জ্যোতি বসুকে ডি লিট উপাধি দিচ্ছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ।
সংবাদ প্রতিদিনের ওয়েবসাইটে খবরটা পড়ে খুব একটা আশ্চর্য হলাম না । তারা যদি লালু প্রসাদ যাদব বা রাবড়ি দেবীকেও যদি কোন দিন ডি লিট দেয় তাহলেও খুব একটা আশ্চর্য হব না ।
জ্যোতি বাবু কি এমন হাতি ঘোড়া মেরেছেন যে তাঁকে এই সম্মান দিতে হবে ? এই সম্মান তাঁর থেকে অনেক যোগ্য বহু মানুষকেই দেওয়া যেতে পারত । জ্ঞান হওয়া ইস্তক দেখে আসছি গরমকালে তিনি হয় ইংল্যান্ডে বেড়াতে যাচ্ছেন শিল্পপতি ধরার নামে অথবা উত্তর বঙ্গের কোন বাংলোয় টুরিস্টদের রিজার্ভেশন বাতিল করে নিজে গিয়ে জাঁকিয়ে বসছেন সেখানে ।
তাঁর বহু বছরের রাজত্বকালে তিনি দুটি মাত্র কীর্তি করেছেন । সে দুটি হল নন্দন আর চন্দন । এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের জন্য তিনি আর ভাল কিছু করেছেন বলে আমার মনে পড়ছে না । শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং শিল্পায়নে, পরিবহনে তিনি চূড়ান্ত ব্যর্থ । তাঁর সরকার বাচ্চাদের ইংরাজী পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছিল । তাঁর সরকার কম্পিউটারের বিরোধিতা করেছিল । তিনি এবং তাঁর দল একসময় নেতাজী সুভাষচন্দ্রের বিরোধিতা করেছিলেন । বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একসময় তাঁর মন্ত্রীসভা ত্যাগ করে বলেছিলেন ‘চোরেদের সরকার’ । তিনি একসময় বিজেপিকে বলেছিলেন অসভ্য বর্বর । আবার তিনি নিজেই একসময় রাজীব গান্ধীকে আটকানোর জন্য অটল বিহারী বাজপেয়ীর হাত ধরে ব্রিগেডে সভা করেছিলেন । নির্মম সব ঘটনা সম্পর্কে তিনি বরাবরই নির্বিকার থেকেছেন । মহিলাদের শ্লীলতাহানির পরে তাঁর মন্তব্য ছিল ‘ এরকম তো কতই হয়’ । একজন কমিউনিস্ট এবং সর্বহারাদের নেতা হয়েও তিনি বরাবরই বিলাসী জীবনযাপন করেছেন । এখনও তিনি সল্টলেকে রাজার হালে জীবন কাটাচ্ছেন সরকারের টাকা বরবাদ করে । তাঁর ঘুমের ব্যাঘাত হওয়ায় কিছু শিয়ালের প্রাণ গিয়েছিল যাদের বন্যপ্রানী আইনের ফলে মারা নিষিদ্ধ । তাঁর কীর্তির কথা আর কত বলব ।
তাঁর ব্যর্থতার কথা প্রসঙ্গে তিনি সব সময়েই বলতেন কেন্দ্রীয় সরকারের ভুল নীতি আর অসহযোগিতার কারনের তিনি সব কাজ করতে পারছেন না । অথচ কলকাতার দুটি প্রধান উন্নয়ন মূলক কাজ পাতাল রেল আর দ্বিতীয় হুগলি সেতু কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্যের ফলেই শেষ হয়েছিল । মনে রাখতে হবে ভারতের মধ্যে কলকাতাতেই প্রথম পাতাল রেল হয়েছিল । কেন্দ্রীয় সরকার যদি সবসময়েই পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরন করত তাহলে বোধহয় কলকাতাতে পাতাল রেল তৈরি হত না ।
এ হেন মানুষকে ডি লিটের জন্য নির্বাচিত করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বুঝিয়ে দিল যে তারা দায়বদ্ধ শুধু রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তো নিজেদের কাজগুলোই ঠিকভাবে করতে পারে না । আমি পার্ট ওয়ান পরীক্ষায় যে পেপার সবথেকে ভাল পরীক্ষা দিলাম তাতে পেলাম সবথেকে কম নম্বর । আর যে পেপার সবথেকে খারাপ দিলাম তাতে পেলাম সবথেকে বেশী নম্বর । আমার মামাতো ভাই পশ্চিবঙ্গের বাইরের একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব ভালো সুযোগ পেয়েও যেতে পারল না শুধু এই কারনে যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রেজাল্ট আউট করতে দেরী করল । আমার শহরের একটি কলেজের মেয়েরা সবাই একসাথে ইতিহাসে ব্যাক পেল । একশোর উপর মেয়ে কিভাবে যে ইতিহাসে ব্যাক পেতে পারে তার ব্যাখ্যা কেবল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ই দিতে পারে । যে বিশ্ববিদ্যালয় একসময় ভারতের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ছিল আজ তার স্থান নামতে নামতে কোথায় এসে পৌছেছে কেউ বলতে পারে না ।
সুতরাং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে এর থেকে বেশি কিছু বিচক্ষনতা আশা করা যায় না । আপনি যদি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু সম্মান আশা করেন তবে অবশ্যই সিপিএমে নাম লেখান ।