Sunday, August 13, 2006

ইন্টারনেট এবং তার প্রভাব

মানব সভ্যতার উপর ইন্টারনেটের প্রভাব যে ক্রমশ আরো বিশাল হচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই । আস্তে আস্তে আমরা ক্রমশ ইন্টারনেটের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছি । আগামী দশ থেকে কুড়ি বছরের ভিতরে আরো যে কি কি পরিবর্তন হতে পারে তা ভাবলেও অবাক হতে হয় । আজ থেকে মাত্র দশ বছর আগেই অধিকাংশ বাড়িতে কোন টেলিফোন বা মোবাইল ফোন ছিল না । কেবল টিভি ছিল না, কম্পিউটার ছিল না এবং ছিল না ইন্টারনেট । ভাবতে অবাক লাগে যে মাত্র দশ বছরের ভিতরেই এত পরিবর্তন কিভাবে সম্ভব হল ।

আমার মনে হয়ে মানব সভ্যতার উপর ইন্টারনেটের একটা বিরাট প্রভাব পড়তে চলেছে । এই প্রভাব অন্য সমস্ত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে ছাপিয়ে যাবে । ইন্টারনেট প্রচলিত হবার ফলে সবথকে সুবিধা হয়েছে এই যে একে ব্যবহার করে বহু দূরে বসবাসকারী মানুষেরাও একসাথে কাজ করতে পারেন এবং তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারেন । এর ফলে বিভিন্ন গবেষনার উন্নতি আগের থেকে অনেক দ্রুতগতিতে হবে । ইন্টারনেট এটাও প্রমান করেছে যে মানুষ যে শুধু নিজের স্বার্থের জন্য কাজ করে এমন নয় । কারন ইন্টারনেটে বহু বিষয় ফ্রীতে পাওয়া যায় । তা সে আইনী ভাবেই হোক আর বেআইনী ভাবেই হোক । আমি আগে বইমেলায় গিয়ে বড় বড় বিদেশি প্রকাশকদের যে প্রচন্ড দামী বই গুলো হাতে নিয়ে উলটে পালটে দেখে আবার শেলফে রেখে দিতে বাধ্য হতাম এখন অনেক বইই আমি ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে দেখতে ও পড়তে পারি । যে সমস্ত সিডির দাম দেখে আঁতকে উঠতাম সেগুলোর এমপিথ্রি ভার্সন ডাউনলোড করে শুনতে পারি । অনেকে হয়তো বলবেন এগুলো বেআইনী কাজ কিন্তু সেই সাথে এটাও স্বীকার করতে হবে যে এই পাইরেসি কিছুটা হলেও সাধারন মানুষের সাথে বড়লোকদের মধ্যে ব্যবধান কমাচ্ছে । দামি বই আর দামি গান এখন শুধু পয়সাওলা লোকেদের সম্পত্তি নয় । বড় বড় কোম্পানি গুলো একদিকে যেমন চেঁচাচ্ছে যে পাইরেসি বন্ধ হওয়া উচিত আবার তারাই এমপিথ্রী প্লেয়ার ডিভিএক্স প্লেয়ার এবং আইপড বিক্রি করছে । একটা আইপডে দশ হাজারেরও বেশী গান ধরে । এই কোম্পানি গুলো কি ভাবে যে তাদের কাস্টমাররা দশ হাজার গান আইনী পথে সংগ্রহ করবে ।

