Friday, June 23, 2006

কমিউনিস্ট জোকস্ ১০

সোভিয়েত বেতার কেন্দ্রের ঘোষণা :
-- মস্কোয় এখন সময় বেলা তিনটে, স্‌ভের্দলোভাস্কে বিকেল চারটে, তোমস্কে পাঁচটা, ইরকুতস্কে সন্ধে ছ’টা, ভ্লাদিভস্তকে রাত এগারোটা....
বেতার বিবরণী শুনতে শুনতে মন্তব্য করলেন এক বৃদ্ধ :
-- যে দেশে এত অব্যবস্থা, এত অরাজকতা, এত বিশৃঙ্খলা,- সে দেশের উন্নতি হবে কি করে ?


ক্রুশ্চেভ আমলের ঘটনা :
সরকারের ধামাধরা লেখক ও সাংবাদিক করনেইচুক সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন । সঙ্গে সঙ্গে এলেন সরকারি ডাক্তার । ডাক্তারকে বলা হল, মনে হচ্ছে কমরেড করনেইচুকের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে । ঘোর প্রতিবাদ করে ডাক্তার বললেন :
-- অসম্ভব ! আমি কমরেড করনেইচুককে বহু বছর ধরে চিনি । তাঁর মেরুদণ্ডই নেই ।

--হ্যালো এটা কি কেজিবি ?
-- না, কেজিবি ধ্বংস হয়ে গেছে ।
আবার ফোন :
-- হ্যালো, এটা কি কেজিবি ?
-- না, কেজিবি ধ্বংস হয়ে গেছে ।
কিছুক্ষন পর আবার একই ফোন
-- হ্যালো, এটা কি কেজিবির সদর দপ্তর ?
-- না । আপনি কে মশাই ? ক’বার আপনাকে বলতে হবে যে কেজিবি ধ্বংস হয়ে গেছে ?
-- আহা, এত চটছেন কেন ? ভাল খবরটা বার বার শুনতে কার না ভাল লাগে, বলুন ?

কেজিবি অফিসে ফোন :
-- হ্যালো, আমাদের তোতাপাখিটা হারিয়ে গেছে ।
-- আঃ ! এটা কেজিবি অফিস, এ নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই । আপনি বরং স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করুন ।
-- তা আমরা জানি । কিন্তু আপনাদের জানিয়ে রাখতে চাই যে, পাখিটি যা বলে, সেটা ওর একান্ত ব্যক্তিগত (বা পক্ষীগত) নিজস্ব মতামত । আমাদের মতামতের সঙ্গে তার কোন মিল নেই ।

প্রশ্ন : পাউণ্ড, ডলার ও রুবলের পারস্পরিক বিনিময় হার কত ?
উত্তর : এই পাউণ্ড ওজনের রুবলের দাম এক ডলার ।

বঁড়শিতে মাছ ধরছে একজন । ফাৎনা ডুবছে । টেনে তুলে সে দেখল, সুন্দর একটা সোনালি মাছ । লোকটিকে কাতর অনুনয় বিনয় করে মাছটি বলল :
-- আমাকে ছেড়ে দাও, তোমার যে কোন ইচ্ছে আমি পূরণ করে দেব ।
-- যে কোনও ইচ্ছে ? ঠিক আছে, তাহলে সব কমিউনিস্টকে কফিনে ভরে সমুদ্রে ভাসিয়ে দাও ।
-- সব কমিউনিস্টকে ? তাদের মধ্যে তো অনেক ভালো কমিউনিস্ট আছে ।
-- বেশ । তাহলে ভাল কমিউনিস্টদের ভাল কফিনে ভরো, আর খারাপ কমিউনিস্টদের ভরো খারাপ কফিনে ।

মাছের দোকানে গিয়ে ক্রেতা বলছেন :
-- ওহে, আমাকে ওই রাষ্ট্রনায়ক মাছটা দাও তো হে ।
-- রাষ্ট্রনায়ক মাছ ? সেটা আবার কি ?
-- ওই যে, মোটাসোটা, চর্বিওয়ালা, মাথাবিহীন মাছটা ।

ব্রেঝনেভ আমল । সোভিয়েত অর্থনীতিতে তখন ধস শুরু হয়ে গেছে । সেই আমলের শেষের দিকে সোশ্যালিস্ট, ক্যাপিটালিস্ট এবং কমিউনিস্ট এই তিন জনের একটা নির্দিষ্ট স্থানে দেখা করার কথা । নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে এল সোশ্যালিস্ট । বলল :
-- মাছের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম বলে আসতে দেরি হয়ে গেল । খুব দুঃখিত ।
-- লাইন ? সেটা আবার কি ? -- ক্যাপিটালিস্টের প্রশ্ন ।
-- মাছ ? সেটা আবার কি ? -- প্রশ্নকর্তা কমিউনিস্ট ।

গর্বাচভের জমানা । রুবলের দাম তখন কানাকড়িও নয় । গোটা সোভিয়েত ইউনিয়ন জুড়ে নিত্যপণ্যের অবিশ্বাস্য দুষ্প্রাপ্যতা । সেই সময় মাছের দোকানে শোনা গেল নিম্নোক্ত কথোপকথন :
ক্রেতা : কড মাছ আছে ?
বিক্রেতা : নেই ।
ক্রেতা : হেরিং আছে ?
বিক্রেতা : নেই ।
ক্রেতা : স্যামন আছে ?
বিক্রেতা : নেই ।
ক্রেতা : ম্যাকারেল আছে ?
বিক্রেতা : শুনুন মশাই, এটা মাছের দোকান । ইনফর্মেশন ব্যুরো নয় ।

Thursday, June 22, 2006

সহজে রঙিন করুন আপনার সাদাকালো ছবি

আমরা অনেকেই কমপিউটারের সাহায্যে আমাদের পরিবারের পুরনো সাদা কালো ছবি রঙিন করেছি বা করতে চাই । এর জন্য সবাই সাধারনত ব্যবহার করে থাকে ফটোশপ অথবা পেন্ট শপ প্রো এর মতো সফটয়্যার । কিন্তু ফটোশপ দিয়ে এই ছবিগুলিকে রঙিন করা সময় সাপেক্ষ কারন প্রথমে সাদা কালো ছবিটির আলাদা আলাদা অংশ সিলেকশন করতে হয় তার পর রঙ করতে হয় । এটি খুবই সময় সাপেক্ষ একটা ব্যাপার এবং ফটোশপ সম্পর্কে ভালরকম জ্ঞান না থাকলে করাও যাবে না ।
কিন্তু বর্তমানে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি আপনার সাদা কালো ছবি রঙিন করতে পারেন । সফটওয়্যারটির নাম Recolored । এটির ট্রায়াল ভার্সন ডাউনলোড করতে পারবেন www.recolored.com থেকে ।
এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা খুবই সহজ । বেশী কিছু শেখার দরকার পড়ে না । ফটোশপের মত জটিল লেয়ার সিস্টেমও এতে নেই । এই সাইটের টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে খুব সহজভাবে বুঝিয়ে দেওয়া আছে এটি কিভাবে ব্যবহার করতে হবে । আপনাকে খালি কয়েকটি স্যাম্পেল রং বেছে নিতে হবে আর সাদাকালো ছবির উপর কিছু দাগ টানতে হবে । বাকি কাজ এই সফটওয়্যারটিই করে দেবে ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে কিছুদিন আগে মুঘল-এ-আজম ছবিটি সাদা কালো থেকে রঙিন করা হয়েছিল । সেটি অবশ্য এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা হয় নি, কিন্তু মূলত এই টেকনোলজিই যে ব্যবহার করা হয়েছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই ।
এখনও অবশ্য এতে সাদাকালো ভিডিও রঙিন করার কোনো সুবিধা নেই তবে আশা করি ভবিষ্যতে এই সুবিধাও পাওয়া যাবে ।
তাই অবশ্যই এই সুন্দর সফটওয়্যারটি একবার পরখ করে দেখুন আর আমাকে জানান কেমন লাগল ।

Wednesday, June 21, 2006

কমিউনিস্ট জোকস্ ৯

প্রশ্ন : কখন গোটা দেশ জুড়ে দুর্ভিক্ষ হবে ?
উত্তর : চীন দেশের লোকেরা যখন কাঠি ছেড়ে কাঁটাচামচ দিয়ে খেতে শুরু করবে ।

প্রশ্ন : চীনে বেড়ালদের মেরে ফেলা হচ্ছে কেন ?
উত্তর : কারণ তারা মাও না বলে ম্যাও বলছে ।

প্রশ্ন : চীনের কমিউনিজম এবং নিজের স্ত্রীর মধ্যে মিল কোথায় ?
উত্তর : দুটোই হাতল বিহীন সুটকেসের মত । টানাও কঠিন, ফেলে দিতেও লজ্জা হয় ।

মাও-সে-তুং (অধুনা মাও-জে-দং) টেলিগ্রাম পাঠালেন ক্রুশ্চেভকে :
চীনে দুর্ভিক্ষ । দয়া করে খাদ্যদ্রব্য পাঠান ।
ক্রুশ্চেভ উত্তর দিলেন :
আমাদের নিজেদের অবস্থাও রীতিমতো সঙ্কটজনক । তাই কোনো খাদ্যদ্রব্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না । পেটে পাথর বাঁধুন ।
মাও এর ফিরতি টেলিগ্রাম : জরুরী ভিত্তিতে পাথর পাঠান !

প্রাগের সরকারি ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিতে এসেছেন এক চেকোস্লোভাকিয় নাগরিক । কাউন্টারে ক্যাশিয়ারের সঙ্গে তাঁর কথোপকথোনের ধারাভাষ্য :
-- অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে নিদেন পক্ষে কত জমা দিতে হবে ?
-- কুড়ি ক্রোন ।
-- ব্যাঙ্ক যদি হঠাৎ দেউলিয়া হয়ে যায়, তাহলে আমার টাকার কি হবে ?
-- আপনার জমা টাকার ব্যাপারে যাবতীয় নিশ্চয়তা দেয় আমাদের রাষ্ট্র ।
-- যদি আমাদের রাষ্ট্রের খারাপ একটা কিছু হয় ?
-- আমাদের রাষ্ট্রের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন ।
-- আর যদি খোদ সোভিয়েত ইউনিয়নেরি খারাপ কিছু হয় ?
-- এমন একটা সুসংবাদের জন্য মাত্র কুড়ি ক্রোন জলাঞ্জলি দিতেও আপনার আপত্তি ?!

ইস্টার উপলক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়ন দশ লাখ ডিম উপহার দিতে চাইল পোল্যান্ডকে । পোল্যান্ড তা নিতে অস্বীকার করল । কারণ তারা হিসাব কষে দেখেছে, দশ লাখ ডিম দিতে হলে পাঁচ লাখ সোভিয়েত সৈন্যকে আসতে হবে পোল্যান্ডে ।

হাতি বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে । বিভিন্ন দেশ হাতি বিষয়ে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রচনা লিখে পাঠিয়েছে ।
জার্মানী পাঠিয়েছে : হাতি পালন বিষয়ে সংক্ষিপ্ত ভূমিকা ।
ইংল্যান্ড : হাতি এবং উপনিবেশ ।
আমেরিকা : হাতি এবং পুঁজিবাদ ।
ফ্রান্স : হাতি এবং প্রেম ।
সোভিয়েত ইউনিয়ন : রাশিয়া - হাতির মাতৃভূমি
বুলগেরিয়া : সোভিয়েত হাতি - বুলগেরিয় হাতির শ্রেষ্ঠ বন্ধু ।

ধরা যাক, দুজন পুরুষ এবং একজন মহিলা অকস্মাৎ নির্জন কোনও একটি দ্বীপে গিয়ে পড়েছে । এই অবস্থায় কোন জাতির আচরন কেমন হবে ?
দুই ইংরেজ পুরুষ মহিলাটির জন্য ডুয়েল লড়বে ।
আমেরিকানরা বাধিয়ে দেবে ধন্ধুমার লড়াই ।
ফরাসিরা তিনজন একত্রে বসবাস শুরু করবে ।
রুশরা গড়ে নেবে যৌথ খামার । একটি পুরুষ হবে খামারের ডিরেক্টর । অন্য পুরুষটি হবে খামার শাখার সেক্রেটারি । আর মাঠে কাজ করবে মহিলাটি ।
বুলগেরিয়রা মস্কোয় টেলিগ্রাম পাঠিয়ে কর্মপন্থা নির্ধারনের জন্য নির্দেশের অপেক্ষায় থাকবে !

