Sunday, May 02, 2010

লাভ সেক্স আউর ধোখা

আধুনিক হিন্দি চলচ্চিত্র ক্রমশ এগিয়ে চলেছে আরো আধুনিকতার দিকে আর ডিরেক্টর দিবাকর ব্যানার্জীর ছবি লাভ সেক্স আউর ধোখা তাকে আরো এগিয়ে দিল ।
হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরায় তোলা ছবি নতুন কিছু নয় । ভারতীয় দর্শকরা আগে দেখেছেন মনসুন ওয়েডিং এর মত ছবি । এছাড়াও হলিউডের ছবি ক্লোভারফিল্ড এবং প্যারানরম্যাল অ্যাকটিভিটিজ এইভাবে তোলা হয়েছিল । লাভ সেক্স আউর ধোখা তে তার সাথে আরো যুক্ত হয়েছে ননলিনিয়ার গল্প বলার পদ্ধতি । যা আমরা আগে দেখেছি পাল্প ফিকশন বা মেমেন্টোর মত ছবিতে । অর্থাৎ পুরো ছবিতে গল্পটা পরপর বলা হয় না খাপছাড়া ভাবে দেখানো হয় । কিন্তু পরে এসে সবটাই মিলে যায় । এখানে ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে হ্যান্ডিক্যাম এবং সিকিউরিটি ক্যামেরা । ভারতে প্রতিমূহুর্তে বেড়ে চলা এমএমএস স্ক্যান্ডাল এবং ওয়েবক্যাম এবং হ্যান্ডিক্যামে তোলা ব্যক্তিগত পর্ণ ছবির চাহিদা উর্ধ্বমুখী । সাধারন এন্টারটেনমেন্টে আর মানুষের চাহিদা মিটছে না । তারই পটভূমিকায় নির্মিত এই ছবি । কাস্টিং কাউচ এবং স্টিং অপারেশনও এই ছবির গল্পের একটা অংশ । সংবাদমাধ্যমও যে কিভাবে এই ক্লিপিংসগুলোকে কিভাবে নিজেদের লাভের জন্য তৈরি করে এবং ব্যবহার করে তাও দেখানো হয়েছে ।
এই ছবিতে তিনটি আলাদা গল্প দেখানো হয় কিন্তু মূল চরিত্রগুলি ঘুরে ফিরে আসে সবগুলিতেই । ছবিতে কোনো চেনামুখ নেই এবং ছবির বাজেটও অতি কম । এত কম বাজেটেও যে এত ভাল ছবি তোলা যায় দিবাকর ব্যানার্জী তা দেখিয়ে দিলেন ।
সাহসী পরিচালনা, চিত্রনাট্য ও গল্প এই ছবিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে । হিন্দি ছবিতে এই প্রথম ফাকিং শব্দটা শুনলাম । একটি গানের কথা ‘তুঝে নাঙ্গি আচ্ছি লাগতি হ্যায়’ যদিও এটিকে বদলে দেওয়া হয়েছে । বালাজি টেলিফিল্মস পারিবারিক সিরিয়াল ছেড়ে যে এরকম একটা সিনেমা প্রোডিউস করল দেখে ভাল লাগল । এডিটিং অসাধারন । ছবিতে গানের তেমন প্রাধান্য না থাকলেও যেটুকু আছে বেশ ভাল । আর বলিউডে বহু বছর পর আবার একজন মহিলা সঙ্গীত পরিচালক স্নেহা খানওয়ালকার । তাঁরা আগের ছবি ছিল ওয়ে লাকি লাকি ওয়ে ।

Thursday, March 25, 2010

হরিদাসের গুপ্তকথা

হরিদাসের গুপ্তকথা নামের বইটির নাম অনেকদিন আগেই শুনেছিলাম । বইটি সম্পর্কে আমার ধারনা ছিল যে এটি বোধহয় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আপাত নিষিদ্ধ টাইপের কিছু একটা হবে । কিন্তু বইটি এককালে বেশ জনপ্রিয় ছিল সেটাও অনুমান করেছিলাম ।

এবারের বইমেলায় হঠাৎ একটি বইয়ের স্টলে হরিদাসের গুপ্তকথার সন্ধান পাই । প্রচুর নতুন বইয়ের ভিড়ে হঠাৎই একটা মলাটহীন পুরনো বই দেখে হাতে তুলে নিয়েছিলাম । পাতা উলটেই দেখি হরিদাসের গুপ্তকথা । সঙ্গে সঙ্গে বইটি কিনে ফেললাম ।

বইটির লেখক শ্রীভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায় । বইয়ের প্রথমে তারিখ ১৩১০ বঙ্গাব্দ । মানে মোটামুটি ১৯০৪ খ্রীষ্টাব্দে লেখক বইটি লিখছেন । আর কাহিনীর ঘটনাক্রম তারও বেশকিছু বছর আগেকার ।

