Sunday, December 10, 2006

জ্যোতি বসুকে ডি লিট উপাধি দিচ্ছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ।

সংবাদ প্রতিদিনের ওয়েবসাইটে খবরটা পড়ে খুব একটা আশ্চর্য হলাম না । তারা যদি লালু প্রসাদ যাদব বা রাবড়ি দেবীকেও যদি কোন দিন ডি লিট দেয় তাহলেও খুব একটা আশ্চর্য হব না ।

জ্যোতি বাবু কি এমন হাতি ঘোড়া মেরেছেন যে তাঁকে এই সম্মান দিতে হবে ? এই সম্মান তাঁর থেকে অনেক যোগ্য বহু মানুষকেই দেওয়া যেতে পারত । জ্ঞান হওয়া ইস্তক দেখে আসছি গরমকালে তিনি হয় ইংল্যান্ডে বেড়াতে যাচ্ছেন শিল্পপতি ধরার নামে অথবা উত্তর বঙ্গের কোন বাংলোয় টুরিস্টদের রিজার্ভেশন বাতিল করে নিজে গিয়ে জাঁকিয়ে বসছেন সেখানে ।

তাঁর বহু বছরের রাজত্বকালে তিনি দুটি মাত্র কীর্তি করেছেন । সে দুটি হল নন্দন আর চন্দন । এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের জন্য তিনি আর ভাল কিছু করেছেন বলে আমার মনে পড়ছে না । শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং শিল্পায়নে, পরিবহনে তিনি চূড়ান্ত ব্যর্থ । তাঁর সরকার বাচ্চাদের ইংরাজী পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছিল । তাঁর সরকার কম্পিউটারের বিরোধিতা করেছিল । তিনি এবং তাঁর দল একসময় নেতাজী সুভাষচন্দ্রের বিরোধিতা করেছিলেন । বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একসময় তাঁর মন্ত্রীসভা ত্যাগ করে বলেছিলেন চোরেদের সরকার তিনি একসময় বিজেপিকে বলেছিলেন অসভ্য বর্বর । আবার তিনি নিজেই একসময় রাজীব গান্ধীকে আটকানোর জন্য অটল বিহারী বাজপেয়ীর হাত ধরে ব্রিগেডে সভা করেছিলেন । নির্মম সব ঘটনা সম্পর্কে তিনি বরাবরই নির্বিকার থেকেছেন । মহিলাদের শ্লীলতাহানির পরে তাঁর মন্তব্য ছিল এরকম তো কতই হয় । একজন কমিউনিস্ট এবং সর্বহারাদের নেতা হয়েও তিনি বরাবরই বিলাসী জীবনযাপন করেছেন । এখনও তিনি সল্টলেকে রাজার হালে জীবন কাটাচ্ছেন সরকারের টাকা বরবাদ করে । তাঁর ঘুমের ব্যাঘাত হওয়ায় কিছু শিয়ালের প্রাণ গিয়েছিল যাদের বন্যপ্রানী আইনের ফলে মারা নিষিদ্ধ । তাঁর কীর্তির কথা আর কত বলব ।

তাঁর ব্যর্থতার কথা প্রসঙ্গে তিনি সব সময়েই বলতেন কেন্দ্রীয় সরকারের ভুল নীতি আর অসহযোগিতার কারনের তিনি সব কাজ করতে পারছেন না । অথচ কলকাতার দুটি প্রধান উন্নয়ন মূলক কাজ পাতাল রেল আর দ্বিতীয় হুগলি সেতু কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্যের ফলেই শেষ হয়েছিল । মনে রাখতে হবে ভারতের মধ্যে কলকাতাতেই প্রথম পাতাল রেল হয়েছিল । কেন্দ্রীয় সরকার যদি সবসময়েই পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরন করত তাহলে বোধহয় কলকাতাতে পাতাল রেল তৈরি হত না ।

