বিষ্ণুর অবতার বলে ।

হ্যাঁ এটা অবশ্যই মেনে নেওয়া দরকার যে হিন্দুধর্মের ভিতরেও কালক্রমে নানারকমের কুসংস্কার প্রবেশ করেছিল । কিন্তু সেগুলিও ছিল কিছু মানুষের ষড়যন্ত্র । যেমন সতীদাহ প্রথা । শোনা যায় বেদের কিছু শ্লোকের ভুল অর্থকরে সতীদাহ প্রথা চালু করা হয়েছিল । এর আসল উদ্দেশ্য ছিল মহিলাদের সম্পত্তি দখল করা । আবার পরবর্তীকালে বিদ্যাসাগর প্রমান করেছিলেন যে বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসম্মত । আর জাতিভেদ প্রথার মূল লক্ষ্য ছিল সমাজে কে কি কাজ করবে তা ঠিক করে দেওয়া । সমাজের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা এর উদ্দেশ্য ছিল না । আর যদি এটা বৈষম্যই সৃষ্টি করে থাকে তাহলে এখনও কেন ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার নানা রকমের সংরক্ষন চালু রেখে জাতিভেদ প্রথাকে জিইয়ে রেখে দিয়েছেন ?

সমস্ত মানুষই যে এক তা প্রমান করার চেষ্টা হিন্দুদের মধ্যে থেকে বারবারই হয়েছে । চৈতন্যদেব এবং বিবেকানন্দই তার প্রমাণ ।

কমিউনিস্টরা কোন ধর্মে বিশ্বাস করেন না । কিন্তু তাঁরাও স্বীকার করেন চৈতন্যদেব এবং বিবেকানন্দের দর্শনকে ।

বিবেকানন্দের লেখায় পড়েছি যে হিন্দুধর্ম শ্রেষ্ঠ কারন একমাত্র এই ধর্মই শেখায় অন্য ধর্মকে শ্রদ্ধা করতে । রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন যে যত মত তত পথ । অর্থাৎ তিনিও অন্য ধর্মের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন । এমনকি এরকমও শোনা যায় যে তিনি মুসলমান হয়েও সাধনা করেছিলেন ।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের উপরেও হিন্দু দর্শনের প্রচুর প্রভাব ছিল । অনেক বিপ্লবীই ইংরেজদের বিরূদ্ধে মনোবল সংগ্রহ করতেন গীতা পড়ে ।

অতএব জন্মসূত্রে আমি হিন্দু এবং আমি যদি আমার এই পরিচয় সম্পর্কে গর্ববোধ করি তাতে দোষের কিছু নেই ।

বাংলার গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে

বাংলার গা থেকে রক্ত

গড়িয়ে পড়েছে


জ য় গো স্বা মী


বাংলার গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে,

রক্ত

গড়িয়ে পড়েছে...

কেউ ছুটে গেল খালের ওদিকে

বুক ফাটা গলায় কার মা ডাকল : ‘রবি রে...’

উত্তরের পরিবর্তে, অনেকের স্বর মিলে একটা প্রকাণ্ড হাহাকার

ঘুরে উঠল...

কে রবি ? কে পুষ্পেন্দু ? ভরত ?

কাকে খুঁজে পাওয়া গেছে ? কাকে আর পাওয়া যায়নি ?

কাকে শেষ দেখা গেছে

ঠেলাঠেলি জনতাগভীরে ?

রবি তো পাচার হচ্ছে লাশ হয়ে আরও সব লাশেদের ভিড়ে...



...বাংলার গা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে

রক্ত

গড়িয়ে পড়েছে

রক্ত

গড়িয়ে পড়েছে...

পিছনে কুকুর ছুটছে

ধর্, ধর্...

পিছনে শেয়াল

তার পিছু পিছু আসছে ভাণ্ড হাতে

রাজ অনুচর

এই রক্ত ধরে রাখতে হবে

এই রক্ত মাখা হবে সিমেন্টে বালিতে

গড়ে উঠবে সারি সারি

কারখানা ঘর

তারপর

চারবেলা ভোঁ লাগিয়ে সাইরেন বাজাবে

এ কাজ না যদি পার, রাজা

তাহলে

বণিক এসে তোমার গা থেকে

শেষ লজ্জাবস্ত্রটুকু খুলে নিয়ে যাবে




আমার গুরুত্ব ছিল মেঘে

প্রাণচিহ্নময় জনপদে

আমার গুরুত্ব ছিল...

গা ভরা নতুন শস্য নিয়ে

রাস্তার দুপাশ থেকে চেয়ে থাকা আদিগন্ত ক্ষেতে আর

মাঠে

আমার গুরুত্ব ছিল...

