Friday, May 05, 2006

মহাভারত কথা

ইচ্ছে হচ্ছে আজ একটু মহাভারত নিয়ে লিখি । শুনে অনেকেই হয়তো ভাবছেন সেকি শেষ পর্যন্ত এত রকমের জিনিস থাকতে শেষ পর্যন্ত মহাভারত ! আমার প্রশ্ন হচ্ছে এখনকার দিনে কতজন মহাভারত পড়ে ? বাংলা গল্প উপন্যাস যারা পড়ে তাদের পছন্দ হল সুনীল শীর্ষেন্দু অথবা সঞ্জীবের লেখা এছাড়া সমরেশ মজুমদার অথবা বুদ্ধদেব গুহের লেখাও অনেকের পছন্দ । এছাড়া বাংলাদেশের হুমায়ুন আহমেদও প্রবল জনপ্রিয় । পুরনো লেখার মধ্যে শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র এবং রবীন্দ্রনাথও এখনও লোকে পড়ে । কিন্তু এর বাইরে পুরনো লেখা সাহিত্যের স্টুডেন্ট ছাড়া আর কেউ খুব একটা পড়ে বলে মনে হয় না । ঠিক্ভাবে বলতে গেলে বাংলায় যথাযথ মহাভারত পড়বার একটাই বই আছে তা হল কালীপ্রসন্ন সিংহের মহাভারত । কিন্তু তাও মান্ধাতার আমলের ভীষন খটোমটো ভাষায় লেখা । পরিষ্কার চলিত বাংলায় যেকটা মহাভারত পাওয়া যায় তা একটাও ঠিকঠাক অনুবাদ নয় । একটি ভাল অনুবাদ অবশ্য আছে, সেখানে প্রত্যেকটি সংস্কৃত শ্লোকের সাথে বাংলা অনুবাদ দেওয়া আছে । কিন্তু সেটা সব মিলিয়ে কুড়িটার উপর খন্ড যা গবেষক ছাড়া আর কারো কাজে লাগবে না এবং শখ করে কিনলেও বাড়িতে রাখার জায়গা হবে না । তাই সাধারন বাঙালীর আর শেষ অবধি আর মহাভারত পড়া হয়ে ওঠে না । তাই খোঁজ করলে দেখা যায় যারা বলে যে তারা মহাভারত পড়েছে তারা আসলে কেউই মহাভারত পড়েনি তারা আসলে টিভিতে সিরিয়াল দেখেছে ।
আমাদের বাড়িতে কালীপ্রসন্ন সিংহের মহাভারত ছিল । আমি ছোট থেকে সেটাই পড়েছি । পাঠকেরা যা যা চায় তা প্রায় সবই আছে মহাভারতে । ধর্ম, সমাজনীতি, রাজনীতি, রহস্য রোমাঞ্চ, এমনকি যারা যৌনতা এবং খুন জখম ভালোবাসে তাদের জন্যও রসের কিছু অভাব নেই এতে । এখন চারিপাশে খুব শোনা যায় যে সব কিছুতে নাকি সেক্স এবং ভায়োলেন্স বেড়ে গেছে । কিন্তু মহাভারতে কি কিছু সেক্স আর ভায়োলেন্সের অভাব আছে ? এমনকি যৌনমিলনের সময় মেয়েরা যে ছেলেদের থেকে আটগুন বেশী আনন্দ পায় এমন কথাও মহাভারতে আছে । অনেকেরই হয়তো জানতে ইচ্ছে করছে যে এই কথা মহাভারতে কোথায় আছে । শুনলে আশ্চর্য হতে হয় যে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর মৃত্যুপথযাত্রী পিতামহ ভীষ্ম তাঁর নাতির বয়সী যুধিষ্ঠিরকে যে যে উপদেশ দিয়েছিলেন তার মধ্যে এই কথা আছে । আমার আরো আশ্চর্য লাগে যে ভীষ্ম ছিলেন চিরকুমার, তিনি কখনও বিয়ে করেননি, তবে তিনি এই কথা কি করে জানলেন । তবে কি তিনি বিয়ে না করলেও নারী সঙ্গম করতেন । এ কথার কোনো প্রমান মহাভারতে বোধহয় নেই । কোনো মহাভারত স্পেশালিস্ট হয়তো এ ব্যাপারে বলতে পারবেন ।
অনেক মহাভারত অনুবাদকারকই অনুবাদের সময় এই সব যৌন ব্যাপারগুলোকে সযত্নে এড়িয়ে গিয়ে অনুবাদ করেন । তাঁরা লেখেন যে দেবতাদের বরে কুন্তী তিন ছেলের আর মাদ্রী দুই ছেলের মা হয়েছিলেন । আমাদের বাড়িতে একটা ছোটদের মহাভারতে এইরকম কথা ছিল । আমার অবশ্য এটা পড়ে বুঝতে কোনো অসুবিধে হয়নি যে দেবতাদের বরে নয় তাদের সাথে যথোপযুক্ত যৌনমিলনের ফলেই তাঁরা মা হতে পেরেছিলেন । এখানে আমার মনে আরো একটা প্রশ্নের উদয় হয়েছিল । অশ্বিনীকুমারদ্বয় থেকে মাদ্রী দুই যমজ সন্তান লাভ করেন । তাহলে কি অশ্বিনীকুমারদ্বয় মাদ্রীকে একসাথে সম্ভোগ করেছিলেন । মানে এটা কি একটা গ্রুপ সেক্সের ব্যাপার ছিল ? বলা মুশকিল ।
তবে যৌন ব্যাপারে মহাভারতের সমাজ যে এখনকার থেকে উদার ছিল সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । যেমন সত্যবতী এবং কুন্তী কুমারী অবস্থায় মা হবার পরেও কুরু বংশের বউ হতে পেরেছিলেন । মহাভারতের কোন কোন জায়গায় এমন ভাবে নারী শরীরের বর্ণনা আছে যে তা যদি সাদা বাংলায় অনুবাদ করা হয় তবে তা পর্ণোগ্রাফি বলে মনে হবে । কথায় কথায় মেয়েদের স্তন আর নিতম্বের বর্ণনা ।
সেক্স ছাড়াও মহাভারতে ভায়োলেন্সও কিছু কম নেই । ভীমের দুঃশাসনের বুক চিরে রক্ত খাবার মধ্যে দিয়ে তা পরিষ্কার । এছাড়া রাজসভার ভিতরে কৃষ্ণের শিশুপালকে হত্যা, পরশুরামের পৃথিবীকে একুশবার ক্ষত্রিয়শূন্য করার মধ্যে দিয়ে তা বোঝা যায় । এছাড়া চুরি চামারি রাহাজানি নারী ধর্ষণ, পারিবারিক যুদ্ধ, গুপ্তহত্যার তো ছড়াছড়ি ।
তবে মহাভারতে ভাল কথাও প্রচুর আছে । গীতার মতো পৃথিবীশ্রেষ্ঠ দর্শন মহাভারতেই আছে । কর্ম এবং ফলের মধ্যে কি রিলেশন তা ভাল ভাবে বোঝানো আছে । তাই আমার মনে হয় মহাভারতের আবার স্বচ্ছ চলিত বাংলায় অনুবাদ হওয়া উচিত । যা হবে কোনো রকম সেন্সর বিহীন এবং যথাযথ । এবং এই বিশাল কাজ কোনো একক ব্যক্তি দ্বারা সম্ভব নয় তাই কোনো সংস্থাকেই এগিয়ে আসতে হবে । তবে এই অনুবাদ যেন কোন ধর্মীয় সামাজিক এবং রাজনৈতিক চাপ মুক্ত হয় ।