উপন্যাসটি চার খণ্ডে বিভক্ত । কাহিনীর নায়ক হল হরিদাস নামের একটি ছেলে । কাহিনীর আরম্ভের সময়ে তার বয়স চোদ্দ বছর । মোটামুটি হিসাব করে দেখা যায় তার জন্ম ইংরেজি ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে । হুগলি জেলার সপ্তগ্রামে চোদ্দ বছর বয়েসে হরিদাসের যাত্রা শুরু হয় এক গ্রামের পাঠশালা থেকে । সে নিজের কোন পরিচয় জানত না । পাঠশালার গুরুমশাইয়ের বাড়িতে সে লালিত । গুরুমশাইয়ের মৃত্যুর পর সে বাইরের জগতের সঙ্গে পরিচিত হতে বাধ্য হয় । এরপর সাত-আট বছর নানা ঘটনার ঘনঘটার মধ্যে দিয়ে এই দরিদ্র সহায় সম্বলহীন অনাথ বালক কিভাবে নিজের পরিচয় জানল এবং পরিশেষে বিরাট ধনী জমিদারে পরিণত হল তারই রোমাঞ্চকর আখ্যান এই বই । উপন্যাসটিতে হরিদাসের নায়িকাও উপস্থিত । তার নাম অমরকুমারী । নানা বিপত্তি পেরিয়ে শেষ অবধি হরিদাস এবং অমরকুমারীর মিলন হয় । উপন্যাসটিতে প্রচুর চরিত্র । উপন্যাসের শেষপ্রান্তে এসে প্রতিটি চরিত্রেরই পরিণাম দেখানো হয়েছে । নানা রকম নাটকীয়তায় ভরপুর এই উপন্যাস । শেষে এসে সব কিছুকেই একটি বিন্দুতে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে । সব রহস্যেরই সমাধান করা হয়েছে ।

বইটিকে একটি অ্যডভেঞ্চারের গল্প বললেও ভুল হয় না । প্রায় ৬৮০ পাতার বইটিতে প্রচুর রোমাঞ্চকর ঘটনার সন্নিবেশ ঘটেছে । নানা রকম চুরি, ডাকাতি, জালিয়াতি, খুন-খারাপি, আত্মহত্যা, কিডন্যাপিং, পুলিশ-দারোগা, মামলা-মোকদ্দমা, ভূতুড়ে ঘটনা এবং ষড়যন্ত্রের ঘটনায় ঠাসা । সিপাহী বিদ্রোহের চাক্ষুষ বর্ণনাও এতে স্থান পেয়েছে ।

ঊনবিংশ শতকের বাঙলি এবং ভারতীয় জীবনের নানা বিচিত্র ঘটনার বর্ণনা এতে রয়েছে । এর সাথে আরো যুক্ত হয়েছে নানা রকম কেচ্ছা এবং ব্যাভিচারের ঘটনা । এবং প্রেমের ঘটনাও কিছু কম নেই । তখনকার সমাজব্যবস্থার একটি বাস্তব চিত্র দেখা যায় । বাঙালি বাড়িতে ব্যভিচারের ঘটনা যে কত বেশি ছিল তার বর্ণনা পড়লে অবাক হতে হয় । অনেক পুরুষই কোন আত্মীয় মহিলার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক রাখতেন এবং অনেক সময়ে বিপদে পড়লে তাদের নিয়ে গৃহত্যাগও করতেন । বেশিরভাগ সময়েই তাঁরা বারাণসীর মত কোন তীর্থস্থানে গিয়ে নাম পরিচয় এবং সম্পর্ক ভাঁড়িয়ে থাকতেন এবং অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক সম্মানও আদায় করতেন ।

লেখক লিখছেন যে –

“বাঙ্গালীদলের বেশী কলঙ্ক । জাতিতে জাতিতে, জাতিতে বিজাতিতে, সম্পর্কে সম্পর্কে, সম্পর্কে নিঃসম্পর্কে, বাঙ্গালী নর-নারী পাপলিপ্ত হলেই নিরাপদের আশাতে কাশীতে পালিয়ে আসে ; মাতুলের ঔরসে ভগিনী-পুত্রী, পিতৃব্যের ঔরসে ভ্রাতৃকুমারী, ভ্রাতার ঔরসে বিমাতৃকুমারী, ভাগিনেয়ের ঔরসে মাতুলানী, জামাতার ঔরসে শ্বশ্রু-ঠাকরানী, শ্বশুরের ঔরসে যুবতী পুত্রবধূ গর্ভবতী হলেই কাশীধামে পালিয়ে আসে ! গর্ভগুলি নষ্ট কোত্তে হয় না, কাশীর পবনের প্রসাদে বংশ-রক্ষা হয় । ”

মনে রাখতে হবে এই বর্ণনার সময়কাল ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহেরও আগের !

