Sunday, May 02, 2010

লাভ সেক্স আউর ধোখা

আধুনিক হিন্দি চলচ্চিত্র ক্রমশ এগিয়ে চলেছে আরো আধুনিকতার দিকে আর ডিরেক্টর দিবাকর ব্যানার্জীর ছবি লাভ সেক্স আউর ধোখা তাকে আরো এগিয়ে দিল ।
হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরায় তোলা ছবি নতুন কিছু নয় । ভারতীয় দর্শকরা আগে দেখেছেন মনসুন ওয়েডিং এর মত ছবি । এছাড়াও হলিউডের ছবি ক্লোভারফিল্ড এবং প্যারানরম্যাল অ্যাকটিভিটিজ এইভাবে তোলা হয়েছিল । লাভ সেক্স আউর ধোখা তে তার সাথে আরো যুক্ত হয়েছে ননলিনিয়ার গল্প বলার পদ্ধতি । যা আমরা আগে দেখেছি পাল্প ফিকশন বা মেমেন্টোর মত ছবিতে । অর্থাৎ পুরো ছবিতে গল্পটা পরপর বলা হয় না খাপছাড়া ভাবে দেখানো হয় । কিন্তু পরে এসে সবটাই মিলে যায় । এখানে ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে হ্যান্ডিক্যাম এবং সিকিউরিটি ক্যামেরা । ভারতে প্রতিমূহুর্তে বেড়ে চলা এমএমএস স্ক্যান্ডাল এবং ওয়েবক্যাম এবং হ্যান্ডিক্যামে তোলা ব্যক্তিগত পর্ণ ছবির চাহিদা উর্ধ্বমুখী । সাধারন এন্টারটেনমেন্টে আর মানুষের চাহিদা মিটছে না । তারই পটভূমিকায় নির্মিত এই ছবি । কাস্টিং কাউচ এবং স্টিং অপারেশনও এই ছবির গল্পের একটা অংশ । সংবাদমাধ্যমও যে কিভাবে এই ক্লিপিংসগুলোকে কিভাবে নিজেদের লাভের জন্য তৈরি করে এবং ব্যবহার করে তাও দেখানো হয়েছে ।
এই ছবিতে তিনটি আলাদা গল্প দেখানো হয় কিন্তু মূল চরিত্রগুলি ঘুরে ফিরে আসে সবগুলিতেই । ছবিতে কোনো চেনামুখ নেই এবং ছবির বাজেটও অতি কম । এত কম বাজেটেও যে এত ভাল ছবি তোলা যায় দিবাকর ব্যানার্জী তা দেখিয়ে দিলেন ।
সাহসী পরিচালনা, চিত্রনাট্য ও গল্প এই ছবিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে । হিন্দি ছবিতে এই প্রথম ফাকিং শব্দটা শুনলাম । একটি গানের কথা ‘তুঝে নাঙ্গি আচ্ছি লাগতি হ্যায়’ যদিও এটিকে বদলে দেওয়া হয়েছে । বালাজি টেলিফিল্মস পারিবারিক সিরিয়াল ছেড়ে যে এরকম একটা সিনেমা প্রোডিউস করল দেখে ভাল লাগল । এডিটিং অসাধারন । ছবিতে গানের তেমন প্রাধান্য না থাকলেও যেটুকু আছে বেশ ভাল । আর বলিউডে বহু বছর পর আবার একজন মহিলা সঙ্গীত পরিচালক স্নেহা খানওয়ালকার । তাঁরা আগের ছবি ছিল ওয়ে লাকি লাকি ওয়ে ।

Thursday, March 25, 2010

হরিদাসের গুপ্তকথা

হরিদাসের গুপ্তকথা নামের বইটির নাম অনেকদিন আগেই শুনেছিলাম । বইটি সম্পর্কে আমার ধারনা ছিল যে এটি বোধহয় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আপাত নিষিদ্ধ টাইপের কিছু একটা হবে । কিন্তু বইটি এককালে বেশ জনপ্রিয় ছিল সেটাও অনুমান করেছিলাম ।

এবারের বইমেলায় হঠাৎ একটি বইয়ের স্টলে হরিদাসের গুপ্তকথার সন্ধান পাই । প্রচুর নতুন বইয়ের ভিড়ে হঠাৎই একটা মলাটহীন পুরনো বই দেখে হাতে তুলে নিয়েছিলাম । পাতা উলটেই দেখি হরিদাসের গুপ্তকথা । সঙ্গে সঙ্গে বইটি কিনে ফেললাম ।

