Tuesday, June 20, 2006

কমিউনিস্ট জোকস্ ৮

জাতীয় উৎসব চলছে । বেরিয়েছে বিশাল শোভযাত্রা । বিরাট এক পোস্টার হাতে নিয়ে পায়ে পা মিলিয়ে চলেছে রাবিনোভিচ । পোস্টারে লেখা : ‘আনন্দময় শৈশবের জন্য কমরেড স্তালিনকে ধন্যবাদ ।’
পোস্টারটা দেখেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন পার্টির এক হোমরা চোপরা ।
ধমক দিয়ে তিনি বললেন : কমরেড রাবিনোভিচ, এটা কি আপনি ফাজলামি পেয়েছেন ? এই পোস্টারের মানে কি ? আপনি যখন শিশু ছিলেন, কমরেড স্তালিনের তখন তো জন্মই হয়নি ।
-- ধন্যবাদ তাঁকে সে কারণেই -- রাবিনোভিচের নির্বিকার উত্তর ।

স্ত্রীর সঙ্গে ট্রামে চড়ে যাচ্ছে রাবিনোভিচ । নিজের দুর্দশার কথা ভেবেই সম্ভবত সে হঠাৎ সশব্দে এক গভীর দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করল । ট্রামের অন্যান্য যাত্রীরা সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে দাঁড়িয়ে ক্রূর দৃষ্টিতে রাবিনোভিচকে দেখতে লাগলেন ।
ভীত সন্ত্রস্ত স্ত্রী তাকে কানে কানে বলল :
-- কতবার তোমাকে বলেছি, লোকজনের সামনে রাজনীতি নিয়ে টুঁ শব্দটিও করবে না !

একদিন অস্ফূটে বলেই ফেলল রাবিনোভিচ :
-- শালার অভিশপ্ত জীবন
সাদা পোশাকে কেজিবির লোক ছিল আশেপাশেই । খপ করে ধরল এবং বলল :
-- চলুন আপনাকে যেতে হবে আমার সঙ্গে ।
ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গিয়ে তোতলাতে তোতলাতে রাবিনোভিচ বলে :
-- আমি তো খারাপ কিছু বলিনি । বলছিলাম পশ্চিমি পুঁজিবাদী দেশগুলোর অভিশপ্ত জীবনের কথা ।
-- আপনি বললেন আর আমি বিশ্বাস করলাম, এতটাই নিরেট নাই আমি ? অভিশপ্ত জীবন কোথায়, তা ভালো করেই জানা আছে আমাদের । চলুন আমার সঙ্গে ।

রাবিনোভিচ প্রশ্ন করল তার বন্ধুকে :
-- স্তালিনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় কত খরচ হল ?
-- পঞ্চাশ লক্ষ রুবল ।
-- আঃ ওই টাকা দিয়ে গোটা সরকারকে কবর দিতে পারতাম আমি !

রাবিনোভিচকে প্রশ্ন করা হল:
-- জাতি হিসাবে ইহুদিরা এত আশাবাদী কেন ?
-- ইতিহাস আমাদের বাধ্য করেছে আশাবাদী হতে ।
-- কি রকম ?
-- যেমন ধরুন, মিশরের ফারাওরা যখন ছিল, ইহুদিরাও তখন ছিল । আজ ফারাওরা নেই । কিন্তু ইহুদিরা আছে । ছিল প্রাচীন গ্রীকরা, তখন ইহুদিরাও ছিল । প্রাচীন গ্রিকরা আজ নেই, কিন্তু ইহুদিরা আছে । ছিল রাশিয়ার জার, ছিল ইহুদিরা । আজ জার নেই, কিন্তু ইহুদিরা আছে । স্তালিন ছিল, ইহুদিরা ছিল । স্তালিন নেই, ইহুদিরা আছে । নাসের ছিল, ইহুদিরা ছিল । নাসের নেই, ইহুদিরা আছে । এখন আছে কমিউনিস্টরা, আছে ইহুদিরা ।
-- আপনি কি কিছু ইঙ্গিত করতে চাইছেন ?
-- মোটেও না । আমি শুধু বলতে চাই, আমরা ফাইনালে উঠেছি ।

কেজিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে রাবিনোভিচকে ।
-- আমাদের কাছে খবর এসেছে, আপনি হিব্রু ভাষা শিখছেন । তার মানে ইজরায়েল যাওয়ার প্ল্যান আছে আপনার ।
-- মোটেও না । আমি ধর্মীয় গ্রন্থে পড়েছি, স্বর্গে হিব্রু ভাষায় কথা বলতে হবে ঈশ্বরের সঙ্গে । তাই হিব্রু ভাষাটা শিখে রাখছি ।
-- মৃত্যুর পর আপনি স্বর্গে যাবেন, এই ধারনা আপনার হল কোথা থেকে ?
-- তা নিশ্চিত করে বলতে পারি না ঠিকই । তবে নরকে যদি যেতেই হয়, তার জন্য রুশ ভাষাটা তো শেখাই আছে !