গো-খাদ্যের প্রচণ্ড আকাল দেখা দেওয়ায় বিজ্ঞানীদের আশ্চর্য কৌশলে জিরাফের সঙ্গে গাভীর সঙ্কর তৈরি হল । উদ্দেশ্য : খাদ্যের জন্য সে লম্বা গলা বাড়িয়ে দেবে ইউরোপে, আর দুধ দেবে সোভিয়েত ইউনিয়নে !

ফিদেল কাস্ত্রোকে একটি নতুন মোটরগাড়ি উপহার দিলেন ক্রুশ্চেভ । গাড়ি চালাতে গিয়ে কাস্ত্রো দেখলেন যে স্টিয়ারিংই নেই । তৎক্ষনাৎ মস্কোয় টেলিগ্রাম পাঠালেন তিনি :
-- স্টিয়ারিং এর অভাবে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না । দয়া করে তাড়াতাড়ি স্টিয়ারিং পাঠান ।
ক্রুশ্চেভ উত্তর দিলেন :
-- গাড়িতে বসে আপনি অ্যাক্সিলেটরে চাপ দিন । আমি এখান থেকে স্টিয়ারিং ঘোরাব ।

প্রশ্ন : পশ্চিমের পুঁজিবাদী দেশগুলির অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেবার উপায় কি ?
উত্তর : সোভিয়েত প্ল্যানিং কমিশনের বিশেষজ্ঞদের সেখানে পাঠাতে হবে ।

Tuesday, June 20, 2006

কমিউনিস্ট জোকস্ ৮

জাতীয় উৎসব চলছে । বেরিয়েছে বিশাল শোভযাত্রা । বিরাট এক পোস্টার হাতে নিয়ে পায়ে পা মিলিয়ে চলেছে রাবিনোভিচ । পোস্টারে লেখা : ‘আনন্দময় শৈশবের জন্য কমরেড স্তালিনকে ধন্যবাদ ।’
পোস্টারটা দেখেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন পার্টির এক হোমরা চোপরা ।
ধমক দিয়ে তিনি বললেন : কমরেড রাবিনোভিচ, এটা কি আপনি ফাজলামি পেয়েছেন ? এই পোস্টারের মানে কি ? আপনি যখন শিশু ছিলেন, কমরেড স্তালিনের তখন তো জন্মই হয়নি ।
-- ধন্যবাদ তাঁকে সে কারণেই -- রাবিনোভিচের নির্বিকার উত্তর ।

স্ত্রীর সঙ্গে ট্রামে চড়ে যাচ্ছে রাবিনোভিচ । নিজের দুর্দশার কথা ভেবেই সম্ভবত সে হঠাৎ সশব্দে এক গভীর দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করল । ট্রামের অন্যান্য যাত্রীরা সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে দাঁড়িয়ে ক্রূর দৃষ্টিতে রাবিনোভিচকে দেখতে লাগলেন ।
ভীত সন্ত্রস্ত স্ত্রী তাকে কানে কানে বলল :
-- কতবার তোমাকে বলেছি, লোকজনের সামনে রাজনীতি নিয়ে টুঁ শব্দটিও করবে না !

একদিন অস্ফূটে বলেই ফেলল রাবিনোভিচ :
-- শালার অভিশপ্ত জীবন
সাদা পোশাকে কেজিবির লোক ছিল আশেপাশেই । খপ করে ধরল এবং বলল :
-- চলুন আপনাকে যেতে হবে আমার সঙ্গে ।
ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গিয়ে তোতলাতে তোতলাতে রাবিনোভিচ বলে :
-- আমি তো খারাপ কিছু বলিনি । বলছিলাম পশ্চিমি পুঁজিবাদী দেশগুলোর অভিশপ্ত জীবনের কথা ।
-- আপনি বললেন আর আমি বিশ্বাস করলাম, এতটাই নিরেট নাই আমি ? অভিশপ্ত জীবন কোথায়, তা ভালো করেই জানা আছে আমাদের । চলুন আমার সঙ্গে ।

রাবিনোভিচ প্রশ্ন করল তার বন্ধুকে :
-- স্তালিনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় কত খরচ হল ?
-- পঞ্চাশ লক্ষ রুবল ।
-- আঃ ওই টাকা দিয়ে গোটা সরকারকে কবর দিতে পারতাম আমি !

রাবিনোভিচকে প্রশ্ন করা হল:
-- জাতি হিসাবে ইহুদিরা এত আশাবাদী কেন ?
-- ইতিহাস আমাদের বাধ্য করেছে আশাবাদী হতে ।
-- কি রকম ?
-- যেমন ধরুন, মিশরের ফারাওরা যখন ছিল, ইহুদিরাও তখন ছিল । আজ ফারাওরা নেই । কিন্তু ইহুদিরা আছে । ছিল প্রাচীন গ্রীকরা, তখন ইহুদিরাও ছিল । প্রাচীন গ্রিকরা আজ নেই, কিন্তু ইহুদিরা আছে । ছিল রাশিয়ার জার, ছিল ইহুদিরা । আজ জার নেই, কিন্তু ইহুদিরা আছে । স্তালিন ছিল, ইহুদিরা ছিল । স্তালিন নেই, ইহুদিরা আছে । নাসের ছিল, ইহুদিরা ছিল । নাসের নেই, ইহুদিরা আছে । এখন আছে কমিউনিস্টরা, আছে ইহুদিরা ।
-- আপনি কি কিছু ইঙ্গিত করতে চাইছেন ?
-- মোটেও না । আমি শুধু বলতে চাই, আমরা ফাইনালে উঠেছি ।

কেজিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে রাবিনোভিচকে ।
-- আমাদের কাছে খবর এসেছে, আপনি হিব্রু ভাষা শিখছেন । তার মানে ইজরায়েল যাওয়ার প্ল্যান আছে আপনার ।
-- মোটেও না । আমি ধর্মীয় গ্রন্থে পড়েছি, স্বর্গে হিব্রু ভাষায় কথা বলতে হবে ঈশ্বরের সঙ্গে । তাই হিব্রু ভাষাটা শিখে রাখছি ।
-- মৃত্যুর পর আপনি স্বর্গে যাবেন, এই ধারনা আপনার হল কোথা থেকে ?
-- তা নিশ্চিত করে বলতে পারি না ঠিকই । তবে নরকে যদি যেতেই হয়, তার জন্য রুশ ভাষাটা তো শেখাই আছে !

অবশেষে রাবিনোভিচ অনুমতি পেল বিদেশ ভ্রমনের । বিদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে সে টেলিগ্রাম পাঠাতে শুরু করল । টেলিগ্রামগুলি এরকম :
স্বাধীন বুলগেরিয়া থেকে শুভেচ্ছা । -- রাবিনোভিচ
স্বাধীন রুমানিয়া থেকে শুভেচ্ছা । -- রাবিনোভিচ
স্বাধীন হাঙ্গেরি থেকে শুভেচ্ছা । -- রাবিনোভিচ
অষ্ট্রিয়া থেকে শুভেচ্ছা । -- স্বাধীন রাবিনোভিচ

ইমিগ্রশন নিয়ে যেসব সোভিয়েত ইহুদি ইজরায়েলে চলে এসেছে, তাদের নস্টালজিয়া দূর করার একটা উপায় বাতলেছে রাবিনোভিচ । উপায়টি এরকম :
তেল আবিবে ‘জন্মভূমির টান’ নামে একটা রেস্তোরা খুলতে হবে । সেখানে খদ্দের গিয়ে চেয়ারে বসবে, কিন্তু অর্ডার নেওয়ার জন্য বহুক্ষন কেউ আসবে না । খেতে দেবে যাচ্ছেতাই । দুর্ব্যবহার করবে, বিল মেটাবার সময় ঠকাবে এবং বেরবার সময় পেছন থেকে কেউ গজগজ করে করে বলেব, শালা ইহুদির বাচ্চা ! ভাগ্ ব্যাটা ইজরায়েলে !

রাবিনোভিচ মারা যাওয়ার পর তাকে নরকে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হল । যমদূতদের কাছে সে তীব্র প্রতিবাদ জানাল । বলল :
-- সোভিয়েত দেশে এত বছর কাটানোর পরেও কি আমার স্বর্গে যাওয়ার সৌভাগ্য হতে পারে না ?
-- যে জীবন তুমি সোভিয়েত দেশে কাটিয়ে এসেছো, হে রাবিনোভিচ, যমদূত বলল, তারপর নরকই তোমার কাছে মনে হবে স্বর্গের মতো !

এক বস্তা রুবল নিয়ে গ্রাম থেকে এক কৃষক এল মস্কো শহরে । শহরে পৌঁছে সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল । পুরনো রুবলের বদলে নতুন রুবল কোথায় দিচ্ছে, তার হদিশ অনেক জিজ্ঞাসা করেও কারও কাছ থেকে পেল না । ঘাড়ে ওই ভারি বস্তা নিয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করাও সম্ভব হচ্ছে না । তাই সে ফুটপাতে তার বস্তাটা রেখে নিজেই খোঁজ নিতে গেল কোথায় মুদ্রা বদলের কাউন্টার খোলা হয়েছে । সব জেনে ফিরে এসে দেখে তার রুবলগুলি সব ফুটপাতে গড়াগড়ি যাচ্ছে, আর বস্তাটা হাওয়া !

দেশলাই ফ্যাক্টরির ডিরেক্টর বিশেষ পুরস্কার পেলেন । কারণটা কি ? কারণ হল প্রতিবিপ্লবীরা সামরিক বিমান বন্দরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিতে চেয়েছিল । তাদের কাছে ছিল ওই ফ্যাক্টরির দেশলাই । অনেক চেষ্টা করেও তারা সেই দেশলাই দিয়ে আগুন জ্বালাতে পারেনি !

যৌথ খামারে জুতোর সরবরাহ এসেছে মাত্র একজোড়া । সেই জুতো জোড়া কাকে দেওয়া হবে তা নিয়ে মিটিং চলছে । অনেকে দীর্ঘ বক্তৃতা দিলেন । সবার শেষে উঠলেন যৌথ খামারের ডিরেক্টর । তিনি বললেন : আমি প্রস্তাব করছি, জুতোজোড়া আমাকে দিয়ে দেওয়া হোক । এই প্রস্তাবের পক্ষে যারা, তাঁরা চুপ করে বসে থাকুন । আর সোভিয়েত শাসনব্যবস্থার বিপক্ষে যাঁরা, তাঁরা হাত তুলুন !

স্তালিন ফোন করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে :
-- গমের সরবরাহ আসতে দেরি হচ্ছে কেন ?
-- বন্দর শ্রমিকরা লাগাতার ধর্মঘটে নেমেছে । বেতন বাড়ানোর দাবি করছে তারা ।
-- কেন, আপনাদের দেশে কি পুলিশ নেই ?

যৌথ খামার পরিদর্শনে বেরিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ক্রুশ্চেভ । ইচ্ছে খামারের অন্দরমহলটা নিজের চোখে দেখবেন । তাই বিশাল নিরাপত্তা বাহিনীকে বাইরে রেখে খামরের এক কর্মীর সঙ্গে ঘুরে ঘুরে দেখছেন । হঠাৎ ম্যানহোলের মুখ খোলা এক সার পচানোর গর্তে পড়ে গেলেন তিনি । খামারের কর্মী কোনও রকমে তাঁকে টেনে তুললেন । মোটামুটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ক্রুশ্চেভ সেই কর্মীকে চুপিচুপি বললেন:
-- দ্যাখো, আমি যে গর্তে পড়ে গিয়েছিলাম, সেটা কাউকে বোলো না । দারুন লজ্জার ব্যাপার হবে সেটা ।
-- তা বলব না কমরেড ক্রুশ্চেভ । কিন্তু আপনিও ভুলেও কাউকে বলবেন না যে আমিই আপনাকে গর্ত থেকে তুলে বাঁচিয়েছি । তাহলে, আমাকে আর আস্ত রাখবে না কেউ !

ছেলে প্রশ্ন করছে বাবাকে :
-- বাবা এখন কি দেশে কমিউনিজম ? না কি, অবস্থা আরও খারাপ হবে ?