আজ

আমার গুরুত্ব শুধু রক্তস্নানরত

হাড়িকাঠে !


অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে

সূর্য উঠে আসে

বন্ধ-থাকা ইশ্‌কুলের গায়ে ও মাথায়

রোদ পড়ে

রোদ পড়ে মাটি খুড়ে চলা

কোদালে, বেলচায়

রোদ পড়ে নিখোঁজ বাচ্চার

রক্তমাখা স্কুলের পোশাকে...



... না, না, না, না, না-

‘না’ বলে চিৎকার করছে গাছ

‘না’ বলে চিৎকার করছে এই গ্রীষ্ম দুপুরের হাওয়া

‘না’ বলে চিৎকার করছে পিঠে লাশ বয়ে নিয়ে চলা

ভ্যান গাড়ি

আর আমরা শহরের কয়েকজন গম্ভীর মানুষ

ভেবে দেখছি ‘না’ বলার ভাষারীতি ঠিক ছিল কিনা তাই নিয়ে

আমরা কি বিচারে বসতে পারি ?



তুমি কি খেজুরি ? তুমি ভাঙাবেড়া ?

সোনাচূড়া তুমি ?

বার বার প্রশ্ন করি । শেষে মুখে রক্ত উঠে আসে ।

আমার প্রেমের মতো ছাড়খার হয়ে আছে আজ গোটা দেশ

ঘোর লালবর্ণ অবিশ্বাসে !



আমরা পালিয়ে আছি

আমরা লুকিয়ে আছি দল বেঁধে এই

ইটভাটায়

মাথায় কাপড় ঢেকে সন্ধেয় বেরোই

মন্টুর আড়তে-

মল্লিকের

বাইকের পিছন-সিটে বসে

আমরা এক জেলা থেকে অপর জেলায়

চলে যাই,

যখন যেখানে যাই কাজ তো একটাই !

লোক মারতে হবে ।

আপাতত ইটভাটায়

লুকিয়ে রয়েছি...

অস্ত্র নিয়ে...

কখন অর্ডার আসে, দেখি ।



পিছু ফিরে দেখেছি পতাকা ।

সেখানে রক্তের চিহ্ন, লাল ।

ক’বছর আগে যারা তোমাকে সাহায্য করবে বলে

ক’বছর আগে যারা তোমার সাহায্য পাবে বলে

রক্তিম পতাকাটিকে নিজের পতাকা ভেবে কাঁধে নিয়েছিল

তাঁদের সবাইকে মুচড়ে দলে পিষে ভেঙে

খল করেছ মুক্তাঞ্চল

পতাকাটি সেই রক্ত বক্ষ পেতে ধারণ করলেন ।

তোমার কি মনে পড়ছে, রাজা

শেষ রাত্রে ট্যাঙ্কের আওয়াজ ?

মনে পড়ছে, আঠারো বছর আগে, তিয়েন-আন-মেন ?


ভাসছে উপুড় হয়ে । মুণ্ডু নেই । গেঞ্জি পরা, কালো প্যান্ট ।

কোন বাড়ির ছেলে ?

নব জানে । যারা ওকে কাল বিকেলে বাজারে ধরেছে

তার মধ্যে নবই তো মাথা ।

একদিন নব-র মাথাও

গড়াবে খালের জলে,

ডাঙায় কাদার মধ্যে উলটে পড়ে থাকবে স্কন্ধকাটা

এ এক পুরনো চক্র ।

এই চক্র চালাচ্ছেন যে-সেনাপতিরা

তাঁদের কি হবে ?

উজ্জ্বল আসনে বসে মালা ও মুকুট পরবে

সেসব গর্দান আর মাথা

এও তো পুরনো চক্র । কিন্তু তুমি ফিরে দেখো আজ

সে চক্র ভাঙার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছে গ্রাম-

ঘুরে দাঁড়িয়েছে কলকাতা

১০


অপূর্ব বিকেল নামছে ।

রোদ্দুর নরম হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা মাঠে ।

রোদ্দুর, আমগাছের ফাঁক দিয়ে নেমেছে দাওয়ায় ।

শোকাহত বাড়িটিতে

শুধু এক কাক এসে বসে ।

ডাকতে সাহস হয় না তারও ।

অনেক কান্নার পর পুত্রহারা মা বুঝি এক্ষুনি

ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন ।

যদি ঘুম ভেঙে যায় তাঁর !


কবিতাটি ২মে ২০০৭ এর দেশ পত্রিকাতে প্রকাশিত