ইন্টারনেটের আরেকটি বিষয় হল পর্নোগ্রাফি । ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফির রমরমা দেখে অনেকে গেল গেল রব তুলেছেন । কিন্তু আমার মতে এ নিয়ে এত মাথা ঘামাবার কিছু নেই । সেই সৃষ্টির আদি যুগ থেকেই পর্নোগ্রাফি ছিল আছে এবং থাকবে । এই পর্নোগ্রাফি দেখে কেউ যদি আনন্দ পান তাতে ক্ষতি কি ? পর্নোগ্রাফি দেখে মানুষের চারিত্রিক অবনতি ঘটে এসব একেবার বাজে কথা । তবে কাউকে দিয়ে জোর করে পর্নোগ্রাফি তোলা এবং শিশু পর্নোগ্রাফির অবশ্যই বিরোধিতা হওয়া উচিত । আপনি পর্নোগ্রাফি দেখবেন কি দেখবেন না সেটা একেবারে সকাল বেলায় মুড়ি খাবেন না পাঁউরুটি খাবেনের মতই ব্যক্তিগত ব্যাপার । আসলে মানুষের যৌন আচরনের উপর ধর্ম এবং রাষ্ট্র বরাবরই প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে । ইন্টারনেটের কল্যানে তাদের এই জারিজুরি আর খাটে না । তাই তারা পর্নোগ্রাফিকে আক্রমন করে । আর ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফির যেরকম রমরমা তাতে এটা স্পষ্টই বোঝা যায় যে ইন্টারনেট ব্যবহার কারী প্রচুর মানুষই এই পর্নোগ্রাফি সাইটগুলো দেখেন তা তারা মুখে যাই বলুন না কেন । এদিক দিয়ে বাঙালি রাও পিছিয়ে নেই । বর্তমানে যৌবনজ্বালা ডট কম পর্নআড্ডা ডট কম এবং পর্নবাংলা ডট নেটের মত বাঙালীদের পর্নো ফোরামে একবার ঢুঁ মারলেই দেখা যায় কত লোক নাম ভাঁড়িয়ে তাতে যোগদান করেছেন । এই মানুষেররা কারা এরা আমার আপনার মতই সাধারন স্বাভাবিক মানুষ । হয়তো তাঁরা স্বনামে যখন ব্লগ লেখেন সেখানে পর্নোগ্রাফির খুব নিন্দামন্দ করেন ।

বছর দশেক পরে আমার মনে হয় এসটিডি আইএসডি ফোন কলের আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না । সমস্ত ফোনই হবে ইন্টারনেট মারফত । স্যাটেলাইট টেলিভিশনেরও আর কোনো দরকার হবে না । কারন ইন্টারনেটেই কয়েক লক্ষ টিভি চ্যানেল আর রেডিও দেখা আর শোনা যাবে । অফিসে রোজ না গিয়ে বাড়ি থেকে কাজ করার প্রবনতা বাড়বে । তাতে সময় ও বাঁচবে । সাধারন ব্যবহারের বেশিরভাগ সফটওয়্যার এবং অপারেটিং সিস্টেম হবে ওপেন সোর্স । হাতে লেখা খুবই কমে আসবে সমস্ত অফিসেই বাংলা আর ইংরাজী কম্পিউটারেই টাইপ করা হবে । বেশীরভাগ গল্প ও উপন্যাস লেখক কম্পিউটারেই সরাসরি টাইপ করবেন । কলমের বিক্রি কমে আসবে । বইয়ের বদলে ছোট ছোট ট্যাবলেট কম্পিউটার ব্যবহার হবে । যা হাতে ধরে বইয়ের মত পড়া যাবে । এর ফলে কাগজের ব্যবহার কমবে তাতে পরিবেশ কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে । কিন্তু ইলেকট্রনিক বর্জের পরিমান বাড়বে । শহর থেকে দূরের ছাত্রছাত্রদের মধ্যে যদি কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়ানো যায় তবে গ্রাম এবং শহরের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মানের পার্থক্য অনেক কমবে । আর সবথেকে বড়কথা সবদিক থেকেই আমারা ইন্টারনেটের উপর এত নির্ভরশীল হয়ে পড়ব যে এটা সাধারন মানুষের জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠবে ।

2 comments:

Arijit said...

বই যদি না থাকে বেজায় মুশকিলে পড়বো। এত দিনেও কম্পিউটারে স্ক্রীণে কিছু পড়া সরগর হলো না, প্রিন্ট আউট নিয়ে পড়ি। আর বইয়ের গন্ধই যদি না পেলুম, তাইলে আর কি বই পড়লুম? অবিশ্যি এগুলো অনেকটাই সেন্টিমেন্টাল কথা - যা আসবে সেটাই চলবে, আর আমরা তখনও বইয়ের তাক থেকে বই খুঁজবো, আমাদের পর সেখানে ধুলো জমবে...

Russell said...

আমি হিডেন গড্‌ এর ভবিষ্যতবাণীর এর সাথে এক মত। ইন্টারনেট আমাদের নতুন প্রজন্মের জীবনযাপন এর ধারাকে একেবারেই বদলে দেবে।

আর ভবিষ্যতে ওপেনসোর্স অপারেটিং সিস্টেমেই চলবে কম্পিউটার -- মাইক্রোসফট এর ব্যাবসা করার দিন শেষ!