Monday, June 19, 2006

মেছো জোকস্ ১

এক মেছুড়ে গপ্পো বলছে :
-- সেদিন জেটির ধারে ছিপ নিয়ে বসেছি । বসে আছি তো বসেই আছি । হঠাৎ ফাতনা নড়ে উঠল । স্বচ্ছ জলের ভিতর দিয়ে দেখি একটা পুঁটি মাছ টোপ গিলছে । এই তোমার কড়ে আঙুলের সাইজ । ওইটুকু মাছটাকে তুলব কিনা ভাবছি, এমন সময় দেখি বেশ বড় একটা রুইমাছ পুঁটিটাকে গিলে ফেলল । সবে টান দেবার উপক্রম করেছি । দেখি কি একটা বিশাল বোয়াল রুইটাকে কপাৎ করে খেয়ে ফেলল । জয়গুরু বলে দিলাম ছিপে টান ।
-- তারপর ? অধৈর্য শ্রোতা জানতে চান । তারপর কি হল ? আপনি কি বোয়ালটাকে তুললেন ?
-- না আর তোলা হল কই ? পুঁটিমাছটাই যে বঁড়শি থেকে ছেড়ে গেল !

মেছুড়ের বাড়িতে অনেকদিন বাদে বন্ধু এসেছেন । ড্রয়িংরুমে দেখেন কাচের বাক্সে বড় একটা মাছ স্টাফ করে সাজিয়ে রাখা আছে । ব্যাপারটা কি জানতে চাইলে মেছুড়ে বললেন :
-- গতবার মাছ ধরতে গিয়ে এটা পেয়েছিলাম । একা একটা ডিঙি নিয়ে বেরিয়েছিলাম । মাছটা টোপ গেলার পর কয়েক ঘন্টা আমার তো নাকানিচোবানি অবস্থা । ডিঙি সামলাই না মাছ সামলাই ! ডিঙি প্রায় উল্টে যায় এমন অবস্থা ! আর তুমি তো জানোই আমি সাঁতার জানি না । সে এক জীবন-মরন অবস্থা ! হয় মাছ, না হয় আমি - যে কোন একজন বাঁচবে !
-- তবে, বন্ধু উত্তর দিলেন, ডেকরেশনের দিক থেকে মাছটাই ভালো বলে আমার মনে হয় !

মাছ ধরার নেশায় না কি সব কিছু ভুলিয়ে দেয় । কিন্তু বিয়ের কথা যে ভোলে না, নীচের গল্পটা তার প্রমান ।
এক প্রৌঢ় এবং এক যুবক মাছ ধরতে বেরিয়েছে । সেদিন সত্যিই তাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল । প্রচুর মাছ ধরে তারা দিনের শেষে যখন বাড়ি ফিরছে, তখন প্রৌঢ় বললেন :
-- দিনটা দারুণ ছিল ! কি বল ?
-- যা বলেছেন ! এত বড় বড় মাছ কখনও তুলিনি ! যুবকের উত্তর ।
-- তাহলে আগামী কাল সকালে ফের আসব ! কী হে রাজি আছ তো ?
-- আগামীকাল ? আগামীকাল যে আমার বিয়ে ! থাকগে, বিয়েটা না হয় একদিন পিছিয়ে দেব ! -- যুবকের ঘোষণা ।

চার মহিলা ব্রীজ খেলছেন । ম্যান্টেলপিসের উপর স্টাফ করা বিশাল হাঙরটা সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষন করছিল । গৃহকত্রী বেশ গর্বের সঙ্গে বললেন :
-- আমি এবং আমার স্বামী গভীর সমুদ্রে এই হাঙরটাকে ধরেছিলাম ।
-- কিন্তু হাঙরটাকে বেশ মোটা লাগছে । ওটার পেটের ভেতর কী পোরা আছে ?
-- আমার স্বামী !

নদীর ধারে তাঁবু গেড়ে দুজন মাছ ধরছেন । ফিশিং ইন্সপেক্টর যথারীতি হাজির ।
-- এই ছিপটা কার আমি জানতে চাই । -- ইন্সপেক্টর গম্ভীর গলায় বলেন ।
-- আমার ।
-- আপনি কি জানেন না, এখানে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ?
-- জানি বই কি ! তবে, সত্যি কথাই বলি, আমরা কিন্তু মাছ ধরছি না । আমরা একটা সুতোয় বিয়ারের বোতল বেঁধে সেটাকে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছি মাত্র ! যাতে বিয়ারটা ঠান্ডা হয় । বুঝেছেন তো ?
-- হুম ! ইন্সপেক্টরের গম্ভীর মুখ গম্ভীরতর হয় । আমার সারা জীবনের অভিজ্ঞতায় কখনও কোনও বিয়ারের বোতল দেখিনি যেটা কিনা বৃত্তাকার ঘোরে আর মাঝে মাঝে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য জলের ওপর ভেসে ওঠে !

আচ্ছা জিম, যে বিশাল মাছটা তোমার সুতো ছিঁড়ে পালিয়ে গিয়েছিল, সেটা ঠিক কত বড় ছিল ?
-- সে তো ভাই বলতে পারব না ? এটুকু জানি, আমার হুইলে ৫০ গজ নতুন সুতো ছিল । ব্রিমটা টোপ গিলেই উজানে ছুটল । হুইলের সুতোও শেষ হল, আর আমি দেখলাম ব্রিমটার ল্যাজ তখনও নৌকার ধার দিয়ে চলেছে ।

দুটো গোল্ডফিশ ঝকঝকে অ্যাকোয়ারিয়ামের মধ্যে সাঁতার কাটছে । হঠাৎ একটি আরেকটিকে প্রশ্ন করে :
-- আচ্ছা আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন ?
দ্বিতীয় গোল্ডফিশটি সামনের পাখনাদুটো মাথায় ঠেকিয়ে উত্তর দেয় :
-- বলেন কি মশাই ? ঈশ্বরে বিশ্বাস করব না ? অবশ্যই করি । দিনে দুবার আমাদের এ ঘরের জল পালটে দেন কে তাহলে ?

অনেকক্ষন পাশে দাঁড়িয়ে অন্যের মাছ ধরা দেখছেন এক ভদ্রলোক । মাঝে মাঝে ফুট কাটছেন । মৎস্যশিকারীর মেজাজও স্ফূটনাঙ্কের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে । এক সময় দর্শক ভদ্রলোক প্রশ্ন করেন :
-- আচ্ছা আজ কি মাছ ঠোকরাচ্ছে না ?
ক্রুদ্ধ মৎস্যশিকারী উত্তর দিলেন :
-- জানি না মশাই ! আর যদি ঠুকরেও থাকেও তারা একে অন্যকে ঠোকরাচ্ছে !

ছোট্ট বাপন তার মাকে জিজ্ঞেস করে :
-- আচ্ছা মা, সব গল্পই কি শুরু হয় এক যে ছিল রাজা দিয়ে ?
মা বলেন :
-- না বাবা । কখনও কখনও তার শুরুটা হয় এরকম : সে মাছটা ছিল কম সে কম দশ ফুট লম্বা, লেজটা ধরলে আরও............!

Saturday, June 17, 2006

কমিউনিস্ট জোকস্ ৭

লেনিনের আমলে সোভিয়েত ইউনিয়নের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব তখন ছিলেন ফেলিক্স দ্‌জেরজিনস্কি । কেজিবি নামে সুপরিচিত প্রতিষ্ঠানের আদিরূপ একেভিডি-র উদ্যেক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি । আর নাদিয়া ক্রুপস্কায়া ছিলেন লেনিনের স্ত্রী ।
এক শিল্পী ছবি এঁকেছেন । ছবির নাম ‘পোল্যান্ডে লেনিন’ । ছবিতে দেখা যাচ্ছে শুধু দুজোড়া পা । এক নিরেট দর্শক প্রশ্ন করলেন, পাগুলো কার ?
-- কেন, ফেলিক্স দ্‌জেরজিনস্কি এবং নাদিয়া ক্রুপস্কায়ার । - শিল্পীর উত্তর ।
-- কিন্তু ছবির নাম তো ‘পোল্যান্ডে লেনিন’ । তা লেনিন কোথায় ?
-- আঃ এটাও বোঝেন না ? লেনিন তো পোল্যান্ডে !

পুশকিনের মূর্তি গড়া হবে । জমা পড়েছে কয়েকটি প্রজেক্ট । সেগুলো খতিয়ে দেখছেন স্তালিন ।
এক নম্বর প্রজেক্ট : পুশকিন বায়রনের লেখা বই পড়ছেন ।
-- নাঃ চলবে না, স্তালিনের মন্তব্য, কারণ ঐতিহাসিকভাবে এটা বিশ্বাসযোগ্য, কিন্তু এর মধ্যে কোথাও রাজনৈতিক বক্তব্য নেই ।
দু নম্বর প্রজেক্ট : পুশকিন স্তালিনের লেখা বই পড়ছেন ।
স্তালিন বললেন, রাজনৈতিক দিক দিয়ে এটা অবশ্যই অনুমোদনযোগ্য, কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে ভিত্তিহীন । পুশকিনের জীবদ্দশায় আমি কোন বই লিখিনি ।
অতএব রাজনৈতিকভাবে অনুমোদনযোগ্য এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে বিশ্বাসযোগ্য তিন নম্বর প্রজেক্টটি ছাড়পত্র পেল । মূর্তির বিষয়:
স্তালিন পুশকিনের লেখা বই পড়ছেন ।
মূর্তি নির্মিত হল । উদ্বোধনের পর দেখা গেল, স্তালিন পড়ছেন স্তালিনের লেখা বই ।

নতুন গায়ক স্টেজে গান গাইতে ওঠার আগেই নিশ্চিত ছিল, নিজের সাফল্য সম্পর্কে । সে ভেবে রেখেছিল : প্রথম গানের পর যদি হাততালি না পড়ে তাহলে লেনিনের উপর গান গাইব । তারপরেও যদি হাততালি না দেয় শ্রোতারা, তাহলে গাইব স্তালিনের উপর গান । দেখব, তখন হাততালি না দিয়ে তারা যায় কোথায়....
কোথায় আবার ? কেজিবির দপ্তরে !

টিওডর ড্রাইজার ছিলেন সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী আমেরিকান লেখক । জিনিয়াস, টাইটান, ফিন্যান্সিস্ট, আমেরিকা ট্রাজেডি ইত্যাদি বেশ কয়েকটি বই তিনি লিখেছিলেন । সোভিয়েত ইউনিয়নে তাঁর প্রায় সব বই-ই অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল । তাঁর সম্পর্কে রসিকতা করে বলা হয় :
প্রশ্ন : টিওডর ড্রাইজার কী করে কমিউনিস্ট হলেন ?
উত্তর : তিনি প্রথমে হতে চেয়েছিলেন জিনিয়াস, কিন্তু তত মগজ ছিল না তাঁর মাথায় ; পরে তিনি হতে চাইলেন টাইটান, কিন্তু তাঁর শরীরে ছিল না তত শক্তি, ভাবলেন ফিন্যান্সিস্ট হবেন, কিন্তু টাকায় কুলোল না ; পরে তাঁর জীবনে ঘটল আমেরিকান ট্রাজেডি , ফলে তিনি হয়ে গেলেন কমিউনিস্ট ।

ইতিহাস প্রসিদ্ধ আলেকজান্ডার, জুলিয়াস সিজার এবং নেপোলিয়ন মস্কোর রেড স্কোয়ারে দেখছেন সোভিয়েত সশস্ত্র বাহিনীর শোভাযাত্রা ।
আলেকজান্ডার বললেন :
-- এরকম সোভিয়েত ট্যাঙ্ক আমার থাকলে কেউ দাঁড়াতেই পারত না গ্রিক বাহিনীর সামনে ।
জুলিয়াস সিজার বললেন :
--আমার কাছে সোভিয়েত বোমারু বিমান থাকলে গোটা দুনিয়া জয় করে নিতাম আমি ।
-- আর আমার কাছে যদি একটি পত্রিকা থাকত প্রাভদার মতো , বললেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, তাহলে ওয়াটারলুতে আমার পরাজয়ের কথা বিশ্ব আজও জানতে পারত না ।

রাজনৈতিক প্রোপাগন্ডার সমাবেশ । আবেগমথিত কন্ঠে বক্তা আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন :
-- কমরেড, সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা নিউট্রন বোমা মেরে আমাদের উড়িয়ে দেবে বলে হুমকি দিচ্ছে । কমরেড, আপনারা জানেন, নিউট্রন বোমা বিস্ফোরিত হলে সব মানুষ মারা যাবে, কিন্তু আস্ত থাকবে ঘরবাড়ি, দোকানপাট - বাকি সব কিছুই । তাই, কমরেড....
শ্রোতাদের মধ্য থেকে একজন উঠে চেঁচিয়ে প্রশ্ন করলেন :
-- কিন্তু কমরেড আপনি কি বলতে পারেন, আমাদের দেশে ঠিক কোন ধরনের বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে, যার ফলে আমরা সবাই আস্ত আছি, অথচ দোকানপাট থেকে সব কিছু উধাও ?