এ হেন মানুষকে ডি লিটের জন্য নির্বাচিত করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বুঝিয়ে দিল যে তারা দায়বদ্ধ শুধু রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তো নিজেদের কাজগুলোই ঠিকভাবে করতে পারে না । আমি পার্ট ওয়ান পরীক্ষায় যে পেপার সবথেকে ভাল পরীক্ষা দিলাম তাতে পেলাম সবথেকে কম নম্বর । আর যে পেপার সবথেকে খারাপ দিলাম তাতে পেলাম সবথেকে বেশী নম্বর । আমার মামাতো ভাই পশ্চিবঙ্গের বাইরের একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব ভালো সুযোগ পেয়েও যেতে পারল না শুধু এই কারনে যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রেজাল্ট আউট করতে দেরী করল । আমার শহরের একটি কলেজের মেয়েরা সবাই একসাথে ইতিহাসে ব্যাক পেল । একশোর উপর মেয়ে কিভাবে যে ইতিহাসে ব্যাক পেতে পারে তার ব্যাখ্যা কেবল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ই দিতে পারে । যে বিশ্ববিদ্যালয় একসময় ভারতের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ছিল আজ তার স্থান নামতে নামতে কোথায় এসে পৌছেছে কেউ বলতে পারে না ।

সুতরাং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে এর থেকে বেশি কিছু বিচক্ষনতা আশা করা যায় না । আপনি যদি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু সম্মান আশা করেন তবে অবশ্যই সিপিএমে নাম লেখান ।

Friday, December 08, 2006

আমি যে নীতিতে বিশ্বাস করি ।

আমি পুরোপুরি অহিংসা নীতিতে বিশ্বাস করি । গান্ধীজিকে আমার এইজন্য ভাল মনে হয় । এবং এটা লাগে রহো মুন্নাভাই দেখার পরে নয় । ছোটবেলা থেকেই আমার গান্ধীজির প্রতি একটা শ্রদ্ধা ছিল । যে শ্রদ্ধা গান্ধীজির প্রতি বেশিরভাগ বাঙালিরই নেই ।

মূলত বাঙালিদের সহিংস সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রভাব এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বনাম গান্ধীজি দ্বন্দ্ব বেশিরভাগ বাঙালিকে গান্ধী বিরোধী করেছে । প্রকাশ্যে কেউ গান্ধীজির বিরুদ্ধে বেশি কিছু কথা না বললেও আমি বহু লোককেই গান্ধীজির বিপক্ষে অসম্মান সূচক মন্তব্য করতে শুনেছি । বহু লোকই দেশভাগের জন্য গান্ধীজিকেই দায়ী করে থাকেন ।

এটা আমিও স্বীকার করি যে গান্ধীজির বহু দোষ ছিল । কিন্তু এটা বার বার প্রমান হচ্ছে যে বর্তমান পৃথিবীতে গান্ধীজির নীতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ।

আমি মনে করি গান্ধীজির চরম অসম্মান সেদিন করা হয়েছিল যেদিন গান্ধী হত্যার দায়ে নাথুরাম গডসেকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল । কারন হিংসার বদলে হিংসা গান্ধীজির নীতিবিরোধী । গান্ধীজি নিজে কি চাইতেন যে তাঁর মৃত্যুতে অভিযুক্তকে ফাঁসি দেওয়া হোক । আমার মনে হয় না ।

ঠিক একই ভাবে সব ধর্মই নিজেদের অহিংসার পূজারী বলে ব্যাখ্যা করলেও আমার মনে হয় সব থেকে অহিংস ধর্ম হচ্ছে জৈন ধর্ম । তার পরেই আসবে বৌদ্ধ ধর্ম । জৈন ধর্ম এতটাই অহিংস যে তারা কোনভাবেই জীব হত্যা সহ্য করতে পারে না । যাতে কোনভাবে মুখে কোন পোকা ঢুকে পড়ে নিহত না হয় সেজন্য তাঁরা মুখে কাপড় দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখেন । এর থেকে অহিংস কি কোন ধর্মের হওয়া সম্ভব ?

