কমপিউটার সেন্টার গুলো থেকে সাবধান
আমরা অনেকেই কমপিউটারের বিভিন্ন কোর্স করার জন্য কমপিউটার সেন্টার গুলোর দ্বারস্থ হই । কিন্তু এই বেশিরভাগ কমপিউটার সেন্টার গুলোই স্রেফ টাকা খিঁচে নেবার কল । তাই এদের থেকে সাবধান । আপনার ভাগ্য খারাপ হলে আপনার বহু টাকা এদের পিছনে জলাঞ্জলি যেতে পারে । বিনিময়ে আপনি কিছুই শিখবেন না ।
কোনো কমপিউটার সেন্টারে অ্যাডমিশন নেবার আগে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করুন । আমি এরকম কমপিউটার সেন্টারের স্টুডেন্ট ছিলাম এবং অল্প কিছু দিন এইরকম একটি কমপিউটার শিক্ষা কেন্দ্রে পড়িয়েওছি । সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আমি এটা লিখছি ।
(১) কোনো বিষয়ে অ্যাডমিশন নেবার আগে কম করে পাঁচ থেকে ছয়টি আলাদা আলাদা কমপিউটার সেন্টারে যান এবং তাদের সাথে কথা বলুন ।
(২) কাউন্সেলারদের (অর্থাৎ যারা খোঁজখবর নিতে আসা স্টুডেন্টদের অ্যাটেন্ড করে) কথার ফাঁদে সহজে ভুলবেন না । এরা আপনাকে ভুজুং ভাজুং দিয়ে যেভাবেই হোক অ্যাডমিশন করাবার চেষ্টা করবে ।
(৩) অ্যাডমিশন নিতে কখনও তাড়াহুড়ো করবেন না । এর আপনাকে বলবে যে দেরি করলে কোর্সের রেট বেড়ে যাবে । এসব হচ্ছে একেবারে বাজে কথা । এসবে বিশ্বাস করবেন না ।
(৪) অ্যাডমিশন নেবার আগে তাদের ল্যাব, কমপিউটার স্বচক্ষে দেখুন । তাদের লাইব্রেরি দেখুন । দেখুন যে তাতে পুরনো বই আছে নাকি নতুন আপ টু ডেট বই আছে । ইন্টারনেটের সুবিধা দেবে কিনা বুঝে নিন ।
(৫) কমপিউটার সেন্টারের বাইরে তাদের স্টুডেন্টদের সঙ্গে কথা বলুন । দেখুন তারা কি বলে । এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার ।
(৬) একসাথে সব সেমিস্টারের জন্য অ্যাডমিশন নেবেন না । এবং ডিসকাউন্টের লোভে বেশি টাকা অ্যাডভান্স পেমেন্ট করবেন না । মাঝপথে যদি আপনি কোর্স ছেড়ে দেন অথবা করতে না পারেন তবে পুরো টাকাই জলে যাবে ।
(৭) কমপিউটার সেন্টারটা কতদিনের পুরোনো সে ব্যাপারে খোঁজ খবর করুন । সেন্টারটা বেশি নতুন হলে আরও ভালও করে খোঁজ খবর করা দরকার ।
(৮) সম্ভব হলে কোনো বড় শহরের বড় সেন্টারে অ্যাডমিশন নিন । মফস্বল ছোটো শহরের সেন্টার গুলোর কোয়ালিটি নিয়ে অনেক সময়েই সমস্যা থাকে ।
(৯) চাকরির গ্যারান্টি যারা দেয় তাদের থেকেও সাবধান থাকুন । কেননা কেউ কখনও কাউকে চাকরির গ্যারান্টি দিতে পারে না । চাকরি নির্ভর করবে আপনার কোয়ালিটির উপর ।
(১০) ফ্যাকাল্টিদের সম্পর্কে খোঁজ নিন । তাদের কোয়ালিফিকেশন এবং এক্সপিরিয়েন্স সম্পর্কে জানুন ।
অ্যাডমিশন নেবার পর আপনি যে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন তা হল
(১) বাজে ফ্যাকাল্টি দিয়ে ট্রেনিং দেওয়া - অধিকাংশ সেন্টারেই ফ্যাকাল্টিদের মাইনে এত বাজে যে ভাল ফ্যাকাল্টিরা চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে । যারা আছে তারা হল এই রকম সেন্টার থেকেই সবে বেরোনো ছেলে মেয়েরা যাদের কাজের ব্যাপারে কোন প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা নেই ।
(২) বাজে কমপিউটার হার্ডওয়্যার ও ল্যাব - অনেক ছোট সেন্টারের এটি একটি প্রাথমিক সমস্যা ।
(৩) প্লেসমেন্টের গন্ডোগোল - ধরুন আপনি দুটি সেমের জন্য অ্যাডমিশন নিয়েছেন । দুটি সেম শেষ হবার পর যখন আপনাকে কোনো ইন্টারভিউতে পাঠানো হল দেখা যাবে তার সাবজেক্ট হল তৃতীয় সেমের বিষয়বস্তু । এটা জেনেশুনেই করা হয় । কারন আপনি ইন্টারভিউতে বেশিরভাগ প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারবেন না । তখন আপনি ফিরে এসে তৃতীয় সেমের জন্য অ্যাডমিশন নেবেন । এটা একটা ব্যবসা বাড়ানোর কৌশল । যদি আপনার সাথে এরকম হয় তবে তার প্রতিবাদ করুন ।
ভাল করে জেনেশুনে তবেই অ্যাডমিশন নিন । তা নাহলে যে ঠকতে হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই । যদি আপনার পড়া বুঝতে সমস্যা হয় তবে ম্যানেজমেন্টের উপর চাপ দিন যাতে তার ওই একই ক্লাস আবার অন্য ব্যাচে করার সুযোগ দেয় । তবে আপনাকে কিন্তু ক্লাস কামাই করলে চলবে না । আশা করি এই লেখা থেকে আপনাদের বা আপনাদের বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজনের কিছু উপকার হতে পারে ।
1 comment:
ওরে বাবা, আপনিতো মশাই সাবধানতা সম্পর্কিত বি-শা-ল কাউন্সিলিং করে ফেললেন। :)
তবে এটা আসলেই ভয়ানক কথা যে, ভূয়া এই ট্রেনিং সেন্টারগুলো থেকে ট্রেনিং নিয়ে মানুষগুলো গাধা হয়ে বেরুচ্ছে।
Post a Comment