বুড়ো বলশেভিক বলছেন সমবয়সী প্রতিবেশীকে :
কমিউনিজম পর্যন্ত আমরা বেঁচে থাকতে পারব না । কিন্তু দুঃখ হয় ছেলে-মেয়ে, নাতি নাতনিদের জন্য !

Friday, June 16, 2006

কমিউনিস্ট জোকস্ ৬

কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য নেওয়া হচ্ছে । তার জন্য চলছে ইন্টারভিউ ।
এমনই এক সাক্ষাৎকারের বিবরন:
প্রশ্ন : তোমার মা কে ?
উত্তর : সোভিয়েত ইউনিয়ন ।
প্রশ্ন : তোমার বাবা কে ?
উত্তর : আমাদের মহান নেতা কমরেড স্তালিন ।
প্রশ্ন : তোমার সবচেয়ে কাঙ্খিত স্বপ্ন কী ?
উত্তর : অচিরেই পুরোপুরি অনাথ হয়ে যাওয়া ।

দুই কয়েদির কথোপকথন :
-- আপনাকে ক’বছরের জেল দিয়েছে ?
-- কুড়ি বছরের ।
-- কারন কী ?
-- এমনি । কোনও কারন ছাড়াই ।
-- মিথ্যে কথা । কারণ ছাড়া হলে তো দশ বছরের জেল হয় ।

সোভিয়েত দেশ ছেড়ে আমেরিকায় গিয়ে বসবাস করছিলেন এক ভদ্রলোক । সেখানে জমজমাট ব্যবসা করে একদিন রীতিমতো কোটিপতি হয়ে গেলেন তিনি । বয়সও হয়েছিল । দুঃখের বিষয়, আমেরিকা যাওয়ার সময় তাঁর পরিবারের সকলকে নিয়ে যেতে পারেননি । বিশষ করে ছোট নাতির জন্য তাঁর মন কেমন করত । ইতিমধ্যে ছোট শিশুটি যুবক হয়েছে । বৃদ্ধ কোটিপতি চিঠি লিখলেন নাতিকে -- যেভাবে পারো এখানে চলে এসো । এখানে আমাকে দেখাশোনা করার কেউ নেই । শরীরও বেশ খারাপ । তাছাড়া কোটি কোটি ডলারের এত বড় সম্পত্তির ভার তো তোমাকেই নিতে হবে, ইত্যাদি ।
যথারীতি কেজিবির হাতে পড়ল সেই চিঠি । নাতির ডাক পড়ল কেজিবি অফিসে । বাঘা অফিসাররা নাতিকে বললেন, ‘আপনার দাদুকে চিঠি লিখে বলে দিন ব্যবসাপত্র গুটিয়ে টাকা-পয়সা সব এখানকার ব্যাঙ্কে ট্রান্সফার করে দিতে । তারপর তিনি এখানেই চলে আসুন । তাঁর যাতে এখানে কোনও অসুবিধে না হয় তার ব্যবস্থা রাষ্ট্রই করবে ।’
নাতি উত্তর দিলেন, আপনারা, মশাই গোড়াতেই ভুল করছেন । দাদুর শরীর খারাপ হয়েছে ঠিকই । কিন্তু মাথাটা খারাপ হয় নি !

-- লেনিন পরতেন সাধারন জুতো, কিন্তু স্তালিন পরেন গামবুট । কেন ?
-- কারণ লেনিনের সময় দেশে নোংরামির পরিনাণ ছিল পায়ের পাতা পর্যন্ত । স্তালিনের সময় তা হাঁটু ছুঁই ছুঁই করছে !

হুবহু স্তালিনের মতো দেখতে একজনকে গ্রেপ্তার করে স্তালিনের কাছে নিয়ে এল কেজিবির লোকেরা । জানতে চাইল কী করা উচিত একে নিয়ে ?
-- গুলি করে মেরে ফেল, স্তালিন বললেন ।
-- না কি, গোঁফ ছেঁটে দেব কমরেড ?
-- হ্যাঁ, তাও করা যেতে পারে -- নির্বিকার স্তালিনের উত্তর ।

একা রাশিয়ান গেছেন ইতালি ভ্রমনে । সেখানে কোদাল কাঁধে এক শ্রমিকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হল । রুশ পর্যটক কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করলেন,
-- হপ্তায় ক’দিনের কাজ পাও তুমি ?
-- মাত্র দু’দিনের, সিনর !
-- খুবই খারাপ । আচ্ছা কমিউনিস্টরা যদি ইতালির ক্ষমতায় আসে, তাহলে সপ্তাহে ক’দিন কাজ পাবে বলে আশা কর ?
-- ওহ সিনর, তাহলে তো আমাকে সাতদিনই কাজ করতে হবে -- দিবারাত্র ।
-- বাঃ তা কী কাজ কর তুমি ?
-- কবর খোঁড়াই আমার কাজ সিনর !


শ্রমিকদের সভায় রুশ শ্রমিক নেতা তাত্ত্বিক আলোচনা করছেন । তিনি বললেন :
-- কমিউনিজমের আসল নির্যাস হল প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া ।
-- না কমরেড, এক শ্রমিক তাঁর বাস্তব জ্ঞান প্রয়োগ করে প্রতিবাদ জানালেন, আসলে ওটা হবে প্রতিবেশীদের ভাগটা নিয়ে নেওয়া !

শ্রমদিবসের প্যারেডে হাজিরা দেওয়ার জন্য রাবিনোভিচকে ডাকা হয়েছে কারখানার পার্টি শাখায় । তাঁকে বলা হল :
-- এই কারখানার সবচেয়ে প্রবীণ শ্রমিক হিসেবে আপনাকে কমরেড চেরনেনকোর প্রতিকৃতি বহনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে ।
প্রতিবাদ জানিয়ে রাবিনোভিচ বললেন :
-- না কমরেড আমাকে এই দায়িত্ব দেবেন না । লেনিনের প্রতিকৃতি নিয়ে প্যারেডে গিয়েছি , লেনিন মারা গেছেন । গিয়েছি স্তালিনের ছবি নিয়ে, মারা গেছেন স্তালিনও । ক্রুশ্চেভের প্রতিকৃতি নিয়ে গিয়েছি, তিনিও গেছেন পরলোক । ব্রেঝনেভের ছবি নিয়েছি, তিনিও বিদায় নিয়েছেন পৃথিবী থেকে । আর এই তো ক’দিন আগে বহন করেছি আন্দ্রোপভের প্রতিকৃতি । তিনিও আজ আর এই ধরাধামে নেই ।
পাশ থেকে এক শ্রমিক প্রস্তাব দিলেন :
-- শুধু চেরনেনকোর প্রতিকৃতিই নয়, রাবিনোভিচকে কমিউনিজমের লাল পতাকাও বইতে দেওয়া হোক ।


কমিউনিস্ট পার্টির তাত্ত্বিক নেতা শ্রমিকদের ক্লাস নিচ্ছেন :
-- আপনারা নিশ্চই এতদিনে জেনে গেছেন যে কমিউনিজম ইতিমধ্যে দিগন্তে পৌছে গেছে ।
-- দিগন্ত মানে কী, কমরেড ?
-- দিগন্ত হল একটা কাল্পনিক রেখা, যেখানে ভূমি মিশে যায় আকাশের সঙ্গে । আর দিগন্তের দিকে যত এগোনো যাবে, তত বেশি তা দূরে সরে যেতে থাকে ।

জাদুঘরে স্তালিনের মায়ের প্রতিকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে একটি লোক খুব বিমর্ষ ভাবে মাথা ঝাঁকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল :
-- কী সুন্দরী মহিলা । কিন্তু কেন যে সময়মতো অ্যাবরশান করাননি !

মানুষের সুখের রকমফের :
কাজের শেষে ঘরে ফির এল জার্মান । বউ তাকে খেতে দিল ঝলসানো মাংস আর বিয়ার । ডিনার করে সে শুয়ে পড়ল বউকে জড়িয়ে ধরে । তারা সুখী ।
কাজকর্ম সেরে ইংরেজ ফিরে এল সন্ধ্যাবেলায় । স্ত্রীর সঙ্গে ডিনার করে কুকুরকে নিয়ে একটু বেড়াতে বেরোল সে । তারপর ফিরে এসে বউকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল সে । তারা সুখী ।
হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে বাড়ি ফিরল ফরাসি । বউকে ঘরে পেল না । এক বোতল শ্যাম্পেন নিয়ে সে চলল প্রেমিকার কাছে । তারা সুখী ।
কাজের শেষে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার মিটিঙে বাধ্যতামূলক হাজিরা দিয়ে বাড়ি ফিরল রুশ দম্পতি -- ইভানভ আর ইভানভা । বেশ একচোট ঝগড়া হল দু’জনের মধ্যে । ডিনারের প্রশ্নই ওঠে না । কারণ ঘরে খাওয়ার মতো কিছু নেই । তাই পরস্পরের দিকে পিঠ ফিরিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল তারা । মাঝরাতে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ ।
-- কে ?
-- আমরা কেজিবি থেকে আসছি । দরজা খুলুন ।
দরজা খুলতে জনাদশেক লোক ঢুকল । নেতা গোছের একজন প্রশ্ন করল :
-- আপনারা পেত্রোভ আর পেত্রোভা তো ? গ্রেপ্তার করা হল আপনাদের ।
-- ভুল করছেন । আমরা পেত্রোভ আর পেত্রোভা নই, আমরা ইভানভ আর ইভানভা । পেত্রোভরা থাকেন উপরের ফ্ল্যাটে ।
দুঃখিত বলে কেজিবির লোকজন চলে গেল । একটু পরে ইভানভ আর ইভানভা জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখল পেত্রোভ ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে কেজিবি । গাড়ির দরজা বন্ধ হতেই শুয়ে পড়ল ইভানভ আর ইভানভা ।
তারা সুখী !

Thursday, June 15, 2006

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মৃত্যুর খতিয়ান

৬ কোটি ২০ লক্ষ লোক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মারা গিয়েছিল (সম্ভবত) । যাদের ভিতর ২ কোটি ৫০ লক্ষ লোক ছিল সৈনিক আর ৩ কোটি ৭০ লক্ষ লোক ছিল সাধারন মানুয । এই আন্দাজটা নানা লোকের মতে বেশ কিছু কমবেশীও হতে পারে ।

মৃতের ভিতরে প্রায় ৮০ % ছিল মিত্র শক্তির আর ২০ % ছিল অক্ষ শক্তির ।
মিত্র শক্তির প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ সৈনিক নিহত হয়েছিল যাদের মধ্যে ১ কোটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের আর ৪০ লক্ষ ছিল চিনের ।

অক্ষশক্তির ৮০ লক্ষ সৈনিক নিহত হয়েছিল যাদের ভিতরে জার্মান ছিল ৫০ লক্ষ ।

আজ অবধি সোভিয়েত ইউনিয়নেরই যুদ্ধে সবথেকে বেশী লোক নিহত হয়েছে । সোভিয়েত ইউনিয়নের মোট ২ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ নিহত হয় যাদের ভিতরে ১ কোটি ২০ লক্ষ সাধারন মানুষ ছিল । এই মৃত দের মধ্যে সোভিয়েত কিছু নিজের দেশের মানুযকেই হত্যা করেছিল সে হিসাবও আছে ।
সোভিয়েত ইউনিয়ন আর চিনের মৃতের সংখ্যা নিয়ে অনেক তর্ক আছে । কারন এগুলি ঠিক ভাবে লিপিবদ্ধ হয়নি । কেউ কেউ চিনের মৃত্যু সংখ্যা দ্বিগুন বলেও মনে করেন ।

এই যুদ্ধে ভারতের প্রায় ৮৭ হাজার সৈন্যের মৃত্যু হয় যাদের মধ্যে প্রায় ২৬০০ জন ছিল আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনা । যুদ্ধ সংক্রান্ত কারনে ১৯৪৩ সালে বাংলায় দেখা দেয় মন্বন্তর যাতে ৩৫ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল ।