বইটির লেখক শ্রীভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায় । বইয়ের প্রথমে তারিখ ১৩১০ বঙ্গাব্দ । মানে মোটামুটি ১৯০৪ খ্রীষ্টাব্দে লেখক বইটি লিখছেন । আর কাহিনীর ঘটনাক্রম তারও বেশকিছু বছর আগেকার ।

উপন্যাসটি চার খণ্ডে বিভক্ত । কাহিনীর নায়ক হল হরিদাস নামের একটি ছেলে । কাহিনীর আরম্ভের সময়ে তার বয়স চোদ্দ বছর । মোটামুটি হিসাব করে দেখা যায় তার জন্ম ইংরেজি ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে । হুগলি জেলার সপ্তগ্রামে চোদ্দ বছর বয়েসে হরিদাসের যাত্রা শুরু হয় এক গ্রামের পাঠশালা থেকে । সে নিজের কোন পরিচয় জানত না । পাঠশালার গুরুমশাইয়ের বাড়িতে সে লালিত । গুরুমশাইয়ের মৃত্যুর পর সে বাইরের জগতের সঙ্গে পরিচিত হতে বাধ্য হয় । এরপর সাত-আট বছর নানা ঘটনার ঘনঘটার মধ্যে দিয়ে এই দরিদ্র সহায় সম্বলহীন অনাথ বালক কিভাবে নিজের পরিচয় জানল এবং পরিশেষে বিরাট ধনী জমিদারে পরিণত হল তারই রোমাঞ্চকর আখ্যান এই বই । উপন্যাসটিতে হরিদাসের নায়িকাও উপস্থিত । তার নাম অমরকুমারী । নানা বিপত্তি পেরিয়ে শেষ অবধি হরিদাস এবং অমরকুমারীর মিলন হয় । উপন্যাসটিতে প্রচুর চরিত্র । উপন্যাসের শেষপ্রান্তে এসে প্রতিটি চরিত্রেরই পরিণাম দেখানো হয়েছে । নানা রকম নাটকীয়তায় ভরপুর এই উপন্যাস । শেষে এসে সব কিছুকেই একটি বিন্দুতে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে । সব রহস্যেরই সমাধান করা হয়েছে ।

বইটিকে একটি অ্যডভেঞ্চারের গল্প বললেও ভুল হয় না । প্রায় ৬৮০ পাতার বইটিতে প্রচুর রোমাঞ্চকর ঘটনার সন্নিবেশ ঘটেছে । নানা রকম চুরি, ডাকাতি, জালিয়াতি, খুন-খারাপি, আত্মহত্যা, কিডন্যাপিং, পুলিশ-দারোগা, মামলা-মোকদ্দমা, ভূতুড়ে ঘটনা এবং ষড়যন্ত্রের ঘটনায় ঠাসা । সিপাহী বিদ্রোহের চাক্ষুষ বর্ণনাও এতে স্থান পেয়েছে ।

ঊনবিংশ শতকের বাঙলি এবং ভারতীয় জীবনের নানা বিচিত্র ঘটনার বর্ণনা এতে রয়েছে । এর সাথে আরো যুক্ত হয়েছে নানা রকম কেচ্ছা এবং ব্যাভিচারের ঘটনা । এবং প্রেমের ঘটনাও কিছু কম নেই । তখনকার সমাজব্যবস্থার একটি বাস্তব চিত্র দেখা যায় । বাঙালি বাড়িতে ব্যভিচারের ঘটনা যে কত বেশি ছিল তার বর্ণনা পড়লে অবাক হতে হয় । অনেক পুরুষই কোন আত্মীয় মহিলার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক রাখতেন এবং অনেক সময়ে বিপদে পড়লে তাদের নিয়ে গৃহত্যাগও করতেন । বেশিরভাগ সময়েই তাঁরা বারাণসীর মত কোন তীর্থস্থানে গিয়ে নাম পরিচয় এবং সম্পর্ক ভাঁড়িয়ে থাকতেন এবং অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক সম্মানও আদায় করতেন ।