খুনোখুনির ঘটনাও বেশ কিছু আছে । আর আছে সেই সময়ের ভালো-খারাপ পুলিশ এবং বিচার ব্যবস্থার বর্ণনা । উপন্যাসটিতে পুলিশকে বেশ করিৎকর্মা হিসাবেই দেখানো হয়েছে । তবে তারা যে উৎকোচ গ্রহনেও সিদ্ধহস্ত তার ঈঙ্গিতও রয়েছে ।

কাহিণীর পটভূমিকাও বদলেছে বারে বারে । তৎকালীন ভারতবর্ষের নানা তীর্থস্থানের বর্ণনাও এতে রয়েছে । পশ্চিমের গুজরাট থেকে আরম্ভ করে পূর্বের ত্রিপুরা পর্যন্ত উপন্যাসটির ব্যাপ্তি । কাহিনী ছুঁয়ে গেছে ভারতের বিভিন্ন শহর যেমন বরোদা, আমেদাবাদ, আগ্রা, মথুরা, বৃন্দাবন, পাটনা, বারাণসী, কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, ঢাকা, বর্ধমান, কানপুর, গৌহাটি । এই কাহিনী যে সময়ের সেই সময়ে ভারতে রেলপথ ছিল না বা সবে স্থাপিত হতে আরম্ভ করেছে । তাই বিভিন্ন স্থানে যাওয়াও অনেক কষ্টকর ছিল এবং তাতে বিপদের ভয়ও ছিল যথেষ্ট ।

হরিদাসের নিজের বক্তব্য ও মন্তব্য থেকে লেখকের ব্যক্তিতের বিষয়েও জানতে পারি । ইংরেজ শাসন বিষয়ে তিনি বেশ খুশি তবে সিপাহী বিদ্রোহের সময়ে তিনি উভয় পক্ষেরই নৃশংসতার জন্য সমালোচনা করেছেন । রানী ভিক্টোরিয়াকে তিনি ভক্তি করতেন । তিনি ছিলেন বাল্যবিবাহ এবং জাতিভেদ প্রথার একজন সমর্থক । এবং অসবর্ণ বিবাহ প্রথার বিরোধী । ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সৎ এবং উপকারী ।

হরিদাসের গুপ্তকথা একটি উপন্যাস হলেও পড়লেই বোঝা যায় যে এটির পিছনে অনেক সত্য, লেখকের নিজের চোখে দেখা ঘটনাও রয়েছে । এটিকে একটি ঐতিহাসিক বিবরণও বলা যায় । তাই ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগের একটি চমৎকার বর্ণনা আমরা পাই ।

বইটি বেশ দুষ্প্রাপ্য তবে বর্তমান সংস্করনটি বেরিয়েছে বিশ্ববাণী প্রকাশণী থেকে ১৩০৪ বঙ্গাব্দে । দাম ৬০ টাকা ।

বাংলা উইকিপিডিয়ায় ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ।




Monday, February 22, 2010

লিখতে হবে বাংলায়

বেশ কিছুদিন হল এই ব্লগে আর লেখা হচ্ছে না প্রথম এই ব্লগে লিখতে শুরু করেছিলাম প্রায় চার বছর আগে ২০০৬ সালের মে মাসে । বর্তমানে অবস্থাটা অনেকটাই পালটেছে তখন ইন্টারনেটে বাংলার পাঠক সংখ্যা খুবই কম ছিল আর ব্লগার তো ছিল আরো কম এখন উইনডোজ ভিস্তা আর সেভেন এ কোনো কনফিগারেশন ছাড়াই ভাল বাংলা পড়া যায় আর অভ্র কিবোর্ড এবং ইউনিকোড বাংলা সম্পর্কে মানুষ আরো বেশি করে জেনেছেন তাই শুধু বাংলাদেশ নয় ভারত থেকেও বাংলা ব্লগারের সংখ্যা বাড়ছে আর কিছু দিনের মধ্যে যে ভারতীয় বাংলা ব্লগারের সংখ্যা আরো বাড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই

এই ব্লগ আমি ছদ্মনামে শুরু করেছিলাম কারন সেই সময় ভেবেছিলাম যে এখানে নানা রকম বির্তকিত বিষয় নিয়ে লিখব
অনলাইনে নিজের আসল নামকে যতটা সম্ভব কোনো রকম বিতর্ক থেকে দূরে রাখাই ভালো। বেশ কিছু বিষয় নিয়ে লিখেওছিলাম এর মধ্যে লেখার পরিমান কমে গেলেও এটা মনে করার কোনো কারন নেই যে আমি বাংলায় ব্লগিং ছেড়ে দিয়েছি আমি লিখব কারন লিখতে হবে বাংলায়