প্রমোদকুমার চট্টোপাধ্যায় ও তন্ত্রাভিলাষীর সাধুসঙ্গ
আমি প্রমোদকুমার চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম যে বই পড়ি তার নাম হিমালয়পারে কৈলাস ও মানস সরোবর । সাধারনত আমার ভ্রমন কাহিনি পড়তে খুব একটা ভালো লাগে না । কিন্তু এই বইটা পড়তে আমার খুবই ভালো লেগেছিল । আজ থেকে প্রায় আশি বছরেরও বেশি আগে লেখক পায়ে হেঁটে কিভাবে কৈলাস ও মানস সরোবর বেরিয়েছিলেন তারই বিস্তৃত বিবরন এটি ।
প্রমোদকুমারের পরের যে বইটি আমি পড়ি তার নাম তন্ত্রাভিলাষীর সাধুসঙ্গ । আমার মনে হয় না আমি আর কোনো বই পড়ে এতটা প্রভাবিত হয়েছি । লেখক একসময়ে ভবঘুরের মতো ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন ভারতের বিভিন্ন জায়গায় । ধর্মের প্রতি তাঁর ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ ছিল । তাঁর উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন তান্ত্রিক সাধুদের সঙ্গে আলাপ করে তন্ত্র ধর্ম সম্বন্ধে জানা । এই বই এর সময় কাল ১৯১১ থেকে ১৯১৮ পর্যন্ত ।
তন্ত্র ধর্ম সম্পর্কে আমাদের ধারনা খুবই ক্ষীন । আমরা কেবল জানি তান্ত্রিকরা শ্মশানে ঘুরে বেড়ান । মদ, মাংস, মেয়ে মানুষ নিয়ে সাধনা করেন । যা সাধারনের কাছে খুবই ঘৃণ্য বিষয় । তাছাড়া তান্ত্রিকরা তাঁদের সাধনার কথা কারো কাছে প্রকাশ করেন না । এই কারনে তাঁরা সাধারন জনসমাজ থেকে আলাদাই থেকে যান ।
কিন্তু এই বইতে তন্ত্র ধর্মকে একটু অন্যভাবে দেখানো হয়েছে । আসলে এই ভাবে সাধনার মূল উদ্দেশ্য কি এবং জাতপাতে ভরা ব্রাহ্মণ্য ধর্মের থেকে এটা কেন ভালো এই সব ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে । তন্ত্র ধর্মে কোনো জাতপাত নেই । পুরুষ এবং প্রকৃতির সম্পর্কের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে এই ধর্ম । পঞ্চ-মকার সাধনার আসল কারন কি এবং কেন এই গুলোকে সাধনার অঙ্গ করা হয়েছে তার প্রকৃত ব্যাখ্যা আছে এই বইতে ।
যাঁরা তন্ত্র সম্পর্কে জানতে চান তাঁদের অবশ্যই পড়তে হবে এই বই । তাছাড়া এই বইটি যেন এক ভ্রমন কাহিনি এবং অ্যাডভেঞ্চার কাহিনির মত । থিওরির কচকচি এড়িয়ে ধর্ম সম্পর্কে সাধারন প্রশ্নগুলোরই উত্তর খোঁজা হয়েছে এই বই তে । যে প্রশ্ন গুলোর উত্তর আবার এই সংরক্ষনের এবং জাতপাতের রাজনীতি কবলিত ভারতে হারিয়ে যেতে বসেছে ।
No comments:
Post a Comment