লেখক লিখছেন যে –

“বাঙ্গালীদলের বেশী কলঙ্ক । জাতিতে জাতিতে, জাতিতে বিজাতিতে, সম্পর্কে সম্পর্কে, সম্পর্কে নিঃসম্পর্কে, বাঙ্গালী নর-নারী পাপলিপ্ত হলেই নিরাপদের আশাতে কাশীতে পালিয়ে আসে ; মাতুলের ঔরসে ভগিনী-পুত্রী, পিতৃব্যের ঔরসে ভ্রাতৃকুমারী, ভ্রাতার ঔরসে বিমাতৃকুমারী, ভাগিনেয়ের ঔরসে মাতুলানী, জামাতার ঔরসে শ্বশ্রু-ঠাকরানী, শ্বশুরের ঔরসে যুবতী পুত্রবধূ গর্ভবতী হলেই কাশীধামে পালিয়ে আসে ! গর্ভগুলি নষ্ট কোত্তে হয় না, কাশীর পবনের প্রসাদে বংশ-রক্ষা হয় । ”

মনে রাখতে হবে এই বর্ণনার সময়কাল ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহেরও আগের !

খুনোখুনির ঘটনাও বেশ কিছু আছে । আর আছে সেই সময়ের ভালো-খারাপ পুলিশ এবং বিচার ব্যবস্থার বর্ণনা । উপন্যাসটিতে পুলিশকে বেশ করিৎকর্মা হিসাবেই দেখানো হয়েছে । তবে তারা যে উৎকোচ গ্রহনেও সিদ্ধহস্ত তার ঈঙ্গিতও রয়েছে ।

কাহিণীর পটভূমিকাও বদলেছে বারে বারে । তৎকালীন ভারতবর্ষের নানা তীর্থস্থানের বর্ণনাও এতে রয়েছে । পশ্চিমের গুজরাট থেকে আরম্ভ করে পূর্বের ত্রিপুরা পর্যন্ত উপন্যাসটির ব্যাপ্তি । কাহিনী ছুঁয়ে গেছে ভারতের বিভিন্ন শহর যেমন বরোদা, আমেদাবাদ, আগ্রা, মথুরা, বৃন্দাবন, পাটনা, বারাণসী, কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, ঢাকা, বর্ধমান, কানপুর, গৌহাটি । এই কাহিনী যে সময়ের সেই সময়ে ভারতে রেলপথ ছিল না বা সবে স্থাপিত হতে আরম্ভ করেছে । তাই বিভিন্ন স্থানে যাওয়াও অনেক কষ্টকর ছিল এবং তাতে বিপদের ভয়ও ছিল যথেষ্ট ।

হরিদাসের নিজের বক্তব্য ও মন্তব্য থেকে লেখকের ব্যক্তিতের বিষয়েও জানতে পারি । ইংরেজ শাসন বিষয়ে তিনি বেশ খুশি তবে সিপাহী বিদ্রোহের সময়ে তিনি উভয় পক্ষেরই নৃশংসতার জন্য সমালোচনা করেছেন । রানী ভিক্টোরিয়াকে তিনি ভক্তি করতেন । তিনি ছিলেন বাল্যবিবাহ এবং জাতিভেদ প্রথার একজন সমর্থক । এবং অসবর্ণ বিবাহ প্রথার বিরোধী । ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সৎ এবং উপকারী ।

হরিদাসের গুপ্তকথা একটি উপন্যাস হলেও পড়লেই বোঝা যায় যে এটির পিছনে অনেক সত্য, লেখকের নিজের চোখে দেখা ঘটনাও রয়েছে । এটিকে একটি ঐতিহাসিক বিবরণও বলা যায় । তাই ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগের একটি চমৎকার বর্ণনা আমরা পাই ।

বইটি বেশ দুষ্প্রাপ্য তবে বর্তমান সংস্করনটি বেরিয়েছে বিশ্ববাণী প্রকাশণী থেকে ১৩০৪ বঙ্গাব্দে । দাম ৬০ টাকা ।

বাংলা উইকিপিডিয়ায় ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ।




Monday, February 22, 2010

লিখতে হবে বাংলায়

বেশ কিছুদিন হল এই ব্লগে আর লেখা হচ্ছে না প্রথম এই ব্লগে লিখতে শুরু করেছিলাম প্রায় চার বছর আগে ২০০৬ সালের মে মাসে । বর্তমানে অবস্থাটা অনেকটাই পালটেছে তখন ইন্টারনেটে বাংলার পাঠক সংখ্যা খুবই কম ছিল আর ব্লগার তো ছিল আরো কম এখন উইনডোজ ভিস্তা আর সেভেন এ কোনো কনফিগারেশন ছাড়াই ভাল বাংলা পড়া যায় আর অভ্র কিবোর্ড এবং ইউনিকোড বাংলা সম্পর্কে মানুষ আরো বেশি করে জেনেছেন তাই শুধু বাংলাদেশ নয় ভারত থেকেও বাংলা ব্লগারের সংখ্যা বাড়ছে আর কিছু দিনের মধ্যে যে ভারতীয় বাংলা ব্লগারের সংখ্যা আরো বাড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই

এই ব্লগ আমি ছদ্মনামে শুরু করেছিলাম কারন সেই সময় ভেবেছিলাম যে এখানে নানা রকম বির্তকিত বিষয় নিয়ে লিখব
অনলাইনে নিজের আসল নামকে যতটা সম্ভব কোনো রকম বিতর্ক থেকে দূরে রাখাই ভালো। বেশ কিছু বিষয় নিয়ে লিখেওছিলাম এর মধ্যে লেখার পরিমান কমে গেলেও এটা মনে করার কোনো কারন নেই যে আমি বাংলায় ব্লগিং ছেড়ে দিয়েছি আমি লিখব কারন লিখতে হবে বাংলায়

Thursday, October 29, 2009

২০০ ফ্রি বাংলা ইউনিকোড ফন্ট ডাউনলোড করুন ।

সম্প্রতি ভারত সরকারের যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের দ্বারা প্রকাশিত বাংলা সফটওয়্যারের সিডিতে বেশ কিছু বাংলা ইউনিকোড ফন্ট পেলাম । এর মধ্যে বেশ কিছু ফন্টের কোয়ালিটি খারাপ এবং নানা রকমের সমস্যা থাকলেও অনেক ফন্টই বেশ ভালো এবং ব্যবহার যোগ্য । তাই ফন্টগুলি আপনাদের সাথে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না । ফন্টগুলির লাইসেন্সের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য আমার কাছে নেই তবে যে সিডি থেকে নেওয়া সেটি বিনামূল্যে বিতরন করা হয় । তাই কমার্শিয়াল ব্যবহারের ব্যাপারে সাবধান ।

ডাউনলোড লিঙ্ক - ক্লিক করুন এখানে

আরও জানুন:
http://ildc.gov.in
http://ildc.in
http://cdac.in

Saturday, May 30, 2009

পাল্টা হাওয়া

ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি দেওয়ালে কাস্তে হাতুড়ি তারা দেওয়া চিহ্ণ এবং লেখা সিপিআইএম প্রার্থীদের বিপুল ভোটে জয়ী করুন । আর তারপর সিপিআইএমই ভোটে জেতে । শুধু জেতে নয় বিপুল ভোটে জেতে । কি করে এভাবে বছরের পর বছর সিপিএম ভোটে জিতে আসে সেটা একটা রহস্য বলে মনে হত । কি লোকসভা কি বিধানসভা সবেতেই সিপিএমের জয়জয়কার । আমার শহরে ছোটবেলায় মনে আছে পৌরসভা কংগ্রেসের দখলে ছিল কিন্তু কিছু বছরের মধ্যেই সিপিএম সেটা দখল করল এবং শুধু দখল করা নয় তাকে তারা পরিণত করল বিরোধী শূন্য পৌরসভাতে । অধিকাংশ স্কুল, কলেজ, লাইব্রেরী, পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ সবই সিপিএম বা বামফ্রন্টের দখলে । দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা বামফ্রন্টের বিকল্প শুধু উন্নততর বামফ্রন্ট ।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের এই সাফল্যের কারন কি ? তারা কি পশ্চিমবঙ্গকে কোনো স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল যে তাতে মানুষ এত খুশি হয়ে দীর্ঘসময় ধরে তাদের বিপুল ভোটে জিতিয়ে ক্ষমতায় রেখে দিয়েছিল । বরং বলা যায় সিপিএমের রাজত্বে পশ্চিমবঙ্গের অবনতি বেশি হয়েছে । বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে পার্টির ক্যাডার বসিয়ে সেগুলির সর্বনাশ করা হয়েছে । যেখানে সেখানে হকার বসিয়ে স্টেশন রাস্তাঘাটকে বাজারে পরিণত করা হয়েছে । প্রোমোটারদের বেআইনী নির্মানে সহযোগিতা করা হয়েছে । পরিবহনকে চূড়ান্ত অব্যবস্হার মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । যেখানে সেখানে গজিয়ে উঠেছে দেশি মদ আর চুল্লুর ঠেক । কথায় কথায় রাস্তা অবরোধ আর বনধ । পশ্চিমবঙ্গ এমন একটি জায়গা যেখানে সরকারী মদতে বনধ পালিত হয় । প্রশাসন সব দেখেও কানা মামা হয়ে বসে থাকে। যেসমস্ত সৎ পুলিশ আর সরকারী অফিসার কিছু কাজ করতে চেয়েছেন তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ।