নাৎসিরা প্রায় ৯০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছিল যাদের ভিতরে দুই তৃতীয়াংশ ছিল ইহুদি ।
১৯৩৭ সালে চিনের নানকিং এ জাপানিরা প্রায় ৩ লক্ষ চিনাকে হত্যা করেছিল ।

যুদ্ধের প্রায় শেষে আমেরিকা জাপানে পরমানু বোমা ফেলে । তাতে হিরোশিমাতে ১ লক্ষ ৪০ হাজার ও নাগাসাকিতে ৭৪ হাজার লোকের মৃত্যু হয় ।

হিরোশিমাতে প্রায় ২ হাজার জাপানী আমেরিকান আর ১১ জন আমেরিকান যুদ্ধবন্দীরও মৃত্যু হয়েছিল ।
মৃতদের মধ্যে ২২ হাজার কোরিয়ানও ছিল যাদের ভিতর ২০ হাজার নিহত হয় হিরোশিমাতে আর ২ হাজার নাগাসাকিতে ।
যুদ্ধ শেষ হবার পরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয় । কিন্তু দুঃখের বিষয় মিত্রশক্তির কোনো যুদ্ধাপরাধীর বিচার আজও হয়নি ।

আরো জানতে দেখুন http://en.wikipedia.org/wiki/World_War_II_casualties

Tuesday, June 13, 2006

কমিউনিস্ট জোকস্ ৫

স্থানীয় সংবাদপত্রের এক সম্পাদক তাঁর সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করেছিলেন, সুপ্রিম সোভিয়েতের নেতারা বদ্ধ পাগল । স্তালিনের হুকুমে কেজিবির লোকেরা সম্পাদককে ধরে নিয়ে যায় এবং অবিলম্বে তাঁর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছিল ।
আমেরিকায় বেড়াতে গিয়ে এক সোভিয়েত নাগরিক তাঁর মার্কিন বন্ধুকে এই কাহিনীটি বলেছিলেন । তাজ্জব হয়ে মার্কিন বন্ধু বললেন :
-- এ তো ভয়ঙ্কর ব্যাপার ! এত তুচ্ছ কারনে মৃত্যুদন্ড ?
সোভিয়েত দেশের মানুষটি উত্তেজিত হয়ে বললেন :
-- তুচ্ছ কারন বলছেন এটাকে ? জানেন ওই সম্পাদক আসলে রাষ্ট্রের গুপ্তকথা ফাঁস করে দিয়েছিলেন ।
স্টেট সিক্রেট ফাঁসের এই অভিনব আখ্যান শুনে মার্কিন বন্ধু গভীর দুঃখের সাথে মাথা নেড়ে বলেছিলেন :
-- যাই বলুন, আমাদের দেশে সকলেরই সব কিছু বলার স্বাধীনতা আছে । নিজস্ব মত প্রকাশের অধিকার এতটুকু খর্ব করা হয় নি আমেরিকায় । ইচ্ছে করলেই আমি হোয়াইট হাউসের সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে পারি - আইজেন হাওয়ার নিপাত যাক ।
সোভিয়েত নাগরিক অবাক হয়ে বললেন :
এতে এত গর্ব করার কি আছে ? আমিও তো যখন তখন মস্কোর রেড স্কোয়ারে দাঁড়িয়ে বলতে পারি - আইজেন হাওয়ার নিপাত যাক ।

পোল্যান্ডের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যবসা বাণিজ্যের তখন রমরমা । পোল্যান্ডের মানুষ কী চোখে দেখতেন এই বাণিজ্যকে ? তাঁরা মজা করে বলতেন :
-- আমরা সোভিয়েত ইউনিয়নে কয়লা রপ্তানি করি, তার বদলে তারা আমাদের কাছ থেকে ইস্পাত নিয়ে যায় ।

নৌবাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চেকোস্লোভাকিয়া । সোভিয়েত উপদেষ্টার কাছে এ ব্যাপারে পরামর্শ চাইতেই তিনি প্রশ্ন করলেন :
-- নৌ-বাহিনীর কি দরকার আপনাদের ? আপনাদের তো সমুদ্রই নেই ।
-- তাতে কি ? চেক কতৃপক্ষের তুখোড় জবাব, আপনাদের দেশে আইন ও বিচার মন্ত্রনালয় কেন আছে তা নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলেছি কখনও ?

রাজনীতি শিক্ষার ক্লাস চলছে । তরুন শিক্ষার্থীদের বোঝাচ্ছেন প্রবীন কমিউনিস্ট নেতা :
-- সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো পারস্পরিক লাভের ভিত্তিতে ব্যবসা করে বেশ লাভবান হচ্ছে । যেমন ধর,রুমানিয়া মাটি পাঠায় আমাদের । সেই মাটি দিয়ে খেলনা হুইসল বানিয়ে আমরা পাঠাই মঙ্গোলিয়া । সেখানকার রাখালেরা ভেড়া চড়ায় ওই হুইসল বাজিয়ে ।
-- তারপর মঙ্গোলিয়া কি আমাদের ভেড়ার মাংস আর চামড়া পাঠায় ?
-- না, মাংস তারা নিজের খায়, আর চামড়া পাঠায় বুলগেরিয়ায় । সেই চামড়া দিয়ে বুলগেরিয়া বানায় গরম কোট ।
-- ওই কোটগুলো বুলগেরিয়া নিশ্চই আমাদের পাঠায় ?
-- না, রুমানিয়ায় পাঠায় ।
-- আর রুমানিয়া থেকে আমরা কি পাই ?
-- ওই যে, শুরুতে বললাম, মাটি !

মস্কোর কাছে এস্তোনিয়ার আকুল আবেদন :
-- আমাদের অন্তত পাঁচ মিনিটের জন্য স্বাধীনতা দেওয়া হোক ।
সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টিতে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হল । প্রেসিডেন্ট গর্বাচভ সবাইকে বোঝালেন পাঁচ মিনিটের স্বাধীনতায় ওরা কি আর করতে পারবে ? দেওয়াই হোক পাঁচ মিনিটের স্বাধীনতা ।
পরদিন ‘প্রাভদায়’ সংবাদ প্রকাশিত হল :
গতকাল বিকেল চারটেয় এস্তোনিয়া যুদ্ধ ঘোষনা করে সুইডেনের বিরুদ্ধে এবং চারটে বেজে চার মিনিটে আত্মসমর্পন করে ।

Monday, June 12, 2006

কমিউনিস্ট জোকস্ ৪

এক রাজনৈতিক কৌতুক রচয়িতাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ক্রুশ্চেভের কাছে । ক্রেমলিনে ক্রুশ্চেভের খাস মহল দেখে সে ত হতবাক । বিড়বিড় করে সে বলল
-- কি দারুন সব আসবাবপত্র ! কি দামী দামী কার্পেট ! পর্দা !
ধৃত লোকটিকে আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে ক্রুশ্চেভ বললেন
-- অচিরেই আমাদের দেশের প্রত্যেকের ঘরে ঘরে এসব থাকবে ।
-- কমরেড ক্রুশ্চেভ । কৌতুক রচয়িতা এবার জোর গলায় প্রতিবাদ জানাল, এটা ঠিক হচ্ছে না । হয় শুধু আপনি চুটকি বলবেন, নয় তো শুধু আমি !

একবার শুয়োরের ফার্ম পরিদর্শনে গেছেন ক্রুশ্চেভ । প্রাভদা ইজভেস্তিয়া প্রভৃতি প্রধান প্রধান সংবাদপত্রের সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকরা গেছেন ওই ঘটনা ‘কভার’ করতে । নানান ভঙ্গিমায় ক্রুশ্চেভের প্রচুর ছবি তোলা হয়েছে । তাঁর বাঁ দিকে শুয়োর, ডান দিকে শুয়োর,।
যথারীতি রাতে সংবাদপত্রের এডিটর, নিউজ এডিটরের টেবিলে জমা পড়েছে সেই সব ছবি । কিন্তু ছবির ক্যাপশন কী হবে ? কেউ পরামর্শ দিলেন , ‘শুয়োরদের মাঝখানে কমরেড ক্রুশ্চেভ’ -- এ ক্যাপশন কেমন হয় ?
-- চলবে না । এডিটর তৎক্ষনাৎ খারিজ করে দিলেন ।
-- ‘তাহলে শুয়োর পরিবেষ্টিত কমরেড ক্রুশ্চেভ ?’
-- না তাও চলবে না । বললেন নিউজ এডিটর । ক্যাপসানে শুয়োর কথাটা থাকলে চলবে না ।
পরের দিন পত্রিকা প্রকাশিত হল । প্রথম পাতায় সেই ছবি । ছবির নিচে ক্যাপসন ।
‘কমরেড ক্রুশ্চেভ -- বাঁ দিক থেকে চতুর্থ ।’


সাংবাদিক পদপ্রার্থীর ইন্টারভিউ নেওয়া হচ্ছে । প্রশ্ন হল :
-- বিপর্যয় এবং দুঃখজনক ঘটনার মধ্যে পার্থক্য কি ?
উত্তর : ধরুন আপনি নতুন স্যুট পরে বেরিয়েছেন রাস্তায় । হঠাৎ চলন্ত গাড়ি আপনার ধোপদুরস্ত পোশাকে এক রাশ কাদা ছিটিয়ে দিল । এটা দুঃখজনক ঘটনা, কিন্তু বিপর্যয় নয় । আবার ধরুন, সোভিয়েত সরকারের সব সদস্যকে নিয়ে একটি বিমান ভেঙে পড়ল সাইবেরিয়ার তুষারঢাকা অঞ্চলে । এটি বিপর্যয়, কিন্তু দুঃখজনক ঘটনা নয় ।

ব্রেঝনেভের আমলের সোভিয়েত ইউনিয়নের গল্প এটি । ইথিওপিয়ার কমিউনিস্ট ফান্ডে সাহায্য করার জন্য স্কুলের ছাত্রদের দশ রুবল করে আনতে বলা হয়েছিল । সবাই আনল শুধু একজন ছাড়া । শিক্ষকমহাশয় কারন জানতে চাইলে সে উত্তর দিল :
-- বাবা বলেছে ইথিওপিয়ায় কমিউনিস্ট পার্টিই নেই !
এক মাস পরে ইথিওপিয়ায় সমাজতান্ত্রিক সরকারকে সাহায্য করবার জন্য আবার ছাত্রদের দশ রুবল করে আনতে বলা হল । সেই ছাত্রটি আবার এল খালি হাতে, বলল :
-- বাবা বলেছে ইথিওপিয়ায় সমাজতান্ত্রিক সরকারই নেই !
আবার এক মাস পরে ছাত্রদের উপর নোটিশ । এবারও বাড়ি থেকে দশ রুবল করে আনতে হবে, কারন ইথিওপিয়ায় দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুযকে সাহায্য করা ।
এবার সেই বালক একসঙ্গে ত্রিশ রুবল এনে শিক্ষকমশায়ের হাতে দিল । বলল :
-- বাবা বলেছে ইথিওপিয়ায় যদি দুর্ভিক্ষ থাকে, তাহলে সেখানে নিশ্চই কমিউনিস্ট পার্টি আছে, আছে সমাজতান্ত্রিক সরকারও !


নিক্সন জানতে চাইলেন ঈশ্বরের কাছে :
-- আমেরিকানরা কবে পুরোপুরি সুখী হবে ?
ঈশ্বর জানালেন আরও ৫০ বছর বাদে ।
-- ততদিন কি আর বেঁচে থাকব, আক্ষেপ করে বললেন নিক্সন ।
পম্পিদু জিজ্ঞেস করলেন ঈশ্বরকে
-- কবে পুরোপুরি সুখী হবে ফরাসীরা ?
ঈশ্বর জবাব দিলেন আরও ৮০ বছর লাগবে ।
ততদিন কি আর বেঁচে থাকব ? পম্পিদুর গলাতেও আক্ষেপের সুর ।
ব্রেঝনেভ প্রশ্ন করলেন ঈশ্বরকে :
-- সোভিয়েত দেশের মানুষ কবে সুখে শান্তিতে থাকবে ?
ততদিন কি আর বেঁচে থাকব ? আক্ষেপের সুরে বললেন স্বয়ং ঈশ্বর !