4 comments:

Sorcerer said...

রাজশেখর বসুর মহাভারতের সারানুবাদটা খুব খারাপ নয়। পারলে পড়ে দেখো।

Anonymous said...

সেক্স এর বাংলা প্রতিশব্দ কি হতে পারে ভেবেছো?
তুমিতো দিব্যি যৌন শব্দটা ব্যভার করলে?
তাতে কি অমি সেক্স করলাম এর বাংলা অমি যৌন করলাম হয় না?
শুনতে তা ভাল ঠেকে না।
বুঝি কম অনেক ভেবে বলে, সেক্স এর বাংলা প্রতিশব্দ না থাকার কারন ভানুসিংহের সেক্স নিয়ে লেখার অনিহা থেকে প্রসুত।

শুভ্র প্রকাশ পাল said...

" বুঝি কম said...
সেক্স এর বাংলা প্রতিশব্দ কি হতে পারে ভেবেছো?
তুমিতো দিব্যি যৌন শব্দটা ব্যভার করলে?
তাতে কি অমি সেক্স করলাম এর বাংলা অমি যৌন করলাম হয় না?
শুনতে তা ভাল ঠেকে না।
বুঝি কম অনেক ভেবে বলে, সেক্স এর বাংলা প্রতিশব্দ না থাকার কারন ভানুসিংহের সেক্স নিয়ে লেখার অনিহা থেকে প্রসুত।

1:46 AM "


এ ক্ষেত্রে দৈহিক মিলন শব্দটা ব্যাবহার করা যেতে পারে।

sany ahmed said...

ধন্যবাদ, এমন একটি তথ্য আমাদের সাথে ভাগ কারার জন্য। সঠিক বলেছেন এমন অনেক কিছু আছে যা কখনও আমরা ভালো করে জানি না।