আর কোনটা ন্যায় কোনটা অন্যায় সে বিষয়ে অনেক তর্ক হয়েছে । আমার কাছে অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করাই হল অন্যায় । যখনই আপনি অন্যের স্বাধীনতাহীনতার কারন হচ্ছেন তখনই আপনি অন্যায় করছেন । যেমন আপনি আপনার শিশুর খেলা করার অধিকার হরন করে তাকে সারাদিন পড়াশোনায় বাধ্য করছেন আপনি অন্যায় করছেন । আবার যখন জর্জ বুশ ইরাক দখল করে সেখানকার নাগরিকদের বেঁচে থাকার অধিকার হরন করছেন তখন তিনিও অন্যায় করছেন ।

আমাদের রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালাম একটা খুব সুন্দর কথা বলেছিলেন যে দুর্নীতি দূর করতে পারেন কেবলমাত্র প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক এবং শিশুর পিতামাতা । এছাড়া কারও দুর্নীতি দূর করার ক্ষমতা নেই । ঠিক এই একই কথা প্রযোজ্য হিংসা সম্পর্কে । যে একটা খুব সুন্দর ছোটবেলা কাটিয়েছে এবং বাবা মা এবং শিক্ষকদের কাছে ঠিক শিক্ষা পেয়েছে তার পক্ষে দুর্নীতিগ্রস্ত বা হিংসাত্মক হওয়া অসম্ভব ব্যাপার ।

দুর্নীতিমুক্ত হোন । মনে রাখুন এটা আপনার বাবা মা অথবা আপনার সন্তান কেউই পছন্দ করবে না । দস্যু রত্নাকর তার বাবা মা এবং স্ত্রী সন্তানের জন্যই ডাকাতি ও খুন খারাপি করত । কিন্তু কেউই তার পাপের ভার নিতে রাজি হয় নি ।

তাই বাচ্চাদের ভালবাসুন । গান শুনুন । ছবি আঁকুন । নদীর ধারে বেড়ান । আকাশ দেখুন । ক্ষমা করতে শিখুন (সবার আগে নিজেকে) । বন্ধুত্ব করুন । আর অনেক ভাল থাকুন ।

Monday, December 04, 2006

সিঙ্গুরের খবর আর মিডিয়া

সিঙ্গুর নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু ক্যাঁচাল হচ্ছে । অফিসে থেকে ফেরার সময় প্রায় প্রতিদিনই মারাত্মক ভিড়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে । কারন ট্রেনের গণ্ডগোল । আজ সন্ধে ছটার সময়ে যখন বিধাননগর স্টেশনে এলাম তখন দেখলাম স্টেশনে প্রচণ্ড ভিড় । এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানোর জায়গা নেই ট্রেনে ওঠা তো অনেক পরের ব্যাপার । কেউই ঠিক বলতে পারছে না যে আসলে কি হয়েছে । সাধারন ট্রেনের গণ্ডগোল না কোথাও অবরোধ হয়েছে । সিঙ্গুর ইসুকে নিয়ে প্রায় প্রত্যেক দিনই কোথাও না কোথাও অবরোধ হচ্ছে । যাই হোক দুটো ট্রেন ছেড়ে দেবার পর অবশেষে তৃতীয় ট্রেনে উঠতে সক্ষম হলাম । সেই ট্রেনটা আবার দমদম স্টেশনে প্রচণ্ড ভিড় নিয়ে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে রইল ।

আগামী কাল আবার এসইউসিআই আর সিপিআই এম এল বনধ ডেকেছে । আজ মাওবাদীরা কলকাতার বেকবাগানের কাছে টাটা মোটরসের শোরুমে হামলা চালিয়েছে এবং বুদ্ধবাবুর বিরুদ্ধে পোস্টার সেঁটে গেছে । এসইউসিআই দল হিসাবে ছোট হলেও কোথাও কোথাও তাদের যথেষ্ট শক্তি রয়েছে । এবং আমার মনে হয় পশ্চিমবঙ্গে যতগুলি রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের ভিতরে এসইউসিআই সবচেয়ে সিরিয়াস নিজেদের আন্দোলনের বিষয়ে । এবং তাদের যথেষ্ট ডেডিকেটেড কর্মী রয়েছে যারা দলকেই নিজের ধ্যানজ্ঞান বলে মনে করে । এরাই আমার মনে হয় পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্ট আন্দোলনের বর্তমান ধারক ও বাহক । কারন মাওবাদীরা অনেকাংশেই সাধারন মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন । এবং সিপিআইএমকে এখন আর বামপন্থী বলে মেনে নেওয়া যায় না । তারা তাদের যেটুকু আদর্শ বাকি ছিল তা জলাঞ্জলি দিয়েছে । এখন অনেকেই জর্জ বুশের ইরাক দখলের সঙ্গে বুদ্ধবাবুর সিঙ্গুর দখলের তুলনা টানছেন । আমার মনে হয় কালকে হয়তো এসইউসিআই ট্রেন অবরোধ করে দিতে পারে । কালকে অবশ্যই আমি অফিসে যাবার জন্য বেরোবো । দেখি গিয়ে উঠতে পারি কি না ।

পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া এখন অনেকাংশেই সিপিএমের ধামাধরা হয়ে গিয়েছে । এর মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য হল আনন্দবাজার পত্রিকা । আনন্দবাজার এখন বামফ্রন্টকে সাপোর্টের ক্ষেত্রে যেন গণশক্তিকে হার মানাতে চলেছে । তাদের এই রহস্যজনক নীতি পরিবর্তনের পিছনে যে কোন উদ্দেশ্য আছে তা স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে । এর সাথে যুক্ত হয়েছ তাদের চ্যানেল স্টার আনন্দ । বলা চলে গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া যেন বুদ্ধপন্থী হয়ে উঠেছে । কলকাতা টিভিও সিপিএমকেই সাপোর্ট করবে এতো জানা কথা । কারণ তাদের মালিক জেনেটিস এর সঙ্গে বুদ্ধবাবুর অনেক দহরম মহরম আছে । ফলে সিঙ্গুর ইসুতে ঠিক কি ঘটছে তা বোঝা অনেকটাই শক্ত হয়ে উঠছে । পশ্চিমবঙ্গের বাংলা টিভি চ্যানেল আর পশ্চিমবঙ্গের বাইরের সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলির সঙ্গে খবরের তফাত অনেকরই নজরে এসেছে । এখন নিরপেক্ষ খবর পাওয়া সবথেকে কঠিন বিষয় হয়ে উঠেছে । কারণ পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়ার মেরুকরণ প্রায় সম্পূর্ণ । নিরপেক্ষ খবরের কাগজ বা টিভি চ্যানেলের কোন অস্তিত্ব আর নেই । সিঙ্গুর ইসুতে যা বুঝলাম তাতে আনন্দবাজার, গণশক্তি আর আজকাল বুদ্ধবাবুর পক্ষে রায় দিচ্ছে এবং সংবাদ প্রতিদিন এবং বর্তমান যাচ্ছে বুদ্ধবাবুর বিপক্ষে । টিভিচ্যানেলগুলোর সেই একই দশা । তাই মনে হয় আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে সর্বভারতীয় খবরের কাগজ আর টিভিচ্যানেল গুলোর দিকে । যদি তারা অন্তত কিছুটা নিরপেক্ষ খবর দেয় ।

Sunday, December 03, 2006

সিঙ্গুর ইসুতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভুমিকা

পশ্চিমবঙ্গে কিছুদিন ধরেই সিঙ্গুর নিয়ে ঝামেলা পাকিয়ে উঠেছে । মমতা, বুদ্ধবাবু এবং তার সাথে যুক্ত হয়েছেন মেধা পাটেকর । সিপিআই এম এল (নকশাল) এবং এসইউসিআই এর মতো ছোট দলেরাও এর মধ্যে নাক গলিয়ে ফেলেছে । ফলে অবস্থা এখন বেশ সরগরম ।

কিন্তু এই ঝামেলা পাকিয়ে ওঠার জন্য দায়ী কে ? অবশ্যই আমাদের রাজ্য সরকারের দূরদৃষ্টিহীনতাই এর জন্য দায়ী । সবাই জানে যে কৃষকদের কাছে তাদের জমি হচ্ছে মহামূল্যবান । বংশ পরম্পরায় জমিই তাদের খাবার জুগিয়েছে । ভালো হোক খারাপ হোক জমিকে নির্ভর করেই তারা বেঁচে আছে । এরপর সিঙ্গুর হচ্ছে হুগলী জেলায় । সবাই জানে যে এই জেলা খুবই উর্বর । হুগলী জেলা বিখ্যাত হচ্ছে আলু চাষের জন্য । আর এখানকার চাষীদের অবস্থা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া বা মেদিনীপুরের চাষীদের থেকে অনেক ভালো ।