সোভিয়েত দেশের দুটি বহুল প্রচলিত সংবাদপত্র সম্পর্কে বলা হত :
দেয়ার ইজ নো ইজভেস্তিয়া ইন প্রাভদা, অ্যান্ড দেয়ার ইজ নো প্রাভদা ইন ইজভেস্তিয়া !
উল্লেখ্য ‘প্রাভদা’ শব্দের অর্থ ‘সত্য’ আর ‘ইজভেস্তিয়া’ শব্দের অর্থ ‘খবর’ । কাজেই উপরোক্ত আপ্তবাক্যটির বঙ্গানুবাদ দাঁড়াল
‘সত্যে খবর নেই এবং খবরে সত্য নেই ।’

সোভিয়েত দেশের বহুল প্রচলিত আরও দুটি পত্রিকা হল ‘সোভিয়েত স্কায়া রাশিয়া’ (সোভিয়েত রাশিয়া) এবং ‘ক্রদ’ (শ্রম) । ক্রেতা জিজ্ঞেস করছে সংবাদপত্র বিক্রেতাকে ,
-- কি কি খবরের কাগজ আছে ?
বিক্রেতার উত্তর,
-- ‘সত্য’ নেই ‘সোভিয়েত রাশিয়া’ বিক্রি হয়ে গেছে, আছে শুধু তিন কোপেক দামের ‘শ্রম’ ।

জনগন কি কি সংবাদপত্র পড়েন তা জানার জন্য সরকারী পর্যায়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল । সমীক্ষক দলের সদস্য এক সোভিয়েত নাগরিককে প্রশ্ন করলেন,
-- কোন পত্রিকা পড়েন এবং কেমন আছেন ?
উত্তরে বললেন ওই সোভিয়েত নাগরিক :
-- পড়ি প্রাভদা, নইলে ভাল আছি জানব কি করে?

Sunday, June 11, 2006

কমিউনিস্ট জোকস্ ৩

মস্কো শহরে ট্রামের জন্য অপেক্ষমান দুই ব্যক্তির মধ্যে হাল্কা কথাবার্তা চলছে । এক জন বলল,
-- পাউডার ও সরকারের মধ্যে তফাত কি বলতে পারেন?
-- না
-- পাউডার মুখে মাখে, আর সরকারকে কেউ কোথাও ঠেকাতে চায় না ।
ট্রাম এসে পড়ল । এবার প্রশ্ন করল দ্বিতীয় ব্যক্তি,
-- ট্রাম এবং আপনার মধ্যে পার্থক্য কি বলতে পারেন ?
-- না
-- ট্রাম এখন চলে যাবে নিজের পথে, আর আপনি যাবেন আমার সঙ্গে কেজিবির অফিসে ।
-- কিন্তু আমি তো সরকার বলতে আমেরিকান সরকারকে বোঝাতে চেয়েছি ।
-- বাজে কথা রাখুন । যে সরকারকে কোথাও ঠেকাতে ইচ্ছে হয় না তা নির্ঘাৎ আমাদেরটা ।


কেজিবির এক কর্মীর সঙ্গে দেখা তার প্রতিবেশীর ।
-- শুভ সন্ধ্যা, বলল প্রতিবেশী
-- সন্ধ্যা মানে ? এই ভর দুপুরে বলছেন শুভ সন্ধ্যা !
-- খুবই দুঃখিত । কিন্তু কি করব বলুন ? আপনাকে দেখলেই আমার চারপাশে সব কেমন অন্ধকার হয়ে যায় ।


প্রশ্ন : ইলেকট্রিক শেভিং রেজার কে আবিষ্কার করেন ?
উত্তর : ইভান সিদোরভ । এবং তিনি তা আবিষ্কার করেন মার্কিন দূতাবাসের পাশ্বর্বতী ডাস্টবিনে ।


দুই ব্যক্তির মধ্যে কথোপকথোন :
-- শ্রম শিবির নাকি দারুন জায়গা ? লোকজন নাকি খুব ভালো থাকে সেখানে ?
-- মনে হয় তা-ই । কারন আমার এক পরিচিত ব্যক্তি এ ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল । তাই তাকে স্বচক্ষে সেখানকার ব্যাপার স্যাপার দেখানোর জন্য কেজিবি নিয়ে গিয়েছিল । সেই যে গেছে, আজও সে ফেরেনি । মনে হয় খুব পছন্দ হয়েছে শ্রম শিবির ।

মিলিটারি ক্যান্টনমেন্টের গোলন্দাজ বিভাগের দেওয়ালে এক বিশাল ব্যানার । তাতে লেখ : আমাদের লক্ষ্য কমিউনিজম ।
[ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য : ওদেসা শহরের গোলন্দাজ প্রশিক্ষন কলেজে এক সময় এমন একটি ব্যানার সত্যিই ছিল ]

মেলার ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া রুশ বালককে আশ্বস্ত করে মিলিশিয়া বলছে,
-- চিন্তা কোরো না, তোমার হারিয়ে যাওয়ার খবর আমরা রেডিও-র মাধ্যমে প্রচার করব । তোমার বাবা-মা সেই খবর শুনে তোমাকে এসে নিয়ে যাবেন ।
-- তাহলে প্রচারটা বিবিসির মাধ্যমেই করবেন, রুশ বালকের তাৎক্ষনিক জবাব, আমার বাবা-মা বিবিসি ছাড়া অন্য কিছু শোনে না ।

প্রশ্ন : বিদেশের খবর রাশিয়ানরা পায় কোথা থেকে ?
উত্তর : তাস এর প্রতিবাদ থেকে ।
[ তাস = টেলিগ্রাম এজেন্সি অফ দি সভারিন স্টেটস ]

প্রশ্ন : পৃথিবীর সবচেয়ে বিলাসবহুল বৃদ্ধাশ্রম কোনটি ?
উত্তর : ক্রেমলিন

প্রশ্ন : দেশে কমিউনিজম পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হবার পর প্রেম কি থাকবে ?
উত্তর : না । ওই সময় যেহেতু হাতে টাকা থাকবে না, তাই প্রেমও থাকবে না ।

প্রশ্ন : মার্কসের কাছ থেকে জার্মানি উত্তরাধিকার সূত্রে কি পেয়েছে ?
উত্তর : পূর্ব জার্মানি পেয়েছে কমিউনিস্ট পার্টির ইস্তেহার এবং পশ্চিম জার্মানি পেয়েছে ক্যাপিটাল ।

প্রশ্ন : ব্রেঝনেভের ভুরু আসলে কি ?
উত্তর : উচ্চতর পদে আসীন স্তালিনের গোঁফ ।

প্রশ্ন : সোভিয়েত ইউনিয়নের বাসস্থান সমস্যার সমাধানের উপায় কি ?
উত্তর : সীমান্ত খুলে দিয়ে অবাধ বিদেশ গমনের সুযোগ করে দেওয়া ।

প্রশ্ন : কমিউনিজম প্রতিষ্ঠিত হলে সোভিয়েত দেশে কি চুরিবিদ্যা থাকবে ?
উত্তর : না । কারন সমাজতন্ত্রের পর্যায় শেষ হতে হতে চুরি করার মতো আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না ।

প্রশ্ন : গণতন্ত্র ও সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য কি ?
উত্তর : সাধারন চেয়ার ওর ইলেকট্রিক চেয়ারের মধ্যে যে পার্থক্য ।

Saturday, June 10, 2006

কমিউনিস্ট জোকস্ ২

স্তালিনের চুরুট গেছে হারিয়ে । ঘটনা ঘটেছে সকালবেলায় । সন্ধ্যের মধ্যেই মিলিশিয়া গ্রেপ্তার করছে শ-খানেক লোককে । ইতিমধ্যেই ক্রেমলিনের ঝাড়ুদার চুরুট খুঁজে পেয়েছে ডিভানের তলায় এবং স্তালিনের হাতে সেটা তুলেও দিয়েছে । স্তালিন তখন ফোন করলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে -- আর কষ্ট করতে হবে না । চুরুট খুঁজে পাওয়া গেছে ।
-- কিন্তু স্যার আমরা কি করি এখন ? যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবাই স্বীকার করেছে যে তারাই চুরুট চুরি করেছে ।
-- কী ? এখনও একজন স্বীকার করে নি ? তবে চালিয়ে যান তদন্ত !

স্থান : পেত্রোগ্রাদ । কাল : ১৯১৭ সাল । পাত্র-পাত্রী : এক দঙ্গল বিপ্লবী ও সাধারন নাগরিক ।
রাস্তাঘাটে বিপুল হইচই শুনে এক বৃদ্ধ তাঁর দাসীকে পাঠালেন ব্যাপার কি জেনে আসতে । -- সে ফিরে এসে খবর দিল বিপ্লব শুরু হয়ে গেছে !
-- বিপ্লব, আহা কি দারুন ব্যাপার ! আমার বাবাও বিপ্লবী ছিলেন । কী ভালোই না লাগছে শুনতে । তা, এই বিপ্লবীরা কি চাইছে ?
-- চাইছে দেশে যেন কোন ধনী না থাকে ।
-- আর আমার বাবা চাইতেন, দেশে যেন কোন গরীব না থাকে ।

সফল বিপ্লবের পর বাড়ি ফিরে এসে বলশেভিক বলছে তার মা কে
-- এখন সব পাওয়া যাবে দোকানপাটে । খাবার দাবার কাপড় চোপড়, যা চাও । বিদেশেও যেতে দেবে এখন থেকে ।
-- ঠিক জারের আমলে যেমন ছিল তাই না ? খুশিতে ডগমগ হয়ে মা বললেন ।

আমেরিকায় গেছে সোভিয়েত দেশের শ্রমিকদের একদল প্রতিনিধি ।
উদ্দেশ্য, মোটরগাড়ি কারখানা পরিদর্শন করা, সেখানকার ওয়ার্ক কালচারের হাল হকিকত সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া । মার্কিন গাইডকে প্রশ্ন করলেন এক শ্রমিক :
-- এই কারখানার মালিক কে ?
-- ফোর্ড
-- আর এই কারখানার সামনে পার্ক করা অতগুলো দামী গাড়ি কার ?
-- কারখানার শ্রমিকদের ।
এবার আমেরিকার শ্রমিক প্রতিনিধিদল ফিরতি সফরে গিয়েছে সোভিয়েত দেশের গাড়ি তৈরির কারখানা দেখতে । রুশ গাইডকে এক কারখানার শ্রমিকের প্রশ্ন :
-- এই কারখানার মালিক কে ?
-- কারখানার শ্রমিকরা ।
-- আর কারখানার সামনে দাঁড় করানো ওই দামী গাড়িটা কার ?
-- কারখানার ডিরেক্টরের ।

কারখানার কাজে যেতে দেরী হয়ে গিয়েছিল । আর দেরী হলেই শাস্তি । তাই রুশ শ্রমিক বাসা থেকে স্রেফ দৌড় লাগালো কারখানার দিকে । প্যান্ট পরার সময় পায়নি সে । প্যান্টটা হাতে নিয়েই দৌড়চ্ছে সে । তবু তার দেরি হয়ে গেল কারখানায় পৌছতে । কারন পথে বহু মানুষ তাকে অসংখ্যবার থামিয়েছে, জানতে চেয়েছে প্যান্টটা কোথা থেকে কিনেছে, কত দাম, সে ওটা বিক্রি করবে কিনা ইত্যাদি ।


স্তালিন বক্তৃতা দিচ্ছেন শ্রমিকদের সামনে :
-- আপনাদের মঙ্গলের জন্য আমি আমার শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত বিসর্জন দিতে প্রস্তুত ।
উপস্থিত শ্রোতা শ্রমিকদের কাছ থেকে একটা চিরকুট এসে পৌছল তাঁর হাতে ।
তাতে লেখা -- তাহলে আর দেরি করছেন কেন, কমরেড ?

কমিউনিস্ট জোকস্ ১

বেশ কিছু বছর আগে সাপ্তাহিক বর্তমান পত্রিকায় রাশিয়ার কমিউনিস্টদের উপর কিছু জোকস প্রকাশিত হয়েছিল । ভাল লেগেছিল বলে কিছু টুকে রেখেছিলাম । সেখান থেকেই কিছু তুলে দেওয়া গেল --

বাবা, মোরগ কেন ডাকে ? - শিশু পুত্রের সরল জিজ্ঞাসা ।
“কেউ মিথ্যা কথা বললেই মোরগ ডেকে ওঠে”, রাশিয়ান পিতা উত্তরের ছলে নীতিশিক্ষা দেবার চেষ্টা করেন ।
“তাহলে খুব ভোরে সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন এক সঙ্গে এত মোরগ ডাকে কেন ?”
“কারন তখন প্রাভদা, ইজভেস্তিয়া ছাপা হয় !”