১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসার পরে বামফ্রন্ট গ্রামাঞ্চলে কিছু কাজ করেছিল । কংগ্রেস ছিল বড়লোকদের দল । সেই সময়ে জমিদারদের কাছ থেকে জমি নিয়ে তারা সাধারন কৃষকদের ভিতরে কিছু বিলিবন্দোবস্ত করেছিল। এছাড়াও গ্রামের উন্নতিও তারা কিছুকিছু করেছিল বলে মনে করা হয় । এই অবস্থা ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত চলে । ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ায় প্রবল ইন্দিরা হাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ১৬টি লোকসভা আসনে বিজয়ী হয় । সেই সময়েই সিপিএমের টনক নড়ে । তারা বুঝতে পারে যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের পক্ষে ক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব নাও হতে পারে । তাই তারা নির্বাচন প্রক্রিয়াতে জল মেশাতে শুরু করে । তাদের জল মেশানো শুরুর হয় ভোটার তালিকা তৈরি থেকে । ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটার ঢোকানো হয় । এছাড়া যারা সিপিএম বিরোধী তাদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া শুরু হয় । এরপর মানুষকে ভয় দেখিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসতে না দেওয়া, ভোটের সময়ে বুথজ্যামকরা এবং পুলিশ প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা । তার উপরে সর্বোপরি ছিল ফলস ভোট এবং ছাপ্পা ভোট দেওয়া । যে সমস্ত মানুষেরা বাইরে থাকার জন্য ভোট দিতে আসতে পারবেন না তাঁদের তালিকা তৈরি করে তাদের ভোট দিয়ে দেওয়া হত । বিভিন্ন বয়েসী ক্যাডাররা যাদের মধ্যে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই ছিল তারা এই কাজগুলি পেশাদারী দক্ষতায় সম্পন্ন করত । অনেকেই ভোট দিতে গিয়ে ফিরে আসতেন । তাঁদের বলা হত ‘ভোট পড়ে গেছে’ । এবং এখানেই শেষ নয় ভোট গণনার সময়েও তারা নানা রকম কারচুপি করতে থাকে ।

যত দূরের গ্রাম হবে এই জালিয়াতির পরিমানও তত বেশি হবে । প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে দেখা যেত ভোট পড়ার হার সবচেয়ে বেশী । কারন এখানে ছাপ্পা ভোটের পরিমান সবচেয়ে বেশি হত । তাই কলকাতার কিছু কিছু জায়গায় সিপিএম ভোটে হারলেও জেলাগুলিতে তাদের জয়জয়কার সবসময়েই অক্ষুন্ন থাকত । তবে উত্তরবঙ্গের কিছু কিছু জায়গা যেমন মালদায় কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি থাকায় সেখানে কংগ্রেস বিজয়ী হত ।

অবস্থা দেখে মনে হত সিপিএমকে হারানো মনে হয় সম্ভব নয় । তার উপরে বিরোধীরা নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠীদন্দ্ব নিয়েই ব্যস্ত । ফলে সিপিএমের পোয়াবারো । এত কিছুর পরেও কিছু সাধারন মানুষের সমর্থন তাদের সাথে ছিল সে কথা স্বীকার করতেই হবে । না হলে এতবড় সংগঠন চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব হত না । কিন্তু বহু বছর ক্ষমতায় দখলকরে রাখার পর তারা নৈতিক অধ:পতনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছেছিল ।