রাজ্য সরকারের বক্তব্য হচ্ছে যে টাটাদের কারখানা হলে গ্রামের মানুষেরা সেখানে চাকরি পাবেন । কিন্তু এর পরেও প্রচুর প্রশ্ন থেকে যায় । যেমন গ্রামের মানুষদের কত টাকা মাইনের চাকরি দেওয়া হবে ? তাদের চাকরিতে নিলেও কিছুদিন বাদে যে তাড়িয়ে দেওয়া হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায় ? আর যে সমস্ত চাষীরা এতদিন স্বাধীন ভাবে নিজেদের জমি চাষ করে এসেছেন তাঁরা কি অন্যের অধীনে চাকরি আদৌ করতে পারবেন ? আর বেশিরভাগ মধ্যবয়েসী কৃষকরা এতদিন চাষ করে এসেছেন এবং চাষের কাজে পটু তাঁরা কি কারখানার কাজে পটুত্ব অর্জন করতে পারবেন ?

এরপর সেখানে যদি সরকারী উদ্যোগে কিছু করা হত তাহলেও জমি ছেড়ে দেবার পক্ষে একটা যুক্তি থাকত । কিন্তু মনে রাখতে হবে সেখানে একটি বেসরকারী কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে । আর সেখানে টাটারা যে কেবল নিজেদের লাভই দেখবে তাতো জানা কথা ।

আরও প্রশ্ন হল টাটারা যদি পশ্চিমবঙ্গে কারখানা খুলতে চায় তাহলে তো তারা জমির মালিকদের কাছ থেকে সরাসরি জমি কিনলেও পারত । এখানে রাজ্য সরকারের ভূমিকাটা কোথায় সেটা স্পষ্ট নয় । এখানে এটা স্পষ্ট যে রাজ্য সরকার জমির দালালি করছে । জমি পিছু চাষীদের যে টাকা দেওয়া হচ্ছে আর রাজ্য সরকার টাটাদের কাছ থেকে যে টাকা নিচ্ছে তার মধ্যে বিরাট ফারাক আছে । এই ফারাক থাকা উচিত নয় । পুরো টাকাটাই চাষীদের প্রাপ্য ।

অতএব অনেক কিছুতেই বিরাট প্রশ্ন চিহ্ন আছে । সিঙ্গুর ইসুর গুরুত্ব খুবই বেশী । কারণ এর উপরেই নির্ভর করবে ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পায়নের রূপরেখা কি হবে । এবং অন্যান্য জায়গায় জমি অধিগ্রহন ও শিল্পায়ন কিভাবে হবে । টাটারা যখন একশো বছরেরও বেশী আগে জামশেদপুরে কারখানা খুলেছিল তখন সেই জায়গাটা ছিল একেবারই অনুন্নত । সিঙ্গুরের কারখানা খোলার আগেও টাটারা সেই নীতি গ্রহন করতে পারত । হুগলী জেলার মত উর্বর জায়গায় তারা কারখানা না খুলে পশ্চিমবঙ্গের অনুন্নত জায়গায় যথা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর বা উত্তরবঙ্গে কারখানা খুললে সেখান কার মানুষেরা দু হাত বাড়িয়ে তাঁদের স্বাগত জানাত ।

সিঙ্গুর নিয়ে সিপিএম যদি ঠিক নীতিতে না আসে তাহলে পশ্চিমবঙ্গে তাদের সবথেকে বড় শক্তি কৃষিজীবি গ্রামের মানুষেরাই তাঁদের বিপক্ষে চলে যাবেন সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । তারপর পুলিশ লেলিয়ে সাধারন মানুষের উপর দমন নিপীড়ন যা তারা বহু বছর ধরে চালিয়ে আসছে তা সাধারন মানুষ কিছুতেই সহ্য করে নেবে না ।

Saturday, December 02, 2006

যারা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ভাঙচুর করল তাদের কি শাস্তি হওয়া উচিত ?