প্রশ্ন : সোভিয়েত দেশে দেশলাইয়ের এত আকাল কেন ?
উত্তর : কারন সোভিয়েত জনগন প্রচুর মাংস খায়, কিন্তু টুথপিক এখানে মোটেই উৎপাদিত হয় না ।

প্রশ্ন : সোভিয়েত দেশে মাংসের এত আকাল কেন ?
উত্তর : ভেড়গুলো মেতে আছে বিজ্ঞান নিয়ে, গাভীগুলো জেনারেলদের স্ত্রী হয়ে বসে আছে, পার্টি আর সরকারের বড় বড় পদগুলো দখল করে রেখেছে শুয়োররা, আর এসব দেখে মুরগি গুলো হাসতে হাসতে মরে গেছে ।

পোস্টারের দোকানে সোভিয়েত ক্রেতার প্রশ্ন :
-- পলিটব্যুরোর সদস্যদের পোস্টার আছে ?
-- আছে এই দেখুন । ( বিক্রেতা কয়েকটি ছবি বের করে দেখায় ।)
-- না এগুলো চলবে না ।
-- তবে এটা দেখুন । (কফিনে শায়িত লেনিনের ছবি দেখায় এবার ) এটা চলবে ?
-- ঠিক এটা নয়, তবে পলিটব্যুরোর সবার এরকম ছবি দিতে পারবেন ?


সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং চলছে । কমরেড পপস্কি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, কমরেড স্তালিন আমি মাত্র তিনটি প্রশ্ন করতে চাই । যদি আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে শিল্পোন্নত দেশ হয়ে থাকি, তাহলে আমাদের মোটর গাড়ি কলকারখানার কি হল ? যদি আমরা কৃষিতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ হয়ে থাকি, তাহলে আমাদের দৈনন্দিন রুটির কি হল ? যদি আমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পশুপালক দেশ হয়ে থাকি, তাহলে আমাদের রোজকার মাংসের কি হল ?
কমরেড স্তালিন রুক্ষ চোখে তাকালেন কমরেড পপস্কির দিকে । যেন তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না এমন সব প্রশ্ন শুনতে হবে । তারপর তিনি বললেন ইতিমধ্যেই আমরা যথেষ্ট দেরি করে ফেলেছি । আজ আর এইসব প্রশ্নের জবাব দেবার মত অবকাশ নেই । পরবর্তী বৈঠকে আমি এইসব প্রশ্নের যথোচিত জবাব দেব ।
পরের সপ্তাহে মিটিং শুরু হল । পার্টির এক সদস্য উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আমার শুধু একটাই প্রশ্ন আছে -- কমরেড পপস্কির কি হল ?

গ্রাম থেকে এক বুড়ি এসেছেন ওয়ারশতে বেড়াতে । শহরের মাঝখানে স্তালিনের মূর্তি দেখে তিনি জানতে চাইলেন মূর্তিটা কার । এক সদ্য বিপ্লবী তাঁকে ব্যাখ্যা করে বললেন -- এটা মহান স্তালিনের মূর্তি । নাৎসি বাহিনীর হাত থেকে তিনিই আমাদের মুক্ত করেছেন ।
--- ঈশ্বর তাঁকে দীর্ঘজীবী করুক । বুড়ি বললেন, কমিউনিস্টদের হাত থেকেও যদি তিনি আমাদের মুক্ত করতেন !

Thursday, June 08, 2006

http://www.somewhereinblog.net

http://www.somewhereinblog.net একটি বাংলাদেশের ব্লগ পোর্টাল । এটিকে বলা যেতে পারে বাংলা ভাষার প্রথম সফল ব্লগ পোর্টাল । এই সাইটটিতে প্রচুর বাংলা ব্লগ র‌য়েছে । যার মধ্যে প্রচুর সুপাঠ্য ও ইন্টারেস্টিং বিষয়ে ব্লগ রয়েছে । এখানে প্রচুর মানুষ লিখছেন যাঁরা বাংলাটা ভাল বোঝেন ও লেখেন । এই সাইটে একটি ব্লগ সমাজ গড়ে উঠেছে । তাঁরা নিজেদের মধ্যে গ্রুপ গঠন করেছেন । তাঁরা গেট টুগেদার এ মিলিত হন । বর্তমানে প্রাপ্তি বলে একটি তিন বছরের ক্যান্সার আক্রান্ত মেয়ের চিকিৎসার জন্য তাঁরা একজোট হয়েছেন ।
এই ব্লগ সমাজের ভিতরে বিপরীত মতাবলম্বী লোকের সংখ্যা কম নয় । বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মধ্যে ঘোরতর ব্লগ যুদ্ধ চলে প্রায়ই । সাম্প্রতিক কালে এক ব্লগারের পাকিস্তানের পতাকা পোস্ট করা নিয়ে প্রবল ব্লগ যুদ্ধ শুরু হয় । এইসব ব্লগের লেখা পড়ে অনেক ব্লগারকেই ইসলামের আধুনিকতার প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত বলে মনে হয়েছে । বোরখা ব্যবহার, মেয়েদের বাইরে কাজকর্ম করা, নিজে বিয়ে করা এইসব বিষয়ে নানা রকম দ্বিমত দেখা যাচ্ছে ।
প্রচুর পোস্ট আছে যেগুলো আকারে খুব বড় । বোধহয় বাংলাদেশীদের বাংলা টাইপ করার দক্ষতা আর ইচ্ছের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে । যা অন্য বাংলা ব্লগ যা ব্লগার অথবা অন্য ব্লগ সাইটে হোস্ট করা আছে এরকম বাংলা ব্লগে দেখা যায় না ।
এত সুন্দর একটা সাইট হলেও দুঃখের বিষয় হল এটি ইউনিকোড ফন্টে লেখা নয় । ফলে এই সুন্দর লেখাগুলো কোনো সার্চ ইঞ্জিন পড়তে পারবে না । ফলে চটজলদি গুগুলে সার্চ করে এই সাইটের কোনো লেখার লিঙ্ক পাওয়া যাবে না । ফলে এই সাইটের ভবিষ্যত নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই যায় । আশা করি এই সাইটের উদ্যোক্তারা এই বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করবেন ।
তবে যাঁরা কমপিউটারে বাংলা লেখা পড়তে ভালোবাসেন তাঁদের অবশ্যই পড়তে হবে এই ব্লগ গুলো ।
এই সাইটে পড়া একটা মজার চুটকি দিয়ে পোস্টটা শেষ করি ।

:::::::::::::: তোর বাবা তোকে জেলে যেতে দেখে কি বললেন ?
:::::::::::::: বললেন শাবাস ! তুইও এসে গেছিস !!

Tuesday, June 06, 2006

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে কিছু কথা

আধুনিক বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে কিছু লিখতে হলে কিছুতেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না । আমার ছোটবেলা থেকেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার প্রিয় লেখক । তার মানে এই নয় যে সুনীলের সব লেখাই আমার ভালো লেগেছে । রবীন্দ্রনাথ আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়া আর কোনো বাংলা সাহিত্যিককে আমার মনে পড়ে না যিনি কবিতা, ছোটগল্প এবং উপন্যাসে সমান ভাবে সফল ।
আমরা কখনও কখনও কোনো লেখকের সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলি যে অমুক লেখক অনেক বই লিখেছেন । কিন্তু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হবে যে উনি অনেক আলমারি বই লিখেছেন । এটা আমার অদ্ভুত লাগে যে একজন লেখক কিভাবে এত লেখেন যে তা পড়ে শেষ করা যায় না ।
লেখক হিসাবে সুনীলের সাফল্যের কারন হল ওনার সহজ সরল ভাষা । এবং লেখার ভিতরে অহেতুক দর্শন আর নানা রকম তত্বের কচকচি না আনা । এই কারনে বইগুলো সহজ পাঠ্য । সুনীলের বহু কবিতা আর গল্পের চরিত্রের মধ্যে প্রচন্ড প্যাশান কাজ করে । সুনীলের সফলতা হল তাঁর বয়স বাড়লেও লেখার ভিতরে প্যাশন কমেনি ।
আমি সন্তু কাকাবাবু থেকে আরম্ভ করে নীললোহিতের এবং স্বনামে লেখা বহু বই পড়েছি । আমার সবথেকে পছন্দের বই হলো যেগুলো নীললোহিত ছদ্মনামে লেখা হয়েছে । চলো দিকশূন্যপুর বলে একটা বই পড়ে ভীষন ভালো লেগেছিল । তার পর থেকে নীললোহিতের বই পেলেই আগে পড়ি ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখার স্টাইল যাদের পছন্দ তাদের সুনীলের বেশিরভাগ লেখাই ভালো লাগবে এটাই স্বাভাবিক । তবে সুনীলের বহু মাঝারি উপন্যাস যেগুলো পূজাবার্ষিকিতে বেরিয়েছিল অনেকগুলোরই মান যথাযথ নয় । খুব তাড়াহুড়ো করে লেখা বলে বোধহয় ।
তবে সকলেই স্বীকার করবেন সুনীলের সেরা লেখা তাঁর কবিতা আর ছোটগল্পগুলো । বেশ কিছু কবিতা তো কিংবদন্তী হয়ে গেছে । আমার বেশ কিছু ছোটগল্প পড়েও খুবই ভালো লেগেছে ।
তবে সুনীলের লেখক জীবনের সব থেকে বেশী পরিশ্রম গেছে যে তিনটি উপন্যাসের পিছনে তা হল সেই সময়, প্রথম আলো আর পূর্ব পশ্চিম । তিনটিই আকারে বিরাট । এতবড় বিশাল পটভূমিকায় প্রচুর চরিত্র যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ঐতিহাসিক চরিত্র তাদের নিয়ে লেখা সোজা কথা নয় । একটু তথ্যের গন্ডগোল বিরাট বিতর্কের সৃষ্টি করতে পারত । কালীপ্রসন্ন সিংহের আদলে তিনি সেই সময় উপন্যাসে যে নবীনকুমার চরিত্রটি তৈরি করেছিলেন তা করতে যথেষ্ট সাহসের দরকার লাগে । বিশেষ করে নবীন কুমারের বাবা যে আসলে জমিদার নয় তাদেরই নায়েব এরকম কল্পনা করে লেখা বিরাট বিতর্ক তৈরি করতে পারত । লেখার জন্য পরিশ্রম করেন এরকম খুব স্বল্প লেখকের মধ্যে সুনীল অন্যতম । এই তিনটি উপন্যাস লেখার জন্য তাঁকে প্রচুর গবেষনা করতে হয়েছে ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ধর্মে একেবারেই বিশ্বাস করেন না । তাঁর কোনো লেখাতেই কোনো রকম স্পিরিচুয়াল কিছু পাওয়া যায় না । শুধুমাত্র জাগতিক বিষয় নিয়েই তাঁর সমস্ত লেখা । তাঁর সমসাময়িক আরো দুই সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় কিন্তু আধ্যাত্মিক বিষয়ে অনেক লেখা লিখেছেন । সুনীলের সমস্ত লেখাই কেবলমাত্র জাগতিক বিষয় নিয়ে ।
যৌনতার ব্যাপারে সুনীলের মতামত খুব উদার । তাঁর বহু চরিত্রকেই প্রায়ই নানা রকম যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় । যৌনতা বিষয়ে খোলাখুলিভাবে লিখতে তাঁর কোনো আপত্তি নেই । যৌনতা যে আসলে কোনো বিকৃতি নয় কেবল মাত্র আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার একটা অঙ্গ তা তিনি বারে বারে লিখেছেন ।
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে উপন্যাস সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়া আর কেউ লিখেছেন বলে আমার জানা নেই । তাও আবার দু দুটি । প্রথম আলোর পর সুনীল লেখেন রানু ও ভানু । রানু ও ভানুতে তিনি লেখেন রবীন্দ্রনাথ যখন রানুকে প্রথমবার দেখেন তখন নাকি সে পুরো নগ্ন অবস্থায় ছিল । অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের প্রতিষ্ঠাতা লেডি রানু এই কয়েক বছর আগেও জীবিত ছিলেন । তাঁকে নিয়ে এরকম লেখা কম সাহসের কাজ নয় । যদিও সুনীল দাবি করেছিলেন তিনি নাকি এই তথ্য লেডি রানুর আত্মজীবনী থেকে সংগ্রহ করেছেন । যাই হোক এসব সত্বেও সুনীলকে কখনও বড় বিতর্কের মুখে পড়তে হয় নি ।
লেখার উপকরন সংগ্রহ করার জন্য সুনীল অনেক ঘুরেছেন । পৃথিবীর বহু দেশে গেছেন । কিন্তু তিনি পশ্চিমবঙ্গেরও বহু স্থানে ঘুরেছেন । এই কারনে যখন তিনি কোনো জায়গার বর্ণনা দেন তা সে আমেরিকাই হোক বা মুর্শিদাবাদের কোনো অজ পাড়াগাঁই হোক তা পড়ে স্বাভাবিক মনে হয় । সন্তু কাকাবাবুর বেশিরভাগ অ্যাডভেঞ্চারই তো ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘটেছে ।
তবে তাঁর প্রিয় বন্ধুরাই তাঁর অনেক সমালোচনা করেছেন । আনন্দবাজারের মত বড় এস্টাবলিশমেন্টের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়ে তিনি আসলে নিজেই নিজের কথা রাখেননি তাও তাঁরা বলেছেন । বর্তমানে শাসক সিপিএমের সাথে তাঁর দহরম মহরমও অনেকেই ভাল চোখে দেখছেন না । আমরা সাধারনত কবি সাহিত্যিক দের একটু প্রতিবাদী চরিত্রেই দেখতে ভালোবাসি । সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে সুনীলকে এখন কেবল সিপিএমের ধামাধরা বলেই মনে হয় ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কে একবার দেখেছিলাম কলকাতা বইমেলায় ইউবিআই অডিটোরিয়ামে স্টেজের উপর মুখ হাঁড়ি করে বসে আছেন । হাতদুটো জড়ো করে টেবিলের উপর রাখা । সেদিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম এই হাত দিয়েই ওই আলমারি আলমারি বই গুলো লেখা হয়েছে ! তবে আমার মনে হয় নীললোহিতের এইরকম সভায় সভাপতিত্ব করা কিছুতেই পোযাত না । মনে হয় বেশি বয়সে রবীন্দ্রনাথের মত সুনীলও গুরুদেবের মত কিছু একটা হয়ে উঠতে চাইছেন ।
তবুও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় অনেকেরই প্রিয় কারন তাঁর লেখক সত্ত্বা চিরযুবক । তিনি মূলত কিশোরদের লেখক । কিশোর বয়েসে যারা তাঁর লেখা পড়েছে তারা প্রায় সবাই যে তাঁর ফ্যান হয়ে গেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই । ষোলো সতেরো বছর বয়েসে ঝাঁ ঝাঁ দুপুর বেলায় সুনীলের কোনো প্রেমের উপন্যাস অনেকরই জীবনে ডেকে এনেছে এক নতুন স্বাদ । এই বয়সে প্রথম সিগারেট প্রথম প্রেম প্রথম চুমুর মত সুনীলের লেখাও হয়ে ওঠে এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । এবং এখানেই সুনীলের সার্থকতা ।