জ্যোতি বসু পশ্চিমবঙ্গের সর্বনাশ করলেও তিনি দক্ষ রাজনীতিবিদ হওয়ার ফলে নানা ভাবে বহু সমস্যা পাশ কাটিয়ে গিয়েছিলেন । অন্তত তাঁর রাজনৈতিক বুদ্ধির অভাব ছিল না । আর প্রশাসনকে দক্ষভাবে তিনি চালাতেও জানতেন । কিন্তু তাঁর অবসর নেওয়ার পর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে সিপিএম নানা বিষয়ে নাস্তানাবুদ হতে থাকে । রিজওয়ানুর হত্যা মামলা, সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রাম বিষয়ে সরকার জোর ধাক্কা খায় । তাদের ধারনা ছিল মেকি শিল্পায়নের টোপ দেখিয়ে রাজ্যবাসীকে তারা বোকা বানাবে । কিন্তু যে রাজ্যে পঞ্চাশ হাজারের উপর ছোটবড় কারখানা বন্ধ সেখানে একটি দুটি নতুন কারখানার কলা দেখিয়ে যে নির্বাচনী বৈতরনী পার করা যাবে না তা তারা বুঝতে পারেনি ।
২০০৯ এর লোকসভা নির্বাচনে অনেকের ধারনা ছিল জমি অধিগ্রহন বির্তকের ফলে গ্রামাঞ্চলে বামফ্রন্টের জনপ্রিয়তা কমেছে তাই হয়ত গ্রামের তাদের ফল খারাপ হবে কিন্তু শহরাঞ্চলের মানুষ যাঁদের কৃষিজমির উপর নির্ভরশীলতা কম তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসের মা মাটি মানুষের আন্দোলনকে প্রত্যাখ্যান করবেন । কিন্তু লোকসভার ভোটের ফল বেরোতে দেখা গেল সম্পূর্ণ অন্য গল্প । গ্রামাঞ্চলে তৃণমূলের ফল তো ভালোই আর শহরাঞ্চলে শুধু তাদেরই জয়জয়কার । কলকাতা এবং তার আশেপাশের প্রায় সমস্ত জায়গায় সিপিএম ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেছে । সিপিএম পার্টি তার জন্মলগ্ন থেকে এত বড় ধাক্কা আর খায়নি । বহু আসনেই তারা বিপুল ভোটে পরাজিত । আর যে আসনগুলিতে তারা জিতেছে সেখানেও তাদের মার্জিন ব্যপকভাবে কমেছে । আর তারা যদি ভোটে জালিয়াতি না করত তাহলে তাদের ফল যে আরো খারাপ হত তাতে কোন সন্দেহ নেই ।

এবারের ভোটে জেতার জন্য সিপিএমের নেতারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন । পাবলিসিটির প্লাবনে ভেসে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ । বড় বড় ফ্লেক্স হোর্ডিং-এ ঢেকে দেওয়া হয়েছিল রাস্তাঘাট । উত্তর কলকাতা কেন্দ্রের প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের জয় হো হোর্ডিংগুলি সিপিএম পার্টি থেকেই সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল । কারন এখানে দল থেকে প্রার্থীকে বড় করে দেখানো হয়েছিল । কিন্তু পার্টির আপত্তি সত্ত্বেও হোর্ডিংগুলি খোলা হয়নি । এছাড়াও মহম্মদ সেলিমকে হনুমান মন্দিরে গিয়ে চরণমৃত সেবন করতেও দেখা যায় । তখনই বোঝা গিয়েছিল যে কমিউনিস্ট নাস্তিকদের তাদের আদর্শের প্রতি আর কোন বিশ্বাস নেই । যেকোন উপায়ে তাদের ক্ষমতা দখল করতেই হবে ।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যদি কোন পার্টি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকে (আমার মতে দশ বছর বা তার বেশি) তাহলে তাদের মধ্যে দুর্নীতি ঢুকতে বাধ্য । তাই সিপিএমের এই পরিণতি স্বাভাবিক । দুবছর পরে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার ভোট । সেখানে হবে চূড়ান্ত পরীক্ষা । সিপিএম এবং বামফ্রন্টের অবস্থা যতই খারাপ হোক তারা অত সহজে যে হার মানবে না তা পরিষ্কার । আর বিরোধীদের পালে এখন হাওয়া । বত্রিশ বছরের মধ্যে এই প্রথম তারা বিধানসভায় জেতার স্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করেছেন। আর অনেকেই স্বীকার করছেন যে সেটা সম্ভব । এটা অনেকটাই নির্ভর করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর । রাজনৈতিক অদূরদর্শীতার জন্য তিনি খ্যাত । কিন্তু এখন তিনিও অনেক পরিণত । কেন্দ্রীয় সরকারের খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তিনি রয়েছেন । এই মূহূর্তে তাঁর এবং তাঁর দলের ভালো কাজ তাঁকে আরো অনেকটাই এগিয়ে দিতে পারে ।