গত ৩০ নভেম্বর তারিখে আমরা দেখলাম পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় এক বিরাট ভাঙচুরের দৃশ্য । তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়করা প্রবল তাণ্ডব চালালেন বিধানসভার ভিতরে । তা যাই হোক এই বিধায়কদের কি শাস্তি দেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করছিলাম । এমন সময় মনে পড়ে গেল আমাদের স্কুল জীবনের কথা ।

এই বিধায়কদের উপযুক্ত শাস্তি হতে পারে এরকম । প্রথমে তাদের বিধানসভা চত্বরে কান ধরে নিলডাউন করে রাখতে হবে বেশ কয়েক ঘন্টা । সে সময়ে তাদের কোন কিছু খাওয়া বা বাথরুম যাওয়া একেবারে নিষিদ্ধ । তারপর তাদের কান ধরে ওঠবোস করতে হবে একশো এক বার । এই সময় স্কুলের বাচ্চাদের বিধানসভা চত্বরে আনতে হবে যাতে তারা এই বিচিত্র দৃশ্য দেখার আনন্দ উপভোগ করতে পারে । এরপর বিধায়কদের কষ্ট লাঘব করার জন্য বাচ্চারা তাদের নরম কচি হাত দিয়ে তাদের কান মুলে দিতে পারে । যাতে তাদের কিছুটা আরাম হয় । আশা করি বাচ্চাদের হাতের কানমলা খেতে তাদের ভালোই লাগবে ।

এরপর বিধায়কদের দিয়েই বিধানসভা ভবন পরিষ্কার করাতে হবে । কোন সাফাইকর্মী আনা চলবে না । এরপর যে বিধায়করা বেশি বদমায়েশি করেছিলেন তাদের পশ্চাৎদেশে কয়েক ঘা বেত্রাঘাত করা যেতে পারে ।

আমাদের সরকার পক্ষের বিধায়করাও অনেক সময়ে নানা রকমের ভাঙচুরের জন্য দায়ী । একই সাথে যদি তাদের পাওনাটাও মিটিয়ে দেওয়া যায় তাহলে ব্যাপারটা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় ।

একটি বনধের দিন...

গত পরশু যখন ণমূল বনধ্ ডেকেছিল তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম যে যেভাবেই হোক অফিসে আসবই । কারণ গত বনধে অফিসে না যাওয়ার জন্য আমার মাইনে কাটা গিয়েছিল । তাই গতকাল সকাল বেলা অফিসে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়লাম । স্টেশনে গিয়ে দেখলাম একটা ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে । বেশ ফাঁকা । তাতেই উঠে পড়লাম । অন্যদিনের মতো ঝোলাঝুলি ভিড় নেই । যারা ট্রেনে উঠেছে তাদের বেশ খুশির মেজাজ । কয়েকটা স্টেশনে খানিকক্ষন করে দাঁড়ালেও মোটামুটি টাইমেই বিধাননগর স্টেশনে নেমে পড়লাম ।


রাস্তায় বেড়িয়ে দেখলাম বাস খুব কম চলছে । কিছু অটো চলছে । রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা । অফিসে পৌঁছে দেখলাম মাত্র তিনজন এসেছি । আর প্রোডাকশনের আমি ছাড়া আর কেউই আসে নি । খানিকক্ষন বসে থাকার পরে প্রোডাকশনে ঢুকে আমার কম্পিউটার টা চালালাম । খানিকক্ষন সামান্য কাজ করলাম । আর গান শুনলাম । এইভাবেই টিফিনের সময় হয়ে গেল । টিফিন করার পরই অফিস ছুটি হয়ে গেল । আমি বাড়ির দিকে রওনা দিলাম । আবার বিধাননগর স্টেশনে আসার সাথে সাথেই ট্রেন পেয়ে গেলাম । একেবারে ফাঁকা । ট্রেনটা খুব ভালো ভাবেই এসে পৌছাল । যখন বাড়িতে পৌছলাম তখন সময় বেলা দুটো কুড়ি । তারপর একটা দারুণ দিবানিদ্রা দেওয়া গেল ।