অবশেষে রাবিনোভিচ অনুমতি পেল বিদেশ ভ্রমনের । বিদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে সে টেলিগ্রাম পাঠাতে শুরু করল । টেলিগ্রামগুলি এরকম :
স্বাধীন বুলগেরিয়া থেকে শুভেচ্ছা । -- রাবিনোভিচ
স্বাধীন রুমানিয়া থেকে শুভেচ্ছা । -- রাবিনোভিচ
স্বাধীন হাঙ্গেরি থেকে শুভেচ্ছা । -- রাবিনোভিচ
অষ্ট্রিয়া থেকে শুভেচ্ছা । -- স্বাধীন রাবিনোভিচ

ইমিগ্রশন নিয়ে যেসব সোভিয়েত ইহুদি ইজরায়েলে চলে এসেছে, তাদের নস্টালজিয়া দূর করার একটা উপায় বাতলেছে রাবিনোভিচ । উপায়টি এরকম :
তেল আবিবে ‘জন্মভূমির টান’ নামে একটা রেস্তোরা খুলতে হবে । সেখানে খদ্দের গিয়ে চেয়ারে বসবে, কিন্তু অর্ডার নেওয়ার জন্য বহুক্ষন কেউ আসবে না । খেতে দেবে যাচ্ছেতাই । দুর্ব্যবহার করবে, বিল মেটাবার সময় ঠকাবে এবং বেরবার সময় পেছন থেকে কেউ গজগজ করে করে বলেব, শালা ইহুদির বাচ্চা ! ভাগ্ ব্যাটা ইজরায়েলে !

রাবিনোভিচ মারা যাওয়ার পর তাকে নরকে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হল । যমদূতদের কাছে সে তীব্র প্রতিবাদ জানাল । বলল :
-- সোভিয়েত দেশে এত বছর কাটানোর পরেও কি আমার স্বর্গে যাওয়ার সৌভাগ্য হতে পারে না ?
-- যে জীবন তুমি সোভিয়েত দেশে কাটিয়ে এসেছো, হে রাবিনোভিচ, যমদূত বলল, তারপর নরকই তোমার কাছে মনে হবে স্বর্গের মতো !

এক বস্তা রুবল নিয়ে গ্রাম থেকে এক কৃষক এল মস্কো শহরে । শহরে পৌঁছে সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল । পুরনো রুবলের বদলে নতুন রুবল কোথায় দিচ্ছে, তার হদিশ অনেক জিজ্ঞাসা করেও কারও কাছ থেকে পেল না । ঘাড়ে ওই ভারি বস্তা নিয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করাও সম্ভব হচ্ছে না । তাই সে ফুটপাতে তার বস্তাটা রেখে নিজেই খোঁজ নিতে গেল কোথায় মুদ্রা বদলের কাউন্টার খোলা হয়েছে । সব জেনে ফিরে এসে দেখে তার রুবলগুলি সব ফুটপাতে গড়াগড়ি যাচ্ছে, আর বস্তাটা হাওয়া !

দেশলাই ফ্যাক্টরির ডিরেক্টর বিশেষ পুরস্কার পেলেন । কারণটা কি ? কারণ হল প্রতিবিপ্লবীরা সামরিক বিমান বন্দরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিতে চেয়েছিল । তাদের কাছে ছিল ওই ফ্যাক্টরির দেশলাই । অনেক চেষ্টা করেও তারা সেই দেশলাই দিয়ে আগুন জ্বালাতে পারেনি !

যৌথ খামারে জুতোর সরবরাহ এসেছে মাত্র একজোড়া । সেই জুতো জোড়া কাকে দেওয়া হবে তা নিয়ে মিটিং চলছে । অনেকে দীর্ঘ বক্তৃতা দিলেন । সবার শেষে উঠলেন যৌথ খামারের ডিরেক্টর । তিনি বললেন : আমি প্রস্তাব করছি, জুতোজোড়া আমাকে দিয়ে দেওয়া হোক । এই প্রস্তাবের পক্ষে যারা, তাঁরা চুপ করে বসে থাকুন । আর সোভিয়েত শাসনব্যবস্থার বিপক্ষে যাঁরা, তাঁরা হাত তুলুন !

স্তালিন ফোন করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে :
-- গমের সরবরাহ আসতে দেরি হচ্ছে কেন ?
-- বন্দর শ্রমিকরা লাগাতার ধর্মঘটে নেমেছে । বেতন বাড়ানোর দাবি করছে তারা ।
-- কেন, আপনাদের দেশে কি পুলিশ নেই ?

যৌথ খামার পরিদর্শনে বেরিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ক্রুশ্চেভ । ইচ্ছে খামারের অন্দরমহলটা নিজের চোখে দেখবেন । তাই বিশাল নিরাপত্তা বাহিনীকে বাইরে রেখে খামরের এক কর্মীর সঙ্গে ঘুরে ঘুরে দেখছেন । হঠাৎ ম্যানহোলের মুখ খোলা এক সার পচানোর গর্তে পড়ে গেলেন তিনি । খামারের কর্মী কোনও রকমে তাঁকে টেনে তুললেন । মোটামুটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ক্রুশ্চেভ সেই কর্মীকে চুপিচুপি বললেন:
-- দ্যাখো, আমি যে গর্তে পড়ে গিয়েছিলাম, সেটা কাউকে বোলো না । দারুন লজ্জার ব্যাপার হবে সেটা ।
-- তা বলব না কমরেড ক্রুশ্চেভ । কিন্তু আপনিও ভুলেও কাউকে বলবেন না যে আমিই আপনাকে গর্ত থেকে তুলে বাঁচিয়েছি । তাহলে, আমাকে আর আস্ত রাখবে না কেউ !

ছেলে প্রশ্ন করছে বাবাকে :
-- বাবা এখন কি দেশে কমিউনিজম ? না কি, অবস্থা আরও খারাপ হবে ?

1 comment:

Lee Valdez said...

Nice bblog