Monday, June 05, 2006

কমপিউটার সেন্টার গুলো থেকে সাবধান

আমরা অনেকেই কমপিউটারের বিভিন্ন কোর্স করার জন্য কমপিউটার সেন্টার গুলোর দ্বারস্থ হই । কিন্তু এই বেশিরভাগ কমপিউটার সেন্টার গুলোই স্রেফ টাকা খিঁচে নেবার কল । তাই এদের থেকে সাবধান । আপনার ভাগ্য খারাপ হলে আপনার বহু টাকা এদের পিছনে জলাঞ্জলি যেতে পারে । বিনিময়ে আপনি কিছুই শিখবেন না ।
কোনো কমপিউটার সেন্টারে অ্যাডমিশন নেবার আগে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করুন । আমি এরকম কমপিউটার সেন্টারের স্টুডেন্ট ছিলাম এবং অল্প কিছু দিন এইরকম একটি কমপিউটার শিক্ষা কেন্দ্রে পড়িয়েওছি । সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আমি এটা লিখছি ।

(১) কোনো বিষয়ে অ্যাডমিশন নেবার আগে কম করে পাঁচ থেকে ছয়টি আলাদা আলাদা কমপিউটার সেন্টারে যান এবং তাদের সাথে কথা বলুন ।

(২) কাউন্সেলারদের (অর্থাৎ যারা খোঁজখবর নিতে আসা স্টুডেন্টদের অ্যাটেন্ড করে) কথার ফাঁদে সহজে ভুলবেন না । এরা আপনাকে ভুজুং ভাজুং দিয়ে যেভাবেই হোক অ্যাডমিশন করাবার চেষ্টা করবে ।

(৩) অ্যাডমিশন নিতে কখনও তাড়াহুড়ো করবেন না । এর আপনাকে বলবে যে দেরি করলে কোর্সের রেট বেড়ে যাবে । এসব হচ্ছে একেবারে বাজে কথা । এসবে বিশ্বাস করবেন না ।
(৪) অ্যাডমিশন নেবার আগে তাদের ল্যাব, কমপিউটার স্বচক্ষে দেখুন । তাদের লাইব্রেরি দেখুন । দেখুন যে তাতে পুরনো বই আছে নাকি নতুন আপ টু ডেট বই আছে । ইন্টারনেটের সুবিধা দেবে কিনা বুঝে নিন ।

(৫) কমপিউটার সেন্টারের বাইরে তাদের স্টুডেন্টদের সঙ্গে কথা বলুন । দেখুন তারা কি বলে । এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার ।

(৬) একসাথে সব সেমিস্টারের জন্য অ্যাডমিশন নেবেন না । এবং ডিসকাউন্টের লোভে বেশি টাকা অ্যাডভান্স পেমেন্ট করবেন না । মাঝপথে যদি আপনি কোর্স ছেড়ে দেন অথবা করতে না পারেন তবে পুরো টাকাই জলে যাবে ।

(৭) কমপিউটার সেন্টারটা কতদিনের পুরোনো সে ব্যাপারে খোঁজ খবর করুন । সেন্টারটা বেশি নতুন হলে আরও ভালও করে খোঁজ খবর করা দরকার ।

(৮) সম্ভব হলে কোনো বড় শহরের বড় সেন্টারে অ্যাডমিশন নিন । মফস্বল ছোটো শহরের সেন্টার গুলোর কোয়ালিটি নিয়ে অনেক সময়েই সমস্যা থাকে ।

(৯) চাকরির গ্যারান্টি যারা দেয় তাদের থেকেও সাবধান থাকুন । কেননা কেউ কখনও কাউকে চাকরির গ্যারান্টি দিতে পারে না । চাকরি নির্ভর করবে আপনার কোয়ালিটির উপর ।

(১০) ফ্যাকাল্টিদের সম্পর্কে খোঁজ নিন । তাদের কোয়ালিফিকেশন এবং এক্সপিরিয়েন্স সম্পর্কে জানুন ।

অ্যাডমিশন নেবার পর আপনি যে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন তা হল

(১) বাজে ফ্যাকাল্টি দিয়ে ট্রেনিং দেওয়া - অধিকাংশ সেন্টারেই ফ্যাকাল্টিদের মাইনে এত বাজে যে ভাল ফ্যাকাল্টিরা চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে । যারা আছে তারা হল এই রকম সেন্টার থেকেই সবে বেরোনো ছেলে মেয়েরা যাদের কাজের ব্যাপারে কোন প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা নেই ।

(২) বাজে কমপিউটার হার্ডওয়্যার ও ল্যাব - অনেক ছোট সেন্টারের এটি একটি প্রাথমিক সমস্যা ।

(৩) প্লেসমেন্টের গন্ডোগোল - ধরুন আপনি দুটি সেমের জন্য অ্যাডমিশন নিয়েছেন । দুটি সেম শেষ হবার পর যখন আপনাকে কোনো ইন্টারভিউতে পাঠানো হল দেখা যাবে তার সাবজেক্ট হল তৃতীয় সেমের বিষয়বস্তু । এটা জেনেশুনেই করা হয় । কারন আপনি ইন্টারভিউতে বেশিরভাগ প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারবেন না । তখন আপনি ফিরে এসে তৃতীয় সেমের জন্য অ্যাডমিশন নেবেন । এটা একটা ব্যবসা বাড়ানোর কৌশল । যদি আপনার সাথে এরকম হয় তবে তার প্রতিবাদ করুন ।

ভাল করে জেনেশুনে তবেই অ্যাডমিশন নিন । তা নাহলে যে ঠকতে হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই । যদি আপনার পড়া বুঝতে সমস্যা হয় তবে ম্যানেজমেন্টের উপর চাপ দিন যাতে তার ওই একই ক্লাস আবার অন্য ব্যাচে করার সুযোগ দেয় । তবে আপনাকে কিন্তু ক্লাস কামাই করলে চলবে না । আশা করি এই লেখা থেকে আপনাদের বা আপনাদের বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজনের কিছু উপকার হতে পারে ।

Sunday, June 04, 2006

প্রমোদকুমার চট্টোপাধ্যায় ও তন্ত্রাভিলাষীর সাধুসঙ্গ

আমি প্রমোদকুমার চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম যে বই পড়ি তার নাম হিমালয়পারে কৈলাস ও মানস সরোবর । সাধারনত আমার ভ্রমন কাহিনি পড়তে খুব একটা ভালো লাগে না । কিন্তু এই বইটা পড়তে আমার খুবই ভালো লেগেছিল । আজ থেকে প্রায় আশি বছরেরও বেশি আগে লেখক পায়ে হেঁটে কিভাবে কৈলাস ও মানস সরোবর বেরিয়েছিলেন তারই বিস্তৃত বিবরন এটি ।
প্রমোদকুমারের পরের যে বইটি আমি পড়ি তার নাম তন্ত্রাভিলাষীর সাধুসঙ্গ । আমার মনে হয় না আমি আর কোনো বই পড়ে এতটা প্রভাবিত হয়েছি । লেখক একসময়ে ভবঘুরের মতো ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন ভারতের বিভিন্ন জায়গায় । ধর্মের প্রতি তাঁর ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ ছিল । তাঁর উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন তান্ত্রিক সাধুদের সঙ্গে আলাপ করে তন্ত্র ধর্ম সম্বন্ধে জানা । এই বই এর সময় কাল ১৯১১ থেকে ১৯১৮ পর্যন্ত ।
তন্ত্র ধর্ম সম্পর্কে আমাদের ধারনা খুবই ক্ষীন । আমরা কেবল জানি তান্ত্রিকরা শ্মশানে ঘুরে বেড়ান । মদ, মাংস, মেয়ে মানুষ নিয়ে সাধনা করেন । যা সাধারনের কাছে খুবই ঘৃণ্য বিষয় । তাছাড়া তান্ত্রিকরা তাঁদের সাধনার কথা কারো কাছে প্রকাশ করেন না । এই কারনে তাঁরা সাধারন জনসমাজ থেকে আলাদাই থেকে যান ।
কিন্তু এই বইতে তন্ত্র ধর্মকে একটু অন্যভাবে দেখানো হয়েছে । আসলে এই ভাবে সাধনার মূল উদ্দেশ্য কি এবং জাতপাতে ভরা ব্রাহ্মণ্য ধর্মের থেকে এটা কেন ভালো এই সব ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে । তন্ত্র ধর্মে কোনো জাতপাত নেই । পুরুষ এবং প্রকৃতির সম্পর্কের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে এই ধর্ম । পঞ্চ-মকার সাধনার আসল কারন কি এবং কেন এই গুলোকে সাধনার অঙ্গ করা হয়েছে তার প্রকৃত ব্যাখ্যা আছে এই বইতে ।
যাঁরা তন্ত্র সম্পর্কে জানতে চান তাঁদের অবশ্যই পড়তে হবে এই বই । তাছাড়া এই বইটি যেন এক ভ্রমন কাহিনি এবং অ্যাডভেঞ্চার কাহিনির মত । থিওরির কচকচি এড়িয়ে ধর্ম সম্পর্কে সাধারন প্রশ্নগুলোরই উত্তর খোঁজা হয়েছে এই বই তে । যে প্রশ্ন গুলোর উত্তর আবার এই সংরক্ষনের এবং জাতপাতের রাজনীতি কবলিত ভারতে হারিয়ে যেতে বসেছে ।